তুমি_আমারই_রবে
পর্ব_১৫
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

“মিঃ মেহুলকে একটু বেশিই পজেজিভ মনে হচ্ছে। কাহিনী কি বলতো?”

“ভুল ভাবছিস। আমার যতদূর মনে হয় উনি একটু চঞ্চল টাইপের। বিদেশে লেখাপড়া করেছে তো, তাই এতোটা চঞ্চল সবার সাথে খুব দ্রুত মিশতে ও পারে।”

নীলা একমনে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কি জানি ভাই। আমার খুব অদ্ভুত লাগছে মিঃ মেহুলকে। বিশেষ করে তোর সাথে বেশি ভাব দেখানো টা।”

“উফফফ বললাম তো, উনি একটু চঞ্চল, ইগো জিনিসটা উনার মধ্যে একদমই কাজ করে না। দেখলি না, এতটুকু সময়ে মধ্যে উনি “আমাদের সাথে” কতোটা মিশে গেলেন।”

নীলা আমার কাঁধে হাত রেখে আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,

“কথাটা শুধু “তোমার” হবে রূপা বেবি। “আমাদের” না। উনি আসার পর থেকে কেবল তোমার সাথেই মিশছে।”

লামিয়া এবার বাঁকা হেসে আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,,

“দেখিস রূপা। তোর সাথে না আবার, সামথিং সামথিং হয়ে যায়।”

আমি খুব ক্ষীপ্ত হয়ে লামিয়াকে বললাম,,,

“এসব কোন ধরনের ফাজলামি লামু? ভুলে যাস না আমি বিবাহিত। আমার হাজবেন্ড আছে। হয়তো কোনো কারণে আমি উনার থেকে দূরে আছি। তবু ও, উনি আমার হাজবেন্ড তো!”

“উফফফ এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেনো? আমি তো শুধু মজা করছিলাম। এই রূপা যে শুধু হিমুর তা আমরা বেশ ভালো করেই জানি।”

এর মাঝেই মিঃ মেহুল দৌঁড়ে এসে আমাদের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। হাতা কাটা একটা নীল রঙ্গের এক সাইজ গেঞ্জি আর কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে উনি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাড়াহুড়ো করে আমি উনার থেকে চোখ নামিয়ে নিলাম। লোকটা আসলেই লজ্জাহীন। যখন তখন যেখানে খুশি সেখানেই এমন অপ্রস্তুতভাবে চলে আসেন। উনি কি বুঝে না মেয়েরা উনার দিকে খারাপ চোখে তাকায়। অন্তত একটু তো লজ্জা থাকা উচিত। উনি বেশ হাঁফাতে হাঁফাতে আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

“এক ছুটে চলে এলাম আপনাদের কাছে। সিঁড়ির লোকজনদের ক্রস করে।”

কিছুটা দম নিয়ে উনি এবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“তো মিস রূপা। এবার বলুন কোথায় যাচ্ছেন?”

আমি নিচের দিকেই তাকিয়ে বললাম,,,

“সামনের পার্কটাতে যাচ্ছি।”

“কোনো উপলক্ষ আছে নাকি অফ ডে বলে?”

আমি কিছু বলার আগেই লামিয়া বলে উঠল,,,

“আসলে আজ আমার জন্মদিন। তাই বাইরে একটু হ্যাং আউট করতে যাচ্ছি।”

“আউ। গুড নিউজ। হ্যাপি বার্থডে লামিয়া। আপনি আমাকে একটু আগেই নিউজটা দিতে পারতেন, যখন আমরা পরিচিত হচ্ছিলাম।”

“স্যরি আসলে মাথায় ছিলো না।”

“ইট’স ওকে কোনো ব্যাপার না।”

মিঃ মেহুল এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

“রূপা আমার দিকে তাকান। এভাবে মাথা নিঁচু করে রেখেছেন কেনো?”

“আপনি বলুন না। আমি শুনছি।”

“আগে তাকান। তারপর বলছি।”

বাধ্য হয়ে আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি মৃদ্যু হেসে আমার ঘাঁড়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

“কিছু মনে করবেন না রূপা। আপনার ঘাঁড়ের তিলটা দেখা যাচ্ছে। চুল দিয়ে ঢাকুন।”

তাড়াহুড়ো করে আমি ঘাঁড়ের দিকে তাকালাম। সত্যি সত্যি তিলটা দেখা যাচ্ছে। চুল দিয়ে তিলটা ঢেকে আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি মলিন হেসে বললেন,,,

“আসলে মেয়েদের এসব দিকে ছেলেদের কু নজর থাকে বেশি, তাই আপনাকে সরাসরি কথাটা বললাম৷ কিছু মনে করেন নি তো?”

“না। তবে থ্যাংকস।”

উনি সামনের চুল গুলো টেনে হালকা হেসে বললেন,,,

“ওকে ফাইন। তাহলে যান আপনারা। সন্ধ্যায় দেখা হবে।”

আমি, লামিয়া আর নীলা পিছু ঘুড়তেই মিঃ মেহুল পেছন থেকে আমাকে ডেকে বললেন,,,

“মিস রূপা। সাবধানে যাবেন।”

আমি ঘাড়টা ঘুড়িয়ে উনার দিকে তাকিয়ে মাথা নাঁড়ালাম। উনি হাসতে হাসতে দৌঁড়ে ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকে গেলেন। ছেলেটা একটু বেশিই পাগল। যেমন হুটহাট ফ্রি লি অনেক কিছু বলে ফেলে, তেমনি হুটহাট হেসে দেয়। গাম্ভীর্যতার লেশমাএ উনার মধ্যে নেই। আমি এমন ছেলে খুব কমই দেখেছি। যে কথায় কথায় হাসে। আকাশ যেমন গম্ভীর ছিলো তেমনি হিমু ও। হিমু তো খুব বেশি বদমেজাজী আর রাগী ছিলো!

কিছুক্ষনের মধ্যে রিকশা নিয়ে আমরা পার্কে পৌঁছে গেলাম। পার্কে অনেকক্ষণ ঘুড়াঘুড়ি করে আমরা বিশাল বট তলার নিচে বসলাম। জোড়ায় জোড়ায় সব দম্পতিরা বট তলায় বসে আছেন। সাথে আমাদের মতো অনেক ছেলে ফ্রেন্ড, মেয়ে ফ্রেন্ডরা একসাথে বসে হৈ-হুল্লোড় করছেন, অনেকে আবার গোল হয়ে বসে আড্ডা ও দিচ্ছেন। গাছের ছায়ায় মুহূর্তের মধ্যে রোদে থাকা ঝাঁঝালো ভাবটা দূর হয়ে গেলো। মৃদ্যু, মলিন স্নিগ্ধ বাতাসে মনটা খনিকের মধ্যে জুড়িয়ে গেলো। মন জুড়ে এক শীতল অনুভূতির আবরণ তৈরী হলো। সামনে একজন ঝালমুড়ি ওয়ালাকে দেখে আমি উনাকে ইশারা করে বললাম আমাদের কাছে আসতে। উনি হাসি মুখে আমাদের কাছে এগিয়ে এলেন। তিনটা ঝালমুড়ি অর্ডার করে আমি লামিয়া আর নীলার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

কথার মাঝখানে সামনের দিকে তাকাতেই হঠাৎ মিঃ মেহুলকে চোখে পড়ল। হোয়াইট কালার শার্ট, কালো প্যান্ট, চোখে কালো চশমা, এই লুকটাতে উনাকে দারুন লাগছে। লোকটার দিকে তাকালেই আমি এক ধরনের মায়া খুঁজে পাই৷ মনে হয় লোকটা আমার খুব আপন। জানি না কেনো এমন মনে হয়। হয়তো কাকতালীয় কোনো ব্যাপার আছে। উনার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে উনি কাউকে খুঁজছেন। ভ্রু সংকুচিত করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন। উনাকে দেখে আমি যতোটা না অবাক হয়েছি, আমার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে লামিয়া আর নীলারা। দুজনই আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,,,

“কি রে এই মিঃ মেহুল তো এখানে ও চলে এলেন। উনি কি আমাদের ফলো করছেন?”

“হয়তো অন্য কোনো কাজে এসেছেন। অযথা উনি আমাদের ফলো করবেন কেনো?”

ঝালমুড়ি গুলো হাতে নিতেই দেখলাম মিঃ মেহুল সামনে দৌঁড়ে গিয়ে দুটো ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনজনই তিনজনকে জড়িয়ে ধরে লাফালাফি করছেন৷ একেক জন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছেন। দেখে বুঝা যাচ্ছে উনারা খুব ভালো বন্ধু। মিঃ মেহুল অনেক বছর পরে দেশে এসেছেন বলে হয়তো উনাদের এতোটা উচ্ছ্বাস। আমি উনাদের থেকে চোখ সরিয়ে লামিয়া আর নীলাকে বললাম,,,

“দেখলি তো, আমি বলেছিলাম না নিশ্চয়ই উনি কোনো অন্য কাজে এসেছেন।”

লামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে আর বলছে,,,

“নিচের দিকে তাকা৷ নিজেকে যতো পারিস লুকিয়ে রাখ। এই ছেলে আমাদের এখানে দেখে নিলে নির্ঘাত দৌঁড়ে চলে আসবে আমাদের কাছে। বকবক করে ঘুড়াঘুড়িটাই মাটি করে দিবে।”

লামিয়ার কথা মতো আমি উড়না দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলাম। পার্কে এলাকার অনেক পরিচিত লোকজন থাকতে পারে৷ মিঃ মেহুল যদি আমাদের দেখে এখানে চলে আসেন, আমাদের সাথে মিশেন, কথা বলেন তাহলে এলাকার লোকজন বিষয়টাকে ভালো চোখে দেখবেন না। এলাকায় বদনাম ছড়াবেন। নিচের দিকে তাকিয়ে তিনজনই ঝালমুড়ি খাচ্ছি। অমনি মনে হলো কেউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। রোদের তীর্যক আভাটা আমার চোখে, মুখে পড়ছে না। খুব স্বস্তি লাগছে। মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই অবিশ্বাস্যভাবে আমি মিঃ মেহুলকে সামনে দেখলাম। উনি হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

“দেখলেন তো। নিজেকে আড়াল করতে পারলেন না। আমি ঠিক আপনাকে খুঁজে নিয়েছি!”

আমি কিছুটা থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,

“আআপনি ভুল ভাবছেন। আমি নিজেকে আড়াল করি নি। রোদ থেকে বাঁচার জন্য মাথায় ঘোমটা টেনেছিলাম।”

লামিয়া আর নীলা ও মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। মিঃ মেহুল হালকা হেসে বললেন,,,

“আমি দাঁড়িয়ে আছি তো রূপা। সূর্য আপনাকে আর জ্বালাবে না।”

“আমি ম্যানেজ করে নিচ্ছি মিঃ মেহুল। প্লিজ আপনি সরে দাঁড়ান। সূর্যের আলোটা সরাসরি আপনার পিঠে লাগছে।”

“আগে ঝালমুড়িটা শেষ করুন। এরপর সরে দাঁড়াচ্ছি।”

অবাক হয়ে আমি লোকটাকে দেখছি। মনে হচ্ছে এই লোকটা আমার কতো দিনের চেনা। কতো সূক্ষ্ম ভাবে আমার সাথে মিশছেন, কথা বলছেন, একটু আধটু কেয়ারিং ও করছেন। উনি কি সবার প্রতিই এমন সাহায্যশীল নাকি আমার প্রতিই একটু বেশি পজেজিভ তাই বুঝতে পারছি না। পুরোটা ঝালমুড়ি শেষ করে আমি উঠে দাঁড়ালাম। লামিয়া আর নীলা ও উঠে দাঁড়ালো। মিঃ মেহুল এতক্ষনে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। আমি উনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম,,,

“এবার সরে দাঁড়ান মিঃ মেহুল। আমার খাওয়া হয়ে গেছে।”

পকেট থেকে টিস্যু বের করে উনি কপালের ঘাম গুলো মুছে আমাদের বললেন,,,

“তাহলে এবার চলুন। আমার ফ্রেন্ডদের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।”

আমি কিছু বলার আগেই লামিয়া বলে উঠল,,,

“আজ থাক না মিঃ মেহুল। অন্য একদিন না হয় পরিচিত হবো। আজ বরং আমরা যাই।”

“নো মিস লামিয়া। কোথাও যাওয়া হবে না। আজ আমরা সবাই মিলে খু্ব ঘুড়ব। আপনার জন্মদিন বলে কথা। সেলিব্রেট করতে হবে না? তাই আমি ভাবছি আজ আমার তরফ থেকে আপনাদের সবাইকে খুব বড় করে একটা ট্রিট দিবো।”

আমি, লামিয়া আর নীলা তিনজনই তিনজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। তিনজনই মিঃ মেহুলের প্রস্তাবে ঘোর নারাজ। গলাটা ঝাঁকিয়ে আমি মিঃ মেহুলকে বললাম,,,

“আজ বরং থাক মিঃ মেহুল। অন্য কোনো দিন আমরা একসাথে বসে খাবো।”

উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,,,

“লামিয়ার জন্মদিন অবশ্য রোজ রোজ আসবে না! সো কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা কোনো রেস্টুরেন্টে বসি।”

আমরা তিনজনই মুখটা কালো করে মিঃ মেহুলের দিকে তাকিয়ে আছি। মিঃ মেহুল জোর পূর্বক হেসে বললেন,,,

“আপনারা এতো সংকোচ বোধ করছেন কেনো? আমাকে ফ্রেন্ড ভাবতে পারেন। আমি কিন্তু প্রথম থেকেই আপনাদের ফ্রেন্ড ভেবে আসছি।”

আমি কিছু বলার আগেই লামিয়া হালকা হেসে বলল,,,

“আচ্ছা চলুন। আমার বার্থডে ট্রিট আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম।”

মিঃ মেহুল হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

“কি মিস রূপা? আপনি রাজি তো?”

আমি মলিন হেসে মাথা নাঁড়ালাম৷ মিঃ মেহুল আমাদের নিয়ে উনার ফ্রেন্ডদের কাছে গেলেন। উনার পিঠের দিকে তাকিয়ে দেখলাম শার্ট টা ঘেমে পিঠের সাথে একদম চিপকে গেছে। উনার এমন অদ্ভুত কান্ডের কারণ আমার মাথায় ঢুকছে না। কেউ ইচ্ছে করে এভাবে রোদের তাপে দাঁড়ায়? ইচ্ছে করে গাঁ থেকে ঘাম ঝড়ায়?

মিঃ মেহুল উনার দুই বন্ধুর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। দুজনই মিঃ মেহুলের মতো দেখতে টল, বডিবিল্ডার, হ্যান্ডসাম। একজনের নাম হৃদয়, অন্যজনের নাম লাবিব। দুজনই মিঃ মেহুলের মতো চঞ্চল আর মিশুক। খুব সহজে আমাদের তিনজনের সাথে মিশে গেছেন।

পুরোটা পার্ক আমরা ছয়জন একসাথে ঘুড়ে দুপুর দুটোর দিকে কাছের একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। দুটো টেবিল এডজাস্ট করে আমরা ছয়জন একসাথে বসেছি। একপাশের সিরিয়ালে আমরা তিনজন মেয়ে এবং অন্য পাশের সিরিয়ালের উনারা তিনজন ছেলে। খাবার অর্ডার করার সময় মিঃ মেহুল সবার জন্য মাটান বিরিয়ানী অর্ডার করলে ও শুধু আমার জন্য বিফ বিরিয়ানী অর্ডার করেছেন। আমি খুব অবাক হলাম উনার এই কান্ডে। আমি ছোট বেলা থেকেই মাটান অপছন্দ করি। আর আমার এই অপছন্দের ব্যাপারটা শুধু আমার পরিবারের মানুষরা, হিমুর পরিবার আর লামিয়া, নীলা জানে। এর বাইরে আর অন্য কারো জানার কথা না। মিঃ মেহুলের তো একদমই না। অর্ডার করা শেষে আমি খুব কৌতুহলী হলে আমার সামনের টেবিলে বসে থাকা মেহুলকে বললাম,,,

“আচ্ছা আপনি কিভাবে জানলেন আমি মাটান বিরিয়ানী পছন্দ করি না?”

“আমি নিজে ও মাটান বিরিয়ানী পছন্দ করি না। তাই ভাবলাম আপনি ও করেন না!”

“মানে শুধু আমার ক্ষেএেই কেনো এটা মনে হলো? বাকিদের ক্ষেএে কেনো না?”

মিঃ মেহুল আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে বললেন,,,

“মিস রূপা দেখছি সামান্য একটা ব্যাপার নিয়েই তদন্তে লেগে পড়েছেন। কারণ কি বলুন তো?”

“না। সামান্য কৌতুহল হলো। তাই জিগ্যেস করলাম।”

উনি হঠাৎ বাঁকা হেসে বললেন,,,

“আসলে আমি মনে করি ঘাড়ে তিল থাকা মেয়েরা মাটান বিরিয়ানী পছন্দ করেন না। তাই অনুমানের বসেই বিফ বিরিয়ানী অর্ডার করলাম।”

আমি খুব হেসে বললাম,,,

“আপনি আসলেই পারেন। এমন মনে হওয়ার কারণ কি?”

“কারণ, আমার অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড আছে যাদের ঘাঁড়ে আপনার মতো দু, একটা তিল ও আছে৷ এদের বেশির ভাগই মাটান পছন্দ করে না। তাই ভাবলাম নিশ্চয়ই আপনার সাথে কোনো যোগসূএ আছে।”

“ইউ আর সো ফানি মিঃ মেহুল।”

উনি এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

“সবসময় এভাবে হাসিখুশি থাকবেন রূপা। হাসিতেই মেয়েদের আসল সৌন্দর্য।”

আমি হাসি থামিয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনার কিছু কিছু কথা, পছন্দ, অপছন্দ হিমুর সাথে অনেকটাই মিলে যায়। যেমন মাটান। হিমুর ও মাটান অপছন্দ ছিলো। এদিক থেকে হিমু আর আমার বড্ড মিল ছিলো। এখন মিঃ মেহুলের সাথে মিলে গেলো।

এর মাঝেই আমাদের বিরিয়ানী চলে এলো। সবাই খাওয়ায় মনযোগ দিলাম। লামিয়া আর নীলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওরা দুজনই মিঃ হৃদয় এবং মিঃ লাবিবের সাথে খুব মিশে গেছে। নানা ধরনের কথা বলছে, হাসি ঠাট্টা করছে আবার একই সাথে খাচ্ছে ও। ওদের থেকে চোখ ফিরিয়ে আমি ও খাওয়ায় মনযোগ দিলাম। চামচ দিয়ে আমি ভাত, পোলাও বা বিরিয়ানী জাতীয় খাবার খেতে পারি না। মনে হয় যে, তৃপ্তি মিটে না। হাত দিয়ে খাবারটা খেলে খুব তৃপ্তি পাওয়া যায় আর খিদের ভাবটা ও মিটে যায়। পুরো রেস্টুরেন্টের দিকে তাকাতে দেখলাম সবাই চামচ দিয়ে খাচ্ছে। আমার খুব সংকোচ বোধ হচ্ছিলো চামচ রেখে খালি হাত দিয়ে খেতে। তাই বিরিয়ানী না খেয়ে আমি চামচ দিয়ে নাঁড়ছি। মিঃ মেহুলের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি ফোনে স্ক্রলিং করছেন আর অন্য হাতে চামচ নিয়ে বিরিয়ানী খাচ্ছেন। ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললেন খেতে। আমি জোর পূর্বক হেসে এক চামচ বিরিয়ানী মুখে দিলাম। উনি হঠাৎ ফোনটা পাশে রেখে চামটা হাত থেকে সরিয়ে খালি হাতে বিরিয়ানীর লোকমা ধরলেন আর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

“চামচটা পাশে রেখে দিন রূপা।”

আমি চোখ দুটো বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি মৃদ্যু হেসে বললেন,,,

“তাড়াতাড়ি খবারটা শেষ করুন। হাতে খেলে বেশি তৃপ্তি পাবেন।”

#চলবে,,,,,,💝

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here