#জুনিয়র_পদ্ম
পর্ব-০৪
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

তিন বছর পর,,

আপনি এখানে কি করছেন?আচ্ছা তো আপনার প্রাক্তন স্বামী ছেড়ে দিয়েছে বুঝি?আর সেই কারণে এখন কোন উপায়ন্তর না পেয়ে সু্যোগ বুঝে আমার গলায় ঝুলে গেলেন! আমার মতো আমার সহজ সরল আম্মু কে ও নিজের রুপের এবংকি গুনের মায়াজালে ইমপ্রেস করে নিলেন।আপনার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না।

উচ্চ কন্ঠে কথা গুলো বলে চলেছে জায়ান।পদ্ম কিভাবে জায়ানের ভুল গুলো শুধরুবে বুঝতে পারছে না,ইনফেক্ট কোথা থেকে শুরু করবে তা-ই মাথায় আসছে না!জায়ানের উচ্চ কন্ঠস্বর শুনে এর‌ই মধ্যে বুকে প্রচন্ড ধুকপুক ধুকপুক করছে। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই পদ্ম উচ্চ কন্ঠস্বর শুনতে পারে না, একধরনের ভয় কাজ করে! কখনো সখনো চোখের পানি চলে আসে।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,
পদ্ম বসে আছে বাসর ঘরে আর তাকে ঘিরে জায়ানের সব কাজিনমহল। সবাই পদ্ম কে জায়ানের কথা বলে লজ্জা দিতে ব্যাস্ত তখনি জায়ানের ছোট বোন অনিতার মাথায় দুষ্টুমি ভর করে।পদ্ম কে বলে জায়ানের ফোনে কল দিতে! সাথে অন্যান্য কাজিনরাও সায় দেয়।উপায়ন্তর না পেয়ে পদ্ম কল দেয়।আর সবাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে কি হয় দেখার জন্য।
জায়ান মাত্র‌ই তার রুমে প্রবেশ করে এর মধ্যে ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে “ঘুমবাবু”! এতো গুলো দিন পর অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটার কলে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে জায়ানের। এদিকে পদ্ম কে ঘিরে থাকা মেয়ে গুলো অট্টহাসিতে মেতে ওঠে।জায়ানের নজর সেই দিকে অগ্রসর হয়।পদ্মর কানে এখনো ফোন ধরে রাখা, একটা মেয়ে বলে উঠলো পদ্ম ভাবি ভাইয়া তো তোমার থেকে চোখ ই সরাতে পারছে না হা হা হা.. সবাই আবার উল্লাসধ্বনি দিয়ে উঠলো।জায়ানের এবার সব কিছু শুনে বোধগম্য হলো, তার সামনে বসে থাকা মেয়েটি আর কেউ নয় বরং মেয়েটি ঘুমবাবু!
লজ্জায় পদ্মর মাথা নত হয়ে আসে, মনে মনে মেয়ে গুলো কে বকে চলে। সেই মুহূর্তে জায়ান বলে সবাই রুমের বাহিরে যাও। আমার উনার সাথে কিছু কথা আছে!জায়ানের কাজিন বিন্দু বলে ‘ভাইয়ার দেখছি আর তরস‌ইছে না। সবাই হেসে উঠতেই ধমকে ওঠে জায়ান!জায়ানের হঠাৎ এরকম আচরণে হতবাক সবাই। কি এমন ঘটলো যার জন্য এত রাগ? অনিতা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো,তাই সবাই কে নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। পদ্ম ভয়ে চুপসে যায়, নিজেকে গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে।জায়ান বিকট আওয়াজে দরজা বন্ধ করে এগিয়ে আসে পদ্মর কাছে। পদ্ম নিজেকে আরো শক্ত করে গুটিয়ে বসে। আকস্মিক জায়ান পদ্মর হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে আনলে। হতভম্ব হয়ে তাকায় পদ্ম! তারপর ই নিজের রাগ গুলো প্রকাশ করে জায়ান।
________

পদ্ম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
–“আপনি শান্ত হয়ে,আমার কথা শুনুন। প্লিজ চেঁচামেচি করবেন না, সবাই শুনতে পাবে।
জায়ান দ্বিগুণ রাগ নিয়ে বলল,
–“শুনুক সবাই।এই সুন্দর মুখশ্রীর আড়ালে লুকায়িত অর্থ সম্পদ অনুসন্ধানি মানুষটার মুখোশ উন্মোচন-ই তো আমি চাই! সবাই জানুক কতটা লোভি একটা মেয়ে আপনি।

ছলছল নয়নে তাকায় পদ্ম। পদ্মর এই চাহনি কিছুতেই জায়ানের মন শীতল করতে পারছে না, যেন দ্বিগুন ছাড়িয়ে তিনগুণে বেড়ে চলেছে। ছলনাময়ী ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না পদ্ম কে।পারে তো চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দেয়।
পদ্ম মুখ ফুটে বাক্য‌উচ্চারন করবে তার সময় টুকুও যেন জায়ানের হাতে নেই,পদ্মর হাত ধরে টেনে নিয়ে রুমের বাহিরে বের করে দিল। ইতিহাসের পাতায় এরকম ঘটনা দুটি আছে কিনা সন্দেহ। বিয়ের রাতে বর বউ কে রুমের বাহিরে বের করে দিয়েছে!ভাবা যায়? প্রেসের লোক গুলো যদি এই মুহূর্তে থাকতো, তাহলে তারা একটা জব্বর নিউজ তৈরি করতে পারতো।
দরজা বন্ধ করার আওয়াজে কেঁপে ওঠে পদ্ম, এদিক সেদিক তাকাতেই ড্রিম লাইটের আলোয় দেখে ঘর ভর্তি মেহমান। কেউ সোফায় শুয়ে আছে আর কেউ ফ্লুরিং করে শুয়েছে। কেউ যদি ঘুনাক্ষরেও টের পায় কিছুক্ষণ পূর্বের ঘটনা তাহলে কি বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা ভেবেই শিউরে ওঠে পদ্ম।

_________

চারিদিকে লোকজনের সমাগম। সকালের নাস্তা খাওয়া শেষে দুপুরের খাবারের জন্য রান্নার আয়োজন চলছে।বেলা সাড়ে এগারোটা বাজে, মাত্র‌ই সকাল হলো জায়ানের!ফ্রেস হয়ে রুমের বাহিরে পা রাখতেই চোখে পড়লো পদ্ম কে।ড্রয়িং রুমের ডান দিকে কিচেনে,দৌড়ে দৌড়ে শ্বাশুড়ি মাকে সাহায্য করে চলেছে,এ বাড়ির প্রত্যেকটা ইট কাঠ থেকে শুরু করে মানুষ গুলোও যেন কতো জন্মের পরিচিত আপনজন। তাকে দেখে কেউ বিন্দুমাত্র ও বলবে না সে সদ্য বিয়ে করে গতকাল এবাড়িতে বউ হয়ে এসেছে।ভ্যাবসা গরমে প্রচুর ঘেমে একাকার, একটু পর পর শাড়ির আঁচল টেনে মুছে নিচ্ছে নিজের মুখমন্ডল। পদ্মর পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুরে বাহিরের দিকে অগ্রসর হতেই পিছন থেকে জান্নাত ডেকে ওঠে ছেলেকে।জায়ান ঘুরে তাকাতেই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকা জান্নাত কে দেখে,জোরপূর্বক নিজেও মুচকি হাসে।
জান্নাত এগিয়ে এসে বললো,
–“নাস্তা না করে কোথায় যাচ্ছিস?
–“আম্মু আমি এখন কিছু খাব না।
–“সেকি খাবি না কেন? মেয়েটা তোর জন্য অপেক্ষা করে এখনো অবধি কিছু খায়নি।চল দুজনে একসাথে খেয়ে নিবি।

জায়ান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জান্নাত ছেলে কে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল। তারপর পদ্ম’কে ও পাশে বসিয়ে দেয়।
অনিতা এক‌ই প্লেটে দুজনের খাবার নিয়ে আসে।জায়ান কাঠ কাঠ গলায় বললো,
–“বাসায় কি প্লেটের অভাব পরেছে?
–“নবদম্পতিরা একসাথে একই প্লেটে খাবার খেলে ভালোবাসা বারে! এটা আমার কথা নয় জ্ঞানিজনদের বানী।আর তাদের বানী চিরন্তন সত্য কিন্তু।

অনিতা সয়তানি হাসি দিয়ে এখান থেকে প্রস্থান করে, এখানে যতবেশি সময় থাকবে তার বিপদ সংকেত তত নিকটে।তাই আর বিলম্ব না করে পালায়।
সেই সকালে নাস্তা তৈরি করা হয়েছে,এতোক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গেছে বলে জান্নাত ওভেন থেকে সেমাই গরম করে নিয়ে আসে। এসে দেখে দুজনের একজন ও খাওয়া শুরু করেনি।জান্নাত পিঠা হাতে নিয়ে পদ্মর মুখে তুলে দেয়। তারপর জায়ান’কে।আর বলে পদ্ম’মা আমার ছেলেটা এখনো বড় হয়নি বুঝলি। এখনো তাকে একবেলা হলেও খাইয়ে দিতে হয়। এখন থেকে তুই খাইয়ে দিবি বুঝলি?
জায়ান বিষ্ময় নিয়ে বললো,
–“আম্মু এই তোমার পদ্মমা!যার নাম পদ্ম?
–“আরে গাধা আমি তো ওকে ভালোবেসে নামের শেষে “মা”বলি পদ্ম’মা।
–“তাহলে আব্বু যে বলতো?
–“তোর আব্বু ও হয়তো ভালোবেসে বলে।
–“অ মাই গড!আর আমি কিনা

প্রশ্নবিদ্ধ চোখে পদ্ম বললো,
–“আপনি কিনা?

জায়ান রাগ কন্ট্রোল করতে ডাইনিং ছেড়ে বেরিয়ে যায়।জান্নাত বলে ওঠে না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন?পদ্মর দিকে তাকিয়ে বললো,
–“ছেলেটার হঠাৎ কি হলো বলতো?

অনিতা এসে বলল,
–“আম্মু বুঝ নাই?ভাবিকে তুমি পদ্ম’মা বলে ডাকতে বলে, তোমার ছেলে আগে চিনতে পারে নাই সেই জন্য এখন মেজাজ দেখাচ্ছে।

জান্নাত পদ্মর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“ছেলেটা এবার তোকে বুঝলেই বাঁচি।
–“আম্মু তুমি শুধু আমার জন্য দো’আ করো। ইনশা আল্লাহ আমি উনাকে ঠিক বুঝিয়ে বলবো সবকিছু।

অনিতা গ্লাসে পানি নিতে নিতে বললো,
–“আম্মু তোমার আদরের বাঁদর ছেলে গতকাল রাতে যেটা করলো!এরপর মনে হয় না ও এতো সহজে সব কিছু মেনে নিতে পারবে।যদি একবার বড় ফুপ্পি ব্যাপার টা জানতে পারতো তাহলে তো লঙ্কা কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলতো!

পদ্ম জান্নাতে’র কোমর জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল,
–“আম্মু এবংকি তোমরা সবাই আমার পাশে থাকলে আমি ঠিক উনাকে বোঝাতে পারবো।
–“আমরা সব সময় তোর পাশে আছি পদ্ম’মা।
–“হ্যা ভাবিমনি আমরা তোমার পাশে আছে, তুমি শুধু এগিয়ে যাও ঐ বাঁদর কে মানাতে হা হা হা।

গতকাল রাতের ঘটনা,
পদ্ম এই রাতের বেলা কোথায় যাবে? কি করবে?
দিকহারা হয়ে পড়ে।অনিতার রুমে যে যাবে তার ও উপায় নেই,জায়ানের সব কাজিনরা শুয়েছে। ঠিক তখন জান্নাত দুশ্চিন্তার চাদর সরিয়ে দেয়।জায়ানের আব্বু কে অন্য রুমে পাঠিয়ে নিজের রুমে এনে পরম মমতায় ঘুম পাড়িয়ে দেয় পদ্ম কে।জায়ান এরকম কিছু করতে পারে তার আভাস আগেই পেয়েছিল জান্নাত।”একজন জননীর গুন তো এতেই নিহিত”তাই তো সময় মত পদ্ম কে নিজের আঁচলে আশ্রয় দিতে পারলো।

_______

পা টিপে টিপে পদ্ম এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আবার জায়ান কি কান্ড করে বসে আল্লাহ পাক জানেন। সারাদিন এটা ওটা করে বাহিরে কাটালেও রাতে তো আর রুমে না গিয়ে উপায় নেই। হাজারো চিন্তাভাবনা করতে করতে দরজার কাছে থমকে দাঁড়ায় পদ্ম। ভিতরে পা ফেলতে যেন ভয় করছে। তখন জায়ান এসে বললো,
–“ওয়েলকাম ওয়েলকাম! আপনার জন্য‌ই অপেক্ষা করে চলেছি ঘুমবাবু।

পদ্মর চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে বললো,
–“আ আমার জন্য!কে কেন বলুন তো?

জায়ানের চোখে মুখে শয়তানি হাসি! হাসির রেশ নিয়েই বললো,
–“আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ব‌উ, আমার একটা মাত্র রুমে আসবে। আমার একটা মাত্র ব‌উ এর একটা মাত্র স্বামী হয়ে তার জন্য অপেক্ষা করবো না?সেকি হয় বলুন? আসুন আসুন আমার একটা মাত্র ব‌উ একটা মাত্র রুমে এসে আপনার একটা মাত্র স্বামী কে ধন্য করুন,সে যে আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

হঠাৎ কি হলো জায়ানের?পদ্ম কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।সব চিন্তা বাদ দিয়ে দৌড় দিতে নিলে,খপ করে হাত ধরে নেয় জায়ান। দরজার সাথে চেপে ধরে বললো,
–“কোথায় পালাচ্ছেন?
–“এসব কি অসভ্যতামি করছেন? যেকোনো সময় কেউ চলে আসবে।
–“আই ডোন্ট কেয়ার।
তো এবার বলুন আপনার প্রাক্তন স্বামী ডিবোর্স দিল নাকি আপনি দিলেন?

আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ! এই মাইয়ার আগেও একবার বিয়া অ‌ইছে?আয়হায় রে আমার জায়ান বাবার জীবনডা নষ্ট হ‌ইয়া গেল রে….

বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ কোথা থেকে যেন এসে, খোরশেদা মানে জায়ানের বড় ফুফি মরা কান্না জুড়ে দেয়। এখন দেখার পালা পদ্ম বেচারির কি হয়…

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here