ডাক্তার সাহেব পর্ব- ১১
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
তবে সে খুশিটা বেশিক্ষণ আর স্থায়ী রইল না তার মেসেজটা পড়ে।
” সিঁথি এরকমটা তোমার কাছে কখনও আশা করিনি। তুমি বয়সে অনেক ছোট তাই আবেগও তোমার বেশি। কী থেকে কী করছো তাতে তোমার হুঁশ নেই। এ বেখেয়ালি স্বভাব তোমাকে মারাত্নক ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাবে। আমি বয়সে তোমার ১২-১৩ বছরের বড়। তুমি ম্যাচুউর না হলেও আমি ম্যাচুউর। তোমার আবেগে এভাবে সায় দিয়ে গেলে বিষয়টা আরও বিপদগামী হবে। তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়াটায় সবচেয়ে বেশি ভালো মনে হচ্ছে আমার কাছে। এভাবে এগুতে থাকলে তোমার আর আমার দুজনের জন্যই বিষয়টা খারাপ দিকে মোড় নিবে। ভালোলাগা একটা বিষয় ভালোবাসা আরেকটা বিষয় আর নেশা হলো মরাত্নক বিষয়। তোমার মধ্যে যা রয়েছে সেটা শুধু নেশা। নেশা তোমাকে কখনও ভালোবাসতে দিবে না। এ নেশায় তলিয়ে গেলে কখনও শান্তি পাবে না। তুমি ভালোবাসা আর নেশার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছো না। তোমার এ অল্প বয়সী আবেগ দিনদিন নেশায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। আগে ভালোবাসা বুঝো তারপর নাহয় কাউকে ভালোবেসো।”
মেসেজটা পড়ার পর ধরফর করতে লাগল বুক। তার সাথে কথা হবে না ভেবেই যেন দম আটকে যেতে লাগল। সত্যিই কী আমি তার নেশায় পড়েছি নাকি তার ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছি। সে কী আমায় ভুল বুঝল না’কি আমাকে বুঝতে আমি ভুল করছি। সারা শরীরে এক অদ্ভুত জ্বালা অনুভব হচ্ছে। আগে ভালোলাগা,ভালোবাসা, আবেগ বা নেশা কিছুই বুঝতাম না। নীলকে দেখার পর মনে হয়েছিল আমার ভেতরে থাকা সে সুপ্ত আবেগ,ভালোলাগা,ভালোবাসা জেগে উঠেছে। একটা চারা যেমন পানির একটু স্পর্শে অঙ্কুরিত হয় আমারও মনে হয়েছিল নীলকে দেখে নীলের কিঞ্চিৎ স্পর্শে ভালোবাসার ফাটা, খড়া পড়া জমিনটা সজীব হয়েছে। মেসেজটা পড়ার পর এতটা খারাপ কেন লাগছে? কেনই বা অযাচিত মন তাকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছা করছে? আমি কী সত্যিই নেশায় ডুবে গেছি নাকি তাকে ভালোবেসেছি।
শুয়া থেকে উঠে বসলাম। চোখের কোণটায় জল ছলছল করছে। বেহালার সুরে যেন মুখরিত চারপাশ। করুণ আর্তনাদ বুকের অন্তরালে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে। ডাক্তার সাহেবকে ছাড়া আমি থাকতে পারব তো? ৩-৪ দিনে একটা মানুষের প্রতি এত মায়া কোথায় থেকে আসলো? কেনই বা তাকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতেও পারছি না। দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু সামলে নিলাম। মায়ের ঔষধের পাশেই একটা খালি কাগজ আর কলম পেলাম। মা ঘুমুচ্ছে। রিদিও ঘুমুচ্ছে। আমার চোখের কোণে থাকা জলটা মুছে কাগজ কলম হাতে নিয়ে লিখা শুরু করলাম
#প্রিয়_ডাক্তার_সাহেব
তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আমার কী হয়েছে নিজেও জানি না। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি আমাকে গ্রাস করেছে। এই ভালোলাগার অনুভূতির অনুভবকে কী বলা হয় তা আমার জানা নেই । জানি না এটা আমার নেশা নাকি ভালোবাসার অদ্ভূত বিকাশ। আমার হৃদয়ের গভীরে,প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস জানান দেয় তুমি আমার কত আপন। মনে হয় না তোমার সাথে আমার ক্ষণিকের পরিচয়, মনে হয় তুমি আমার জনম জনমের চেনা। অথচ আমাদের দেখা হয়েছে খুবই অল্প সময় পূর্বে। এইটুকু সময়ে কীভাবে আমার পুরো হৃদয় জুড়ে তোমার বিচরণ হয়েছে সেটার উত্তর আমার জানা নেই। এই প্রশ্নের উত্তর আমি প্রতিনিয়ত খুঁজে চলেছি। তোমার কাছে নেশা মনে হলেও আমার কাছে তোমার প্রতি থাকা এ নেশাটাকে ভালোবাসা মনে হয়েছে। কেন তোমাকে দেখলে এই অনুভূতির আকাশে আবেগের উত্তাল মায়া ডানা মেলে আমি জানিনা। আর কেনই বা তোমার অনুপুস্থিতি আমাকে ব্যাথা দেয় বুঝতে পারি না।তোমাকে কিছু সময় না দেখলে কেন আমার বুকের বাম পাশে পিয়ানোর করুণ সুর এসে ধাক্কা দেয় জানা নেই। কেন এমন হয়? এটাকে কী বলে ? এটা কী প্রকৃত ভালোবাসার অনুভবের অনুভূতি নাকি তোমার প্রতি আমার ক্ষণিকের মোহ? এই অনুভূতি কী সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাবে ,নাকি সময়ের মতো বহমান হয়ে চিরকাল আমার হৃদয়ে রয়ে যাবে ? মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করতে করতে সত্যিই কী তোমার মায়ার বন্ধনে আমি জড়িয়ে পড়েছি! তোমাকে ছাড়া যে আমার দম বন্ধ লাগছে। আমার কোনো অধিকার নেই জোর করে তোমাকে আঁকড়ে ধরে রাখার। যদি অধিকার থাকত তাহলে বলতাম আমাকে ছাড়তে তোমায় দিব না। তুমি যেহেতু চাচ্ছই কথা না বলতে আমি জোর করব না। তবে আমি কী পারবো এত কঠিন যন্ত্রনার সম্মুখীন হতে? যদি কখনও শুনো তোমাকে পাগলের মতো হন্নে খুঁজছি,যদি কখনও বুঝো এটা আমার মারাত্নক আফিমের নেশা ছিল না তোমাকে ভালোবাসার নেশা ছিল তাহলে সেদিন কী তুমি আমাকে আপন করে নিবে? নাকি মিথ্যা অভিনয়ের সময় ফুরিয়ে গেলে চলে যাবে আমাকে একা ফেলে?
কলমটা থেমে গেল। চোখ দিয়ে দু ফুটো জল লিখিত পৃষ্ঠায় গড়িয়ে পড়ল। চোখটা মুছে কাগজটা ভাঁজ করে নিলাম। সময় করে নীলকে পাঠিয়ে দিব এটা। হয়তো সে বুঝবে হয়তো না। কিন্তু খুব শূন্য লাগছে। নীলকে ছাড়া নিজেকে অপূর্ণ লাগছে। মেসেজের টোনটা বেজে উঠল ফোনে। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম নীল আবার মেসেজ দিয়েছে। আবার কী মেসেজ দিল সে? সে কী আরও কড়া কথা বলবে? মেসেজটা পড়ার পর নিজেকে সামলাতে পারব তো? সাত,পাঁচ অনেক কিছু ভেবেই মেসেজটা অপেন করলাম।
” আগের মেসেজটা পেয়ে তোমার অনুভূতি কেমন ছিল? চোখের কোণে কী শিশিরবিন্দু জমেছিল নাকি আমার প্রতি প্রবল রাগ আর ক্ষোভ জমেছিল। যদি আমার প্রতি তোমার রাগ জমে তাহলে বলব আমার প্রতি তোমার যেটা ছিল সেটা নেশা। আর যদি মেসেজটা পড়ার পর আমার প্রতি তোমার অভিমান জমে, আমাকে না পাওয়ার বিয়োগ যন্ত্রণা অনুভব করো এবং আমাকে ছাড়া তোমার অনুভূতি শূন্য মনে হয় তাহলে বলব এটা তোমার আমার প্রতি প্রবল ভালো লাগা ছিল। কিন্তু এত ভালোলাগার পরও যদি আমাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে মন চাইলেও আমার কথা ভেবে থেমে পড়ো এবং আমার জন্য সহস্র জনম অপেক্ষা করার ওয়াদা করো তাহলে বলব এটা তোমার ভালোবাসা ছিল। জানি না তোমার অনুভূতির আকাশে কী ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি জানতেও চাইব না। কারণ তোমার মুখ থেকে তোমার অনুভূতি শোনার চেয়ে আমি নাহয় আবিষ্কার করে নিব। কেন জানি না মনে হচ্ছে তোমার নীল চোখে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির জলটা মুছে হালকা হাসো তারপর চোখ বন্ধ করে আমার নামটা তিনবার বলে দীর্ঘ জোরালো একটা নিঃশ্বাস টানো। তোমার ভালো লাগবে। আর এ বয়সে এমন হয়েই। আমি কিছু মনে করেনি। তবে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়ায় আমি স্তবির হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল কোনো পরশ পাথরের আলিঙ্গন পেয়েছি আমি। যে পাথরের ছোঁয়ায় আমার সারা শরীরের অনুভূতি জেগে উঠেও স্থিত হয়ে গিয়েছিল। অনেক কথায় বলতে মন চাচ্ছে তবে বলতে পারছি না। সন্ধ্যায় আসব তোমার মাকে দেখতে। কপালে কালো একটা টিপ পড়ে থেকো। চুল গুলো খোলা রেখো। যাতে করে মাতাল বাতাসে তোমার চুল গুলো দুল খায়। আর কিছু বলতে পারছি না। বাকি কথা সন্ধ্যায় হবে। আমাকে এখন অফিসে যেতে হবে। ভালো থেকো প্রিয়তম। প্রেম ফেক হোক আর যাইহোক একমাসের প্রেমিকা তো তুমি। তোমার মন খারাপ থাকলে আমার মনেও নাড়া দেয়। আর কথা বাড়াচ্ছি না। টাটা”
মেসেজটা পড়ার সাথে সাথে মনে হলো প্রশান্তির শীতল হাওয়া আমার গায়ে লাগছে। সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে পড়েছে অনুভূতির প্রবল তাড়নায়। আমি চোখের জলটা মুছলাম তারপর চোখ বন্ধ করলাম। নীলের মুখটা ভেসে আসলো। তিনবার বললাম নীল, নীল, নীল। তারপর জোরালো কয়েকটা নিঃশ্বাস টেনে ছাড়লাম। পরক্ষণেই চোখটা খুললাম। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। নীলের মোহেই পড়ে থাকতে যেন ভালো লাগছে। মানুষ মদের নেশায় সর্ষেফুল দেখে শুনেছিলাম আর আমি প্রেমের নেশায় চারপাশে শুধু নীলকে দেখছি। এ এক অদ্ভুত ভালোবাসার অনুভূতি।
সকাল ৮ টা বাজে। মায়ের আগের স্যালাইনটা পাল্টে নতুন স্যালাইন দিয়ে গেছে নার্স। রিদি চুপ হয়ে বসে আছে। গতকালের কাহিনির পর তার সাথে আমার কোনো কথায় হয়নি বলা চলে। তবে আমি কারও সাথে রাগটা বেশিক্ষণ স্থায়ী করতে পারি না। রিদির পাশে গিয়ে বসলাম। রিদি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। মনেই হচ্ছে না রিদি আমার উপর রেগে আছে বা গতকালকের ঘটনায় তার কোনো প্রভাব এখনও আছে। আমিও হালকা হাসলাম। আমি কিছু বলে উঠার আগেই রিদি বলে উঠল
– অনীলকে অনেক ভালোবাসিস তাই না?
আমি রিদির কথায় কী উত্তর দিব বুঝতে পারছি না। চুপ হয়ে মাথা নীচু করে ফেললাম। সে আমার মাথাটা উপরে তুলে আবারও একই প্রশ্ন করল। আমি আবারও নিশ্চুপ। পরপর তিনবার প্রশ্ন করার পর স্থিত গলায় শুধু হুম বললাম। রিদি হালকা হেসে বলল
– আমিও বুঝতে পেরেছিলাম। অনীল ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময় তোর পাগলামির কথা গুলো বলেছিল। তাই ইচ্ছা করেই এমন করেছিলাম।
আমি বিস্ময় চোখে রিদির দিকে তাকাই। তার চেহারায় মায়ার হাসির রেখা। বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করি
– তার মানে এটা তোদের পরিকল্পনা ছিল? ইচ্ছা করেই আমার সাথে এমন করেছিস।
রিদির মুখ থেকে উত্তর আসলো না কোনো। শুধু মুচকি হাসলো। আমিও চুপ হয়ে গেলাম। রিদির সাথে করা ব্যবহারটা এখন নেহাতেই অন্যায় মনে হচ্ছে। কারণ এটা নিতান্তই তাদের একটা গেইম ছিল। নীলকে যতটা চুপচাপ বা সরল সাধু ভেবেছিলাম নীল ঠিক তার বিপরীত। আমি চুপ হয়ে গেলাম। কোনো কথায় আর বললাম না। তবে মনে মনে নীলের প্রতি জন্মে যাওয়া মায়ার আস্তরণ আমাকে আরও হুমকির দিকে নিবে নাকি সুন্দর জীবন দিবে সেটাই ভাবতে লাগলাম।
সারাদিনের ব্যস্ততা পার হয়ে পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবতে লাগল। মায়ের অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে আগের থেকে। আমি কেবিনের এক পাশে বসে আনমনে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছি। বাবার কোমল স্পর্শে আমার ধ্যান ভাঙল।
– তুমি মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাও? কী নিয়ে এত ভাবো। আসার পর থেকে তোমাকে বেশ আনমনা লাগছে। এমন তো ছিলে না।
বাবার দিকে তাকালাম। বাবার জিজ্ঞাসু চোখগুলো অনেক কিছুই জানতে চাচ্ছে। আমি সবকিছু এড়িয়ে গিয়ে বললাম
– তেমন কিছু না বাবা। এমনিতেই…। পড়াশোনার চাপ তো তাই। কী থেকে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।
বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
– ভাবনাটা পড়াশোনা নিয়ে হলে সমস্যা নেই তবে অন্যকিছু নিয়ে হলে সাবধান হয়ে যেও। তোমার বয়সটা অনেক খারাপ। এ বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এ বয়সটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই তুমি জিতে যাবে। তুমি আমাদের একটা মাত্র মেয়ে আমি চাইব না তুমি এমন কিছু করো যেটা আমাদের কষ্ট দেয় এবং বিপাকে ফেলে।
বাবার কথাগুলো চুপ হয়ে শুনছিলাম। বাবা মায়েরা হয়তো ছেলে মেয়েদের চোখ দেখেই বুঝতে পারে তাদের মনে কী চলছে। নাহয় বাবা এভাবে কথাগুলো বলত না। কই আগে তো কখনও এমন বলেনি। আমার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে বলেই তো আজকে এমনটা বলেছে। তবুও বাবাকে সবটা বলা যাবে না। নিজের মধ্যে মনের হাজার কথা চেপে রেখে বললাম
– বাবা তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো তেমন কিছুই না।
– হুম। যাইহোক রাতের খাবার দিয়ে গেলাম। তোমার মা তো শুধু ঘুমুচ্ছেই। মাঝে মাঝে উঠে আবার ঘুমায়। আর ৩ দিন পরেই বাসায় নিয়ে যেতে পারব। এদিকে অফিসেও তাড়া দিচ্ছে। পরের চাকুরি করলে যা হয় আর কী। রিদির মাকে বলেছি কিছুদিন থাকতে। পরশু আমাকে ঢাকায় চলে যেতে হবে। তুমি একটু তোমার মায়ের খেয়াল তখন রেখো।
– বাবা ছুটি কী বাড়ানো যায় না।
– সেটা পারলে কী আর চলে যেতামরে মা। অন্যের অধীনে চাকুরি চাইলেও আর থাকতে পারব না।
– তুমি চিন্তা করো না আমি মায়ের যত্ন ঠিক করে নিব। এখন কী বাসায় চলে যাবে?
– একটা কাজ আছে কাজে যাব। অনীল আসবে হয়তো। ও আসলে বলবে বসতে।
অনীলের নামটা শুনতেই যেন বুকে ধুক করে উঠল। মনের ভেতরটা নাচতে লাগল। নীল তো বলেছিল আমাকে কালো টিপ পড়তে, ও তো চলে আসবে কিন্তু কালো টিপ কোথায় পাব? অস্থিরতা বাড়তে লাগল। আমার অস্থিরতা চোখেমুখে ফুটে উঠল। বাবা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
– এত অস্থির কেন?
আমি নিজেকে সামলে আমতা আমতা করে বললাম
– কিছু না বাবা এমনি। তুমি না’ কোথায় যাবে, যাও।
বাবা আর কথা বাড়াল চলে গেল। আমি কালো টিপ খুঁজায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। রিদিকে জিজ্ঞেস করলাম কালো টিপ আছে কী না। রিদি মাথা নেড়ে না করল। আমার অস্থিরতা বাড়তে লাগল। তাহলে কী নীলের কথা রাখতে পারব না? রিদি আমার অস্থিরতার কারণ বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। আমার হাতে কাজলটা ধরিয়ে দিয়ে বলল
– তোর নাগর কী কালো টিপ পরতে বলছে নাকি?
বললে কাজল দিয়ে টিপ পরে নে।
– তুই বুঝলি কী করে?
– তোর চোখ মুখ দেখেই সব বুঝা যায়। সিঁথি স্টুডেন্ট খারাপ হলেও বয়সে তোর বড় আমি। তাই বলব আবেগ ভালো তবে এত উতলা আবেগ ভালো না। এখন এ কথাগুলো হয়তো ভালো লাগবে না। একটা সময় এ কথাগুলোই দেখবি সত্য মনে হবে। তোকে সাবধান করছি না শুধু এটাই বুঝাচ্ছি যা করবি ভেবে চিন্তায়।
আমি রিদির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললাম
– যা হচ্ছে হতে দেই না। মনের কথাটাই শুনি। ভুল হলে নাহয় শুধরে নিব আর ঠিক হলে আঁকড়ে নিব। ভুল তো সবাই করে। তবে এটা ভুল কী না জানি না। ঠিক ও তো হতে পারে। সময়ের সাথে গা ভাসিয়ে দিই। যা হাবার হবে।
রিদি আমার গাল টেনে ধরল।
– প্রেমে পড়ার সাথে সাথে তো বেশ কথা শিখে গেছিস। যা কাজল দিয়ে টিপ এঁকে নে।
আমি কাজলটা হাতে নিয়ে গোল করে একটা টিপ কপালে এঁকে নিলাম। তারপর চোখটা বন্ধ করলাম নীলের অবয়বটায় ভেসে আসলো চোখে।
রাত তখন ৭ টা ৩০। কেবিনের দরজাটায় কেউ কড়া নাড়ল। সে সাথে আমার বুকের স্পন্দনও দ্রূত গতিতে উঠানামা করছে। আমি জানি নীল এসেছে। রিদি মায়ের পাশেই শুয়ে আছে। রিদির চোখ বন্ধ আর মা তো সারাক্ষণেই ঘুমুচ্ছে। আমি জানি রিদি ঘুমোই নি তবে নীলের সাথে যেন কথা বলতে পারি তাই ঘুমের ভান ধরে আছে। আমি দরজাটা খুললাম। নীল ঠিক আমার সামনে। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। ঠোঁটগুলো হালকা নড়ছে। কিছু বলতে চেয়েও যেন বলতে পারছে না। তার ঠোঁটগুলো যেন আমাকে আঁকড়ে ধরে নিতে চাচ্ছে। মিনিট দুয়েক যাবত দুজনের মধ্যে নিস্তবতা বিরাজ করছে। দুজন দুজনের একটু কাছে আসলাম। নীরবতা ভেঙে কিছু বলতে যাব এমন সময় মনে হলো কিছু একটা হলো। আমি কাহিনি টের পাওয়ার আগেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কারণ
চলবে?
(কপি করা নিষেধ)