#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
#পর্বঃ২৩
পরের দিন সকালে মেঘ ঘুম থেকে উঠে পরে।নিজের পাশে তাকিয়ে দেখে যে তার ঘুমন্তপরী এখনো ঘুমাচ্ছে।মেঘ মুচকি হেসে তার ঘুমন্তপরীর কপালে চুমু একে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।মেঘ বের হয়ে এসে দেখে যে বৃষ্টি এখনো ঘুমাচ্ছে।
মেঘ;;জানপাখি আর কত ঘুমাবে।সকাল হয়ে গেছে।এখন উঠে পর না কি আরও ঘুমাবে।
বৃষ্টি মেঘের কথা শুনে নাড়েচড়ে উঠে।
মেঘ;;ব্যাপার কি বৃষ্টি আমার কথা কি তোমার কানে যায় না।বেশি ঘুমালে তোমার শরীর খারাপ করবে।তারাতারি ঘুম থেকে উঠো।
বৃষ্টি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে যে মেঘ তার সামনে দুই হাত বুকের মাঝে ভাজ করে দাড়িয়ে আছে।এইভাবে চিৎকার করার কি আছে আমি তো ঘুম থেকে উঠে গেছি।
মেঘ;;আমি তো চিৎকার করিনি জানপাখি তোমার ভালোর জন্যই বলেইছি এখন আর কথা না বারিয়ে যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো আমি অপেক্ষা করছি।
বৃষ্টি তারাতারি করে টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।বৃষ্টি বের হয়ে এলে দুইজনেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।নিচে নেমে এসে দেখে নীলা আকাশ এলিনা কহিনুর সবাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছে আর সেই সময় আকাশের ফোনে একটা কল আছ।
মেঘ;;কি হয়েছে আকাশ।কে ফোন করেছে?
আকাশ;;রনি কল করেছে?আমাদের এখন অফিসে যেতে হবে।জরুলি একটা মিটিং ছিলো আমেরিকা থেকে কিছু কাইন্টরা আসবে তোর মনে নেই।
মেঘ;;আরে মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।কিন্তুু আজকে তো বৃষ্টিকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।
নীলা;;জিজু কিছু মনে না করলে আমি বৃষ্টিকে হস্পিটালে নিয়ে যায়।তোমরা দুইজন অফিসে চলে যাও।
—মেঘ কিন্তুু তোমরা তো দুইজন মেয়ে একজন তো ছেলে সাথে থাকা দরকার।
আকাশ;;তোর চিন্তা করতে হবে বাসার গার্ড কে বলে দিলেই হবে।
মেঘ;;আচ্ছা ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে আসছি।মেঘ নাস্তা শেষ করে তার রুমে গিয়ে রেডি হতে লাগলো।সাদা সার্ট কালো প্যান্ট কালো জ্যাকেট হাতে রোক্সের ঘড়ি আর চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা।বৃষ্টি রুমে এসে দেখে মেঘ রেডি হয়ে গেছে।
বৃষ্টি;;বাহ্ খুব সুন্দর লাগছে তো আমার জামাইজান কে।আজকে তো যে দেখবে সে ফিদা হয়ে যাবে।কতো জন কে আজকে গায়েল করার ইচ্ছে মিষ্টার:মেঘ আহমেদ চৌধুরী।
মেঘ বৃষ্টির কথা শুনে মুচকি হেসে বৃষ্টির দিকে ঘুরে তার কোমড়ে দুহাত রেখে বৃষ্টিকে তার আরও কাছে টিনে আলতো করে কপালে কিস করে।বৃষ্টি তার কপালে মেঘের পরশ পেয়ে পরম আবেশে তার চোখ দুটো বন্ধ করে অনুভব করতে থাকে।
—–মেঘ বৃষ্টির দুগালে হাত রাখে।এই বৃষ্টির ছাড়া মেঘের কোন অস্বস্তি নেই।বৃষ্টি ছাড়া মেঘ কিছুই না।মেঘের জন্ম হয়েছে শুধু মাএ এই বৃষ্টির জন্য।যাকে আমি, আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।যতই বাধাঁ আসুন এই মেঘের কাছ থেকে বৃষ্টি কে কেউ আলাদা করতে পারবে না আর যে আমাদের আলাদা করদে আসবে তাকেই আমি দুনিয়া থেকে আলাদা করে দেবো।
বৃষ্টি এতো ভালোবাসা আমাকে।তারপরেও কেনো যানি বার বার মন টা কু ডাক দেয় কিছু হবে না তো।
মেঘ বৃষ্টিকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বলে।আমি থাকতে তোমার কিছু হবে আর আমি হতেও দেবো না।বিশ্বাস আছে কি আমার উপর।বৃষ্টি মেঘের বুক থেকে নিজের মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।আচ্ছা শোন নীলা কে নিয়ে সাবধানে যাবে কেমন আমি গার্ড দের যাওয়ার সময় বলে দিবো।আর কোন সমস্যা হলে আমাকে কল করো কেমন?
বৃষ্টি;;আচ্ছা ঠিক আছে।কোন সমস্যা হলে তোমাকে জানাবো।এখন চলো তো অনেক টা দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মেঘ;;হুমম বলেই মেঘ রুম থেকে বের হয়ে আকাশ কে নিয়ে গার্ডদের বলে গাড়িতে বসে তারা চলে যায়।




মেঘ আর আকাশ গাড়ি থেকে নেমে সোজা অফিসের ভিতরে চলে আছে।রনি দুইজন কে দেখা মাএই সামনে এগিয়ে যায়।
আকাশ সব কিছু রেডি আছে তো রনি??
–রনি জ্বি স্যার সব কিছুই রেডি আছে।
মেঘ,ওকে চলো সবাই। বলেই তারা মেটিং রুমে চলে যায়।




বৃষ্টি এই বৃষ্টির বাচ্চা তোর কি হলো না কি আরও মেকাপ করবি কোন টা।সেই কখন থেকে তোকে ডেকেই যাচ্ছি আমার ডাক মনে হয় তোর কান পর্যন্ত যায় না।কিরে বের হবি না কি আমি জিজু কে ফোন করে বাসায় নিয়ে আসবো।
বৃষ্টি;;এই তো আমি ভুতনী থুক্কু বনু😁
নীলা;;😒
বৃষ্টি;;আরে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?আমার মুখ থেকে বের হয়ে গেছে।সরি আর এমন হবে না।আর এখন বলতো আমাকে কেমন লাগছে এই সাদা কামিজে।
নীলা;;(বিরবির করে,দাড়া আমাকে ভুতনী)ও আরে আমার সাদা খরগোশ রে🐇
তোকে যা লাগছে না।একদম সাদা খরগোশের মতো।আয় আয় কাছে আয় তোকে একটু আদর করে দেই।
বৃষ্টি কপাল কুচকে ফেলে।কি বললি তুই আমাকে।আমি সাদা খরগোশ।
—-নীলা ওরে কিউট খরগোশ দেখি আবার রাগ করতে ও জানে।
–দাড়া তোর একদিন আর আমার যতো দিন লাগে বলেই বৃষ্টি তেরে আসে নীলার দিকে।
—আরে বৃষ্টি কি করছিস।আমি কিছু জিজু সব বলে দিবো?তখন দেখবি জিজু কিন্তুু রেগে যাবে।
—-বৃষ্টি,এই তুই কোথায় কোথায় মেঘের ভয় দেখাস কেনো?
নীলা এখন চলো পরে কথা বলা যাবে।অনেক টাই দেরি হয়ে গেছে।
বৃষ্টি,হুমমম চল তারাতারি বলেই দুইজন রুম থেকে বের হয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একজন গার্ড কে সাথে করে নিয়ে হস্পিটালে উদ্দেশে গাড়িতে বসে চলে যায়।



গাড়ি থেকে নেমে সোজা দুইজন ডক্টের কেবিনে চলে যায়।ডক্টর বৃষ্টিকে দেখা মাএই।
আসুন মিসেস:মেঘ আহমেদ।স্যার আমাকে ফোন করে বলেছে আপনারা আসবেন।
নীলা;;জিজু আপনাকে ফোন করে সব বলছে।যাক ভালোই হলো।
ডক্টর বৃষ্টিকে চেকাপ করে কিছু মেডিসিন দিয়ে দেয়।পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি এই মেডিসিন গুলাও খেতে হবে।
নীলা,আমরা সবাই বৃষ্টির প্রতি অনেক টাই যন্তশীল।মেঘ জিজু তো নিজের চোখের আড়াল করে না যতোখন তিনি বাড়িতে থাকে।সব কিছু ডক্টরের কাছে ভালো ভাবে জেনে দুইজন কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।
হস্পিটাল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই নীলা একটা লোকের সাথে থাক্কা লেগে হাত থেকে সব রির্পোট গুলা পরে যায়।সেই লোকটা আর কেউ না শফিক শেখ।
শফিক নীলা কে সরি বলেই রির্পোট গুলো হাতে নিতেই তার চোখ যায় একটা রির্পোটের দিকে আর সেইখানে লেখা প্রেগন্যান্ট।শফিক ভালো করে খেয়াল করে দেখে রির্পোটে নাম লেখা মিসেস:বৃষ্টি মেঘ আহমেদ।
নীলা শফিকের হাত থেকে তারাতারি করে রির্পোট গুলো নিয়ে বৃষ্টির হাত ধরে হস্পিটাল থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে চলে যায়।
—শফিকের যেনো সব কিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো।এই মাএ সে রির্পোটে কি দেখলো বৃষ্টি প্রেগন্যান্ট।সে আর কিছু না ভেবে তারাতারি করে ডক্টের কেবিনে চলে গিয়ে সব কিছু ডক্টের মুখে শুনে বাকাঁ হেসে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।




আর এইদিকে গাড়ি এসে থামে বাড়ির মেইন গেটের সামনে।একজন গার্ড এসে তারাতারি করে মেইন গেইট টা খুলে দিতেই গাড়ি বাড়ির ভিতরে চলে যায়।গাড়ি থেকে নেমে নীলা আর বৃষ্টি দুইজন নেই বাড়ির ভিতরে চলে যায়।হলরুমে গিয়ে দেখে দাদি আর কহিনুর মিলে কথা বলছে।কহিনুর দুইজনকে দেখা মাএই বলে??
কহিনুর;;কিরে ডক্টর কি বলেছে সব কিছু ঠিক আছে তো।কোন সমস্যা নেই তো?
নীলা;;না আন্টি কোন সমস্যা নেই।ডক্টর বলেছে বৃষ্টির প্রতি আরও খেয়াল রাখতে।মেডিসিন দিয়েে খাবারের পাশাপাশি সেইগুলোও খেতে হবে।
কহিনুর;;কিইইইই,মেডিসিন।যেই মেয়ে সহজে ঔষুধ খেতে চায় না আর সেই মেয়ে কে না কি ডক্টর মেডিসিন দিয়েছে।
বৃষ্টি;;তখন খাইনি বলে কি এখন খাবো না।ঔষুধ গুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক তেতো আর আমি তো ঔষুধ খাবো না ঔষুধ আমাকে খাবে।
–নীলা আচ্ছা তুই এইখানে থাক আমি কিছু তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি কেমন।নীলা কিচেন থেকে অনেক গুলা খাবার নিয়ে এসে বৃষ্টির সামনে বসে।বৃষ্টি এতো খাবার দেখে একবার নীলার দিকে আর একবার খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীলা এইভাবে আমার দিকে না তাকিয়ে খাবার গুলা খেয়ে নে তা হলে জিজু কে আমি ফোন করে সব বলে দিবো??
—বৃষ্টি তুই চুপ করবি কথায় কথায় মেঘের ভয় দেখাস কেনো।দে খাবার গুলো আমি খাচ্ছি।সবাই বৃষ্টির কান্ড দেখে হেসে দেয়।



এই দিকে মিটিং শেষ করে মেঘ আকাশ কে নিয়ে বের হয়ে যায়।তার একমূর্হত আর ভালো লাগছে না।আকাশ হাওয়ার বেগে গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে পৌছে যায়।মেঘ গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখে বৃষ্টি হলরুমে সোফায় বসে কার্টুন দেখছে আর মনে সুখে চিইপস আর চকলেট খাচ্ছে।
আকাশ গাড়ির চাবি গার্ডের দিকে ছুরে দিয়ে হলরুমে এসে দেখে যে মেঘ শান্ত ভাবে দাড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বৃষ্টি দিকে তাকিয়ে আছে।
—আকাশ একবার বৃষ্টির দিকে আরেক বার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে আল্লাহ কে শরন করচ্ছে।বৃষ্টির হাতে এখন যা খাচ্ছে সব গুলা আকাশ পাঠিয়েছে।আকাশ মেঘ কে এমন শান্ত ভাবে দাড়িয়ে থাকা দেখে বার বার শুকনো ঢোক গিলছে।
নীলা;;বৃষ্টি এই নে এই জুস টা তারাতারি খেয়ে নে।নীলা সামনে তাকাতেই দেখে মেঘ আর আকাশ দাড়িয়ে আছে।নীলা কিছু বলতে গেলেই মেঘ ইশারা করে যাতে কিছু না বলে।
মেঘ;;তোমাকে না কতো বার বারন করেছি এইসব খাবে না।আমার কথা কি তোমার কানে যায় না।
বৃষ্টি;;না যায় না,১ মিনিট কিরে নীলা তোর গলা মেঘের মতো লাগছে কেনো।মেঘের কন্ঠ নকল করে কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস।আমি কিন্তুু ভয় পাই না বুঝলি।
মেঘ;;ও আচ্ছা তাই না কি?তুমি ভয় পাও না?
বৃষ্টি;;না আমি ভয় পাই না?কিরে তুই এমন মজা করে আবার মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো। বাঘ দেখেছিস সামনে না কি।কিরে কথা বলছিস না কেনো ভুতনী।
নীলা;;(বাঘের চাইতে কম কিসের বিরবির করে)
—বৃষ্টি কিরে এইভাবে দাড়িয়ে বিরবির করে কি বলছিস?
নীলা;;কথায় আছেনা যেইখানেই বাঘের ভয় সেইখানই সন্ধ্যা হয় ঠিক এমন টাই এখন হয়েছে।তোর সামনে তাকিয়ে দেখ কে এসেছে?
বৃষ্টি;;কে এসেছি বাঘ না কি?সামনে মেঘ কে দেখেই বৃষ্টি চুপ হয়ে যায়।এমন পরিস্থিতি দেখে আকাশ আর নীলা আস্তে করে সেই খান থেকে সরে যায়।
—-আরে তুমি কখন এলে(এইরে সব শুনে ফেলে নিতো)
মেঘ তুমি যখন আরাম করে চিপস আর চকলেট খাচ্ছিলে আর কার্টুন দেখছিলে তখন আমি এসেছি।আর এসেই দেখাচ্ছি তুমি এইসব খাচ্ছো।
—সরি আর খাবো না।বৃষ্টি মুখ ফুলিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে।
বৃষ্টির এমন চেহারা দেখে আড়াল থেকে আকাশ আর নীলা ফিস করে হেসে দেয় সাথে মেঘ ও বৃষ্টি এমন চেহারা দেখে হেসে দেয়।আড়াল থেকে দুইজন বের হয়ে আসে সোফায় বসে পরে তাদের এমন হাসি দেখে কহিনুর আর এলিনাও চলে আছে।নীলার কাছ থেকে সব কথা শুনে যে সবাই একসাথে হেসে উঠে।সব কিছুই যেনো আগের মতো স্বাভাবিক,সবাই হাসিখুশি কিন্তুু কে জানে তাদের এই খুশিতে আবার কারও বদনজর লেগে যায়।এইভাবেই দিন-সময় যেতে লাগলো।




নায়ায়ায়ায়া,এই হতে পারে না।হাতে থাকা গ্লাস টা জোরে ফ্লোরে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে।প্রচুর রাগে যেনো শফিরের চেহারায় হিংস্র টা ফুটে উঠেছে।যেই নাম টা আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি আর আজ তার কাছে আমি বারবার হেরে যাচ্ছি।আমি কিছুইতেই মেঘের কাছে হেরে যেতে পারি না।অনেক হয়েছে আড়াল থেকে খেলা এইবার হবে সামনাসামনি।অনেক হ্যাপি তাই মেঘ।সামনে অনেক বড় সারপ্রাইজের জন্য তৈরি থাক মেঘ বলে শফিক উচ্চসরে হাসতে থাকে।
#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here