তুমি আমার
পর্বঃ ০২
লেখকঃ আদ্রিয়ান নাজমুল

হঠাৎই নাতাশা এসে বলল….

নাতাশাঃ খালা আমাকে দিন আমি করে দিচ্ছি।

মাঃ না না মা থাক। আমিই করছি। তুমি বসোতো এখানে।

নাতাশাঃ না না খালা, আমি করে দিচ্ছি।

নাতাশা মায়ের কাছ থেকে সবজি নিয়ে কাটা শুরু করলো। আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

মাঃ বুঝলি নাজমুল, এই হলো একটা মেয়ের মতো মেয়ে। মেয়েতো নয় যেন সোনার টুকরা। বেশ লক্ষ্ণী একটা মেয়ে। সবসময় আমার সাহায্য করে।

আমিঃ হুম।

মাঃ ওর সাথে পরিচয় হয়েছে??

আমিঃ না মা।

মাঃ আচ্ছা। ও হলো নাতাশা। তোর আব্বুর সাথে ওর বাবা কাজ করে। আগে পাশের গ্রামে ছিল। এখন আমাদের বাড়ির পাশেই থাকে। জানিস ওর মা নাই। তাই ও আমাকে ওর মা মনে করেই আমার যত্ন করে। আমিও ওকে আমার মেয়ে মনে করি। এতো ভালো আর সুন্দরী মেয়ে লাখে একটা হয়।

আমিঃ বাবাহ।

নাতাশাঃ খালা তুমি কিন্তু বেশি বেশি বলছ।

মাঃ দেখ কি লজ্জা পাচ্ছে মেয়েটা। আচ্ছা আর কিছু বলছি না। নাতাশা মা, তোমাকে সবসময় আমার ছেলের কথা বলতাম না। এই সেই আমার নাজমুল। ওর মতো ভালো আর মেধাবী ছেলে অন্তত এই গ্রামে আর একটাও নেই।

আমিঃ মা, এখন কিন্তু তুমি আমার কথা বেশি বলছ।

মাঃ আচ্ছা বাবা। তোদের কথা আর বলবো না। তোরা দুই জনই অনেক ভালো। তাই বলতে হয়।

আমিঃ হইছে আ…

বাবাঃ কই শারমিন, নাজমুল কই??

মাঃ ওইতো তোর বাবা আসছে। চল দেখা করে আসবি।

আমি আর মা বাবার কাছে গেলাম।

বাবাঃ অলাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস বাবা??

আমিঃ জ্বি ভালো। আপনার শরীর ভালো আছে??

বাবাঃ আছে বাবা। তা এবার কয়দিনের জন্য আছিস??

আমিঃ বাবা-মা, এবার আর তোমাদের নিরাশ করবো না। এবার পাক্কা ১ মাস আছি তোমাদের সাথে।

মাঃ কি বলিস সত্যি??

ইশাঃ কি বলো ভাইয়া সত্যি?? কখন জানি এসেছে।

আমিঃ হ্যাঁ।

বাবাঃ যাক ভালো। তোর মা আর বোন তোর জন্যতো পুরো পাগল হয়ে থাকে। এবার ছেলেকে মন ভরে দেখো তোমরা ঠিক আছে।

মাঃ তা আবার বলতে হবে। তুমি হাত মুখ ধুয়ে আসো। তারপর কথা হবে নে।

বাবাঃ আচ্ছা। নাজমুলের সব পছন্দের খাবার আছে এখানে। ওকে ভালো করে রেঁধে দিও।

মাঃ আচ্ছা আচ্ছা।

বাবা চলে গেলে অামি,

আমিঃ মা, আমি একটু ঘুমাই তাহলে। এখানে এসে নিরিবিলি পরিবেশে আর সবুজের ছোয়ায় খালি ঘুমই আসছে।

মাঃ আচ্ছা যা। রান্না হলে ডাক দিব নে।

আমিঃ আচ্ছা। ইশা, আমাকে দুপুরে ডাক দিস গোসল করতে যাব।

ইশাঃ আচ্ছা ভাইয়া।

আমি এরপর ঘুমাতে গেলাম। বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পরি। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভাঙে।

ইশাঃ ভাইয়া…ও ভাইয়া উঠো। গোসল করবা না??

আমি আস্তে আস্তে করে চোখ খুলে তাকাই। আর বলি,

আমিঃ হ্যাঁ উঠছি। তুই যা।

ইশাঃ আচ্ছা। তাড়াতাড়ি গোসল করে আসো। রান্না কিন্তু শেষ।

আমিঃ আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।

আমি এরপর উঠে তাড়াতাড়ি বাড়ির পাশের পুকুরটাতে গোসল করতে গেলাম। আহ! কতদিন পর পুকুরে নামলাম। আমি সাঁতার জানি। তাই পুকুরে নেমে বেশ মজাই করলাম অনেকক্ষন। অবশ্য একা ছিলাম না। সাথে ছোট ভাই ব্রাদাররাও ছিল। গোসল করে এসে পুরো শরীর ভিজা ছিল। জানি আমার রুমে এখন কেউ আসবে না। তাই একটা তোয়ালে পরে নিলাম। এখন আমার নিচটা শুধু একটা তোয়ালে দিয়ে ঢাকা৷ অার উপরটা পুরো খালি। ভিজা কাপড় গুলো পাশে রেখে যেই ঘুরে তাকিয়েছি দেখি নাতাশা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি মনে হয় ভূত দেখলাম। আমার জামাহীন সুঠাম দেহ দেখে নাতাশা হা করে তাকিয়ে আছে। আর এদিকে আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি। মেয়েদের মতো নিজের দুহাত দিয়ে নিজের দেহ ঢাকার মিথ্যা চেষ্টা করছি। নাতাশা এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এক পা নড়াচড়াও করছে না। মেজাজটা এতো বিগড়ে গেল যে আমি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে ঝাকি দি কয়েকটা। তারপর মনে হয় লুচু রাণীর হুশ আসে।

আমিঃ লজ্জা করে না এভাবে একটা ছেলেকে দেখতে??

নাতাশাঃ আ…আম…ই… আমতা আমতা করে।

আমিঃ কি হয়েছেটা কি?? কথা বের হচ্ছে না আমার বডি দেখে?? মজা করে।

আমি আসলে বেশ মজাই পাচ্ছি। কারণ আমার বডি বিল্ডারদের মতো। সিক্স প্যাক না থাকলেও বডি আমার মাশাল্লাহ সেই। তাই হয়তো নাতাশার এই অবস্থা হয়েছে।

নাতাশা ভাবছে, হায় আল্লাহ উনি এভাবে আমার সামনে খালি গায়ে কেন দাঁড়িয়ে আছে!! আমি যে ওনার উপর থেকে চোখই সরাতে পারছি না। জীবনে আজ অব্দি কোনো পুরুষ মানুষকে এভাবে আর এত্তো সুন্দর দেহের অধিকারীকে দেখি নি। আর উনি কি ফর্সা। কেন যে এলাম এখানে!!

আমিঃ হয়েছে দেখা?? নাকি মডেলিং করবো বলো?? মজা করে।

নাতাশাঃ না না।

আমিঃ সবইতো দেখে ফেললে। এবার দয়া করে বলবে কেন এসেছিলে??

নাতাশাঃ আমিই…কেন এসেছিলাম??

আমিঃ আমাকে দেখতে।

নাতাশাঃ নাহহহ…আপনাকে খালা ডাকছে খেতে।

বলেই নাতাশা রীতিমতো দৌড়ে পালালো। আমি আর কিছু বলতেই পারলাম না। এই এই তোয়ালে বেটাও দেখি খুলে যাচ্ছিলো। আল্লাহ বাচিঁয়েছে। না হলে তো আজ সব যেত। না ভাই তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করি।

অন্যদিকে,

ইশাঃ কি হলো নাতাশা আপু?? তুমি এভাবে হাঁপিয়ে গিয়েছো কেন??

নাতাশাঃ না মানে এমনি। অস্থির ভাবে।

মাঃ নাজমুলকে ডাকতে গেলি মা, ও কই??

নাতাশাঃ আসছে খালা।

বলেই নাতাশা মগে পানি নিয়ে এক ঢোকে খেয়ে ফেলল। পানি খেয়ে ইশার পাশে নাতাশা চুপ করে বসল। ইশা আস্তে করে বলল নাতাশাকে,

ইশাঃ আপু, ব্যাপার কি হুম?? ভাইয়াকে ডাকতে গিয়ে তোমার এই বেহাল অবস্থা কেন হুম??

নাতাশাঃ তোরা দুই ভাই বোনই একরকম। খালি আমাকে লজ্জা দিস।

ইশাঃ তাই নাকি।

নাতাশাঃ একজনতো, খালি আসছে পর থেকেই আমাকে লজ্জা দিচ্ছে। জামা চেঞ্জ করবে দরজা দিয়ে কর, না সে তার সুন্দর সুঠাম দেহ দেখিয়ে দেখিয়ে চেঞ্জ করছে। কি বজ্জাত। আমি কেন অন্যকেউই যেতে পারতো সেখানে। আমার কোনো দোষ নাই। হুমহ। মনে মনে বলল।

ইশাঃ কই কি ভাব এতো??

নাতাশাঃ কিছ…

আমিঃ এইতো এসেছি মা।

মাঃ তোর বাবা সেই কবে থেকে তোর জন্য বসে আছে।

আমিঃ সরি বাবা। চেঞ্জ করতে একটু দেরী হয়ে গেলো। নাতাশার দিকে তাকিয়ে বললাম।

বাবাঃ আচ্ছা। শারমিন খাবার দেও সবাইকে।

নাতাশাঃ খালা আপনি বসেন। আমি সবাইকে বেরে দিচ্ছি।

মাঃ আরে লাগবে না মা। তুমি বস।

নাতাশা উঠে খাবার হাতে নিয়ে বারতে বারতে বলে,

নাতাশাঃ খালা আপনি বসেনতো আমি দিচ্ছি।

মাঃ সত্যিই ওর মতো কোনো মেয়ে হয় না। ইশা তোর ওর কাছ থেকে শিখা উচিৎ।

ইশাঃ হুম। আপুকে একটা বিয়ে দিয়ে দাও। এতই যখন ভালো।

ইশার কথা শুনে আমার কাশি শুরু হয়ে যায়। বোন আমার বলে কি!

ইশাঃ তোমার আবার কি হলো ভাইয়া??

আমিঃ কিছু না। তুই অনেক পেকে গিয়েছিস। চুপচাপ খা।

নাতাশা একে একে সবার কাছে গিয়ে খাবার দিয়ে শেষে আমার কাছে এসে খাবার দিল। খেয়াল করলাম আমাকে একটু বেশি বেশিই দিল ও। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলাম। ও একটি মুচকি হাসি দিয়ে লজ্জা পেয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো।

এবার আমি আল্লাহ তায়ালার নাম নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। সব আমার পছন্দের খাবার। কিছুক্ষণ পর।

আমিঃ মা, সেই হইছে সেই। এত্তো মজা হইছে না আমি মনে হয় আজ সব খেয়ে ফেলব। তোমার হাতে জাদু আছে মা। খুব টেস্ট হইছে৷

আমি লক্ষ্য করলাম সবাই মিটিমিটি হাসছে। আমি খেতে খেতে বললাম,

আমিঃ কি হলো তোমরা হাসছ কেন??

ইশা পাশ থেকে বলে উঠলো,

ইশাঃ কারণ আজ মা রান্না করে নি।

আমিঃ তাহলে??

ইশাঃ তোমার সামনের জন করেছে। হিহি।

আমি আমার সামনে তাকিয়ে দেখি নাতাশা বসা। ও লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই মজা করে বললাম,

আমিঃ না, মায়ের মতো এতোটাও মজা হয়নি। মজা করে।

মাঃ একটা মার দিব। দুষ্টামি করবি না। নাতাশা আমার চেয়ে অনেক ভালো রান্না করে। তাই আমিই আজ ওকে দিয়ে রান্না করিয়েছি।

বাবাঃ হুম, নাতাশা মায়ের হাতে রান্না না খেলে মনে হয় খাবারই খাইনি।

মাঃ দেখ, আমরাতো মেয়েটার প্রশংসা করছি। আর সে লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গিয়েছে।

আমি নাতাশার দিকে তাকালাম। ওকে লজ্জাসিক্ত ভাবে খুব সুন্দর লাগছে। গাল দুটো কেমন লাল হয়ে আছে। হঠাৎ ওর চোখে চোখ পরতেই আমি খাবারের দিকে তাকাই৷ ধুর ও এখন কি মনে করবে।

চলবে ……….. [ ইনশাআল্লাহ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here