#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১৪
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
জায়ান আর পদ্ম কিছু সময় আগে জেসিদের বাসায় এসে পৌঁছায়।এ বাসায় এসে পদ্ম জানতে পারে জেসির জন্য খুব ভালো একটা বিয়ের ঘর আসছে। কিন্তু জেসি বিয়ে করবে না বলে জেদ ধরে বসে আছে, আর সে জন্যই রফিক জায়ান আর পদ্ম কে আসতে বলেছে। তাঁরা যেন বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করায় জেসি কে।খবর টা শুনার পর থেকে পদ্ম খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে,জেসির বিয়েতে কি কি করবে এর মধ্যেই পরিকল্পনা করতে শুরু করে দিয়েছে।কথায় আছে না”যার বিয়ে তার খবর নেই পারা-প্রতিবেশির ঘুম নেই”। এখন দেখা যাচ্ছে কথাটা একদম বাস্তব।
যাই হোক,
জেসি জায়ান পদ্ম কে দেখে খুব খুশি হয়, কাজের মেয়ে সুমি কে দিয়ে অনেক রকমের ফল নিয়ে আসে জায়ান পদ্ম’র জন্য। খেতে খেতে পদ্ম বললো,
–“আপু পাত্র কে একটু দেখো না? তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিবে।আর দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না তাই না। আমাকে কতো সত লোক দেখতে আসছে ভাবতেও পারবে না তুমি।কই আমার কি অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে বলো?
পদ্ম’র কথা শুনে জেসি নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আচ্ছা এই ব্যাপার! তোমাদের বাপি আসতে বলেছে তাই তো?তাই বলি হঠাৎ আমাদের বাসায় তোমাদের আগমন। এখন বুঝতে পারছি আসল ঘটনা কোথায়।
মেয়ের কথা শুনে করুন চোখে তাকায় রফিক।জারা দুষ্টুমি করে বলে,
–“বাপি তো ঠিক কাজ করেছে।বুরি হয়ে যাচ্ছো দিন কে দিন! এখন যদি তোমাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো না হয় তাহলে তো তোমাকে কেউ তাদের ঘরের বউ করবে না বুরি বলবে সবাই। তখন কি হবে বলো তো?
জারার কথা শুনে রেগে যায় জেসি,আর বলে,
–“শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার শখ নেই আমার।তোর ইচ্ছে হলে বলে দে ঐ ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে দেই।আর আমি সারাজীবন বাপির সাথে থাকবো।
এবার জায়ান বললো,
–“এভাবে তুমি কতদিন থাকবে? পাঁচ বছর দশ বছর? কিন্তু একসময় ঠিক আফসোস করবে তখন নিজের প্রতি নিজের বিতৃষ্ণা চলে আসবে। একাকীত্ব বোধ করতে করতে শেষ শেষ হয়ে যাবে।
–“বাপি তো থাকবে, তাহলে একাকীত্ব বোধ কেন করবো?
রফিক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“মা’রে বাপি তো সারাজীবন বেঁচে থাকবো না। তখন তো আমি মরেও শান্তি পাবো না।
–“বাপি এমন ও হতে পারে আমার মৃত্যু তোমার আগে হয়ে গেল! মৃত্যু তো আর বয়স দেখে হয় না তাই না?
জেসির কথা শুনে পদ্ম জায়ান বুঝতে পারলো, তাকে বুঝানো সহজ কাজ নয়। তাদের অন্য কোন উপায় ভাবতে হবে।
______
জায়ান বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে আর পদ্ম পায়চারি করছে, জেসি কে কি করে রাজি করানো যায় ভেবে পায় না সে। পায়চারি করতে পদ্ম বললো,
–“কিছু আইডিয়া দিন না, বসে বসে ফোন ইউজ করলে মাথায় কিছুই আসবে না।
কথাটা শেষ করে পাশে তাকিয়ে দেখে জায়ান নেই! পদ্ম ঠোঁটে আঙুল রেখে ভাবনার ভঙ্গিতে বললো,ইমা,, কোথায় গেলেন উনি? দূর ভাল্লাগে না কচুর মাথা। এতো দুশ্চিন্তা আমার এই ছোট্ট মাথাটা নিতে পারে?
নিজে নিজে খানিকক্ষণ বকবক করে পদ্ম। তখন এসে পদ্ম কে খাটে বসিয়ে হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেয়। আজকে চেক শাড়ি পরেছে পদ্ম, হাতে সোনালী এক জোড়া চুড়ি পরেছে,যা দেখে জায়ান অনলাইন থেকে কাঁচের চুড়ি অর্ডার করে আনে।আর এখন হাতে পরিয়ে দিচ্ছে। হলদে ফর্সা রাঙা হাতে ফুটে উঠেছে যেন চুড়ি গুলো। পদ্ম নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো, চুড়ির শব্দের জংঙ্কারের সাথে পদ্ম’র হাসি ও যেন খেলে যাচ্ছে।জায়ান প্রশান্তির হাসি হাসে, তারপর চুলের খোঁপায় বেলি ফুলের গাঁজরা সেট করে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে যায় পদ্ম কে। তারপর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পদ্ম’র কাঁদে থুতনি রাখে জায়ান।দুই হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে রাখে পদ্ম,মাঝে মাঝে আঙুলের ফাঁকে জায়ান কে দেখে যা দেখে বিস্তৃত হাসে জায়ান। একটু পর জায়ান কে চমকে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পদ্ম বললো,
–“জাযাকা আল্লাহু খাইরন ওয়া দুনিয়া ফিল আখিরাহ।মি.নির্ঘুম।
যে মেয়েটা এতোক্ষণ লজ্জা রাঙ্গা হয়ে ছিল হঠাৎ তার কি হলো কিছুই বুঝতে পারলো না জায়ান।তাই মিনমিন করে জবাব দিলো,
–“ওয়া আনতুম ফা জাযাকা আল্লাহু খাইরন ওয়া দুনিয়া ফিল আখিরাহ।
তারপর জায়ান কে ছেড়ে দিয়ে পদ্ম বললো আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব, আপনার জন্যই দারুন আইডিয়া খুঁজে পেলাম।জায়ান কিছুই বুঝতে পারলো না, কিসের কথা বলছে পদ্ম। পদ্ম কে খাটে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করল জায়ান কি হয়েছে? পদ্ম বললো,
–“জেসি আপু কে বিয়েতে রাজি করানোর আইডিয়া খুঁজে পেয়েছি! আপনি শুধু আমাকে একটু সাহায্য করবেন তাহলেই হবে।
–“কি করতে হবে বলেন?
পদ্ম জায়ান কে সবটা বুঝিয়ে দেয় কি কি করতে হবে।জায়ান সবটা শুনে বললো,
–“এতে কি কোন কাজ হবে বলেন তো?
–“ইনশা আল্লাহ হবে মনে হচ্ছে। তখন আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে,জেসি আপু দাড়িয়ে থেকে তাকিয়ে ছিল। তখন মনে হয়েছে এই ভাবেই আমরা বুঝাতে পারবো জেসি আপুকে।
–“আচ্ছা দেখুন কতোটা কাজ হয়, আপনার সাথে রোমান্স করতে আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে।হা হা হা,,,
–“আচ্ছা তো আপনি আছেন সুযোগের সদ্ব্যবহার করার ধান্দায় তাই না?
–“হা হা হা,,,
________
খাবার টেবিলে বসে জায়ান পদ্ম কে খাইয়ে দিচ্ছে।জেসি তা দেখে বললো,
–“পদ্ম তুমি কি অসুস্থ? না মানে জায়ান নিজে না খেয়ে তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছে তাই জিজ্ঞাসা করছি।
পদ্ম খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,
–“নিজের হাতে খেতে খেতে আর ভালো লাগে না তা ছাড়া বরের হাতে খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা বুঝলে আপু। ইচ্ছে করে সব সময় উনার হাতেই খাবার খাই। তাছাড়া জায়ানের আম্মুর হাতে ও খেতে ভারি মজা। তারপর আব্বু (জায়ানের আব্বুর) যখন আমার জন্য হাতে করে দুটো চকলেট কিনে নিয়ে আসে, তখন আমার কি যে আনন্দ লাগে বলে বুঝাতে পারবো না তোমাকে।
–“আচ্ছা ঠিক খাও তুমি।
জেসি মনে মনে বলে, বললাম একজনের কথা আর ও পুরো পরিবার নিয়ে শুরু করে দিল। জারা বুঝতে পারলো এতে জেসি কিছুটা বিরক্ত ফিল করেছে।তাই মুচকি হাসি দিয়ে জেসির আড়ালে পদ্ম কে লাইক দেয় জারা।আর বুঝায় চালিয়ে যাও আপু,জয় হবেই ইনশা আল্লাহ।
যাই হোক পদ্ম ও হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়,সে তার মতো করেই চালিয়ে যেতে লাগলো। খাওয়া শেষে জায়ানের আঙ্গুলে দিয়ে দিল এক কামড়।জায়ান আহ্ শব্দ করে উঠে, এতে করে চোখ ছোট করে তাকায় জেসি।
এদিকে জায়ান ব্যাথা পেলেও পদ্ম কে বলে, –“আমার ও দিন আসবে তখন এই ঋণ শোধ করে দিব।
জারা কৌতুহল নিয়ে বললো,
–“কিসের ঋণ ভাইয়া?
–“এই যে তোমার আপু আমাকে লাভ বাইট দিল সেটা ফেরত দিতে হবে না?
পদ্ম মিছে রাগ দেখিয়ে বললো,
–“এই বাচ্চা মেয়েটা কে কি সব বলছেন আপনি?
–“ওর শিখা উচিৎ তাহলে ভবিষ্যতে জারা ও এরকম ঋন শোধ করতে পারবে।
জারা ও সায় দিয়ে বললো,
–“একদম ঠিক ভাইয়া,সে আমাকে কামড়ে দিবে আমি কি তাকে ছেড়ে দিব নাকি হুহ।
জায়ান ভুল ধরিয়ে দিয়ে বললো,
–“এটা লাভ বাইট বুঝলে নট কামড়া-কামড়ি।
–“জ্বি, ভাইয়া একদম বুজে গেছি।
জেসি খানিক রেগে বললো,
–“মারবো এক চর ফাজিল কোথাকার। নিজের বড় বোনের এখনো বিয়ে হয়নি আর সে কিনা কিসব শিখতে শুরু করে দিয়েছে।
জেসির কথায় মুচকি হাসে জায়ান পদ্ম।আর জারা ভাব নিয়ে বললো,
–“আপু তুমি তো বিয়ে করবে না, ভাবছি ঐ ডাক্তার কে আমিই পটিয়ে বিয়ে করে নিব। আজকাল সচরাচর এরকম ডাক্তার পাওয়া মুশকিল বুঝলে?
জায়ান জারার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
–“জারা আমি তোমার সাথে একমত আছি, তুমি এগিয়ে যাও আমরা আছি তোমার সাথে।
জেসি তাড়াতাড়ি করে খাবার শেষ করে উঠে চলে যায়। তারপর তিন জনে মিলে হাতে হাত মিলিয়ে হাইফাই করে।জারা বলে,
–“আমি কিন্তু বুঝতে পারছি তোমাদের প্লান।
পদ্ম বললো,
–“তাই না পাকা মেয়ে।
তারপর তিন জনে মিলে হাসে। রফিক এসে বললো,
–“তিন জনে মিলে কি নিয়ে এতো মজা করছো শুনি?
জারা সংক্ষেপে সবটা বুঝিয়ে বললো বাপি কে। রফিক শুনে খুশি হয়ে বললো,
–“তোমরা যদি জেসি কে রাজি করাতে পারো তাহলে তোমাদের জন্য পুরস্কার আছে! জানি তোমরা এখন বলবে পুরষ্কার চাই না কিন্তু এটা শুধু পুরষ্কার নয় এতে থাকবে আমার ভালোবাসা।
রফিক সাহেবের এরকম আবেগি কথায় আর কিছু বলতে পারলো না কেউ।
________
ইয়া বড় একটা ডল নিয়ে এসে পদ্ম কে সারপ্রাইজ দিল জায়ান। পদ্ম প্রথমে খুশি হলেও পরে মন খারাপ করে বললো,
–“আব্বু আমার কোন ডল ঘরে রাখতে দিত না বলতো, এগুলোর জন্য ঘরে ফেরেস্তা আসে না এবং কি নামাজ হয় না।
–“আচ্ছা তাহলে আমাকে বেবি দিন তাড়াতাড়ি!
–“মানে? এখন আমি কোথায় থেকে বেবি আনবো?
–“চলুন আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
এই বলে পদ্ম কে জায়ান কোলে তুলে নিয়ে রুমে নিয়ে গেল। এদিকে জেসি দাঁড়িয়ে থেকে সবটা শুনলো, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া কি বুঝা যাচ্ছে না।
আসলে জায়ান পদ্ম সবটাই জেসি কে শুনানোর জন্য করলো।
#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।