#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

রঙিন পেপার গুলো লুকিয়ে রেখে শুয়ে পরে পদ্ম, একসময় পেপার গুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে।

জায়ান কলেজে পড়াশোনা করার সুবাদে ঢাকা ইমান হোসেনের বাসায় থাকতো।আর সেই থেকে ইরা পছন্দ করতে শুরু করে জায়ান কে। অনেক সাহস যুগিয়েও কখনো জায়ান কে বলতে পারে নাই ইরা। তিন বছর আগে বান্ধবীরা ইরা কে বলে, জায়ান কে প্রপোজ করার জন্য।ইরা অনেক সাহস সঞ্চয় করে ঠিক করে আজকেই বলে দেবে জায়ান কে নিজের মনের কথা।তো যেই ভাবা সেই অনুযায়ী জায়ানের জন্য চকলেট আইসক্রিম কিনে আনে ইরা কারণ জায়ানের খুব পছন্দ চকলেট আইসক্রিম। কলেজ থেকে ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে খানিকক্ষণ ট্রাই করলো ইরা কিভাবে জায়ান কে প্রপোজ করবে। তারপর খাবার টেবিলে জায়ান সবাই কে বললো তার কিছু বলার আছে। সবার উৎসুক হয়ে তাকায় জায়ানের পানে, জায়ান ভনিতা না করে সোজাসাপ্টা বলে দেয় যে সে একটা মেয়ে কে পছন্দ করে এবং তাকে বিয়ে করতে চায়! সেদিন ইরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরেছিল, নিজের মানসপটে যাকে স্থান দিয়েছে তার মুখে পরনারীর কথা শুনে কষ্টে বুক চিরে কান্না বেড়িয়ে আসছিল। সেদিন নিজেকে কোন রকম সামলে নিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে যায় ইরা। হঠাৎ এরকম আচরণে হতবাক হয়ে যায় খাবার টেবিলে বসে থাকা উপস্থিত সবাই।
ইমান হোসেন মেয়ের আচরণ সন্দেহজনক মনে করে, একান্তে কথা বলেন। ইরা নিজের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে বাবাকে জায়ানের কথা বলে। ইমান হোসেন মেয়ের কষ্ট দেখে তাকে কথা দেয়,জায়ানের সাথে তার বিয়ে দিবে যেভাবেই হোক।তাই তো সুযোগ বুঝে ইমান হোসেন পদ্ম আর জায়ানের ডিবোর্স করিয়ে দেয়! এবং জায়ান কে জানায় পদ্ম অন্যত্র বিয়ে করে নিয়েছে। আরো জানায় যে পদ্ম জায়ানের থেকেও বড়লোক কাউকে বিয়ে করেছে। পদ্ম এরকম কাউকেই স্বামী হিসেবে চেয়েছে যে কিনা টাকা দিয়ে ভরিয়ে রাখবে পদ্ম কে।যা শুনে জায়ান ভুলতে চেষ্টা করে পদ্ম কে। কিন্তু ভুলতে পারে না,যাকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছে তাকে ভুলে কিভাবে? চাইলে ও ভুলা যায় না।
যাই হোক ইরা তার বাবার সাথে মিলে শুধু ডিবোর্স ই করায় নি তার সাথে পদ্ম কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা ও করে!তবে সেটা একান্তই নিজে এর সাথে ইমান হোসেন জড়িত ছিলেন না। পদ্ম জায়ানের প্রথম বিয়ের পর যখন জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছিল তখন ইরা ই পদ্ম কে দোলনা থেকে ফেলে দিয়েছিল! এরপর লোহা দিয়ে আঘাত করে উদ্ধত হলে,কারো আসার শব্দ শুনে তৎক্ষণাৎ সরে যায় ওখান থেকে।

এই ছিল রঙিন পেপারের রহস্য।যা কিছু সময় আগে ইরা তার ডাইরি থেকে বের করে। অনেক গুলো হ‌ওয়ায় বাতাসে উড়ে যায় কিছু আর বাকি গুলো সব পুরে ছাই করে দেয় ইরা।
_______
বিয়ের সাজে সজ্জিত হচ্ছে ইরা তখন জেসি আসে ফুলের বুকে নিয়ে।ইরা ই জেসি কে ইনভাইট করেছে। দু’জনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।জায়ান আর পদ্ম’র বৌভাতের অনুষ্ঠানে ইরা ই জেসি উষ্কানি মূলক কথা বলে পাঠায়!
ইরার সাজ শেষ হলে জেসি ফুলের বুকে হাতে দিয়ে বললো,
–“অনেক অনেক শুভকামনা রইলো, নতুন জীবনে সুখী হ‌ও এই কামনা করি।

ইরা মলিন মুখে বললো,
–“তাকে ভুলতে পারলে তো সুখী হবো!

জেসি কাঁদে হাত রেখে আশস্থ করে বললো,
–“ঠিক ভুলতে পারবে দেখো।এই দেখ আমি কিন্তু একদম ভুলে গেছি। আমার হাসবেন্ড আমাকে খুব ভালবাসে, কেয়ার করে।যা জোর করে কখনোই আমি পেতাম না। আসলে কি বলতো ও আমাদের জন্য কল্যাণকর ছিল না সেই জন্য আমরা তাকে পাইনি। আর যে আমাদের জন্য কল্যাণকর তাকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে পাঠিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা।দেখবে তুমিও ঠিক বুঝতে পারবে।
–“দো’আ রাইখো আমার জন্য আমিও যেন তোমার মতো করে সুখে সংসার করতে পারি,যার সাথে ঝড়াতে যাচ্ছি তাকে যেন সুখি করতে পারি।
–“ইনশা আল্লাহ, ইরা তুমি পারবে। আমি অবশ্যই দো’আ করবো।

পদ্ম হালকা সেজেছে আজকে, বিয়ে বাড়ি বলে কথা একটু না সাজলে ভালো লাগে?তাই সেজেছে, অনিতা সাজিয়ে দিয়েছে।ভাবী ননদিনী আজকে একরকম ড্রেস পরেছে। অনলাইন থেকে অনিতা দুটো কুর্তি অর্ডার করেছে একটা তার একটা পদ্ম’র। পদ্ম’র টা অনেকটা ঢিলেঢালা দেখে করেছে যাতে পরিদান করতে অসুবিধা না হয়।তো সেজেগুজে ইরার কাছে আসে,ইরা কিভাবে ব‌উ সেজেছে দেখার জন্য। ইরা গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে। পদ্ম’র মতে বিয়ের শাড়ি লাল রঙের সুন্দর লাগে,লাল রঙটার মধ্যে কেন জানি বিয়ে বিয়ে একটা ফিলিংস আসে।তো যাই হোক সামনাসামনি কিছু বললো না পদ্ম শাড়ির রঙ নিয়ে। কাছে এসে বললো,
–“মা শা আল্লাহ,ইরা তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।আরে জেসি আপু কখন এলে?

জেসি হাসি উপহার দিয়ে বললো,
–“এইতো কিছু সময় আগে। কেমন আছো তুমি? বেবি কেমন আছে?

পদ্ম খুশিমনে জবাব দেয়,
–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আমরা দুজনেই। তুমি কেমন আছো? ভাইয়া আসেনি?
–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। না ওর আজকে ইমার্জেন্সি অপারেশন আছে।তাই আসতে পারেনি।
–“আচ্ছা।

অনিতা এসে বললো,
–“চলো সবাই ছবি তুলি?

পদ্ম উৎসাহ ভড়া মুখশ্রী নিয়ে বললো,
–“আচ্ছা চল।

তারপর সবাই মিলে সেলফি তুললো,ইরার সাথে একজন দুজন করে তুললো। সব শেষে ইরা পদ্ম কে বললো,
–“আমাকে মাফ করে দিও ভাবীমনি!

পদ্ম বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–“কিন্তু কেন? কোন অন্যায় করলে তো মাফ করবো? পাগলী মেয়ে।

ইরা অনুনয়ের স্বরে বললো,
–“তুমি বলো আমাকে মাফ করেছো?
–“আচ্ছা শুধু শুধু মাফ করে দেওয়ার কথা কেন আসছে?

তারপর ইরার বার বার একই কথা শুনে বিরক্ত হয়ে পদ্ম বললো,
–“আচ্ছা ঠিক আছে মাফ করে দিলাম, এবার খুশি?হাসো দেখি, আজকালকার মেয়েরা বিয়েতে মলিন মুখে থাকে না বুঝছো।

পদ্ম’র কথায় জোরপূর্বক হাসে ইরা।
আড়ালে আবডালে যা কিছু হয়েছে তা লুকায়িত রয়ে যাবে চিরদিন।থাকনা কিছু অজানা কালো অধ্যায়,এতে যদি সবাই ভালো থাকে তাহলে মন্দ কি? তাছাড়া ভালো মন্দের বিচার তো পরপারে হাসরের ময়দানে হবেই।
________
বেশ কিছুদিন পর,

জান্নাত আর এরশাদ হোসেন পদ্ম দের বাসায় আছেন। পদ্ম’র ভেলিভারি’র সময় ঘনিয়ে আসছে তাই তারা এখন বাড়ি না ফিরে পদ্ম’দের বাসায় থাকছেন।জায়ান তো বেশিরভাগ সময় কলেজে থাকে তাই পদ্ম এই সময় একা বাসায় থাকবে বলে তারা আছেন।যত সময় যাচ্ছে ততই ভয় জেঁকে বসেছে পদ্ম’র মনে। এখন কোন প্রয়োজন হলেও ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না পদ্ম।তার ধারণা ডাক্তারের কাছে গেলেই ডাক্তার সিজার নামক ভয়াবহ কাজটা করবে তার সাথে।তাই চ্যাক‌আব করানোর জন্য ও ডাক্তারের কাছে যায় না পদ্ম। মাঝে মাঝে জায়ান কে কলেজে যেতে দেয় না ভাবে যদি সে মরে যায়! তাহলে তো জায়ানের সাথে আর থাকা হবে না তার। আবার মাঝে মাঝে জায়ান কে জড়িয়ে কান্নাকাটি করে, এতে জায়ান ও খুব কষ্ট পায়।এই সময়টাতে মেয়েরা মৃত্যু কে কাঁদে নিয়ে ঘুরে।তাই পদ্ম’র এহেন কথা বার্তায় জায়ান ও ভয় পায়। পদ্ম’র কিছু হলে এবার জায়ানের স্থান হবে পাগলা গারদে নিশ্চিত।১৪৫

গভীর রাত জায়ান বালিশ ঠেকিয়ে বসে ব‌ই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায়। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়, পাশে তাকিয়ে দেখে পদ্ম নেই।জায়ান কয়েকবার পদ্ম বলে ডাক দেয় কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। এদিক ওদিক খুজে না পেয়ে বাথরুমে গিয়ে দেখলো। সেখানে ও নেই! তারপর খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখে কিচেনে লাইট জ্বালানো, এগিয়ে গিয়ে দেখে পদ্ম দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি যেন করছে।জায়ান পিছন থেকে ডেকে বললো,
–“ঘুমবাবু কি করছেন আপনি?

হঠাৎ কারো কথায় ভয়ে কেঁপে ওঠে পদ্ম! ফলস্বরূপ হাত থেকে কি যেন পরে যায় ফ্লুরে।জায়ান নিচে তাকিয়ে দেখে গুঁড়ো দুধের কন্টিনার নিচে পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।জায়ান কাছে গিয়ে পদ্ম কে ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। পদ্ম’র গাল দুটো ফুলে আছে, জায়ান বললো,
–“আপনার মিল্ক খেতে ইচ্ছে করছে আমাকে বললে কি হতো?

পদ্ম কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না,আর বলবেই বা কি করে মুখ বরতি করে রেখেছে গুঁড়ো দুধ দিয়ে।তা দেখে জায়ান বললো,
–“আপনি না এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছেন ঘুমবাবু। এভাবে মুখ বরতি করে খেতে হবে বলেন যদি বিষম উঠে তখন?

বলতে না বলতেই পদ্ম হেঁচকি দিতে শুরু করে, জায়ান তাড়াতাড়ি করে পানি এনে দেয়। পদ্ম ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয়।জায়ান তখন বললো,
–“দেখলেন তো কি হলো? মনে হচ্ছে যেন আপনাকে কেউ মিল্ক খাওয়ার জন্য পুলিশে দিবে সে জন্যই এতো রাতে চোরি করে এসেছেন খাওয়ার জন্য।

পদ্ম নরম গলায় বললো,
–“আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছিল তাই

তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, জায়ান হেসে বলে,
–“ওলে ঘুমবাবু টা। আচ্ছা ঠিক আছে খাওয়া হয়েছে? নাকি আরো খাবেন?

পদ্ম বলে,আর খাবে না।তাই জায়ান ফ্লুর টা পরিষ্কার করে পদ্ম কে নিয়ে রুমে যায়।
পাওডার দুধ পদ্ম’র খুব পছন্দ, ছোট বেলা থেকেই সে এভাবে খায়।আর এই সময় তো মেয়েদের অনেক কিছু খেতে ইচ্ছে করে।

#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here