তুমি আমার
অন্তিম পর্ব
লেখকঃ আদ্রিয়ান নাজমুল
আমি একটা পাঞ্জাবি পরে রুম থেকে বের হই। ড্রইং রুমে গিয়ে দেখি খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে রুমটা। আমার বাবা-মা আর নাতাশার বাবা মিলে কথা বা হাসি ঠাট্টা করছিল। আমি যেতেই সবাই চুপ। আমি একটা সোফায় গিয়ে একা চুপ করে বসি। কোনো কথা বলছি না। তারা আবার তাদের মতো কথা বলছে। অনেকটা সময় পাড় হয়ে গেল। কিন্তু ছেলে পক্ষ আসছে না। হঠাৎ,
মাঃ ইশা, নাতাশাকে নিয়ে আয় তো। (জোর গলায় বলল।)
ইশা ভিতর থেকে নাতাশকে নিয়ে আসলো। নাতাশাকে এনে সামনে একটা খালি সোফাতে বসানো হলো। আমি বুঝতে পারছি না, ছেলে পক্ষ আসার আগেই ওকে মা ডাক দিল কেন?? মাথায় কিছু ঢুকছে না। আমি অন্য সোফায় বসে আড় চোখে নাতাশাকে দেখছি। খুব সুন্দর লাগছে ওকে। ওর দিকে বেশি তাকাতে পারলাম না। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। নাতাশা মাথা নিচু করে বসে আছে। হঠাৎ,
মাঃ নাজমুল…
আমিঃ জি মা।
মাঃ নাতাশার পাশে একটু বসতো।
আমি, নাতাশা আর ইশা অবাক হয়ে যাই।
আমিঃ কেন?? (অবাক কণ্ঠে)
বাবাঃ আরে বসতে বলছে বস৷ এতো প্রশ্ন করিস ক্যান। বস।
বাবার ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি নাতাশার পাশে গিয়ে বসলাম। হঠাৎ মা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
মাঃ কি বলছি না। ওদের একসাথে বেশ মানাবে৷ কি ভাইজান কেমন লাগছে??
নাতাশার বাবাঃ মাশাল্লাহ। বেশ মানিয়েছে।
আমি আর নাতাশা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। কিছুই বুঝতে পারছি না। বাবা বলে উঠলো,
বাবাঃ কি নাজমুল কিছু বুঝতে পারছিস না??
আমিঃ না বাবা।
বাবাঃ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করো আর এখন কিছু বুঝো না। (রসিকতার স্বরে)
আমি আর নাতাশা লজ্জায় শেষ। মন চাচ্ছে মাটি দুভাগ হয়ে যাক আমরা তার ভিতরে চলে যাই।
বাবাঃ আজ নাতাশাকে তুই আংটি পরাবি। আর ওর সাথে তোর বিয়ে হবে৷
আমি কি ঠিক শুনলাম নাকি ভুল। আমি নাতাশার দিকে তাকাচ্ছি আর নাতাশা আমার দিকে।
ইশাঃ বাবা সত্যি??
বাবা-মাঃ হ্যাঁ।
ইশাঃ ইয়েএএএএএ।
ইশা দৌড়ে গিয়ে নাতাশাকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
ইশাঃ আপ ওহহ চরি ভাবি, তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। ইয়েএএ…
আমি পুরো বোকা হয়ে গিয়েছি। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। কি হতে গিয়ে কি হয়ে গেল। অবশ্য ভালোই হয়েছে। কিন্তু এই অলৌকিক পরিবর্তন কীভাবে??
মাঃ কি রে নাজমুল মাথায় বুঝি কিচ্ছু ঢুকছে না??
আমিঃ না মা। (অসহায় ভাবে)
মাঃ তাহলে শোন, সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও মায়ের চোখ কখনো ফাঁকি দেওয়া যায় না। তুই যে ওকে পছন্দ করিস ভালোবাসিস আমি তা সব জানি। রান্না ঘরে এসে দুজন আমার আড়ালে চোখাচোখি করিস। কি ভাবিস আমি বুঝিনা?? নাতাশা মা যে লজ্জা পায়, মিটিমিটি হাসে তাকি আমি দেখি না?? তোর আসার আগে ওর মুখে উজ্জ্বলতা আমি দেখি নি। তুই আসার পর থেকেই মেয়েটার মুখে উজ্জ্বলতা ফিরে এসেছে৷ মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া এত্তো সহজ না। আর সবচেয়ে বড় কথা নাতাশাকে আমার খুব পছন্দ। ওকে তো আমি নিজের মেয়েই মনে করি। ওর মতো সাংসারিক মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ না করে অন্য ছেলের কাছে তুলে দিব তা কখনোই হয়না। তাই তোর বাবা আর নাতাশার বাবাকে গতকাল রাতে সব বুঝিয়ে বলেছি। তারাও খুব খুশী।
বাবাঃ নাতাশা মাকে তো আমার সেই প্রথম থেকেই পছন্দ। একবার ভেবেই ছিলাম নাজমুলের সাথে বিয়ে দিব। কিন্তু পরে ভাবলাম ওর বাবা আবার কি না কি মনে করে। তাই আর ভাবি নি।
নাতাশার বাবাঃ ভাই আপনে যদি একবার খালি বলতেন। আপনারা হলেন আমাদের সব। উপরে আল্লাহ নিচে ইল্লালাহ আপনারা।
বাবাঃ বেয়াই সাব কথা পরে হবে। আগে শুভ কাজটা করে ফেলেন।
নাতাশার বাবাঃ জি জি। বেয়াইন সাব আসেন। (হাসি মুখে)
আমি আর নাতাশা চুপ করে বসে আছি। আমাদের দুজনের মনে হচ্ছে আমরা স্বপ্ন দেখছি। তবে যদিও এটা স্বপ্ন হয়। সত্যি বলছি স্বপ্নটা অনেক সুন্দর। এরপর মা আমার পাশে আর নাতাশার বাবা ওর পাশে গিয়ে বসে।
মাঃ নে বাবা, এই আংটিটা ওকে পরিয়ে দে। আল্লাহর নাম নিয়ে।
আমি মায়ের কাছ থেকে আংটি টা নিয়ে নাতাশার বাম হাতটা আমার হাতে নি। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। তাই মনের অজান্তেই নাতাশার হাতে একটা চিমটি কাটি। নাতাশা “উহ” করে উঠে। আর আমার দিকে রাগী ভাবে তাকায়। আর এটা দেখে সবাই হাসি দিয়ে উঠে। আমি তো এবার সেই খুশী হয়ে যাই। কারণ এটা স্বপ্ন না সত্যি। আমি আল্লাহর নাম নিয়ে নাতাশার আঙুলে আংটি পরিয়ে দেই।
নাতাশার বাবাঃ নে মা এবার তুইও পরিয়ে দে।
নাতাশা আংটি নিয়ে আমার ডান হাতটা নেয়। এবার দুষ্টটা আমাকে চিমটি দেয়। সবাই হেসে দেয়। আর নাতাশাও আমাকে আংটি পরিয়ে দেয়। আমরা দুজনেই মন খুলে হাসছি। আমরা যে আজ কি খুশী তা বলার বাইরে।
মাঃ বাহ!! আল্লাহ তোদের দুজনকে দীর্ঘজীবী করুক।
হঠাৎ বাবা বলে উঠলেন,
বাবাঃ তোমাদের আংটি পরানো শেষ। তবে বিয়েটা এখন হবে না। নাজমুল, তুই আগে ভালো একটা চাকরী পাবি ঢাকাতে বাসা নিবি তারপর তোদের বিয়ে। তার আগে না।
আমিঃ জি বাবা। আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি ওয়াদা করছি, নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত ওকে বিয়ে করবো না।
নাতাশার বাবাঃ মাশাল্লাহ। আল্লাহ তোমার সহয় হন।
সবাইঃ আমিন।
এরপর ১ টা বছর কেটে যায়। আজ আমাদের বিয়ে। ঢাকার নামকরা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আমি চাকরী পেয়েছি। সাথে থাকার বাসাও। বিশাল বড় বাসা আমার৷ আজ আমার সব হয়েছে।
ঢাকাতেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। অনেক বড় একটা হোটেলে আমরা বিয়ে করেছি। আমার বন্ধুরা, অফিসের কলিগ, আত্নীয় স্বজন সবাই এসেছে আমাদের বিয়েতে। নাতাশা আর আমি আজ খুব খুশী।
এখন রাত ১২ টা বাজে। বন্ধুদের সাথে সময় নষ্ট করে বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এতো দিনের প্রতিক্ষা আজ শেষ হবে। মহান আল্লাহ তায়ালার নাম নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকি। আর সেই সাথে আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। আর শুরু হয় আমাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়।
—> কিছু কিছু ভালোবাসার জন্ম হয় পূর্ণতা পাওয়া জন্য৷ আবার কিছু কিছু ভালোবাসার জন্ম হয় অপূর্ণ থাকার জন্য। এই অপূর্ণ ভালোবাসা গুলো পূর্ণতা পাওয়ার জন্য আপনাকে একটু সাহস করতে হবে। ভেবে চিন্তে সামনে আগাতে হবে। বাবা-মাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। যদি তারা ভালো মনে করেন তাহলে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিবেন আপনার জন্য। সিদ্ধান্ত যাহাই হোক আপনাকে মেনে নিতে হবে। কারণ এতেই শান্তি। আবেগের দুনিয়ায় কখনো ভালোবাসা টিকে না। তাই আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে নিন৷ কেউ না করবে না। কারণ নাজমুলের মতো সবার ভাগ্য হয় না।
এতোটা সময় জুড়ে যারা সাথে ছিলেন তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। জানি না কতটা আনন্দ আপনাদের দিতে পেরেছি। তাই এই গল্পটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা জানিয়ে যাবেন কিন্তু।
ধন্যবাদ।
( এটি একটি কাল্পনিক গল্প )
– সমাপ্ত।