তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার পর্ব ১৯
ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১৯
নিরা ওই নিরা কোথায় তুই?তোর ফোন এসেছে।এই যে নে,নয়না বললো।
কে ফোন দিয়েছে রে নয়না?
আননোন নাম্বার।
হ্যালো আসিস আলাইকুম। কে বলছেন?
আপনি মিস্টার শুভ্র নীল আহমেদ এর কি হোন?
আমি ওনার স্ত্রী। আপনি কে?
আমি মিস অনন্যা বলছিলাম সিটি হসপিটাল থেকে।
জি বলুন
মি শুভ্র নীল আহমেদ এর এক্সিডেন্ট হয়েছে। ওনি হসপিটালের ভর্তি আছেন।
কি!
আমার হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।মা ও মা ওই মেয়েটা কি বলে এসব।শুভ্র নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। হসপিটালে নাকি ভর্তি!মা সত্যি শুভ্রের কিছুু হলে আমি বাঁচবো না।বলে চোখের পানি মুছে আমি ওই জামা পড়েই বেরিয়ে গেলাম।আমার সাথে সাথে আম্মু, চাচিমা,নয়না, অরিন আপু আর আবির ভাইয়া ও বেরিয়েছে।অয়ন ও হসপিটাল পৌছে যাবে।

__________ _________

শুভ্রকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। বলেছে ঘন্টা ২/১ লাগবে জ্ঞান ফিরতে। জ্ঞান ফিরার পর বেডে দিয়ে দেয়া হবে।কাউকে ভিতরে যেতে দিচ্ছে না ডক্টর। বলেছে জ্ঞান ফিরার পর দেখা করতে।শুভ্রের শারিরীক কন্ডিশন ও বেশি ভালো না।আরো একবার এক্সিডেন্ট করে মাথায় চোট পেয়েছিল। যার কারনে একটু রিস্ক। আমার চোখের পানি যেনো বাধাই মানছে না।কেন সবসময় আমার সাথে এমন হয়?শুভ্রের কিছু হয়ে গেলে কীভাবে বাঁচবো? আর কাকে নিয়েই বা বাঁচবো! শুভ্রই তো আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। এস ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে চোখে সব যেন ঝাপসা দেখছি।তারপর আর কিছু মনে নেই।

_____________ ______________
জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে শুভ্রর পাশের বেডে আবিষ্কার করলাম।শুভ্রর ও জ্ঞান ফিরেছে।ওর মুখে চিন্তার ছাপ।বাড়ির সবাই হসপিটালে চলে এসেছে।

আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে শুভ্র বলল, কি সমস্যা তোমার নিরাপাখি? তুমি এতোটা কেয়ারলেস কীভাবে হতে পারো? তুমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছো।একটু নিজের খেয়াল রাখতে শিখো।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,কেন?আমাকেই কেন আমার খেয়াল রাখতে হবে!তুমি কেন আছো হুহ!অবশ্য যে নিজের খেয়ালই নিজে রাখতে পারে না,আর ঠিকমতো গাড়িই ড্রাইভ করতে পারে না সে কীভাবে আমার খেয়াল রাখবে?
চাচিমা এসে কথার মাঝে বললো, তোরা থামবি।নিরা তুই অনেকক্ষন ধরে কিছু খাস নি।এই যে তোর জন্য রাইস নিয়ে এসেছি।হা কর।আমি ভালো মেয়ের মতো খেতে লাগলাম।

এর মাঝেই ডক্টর কেবিনে প্রবেশ করলো।আর বললো,মি শুভ্র কি অবস্থা আপনার?
শুভ্র মাথা নাড়ালো।যার অর্থ ভালো
তারপর আমাকে বললো,মিসেস শুভ্র আপনাকে কিছু টেস্ট করতে হবে।আধ ঘন্টা পর নার্স আসবে।ওকে।
আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি পেশেন্ট নাতো।তাহলে আমি আবার কিসের টেস্ট করাবো!
শুভ্র কথার মাঝেই ধমক দিয়ে বললো, ওফ নিরাপাখি ডক্টর যখন বলছে সেহেতু তোমাকে টেস্ট করতেই হবে।আর তুমি পেশেন্ট না মানে!তুমি মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেছো সেটা কি ভুলে গেছো নাকি।বাই দা ওয়ে ডক্টরকে এত প্রশ্ন করছো কেন!

আমি মুখ বেঁকিয়ে বললাম,অসুস্থ হলে কি হবে!এক্সিডেন্ট করলে কি হবে!তেজ ঠিকই থাকবে।কথার ঝাঁঝ কমবে না।

_______________ _________________

এর মধ্যেই কেটেছে ১ সপ্তাহ।আমাদের সিংগাপুর ও যাওয়া হয়নি।৩/৪ মাস পর যাওয়ার চিন্তা আছে।শুভ্র ও মুটামুটি সুস্থ। আজকে আবার ডক্টরের কাছে যেতে হবে।আমার রিপোর্ট আনার জন্য।
নিরাপাখি আর কতক্ষন লাগবে তোমার রেডি হতে?প্রায় ২ ঘন্টা ধরে ওয়েট করছি।তুমি তো আর কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছো না!
এই যে আমি রেডি।চলো।

মে আই কাম ইন ডক্টর!
ইয়েস প্লিজ কাম।
আমি আর শুভ্র গিয়ে বসলাম।ডক্টর রিপোর্ট গুলো ভালো করে দেখলেন।দেখে বললো,কনগ্রেচুলেশন মি. শুভ্র নীল আহমেদ। আপনি বাবা হতে চলেছেন।
হুয়াট!আমার এই ছোট্ট পিচ্চির ভিতর আরেকটি প্রান বেড়ে উঠছে!শুভ্রের খুশি দেখে আমার চোখে পানি চলে আসলো। আমি মা হতে চলেছি!আমাদের ছোট একটা বেবি আসবে!মা হওয়ার অনুভূতি সত্যিই বর্ননা করার মতো না।
বাট লিসেন মিসেস শুভ্র আপনাকে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে হবে।আপনার বডিতে যতটুকু পরিমাণে ব্লাড থাকা দরকার সেই পরিমাণে কিন্তু নেই।এস এ রেজাল্ট ডেলিভারির সময় কিন্তু প্রবলেম হতে পারে।

___________ _____________
প্রচুর গরম পড়েছে।চারদিকে কাটফাটা রোদ।এসি অন থাকার পর ও যেন গরম লাগছে।যান্ত্রিক জীবনে যেন হাঁপিয়ে পড়েছি । এখন আর শুভ্র আগের মতো ঘুরতে নিয়ে যায় না। ওর একটাই কথা।এখন ধৈর্য্য ধরে বাসায় থাকো।আগে আমার প্রিন্সেস পৃথিবীতে আসুক।তারপর সব হবে।
দেখতে দেখতে আমার ৭ মাস হয়ে গেল।এখন আগের চেয়ে আরো গুলোমোলু হয়ে গেছি।শুভ্র শুধু বলে আমার গালগুলো নাকি টমেটোর মতো হয়ে গেছে।ওর নাকি টুপ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আর শুভ্র তো এখন আমাকে বেড থেকে নামতেই দেয় না।কিছুদিন পরপর বাড়ি থেকে সবাই এসে দেখে যায়। চাচিমা তো ওই বাসায়ই আমাকে থাকতে বলছিল। কিন্তু শুভ্র দিবে না।আমি নাকি একমাত্র শুভ্রের কাছেই সবচেয়ে সেফ থাকবো।
বাসায় বেবিদের যা যা লাগে সব নিয়ে এসেছে।এমনকি ড্রেস ও।রুমে বেবিদের এতগুলো ছবি লাগিয়েছে।এমনকি মাথার ক্লিপ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।এগুলো নাকি ওর প্রিন্সেস এর। আমার ৬ মাস হওয়ার পর থেকে শুভ্র অফিসে কম যায়। বেশির ভাগ কাজ অনলাইনেই করে নেয়।
ইদানীং আবার আমার মুড সুইং বেশি হয়।রাতের ৩ টা নাই ২ টা নাই আমার ফুচকা,আইসক্রিম, কেক খেতে মন চায়।শুভ্র কিছু কিছু জিনিস বাসায় এনেই রেখে দেয়।বিন্দুমাত্র পরিমাণ বিরক্ত যে তাও শুভ্রের মাঝে নেই।হাসিমুখে আমার সব আবদার পুরন করছে।আসলেই নিজেকে এখন লাকি মনে হয়।নয়তো শুভ্রর মতো একজনকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেতাম না।

নিরাপাখি এই নাও তোমার ফ্রুটস।হা করো।
ওফ!কত ফ্রুটস খাওয়াবা আমাকে!একটু আগেই না ডিম খেলাম।
খেয়েছো তো আরো ২ ঘন্টা আগে। আমার প্রিন্সেসটা কি এতক্ষন না খেয়ে থাকবে নাকি!ওর পাপা থাকতে তো এটা হতে দিবে না।দেখেছো প্রিন্সেস তোমার মাম্মাম ঠিক মতো তোমার কেয়ারই করে না!
আচ্ছা শুভ্র তুমি কি করে জানো আমাদের প্রিন্সেসই আসবে!
কারন আমি তো ওর পাপা তাই জানি।জানো আমার প্রিন্সেস এর নাম কি হবে জানো!ওর নাম হবে শুভ্রতা আহমেদ নিহা।
ওয়াও!!নাইস নেম আমি বললাম।তো এই নামই কেন!
তুমি আসলেই বোকা।শুভ্র সাথে মিলিয়ে শুভ্রতা।আর নিরার সাথে মিলিয়ে নিহা।
তুমি এতো স্বপ্ন দেখছো আমাদের বেবিকে নিয়ে!
হুম।কেন তুমি জানো না স্বপ্নই মানুষকে বাচিয়ে রাখে।আর আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ এর একটামাত্র বেবি।আমি কি তাকে নিয়ে স্বপ্ন না দেখে পারি বলো!

_________ __________
দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল।আমার……….

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here