ডাক্তার সাহেব পর্ব-১৭
#শারমিন আঁচল নিপা

একটা মানুষের প্রশংসা এমন হয় নীলকে না দেখলে জানা ছিল না। নীলের প্রশংসায় আমার কান ঝালাপালা। মগজ টগবগ করতেছে।

– এ এক কাপ চা শুধু চা না এটা বিষ। এ বিষ যে পান করবে একমাত্র সেই আবিষ্কার করতে পারবে দুধ চা ও যে বিষ হয় এ ব্যপারটা। তোমার চা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য । কারণ এ চা খেলে বিষ খাওয়ার অনুভূতি দেয়। এ চায়ের খবর বাংলাদেশের সরকার জানতে পারলে তোমাকে তিনি পারসোনাল ভাবে রেখে দিতেন শুধু তাকে এ চা বানিয়ে দেওয়ার জন্য। এ চায়ের জন্য তোমাকে নোবেল,অস্কার দিলেও আমার কাছে এর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হবে বলে গন্য হবে না। এ চা কে পারলে জাদুঘরে রেখে আসতাম। কিন্তু সে ক্ষমতা মহান আল্লাহ তা’আলা আমাকে দেননি। এ চা জীবনের খাওয়া শ্রেষ্ঠ কুখ্যাত চা। বিখ্যাত না হতে পারলেও সর্বশ্রেষ্ঠ কুখ্যাত হওয়ার সুনাম ধরে রেখেছে এ চা।

প্রশংসার বলিহারি। নিজের কথায় নিজে ফেঁসে গেলাম। কেন যে তার প্রশংসা শুনতে গিয়েছিলাম
। নিজেকে মনে হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে বেঁচে থাকা সর্বশেষ সৈন্য। নরম সুরে বললাম

– হয়েছে আর প্রশংসা লাগবে না। আমার গা গুলাচ্ছে। বমি আসছে। মাথাও ঘুরপাক খাচ্ছে। এ প্রশংসা আরেকটু শুনলে আমার দমটা বের হয়ে যাবে।

নীল অট্ট হেসে জবাব দিল

– আরেকটু করি? এমন করছো কেন? তুমিই তো প্রশংসা শুনতে চেয়েছিলে। এখন এমন করলে কী করে হবে?

– আমি মস্ত বড় ভুল করেছিলাম। সেজন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এবার তোমার মুখটা একটু কম চালাও। এ ভুলের মাসুল আর দিতে পারছি না।

বলেই নিজের মুখটা ফুলিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। নীলও আমার সাথে দাঁড়াল। আমি অভিমানে চাপা মুখটা নিয়ে দূরে চলে যেতে নিলাম। সে আমার হাতটা ধরে সামনে এনে বলল

– যেমনই রান্না করেছো ভালো। খাওয়ার মতো হয়েছে এটাই কম কিসের। আমার কাছে প্রশংসা আশা করো না। আমি বরাবরেই এমন। এটা আমার অভ্যাস বলতে পারো। মাঝে মাঝে তো আমাকেও তোমার বুঝতে হবে। চা টা মজা করেই খেয়েছি। আন্টির সাথে দেখা করে আসি এখন।

বলেই আমাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় কানের কাছে এসে বলল

– তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তবে হতাশায় তুমি জামা কাপড় ঠিক মতো পরোনি। আশাকরি এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে এখন থেকে পাগলের মতো না করে ঠিকমতো জামা কাপড় পরবে। যাই আন্টিকে দেখে আসি।

বলেই টই টই করে মায়ের রুমের দিকে যেতে লাগল। আর এদিকে আমি ভাবতে লাগলাম কী এমন করেছি যে নীল এমন বলল। নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে নিজেই চিৎকার দিতে মন চাইল। উড়নার পরিবর্তে সেলোয়ারের দু পা দুদিকে দিয়ে আছি। কতই না সুন্দর লাগছে আমায়। সত্যিই তখন মনে এত শোকের বার্তা জেগে উঠেছিল যে আমার হুঁশেই ছিল না আমি কী করছি। কী থেকে কী হচ্ছে। এতটাই শোকে ডুবে গিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। এখন নিজেকে অদ্ভুত লাগছে। সেলোয়ারটা টান দিয়ে গলা থেকে নামিয়ে দূরে ছুরে ফেললাম। দৌড়ে রুমে গিয়ে একটা উড়না নিলাম। উড়না নেওয়ার সময় দ্বিতীয় বার চমকালাম। কারণ আমি পরনের জামাটাও উল্টো পরেছি। এতটাই গাফেল হয়ে গিয়েছিলাম যে যার ফলস্বরূপ এমন হয়েছে। আমি নিজেকে সামলে নিলাম। জামাটা খুলে ঠিক করে পরলাম। তারপর চুলগুলো ভালো করে আঁচড়ে নিলাম। মায়ের রুমের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখলাম সে মায়ের সাথে কথা বলছে। আমি চুপ হয়ে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করছিলাম। তবে ব্যর্থ হলাম। এত দূর থেকে কথা কান অবধি আর আসছে না। তাই বাধ্য হয়েই মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। মায়ের কাছে বসতেই মা আমার নামে যত উদ্ভট কথা আছে বলতে লাগল নীলকে। আর এদিকে মনে মনে বলছিলাম আল্লাহ মাটিটা ফাঁকা করো আমি নীচে চলে যাই।

– এ মেয়েটাকে কিছু বলে যাও তো বাবা। ঠিক মতো গোসল করে না। খাওয়া দাওয়া করে না। এই বয়সী মেয়েরা কত সাজগোজ করে চলে আর ওকে দেখো কীভাবে চলছে। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে তবুও খায় না। রুচির ঔষধ দিও তো ওকে। বাথরুমও মনে হয় ওর ঠিক মতো হয় না তাই খাওয়ার রুচি কম। বাথরুম হওয়ার ট্যাবলেট ও দিও তো।

নীল হালকা হেসে বলল

– আমি দেখতেছি বিষয়টা।

সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছাও আমার হলো না। লজ্জায় মাথা নত করে বের হয়ে গেলাম। নীল মায়ের সাথে কথা বলতেই লাগল একের পর এক। রিদি মহারাণী এখনও ঘুমুচ্ছে। এদিকে একের পর এক মান সম্মানের ফালুদা হওয়ায় আমি আমার রুমে এসে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি। নিজেকে চিড়িয়াখানার সং মনে হচ্ছে। মায়ের উপর রাগটা প্রখর হচ্ছে। চুপ হয়ে বসে আছি।

মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে নীল আমার ঘরে আসলো। হাসতে হাসতে বলল

– ছিঃ, ছিঃ সিঁথি…. তুমি এত গিদর কী করে হলে? ঠিক মতো গোসল করো না। তোমার যে কষা হয় আমাকে বললেও পারতে। এজন্যই তো পাগলামি করো। বাথরুম কষা হলে মানুষের মাথা ঠিক থাকে না সেটা সবাই জানে৷ আমি এতদিন বুঝতে পারিনি এখন বুঝতে পারলাম তোমার এ পাগলামির কারণ। সমস্যা নাই তোমার জন্য হজমি নিয়ে আসব আরেকবার।

কথাটা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। নীলের কাছে এসে তার কলারটা ধরে চেপে বললাম

– একদম চুপ কোনো কথা বলবে না। একদম আমাকে পঁচাবে না।

নীল আমার রাগ টের পেয়ে জোরে জড়িয়ে ধরল। আমি নড়তেও পারছিলাম না। কলারটা ছেড়ে ওর বুকে মাথাটা নুইয়ে দিলাম। এর মধ্যেই রিদি মহারাণীর আগমণ। আর শুরু হলো লঙ্কা কান্ড।

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here