###জীবন যখন যেমন (১১তম পর্ব)
###লাকি রশীদ

মুখে দিয়ে দেখি শাওনের বলা সেই বীফ এন্ড চিকেন কোল্ড কাট্ মজাই লাগছে। অনেক কিছু আজকে খাওয়া হয়েছে। এখন জাষ্ট সামান্য ডেজার্ট খাবো ভাবছি। ঠিক তক্ষুনি ফাহিম ভাইর ছেলে শাফিন বাটিতে তার জন্য কি একটা এনে,
আমাকে বলছে চাচ্চু তুমি মাশরুম স্যুপ খাওনি? আমি বলি নারে বাবা, মাশরুমের স্যুপ আবার মজা হয় নাকি? এবার সে অবাক হয়ে বলছে,
তুমি তো জানো না যে মাশরুমের স্যুপ খুব মজা হয়। দাঁড়াও তোমাকে এনে দেই। আমি না করার আগেই চলে গেছে, গিয়ে হাফবাটি স্যুপ নিয়ে এসেছে।

আমি এক চামচ গিলতেই মনে হচ্ছে, এতোক্ষণ মজার যা কিছু খেয়েছি সবকিছুর টেষ্ট এটা খেয়ে চলে গেছে। কি একটা বাজে স্বাদ যেন ভাতের মাড় খেয়েছি। সে এবার অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার এই স্যুপ ভালো লাগেনি? আমার ও ফুপ্পির তো এটা খুব পছন্দ। আমি হেসে বলি, শাফিন তোমরা হচ্ছো এলিট
ক্লাস পাবলিক। আমি হলাম মাছ, শুঁটকি খাওয়া মানুষ। আমার জিহ্বায় কি এসব রুচে বাবা? শাওন এবার শাফিন কে বকছে, বেশি কথা বলিস তুই। কে বলেছে ওকে এসব স্যুপ এনে দিতে? আমি বলি খবরদার,সে আদর করে দিয়েছে। তুই ওকে বকছিস কেন? এবার শাফিন খুব খুশি।

ডেজার্ট আইটেম আনতে গিয়ে শাওন বলে দিচ্ছে
কোনটা কোনটা প্লেটে তুলবো। তার কথা মতো একে একে তিরামিসু,বাসবুসা,ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক,
ফ্রুট কাস্টার্ড,ক্রিম ক্যারামেল,এসোর্টেড পেইষ্ট্রি ও
ফ্রুটিং স্যালাড নিলাম। আরো অনেক আইটেম বাকি আছে। দেখেই মনে হচ্ছে সবগুলোতেই প্রচুর চকলেট ও ঘন ক্রিমের ব্যবহার হয়েছে।
আমি বললাম, কথা মানতে গিয়ে তো এসব প্লেটে নিলাম, এখন খেতে পারলেই হলো।চেঁচিয়ে উঠল,
অবশ্যই খেতে পারবে, আমি খেতে পারলে তুমি কেন পারবে না? ঠিক সেই মুহূর্তে আইরিন আপুর গলা, সেটাই তো সাদি। এতো ভালবেসে,যত্ন করে সে আপনাকে তুলে দিচ্ছে…….. নিশ্চয়ই ইনজয় করে করে খেতে পারবেন। উনি নিশ্চয়ই আপনার প্রেমিকা? আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দেখি,পাশে প্লেট হাতে আকাশ ভাইও হাসছেন। সবচেয়ে বড় বিরক্তিকর ব্যাপার হলো, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে শাওনও লাজুক হাসি হাসছে। যেন সত্যি সে আমার প্রেমিকা।

আমি এবার হড়বড় করে বলি, না না আপনি ভুল বুঝছেন……. কথা শেষ করতে পারিনি আকাশ ভাই হাত ধরে বলছেন, ইটস্ ওকে। এটা নরমাল একটি ব্যাপার, আপনি এতো ব্লাশ করছেন কেন বলুন ত? এবার শাওনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
আপনার নামটা যেন কি ম্যাডাম? শাওন নাম বলতেই বলছেন, ,you are one of the most luckiest girls I have ever seen in my life. Enjoy your time. বলেই হতবাক আমাকে রেখে ওরা ডেজার্ট প্লেটে তুলতে এগিয়ে গেছেন। আমি টেবিলে ফেরার সময় শাওনকে বকি, ওরা যখন এসব বললো বেহায়ার মতো তূই হাসছিলি কেন? না করতে পারলি না? ভালো মুখে কথা বলেছি বলে, এভাবে ডুবাবি? শাওন এবার বললো, তোমার কথা ই শুনছেন না আর আমার কথা কি শুনবেন? আমি টেবিলে গিয়ে এবার চুপ করে বসে পড়তেই দোলা নীচুস্বরে বললো, এতো লম্বা লম্বা কথা সেদিন বললি, এখন তো দেখি, একদম আঠার মতো দুজন সব জায়গায় যাচ্ছিস।

আমি বলি, সর্বনাশ তুইও তাই বলছিস? সে এবার বললো, কেন আর কে বলেছে তোকে? বললাম,
আইরিন আপু। বাচ্চাদের বসিয়ে রেখে আমি দুই বোন, শাওন ও অভিকে সাথে নিয়ে আইরিন আপুদের টেবিলে গেলাম। প্রথমে সবাইকে আমি পরিচয় করিয়ে দিলাম ও তারপর বললাম অভি
এই খুশির জন্য আমাদের কে খাওয়াচ্ছে। আকাশ ভাই বলছেন,অভি আমাদেরকে ট্রিট দেয়া বাকি থাকলো কিন্তু। অভি হাসিমুখে বলছে,
সেটা তো আমার সৌভাগ্য। বিদায় নিয়ে নিজেদের টেবিলে বসে ভাবি, মাঝে মাঝে সত্যিই নিজের উপর, আবেগের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
এতো দিন ধরে এতো শক্ত থেকে লাভ কি হলো?
আগের বৃত্তে বন্দী না হলে, সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না মোটেই। সুতরাং আবেগের রাশ টেনে ধরো সাদি।

অভি আমাদের সবাইকে নামিয়ে দিয়ে গেল। মা ও মালাবুর জন্য তিন পদের মাছ এনেছে। একেবারে
বাধ্য না হলে মা হোটেলের ভাত খায় না। একমনে মা অভিকে বকছে, টাকা থাকলেই কি নষ্ট করতে হবে নাকি? বলেও দিয়েছি শুধু দুই পিস সর্ষে ইলিশ আনার জন্য। এতো পদ মাছ,ভাত তাকে কে আনতে বলেছে? দোলা বলছে,আহা মা !!! না খেতে চাও রেখে দাও। সকালে ভাত ভাজি নাস্তা হয়ে যাবে। খামোখা এতো কথা বলে টায়ার্ড হচ্ছো
কেন শুনি? মা রেগে যাচ্ছে, তুই বেশি কথা বলিস্
না তো। তোর সাথে পরামর্শ করে কি আমার কথা বলতে হবে? দোলা এবার মাথা নেড়ে রুমে চলে গেছে। মেঘলা কাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের ও মালাবুর খাবার গরম করে দিল। নিজে
শুধু ইলিশ খেয়ে অন্যকিছু না খেলেও বুয়াকে দেখি বলছেন,কি নিবি? তোর যা যা ভালো লাগে নিয়ে খা‌। আমার ছেলেটার বড় দিল, ওর আল্লাহ ভালো করুন। দেখ্,কষ্ট করে কতো কিছু আনছে।

আর মাত্র দুটি পরীক্ষা রয়েছে। তারপর, একটু নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। হঠাৎ করেই ছোট ফুপুর ছোট ছেলে কোর্ট ম্যারেজ করে বৌ ঘরে নিয়ে আসায়, ফুপু ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনদের রাতে খাবার দাওয়াত দিয়েছেন। গতকাল এসে, আমাদের বাসার সবাইকে বলে গেছেন, সকালেই
যেন চলে যাই। মাকে বারবার বলছেন, তুমি না গেলে হবে না ভাবী, আমি তোমার জন্য আগের দিন গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। মা বলছে, আগের দিন না,গাড়িও পাঠাতে হবে না। ওই দিন সকাল থেকে আমাকে পাবে ইনশাআল্লাহ। ঠিক আছে, সবাই যাবে। ফুপু চলে যেতেই দোলা মাকে বলছে, তুমি বললে কেন সবাই যাবে? আমরা কি হঠাৎ জাতে উঠলাম নাকি? এতো আদর ভালোবাসায় মুড়ে আমাদের নিয়ে যাবার হিড়িক চলছে? তুমি বড্ড
তাড়াতাড়ি মানুষের আগের ব্যবহার ভুলে যাও। মা হেসে বলছে,যার যার কর্মফল এই দুনিয়াতেই
পেয়ে যায়। আর আখেরাত তো রইলোই। তাই বলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো পাপে জড়াবো নাকি? আমাকে জ্ঞান দিতে আসিস না।

অদ্ভুত এক রহস্যময়ী নারী যেন আমার মা। ফুপুর পার্টির আগের দিন আমাদের তিনজন কে ডেকে বেশকিছু টাকা প্রত্যেকের হাতে দিয়ে বললেন, আমার ভীষণ ইচ্ছে বলতে পারো যে, তোমরা এই পার্টিতে ধোপদুরস্ত পোষাক ও জুতা পরে যাও।তাই আজ বিকেলে গিয়ে তোমাদের গুলো কিনে
আনার সাথে সাথে আমার জন্য নরম সিল্কের ১টা
শাড়ি ও মালার জন্য নতুন একটা শাড়ি, ব্লাউজ নিয়ে এসো। মালাকে সাথে নিয়ে যাবার জন্য তোদের ফুপু বলেছে। আর সাদি তুই ঠিক তোর মতো শার্ট ও প্যান্ট অভির মাপে আনবি। সাহস
করে বলি, তাহলে শুধু ভাইয়া বাকি থাকবে কেন?মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,কে ভাইয়া? আমি আর কিছু বলার সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি।

দোলা বলছে, মেঘলা কে সিলেটে রেখে আসতে ছোটভাইকেও যেতে হবে।এই মুহূর্তে কতো টাকার দরকার। পার্টিতে যাবার জন্য এতো এতো টাকা খরচ করে কি হবে? মা বলছে, তোদের বাবা মারা যাওয়ার পর টাকার টানাটানি হয়েছে, কিন্তু কখনো মায়ের নির্বুদ্ধিতার জন্য খুব আটকে গেছিস…….. এমন হয়েছে? তাহলে এখন ভরসা হারাচ্ছিস কেন? তা তো বুঝলাম না। এই কথা শুনে দোলার মুখে আর রা আসছে না।

সবাই গিয়ে কাপড়, জুতা কিনলাম। মায়ের শাড়ির সাথে সাথে দোলা মায়ের জন্য একটা পার্স কিনে বলল, আগের পার্সটা বেশ পুরনো হয়ে গেছে।
মালা বু বলে দিয়েছেন উনার শাড়ি ও ব্লাউজের রং যেন টকটকে লাল হয়। মেঘলা বলছে,কেমন যেন ঈদ ঈদ লাগছে তাই না? এই ছোটভাই কিছু খাওয়া না প্লিজ। অনেক দিন পর আমরা তিন ভাইবোন শপিং করে ফুরফুরে মেজাজে,স্ন্যাকস ও
কফি খেলাম। কফিতে চুমুক দিয়ে দোলা অদ্ভুত এক আবেশে বলছে, মাঝে মাঝে আমার মনে হয়
মা কিভাবে আমাদের ভালো লাগা,মন্দ লাগা, কি
দরকার আমাদের এই মুহূর্তে………. সবকিছু বুঝে
যায়? আমি বলি, আমরা সবাই আসলে অনেক ভাগ্যবান কারণ আল্লাহ আমাদের কে এমন একজন মা দিয়েছেন। আমরা রাতদিন আল্লাহর কাছে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে থাকলেও……….এর
শুকরিয়া আদায় করা সম্ভব হবে না।

গুমোট গরম, সেজন্য মা এখন হঠাৎ হঠাৎ আমাদের মূল দরজা খূলে রাখে। আগে রাখতো না। একই বাউন্ডারীর ভেতরে বেশ কয়েকটি বাসা থাকায়, চুরি ডাকাতির ভয় নেই। তাছাড়া ভাবে আমাদের আছেই বা কি,আর নিবেই বা কি? রাত প্রায় সাড়ে আটটা বাজে, ঘরের দরজায় ঢুকবার আগেই শুনছি নারী কন্ঠের খালি গলায় গান:

শোয়া চান পাখি, আমি ডাকিতাছি
তুমি ঘুমাইছো নাকি?

তুমি আমি জনমভর ছিলাম মাখামাখি,
আজি কেন হইলা নীরব,মেলো দুটি আঁখি।

বুলবুলি আর তোতা ময়না,
কতো নামে ডাকি।
শিকল কেটে চলে গেলে রে,
আমি কারে লইয়া থাকি?

বিশ্বজোড়া এই পিরীতি,
সবই দেখছি ফাঁকি।
বাউল রশীদ বলে চলরে উকিল,
ওরে ডাকলেই বা অইবো কি?

গান শেষ হতেই আস্তে করে ভেতরে ঢুকে দেখি,
মালা বু ও তার পাশে আরেক মহিলা মোড়াতে বসে আছে। ঐ মহিলাই এতক্ষণ গান গাচ্ছিল।
তাদের একটু দূরে মা আরেকটা মোড়াতে বসে আছে। সমস্ত মুখ চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে।সব
সময়ের বজ্র কঠিন মানুষ টাকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ লাগছে। এতো বছরের জীবনে মা
কে খুব কমই আমরা দুর্বল, কান্নারত এমন ভাবে দেখেছি। মাও হঠাৎ হকচকিয়ে গেল আমাদের দেখে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছে হেসে বলছে, তোরা এসে গেছিস? কিভাবে ব্যাগগুলো নামিয়ে রেখে পাশে গিয়ে যে বলেছি, কাঁদছো কেন মা? তোমার কি কষ্ট হচ্ছে বলো? তুমি বাবাকে এখনও এতো মিস্ করো মা? ………… আমি নিজেও বলতে তা পারবো না। মা এবার কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,সে তো আমি মারা যাওয়ার আগ মুহূর্ত
পর্যন্ত তোদের বাবাকে মিস্ করবো।

দোলা এবার ক্ষেপেছে,মালাবু কে বলেছে এই
মহিলা তোমার বোন রাহেলা না? উত্তরে বুয়া মাথা নাড়ছে। দোলা রাণী চেঁচাচ্ছে, এখানে বাউল গানের আসর বসাতে আসছে নাকি ও? মালাবু বলছে,ওর কি দোষ? আফনের আম্মায় কইছে গাওনের জন্য,হে কি উইজ্জা(যেচে) গাইছে নাকি? এবার মা বলছে, ওকে বকছিস কেন? ওর গলা সুন্দর……… আমিই গাইতে বলছি। মালা তুই ওদের জন্য চা বসা তো। দোলা বলছে, রাত ৯টার
সময় আবার কিসের চা? এই রাহেলা বু তুমি দাঁড়াও তো। মহিলা দাঁড়াতেই দোলা এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলছে,মা না হয় তোমাকে গান গাইতে বলেছে। তুমি খুশির গান জানো না? দুঃখের গান শুনিয়ে উনার বুক ভাসানোর মানে কি? হার্টের রোগী আমার মাকে তুমি এসব শোনাচ্ছো? আর কোনো দিন যদি তোমাকে, আমাদের বাসার ত্রিসীমানায় দেখি ভালো হবে না বলে দিলাম।

মা এবার বলছে, ইদানিং তুই একটু বেশি বেশি করছিস দোলা। আমি গাইবার কথা বলেছি……….
বলার পরও তুই ওকে বকে যাচ্ছিস !!! মায়ের এতো বেশি দরদী হতে হবে না তোমাকে। রাহেলা বুর হাতে ২০০/ টাকা দিয়ে বললো, আমার এই মেয়ে একটু পাগল টাইপের। তুই কিছু মনে করিস না মা। আমার জন্য দোয়া করিস। মহিলা দেখি চট্ করে বসে মাকে সালাম করে চলে গেল।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে মাকে সবার কাপড় দেখালাম। মা ঠিক একই রঙের,একই ডিজাইনের
শার্টপ্যান্ট দেখে বলছে, একসাথে পরলে দুইভাই কে খুব সুন্দর লাগবে দেখিস্। আমি আমার সেই
বিজন স্যারের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি,হাদি
বলে কারো কথা কি এই মুহূর্তে মায়ের মনে পড়ছে না? ব্যর্থ দুচোখ আমার কিছুই দেখতে পায় না। অকারণে বারবার মায়ের বুকের গহীনে ডুব দেয় শুধু, কাজের কাজ কিছুই করতে পারে না।

দোলা তাদের কাপড় দেখালো। পার্টি রাতে, এই ধরনের ড্রেস নাকি রাতে বেশি ভালো লাগে। মা দোলাকে বললো, একদম নাকের ডগায় সময় চলে এলে তোমার মনে হয়,এই ড্রেসটাতে এই খুঁত আছে ওই খুঁত আছে। দয়া করে আজকে রাতেই পরে দেখো, ঠিক আছে কিনা। নিজের শাড়ি দেখে বললো, খুব সুন্দর হয়েছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই পার্স দেখে মা বলছে, একটা আছে তো আমার। আবার আনতে গেলি কেন? কিন্তু চোখ মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে, ভীষণ খুশি হয়েছে।
সবচেয়ে খুশি হয়েছে মালাবু। বারবার বলছেন,
এক্কইরবারে এইরহম একখান শাড়ীর বড় আউশ
(শখ) ছিল আমার। মা বলছে, দেখছিস কি খুশি হয়েছে? সর্বাবস্থায় গরীবদের দান করতে চেষ্টা করবে। তাহলে আল্লাহ একে সত্তর দিবেন তোদের
ইনশাআল্লাহ। এখন গিয়ে ঘুমা। শুধু মনে রেখ, সকাল নয়টায় আমরা রওয়ানা হবো কিন্তু। কেউ
দেরি করবে না বলে দিলাম। দোলা বলছে ছোট একটা ব্যাগে,কাপড় নিয়ে যাবো। সন্ধ্যার পরে রেডি হবো। আমি বলি, আমি সকালেই একেবারে পরে যাবো।

ছোট ফুপুর বাসায় গেলে বুঝা যায়,ফুপার যে কি পরিমান টাকা ছিল‌। এতো দামী দামী জিনিস বাসাতে ভরা কিন্তু তার একটা বাচ্চাও কলেজে ঢুকেনি। তাই তাদের মনুষ্যত্বের বালাই নেই। নিজের মাকেও অবলীলায় বকতে পারে। একবার আমার মা ফুপূকে বলেছিল, কিভাবে যে এসব সহ্য করো আল্লাহ মালুম !!! ছোট ফুপু বলছেন,
ওদের বাবা সারা জীবন টাকা রুজি করেছে।আর
আমি নানান খাবার রান্না করে খাইয়েছি। অলঙ্কার কিনে বিয়ে বাড়ীতে গিয়ে অহঙ্কার করেছি। ধরাকে সরাজ্ঞান করেছি। ছেলে মেয়ে ঠিকমতো স্কুলে গেল কিনা খোঁজ করিনি কিন্তু বেশি বেতন দিয়ে
গৃহশিক্ষক দিয়ে ভেবেছিলাম,সব দ্বায়িত্ব বোধহয় শেষ করে ফেলেছি। আমার কপাল আরো যে খারাপ হয়নি……… সেটাই তো আমার সাত পুরুষের ভাগ্য বড়ভাবী। আমরা সবাই সবসময় বলি, তোমার বাচ্চা ভাগ্য বড় ভালো। পরিবারের খুঁটি হলো মা, তুমি একা সেই শক্ত ও বুদ্ধিমতী খুঁটি হওয়ায় তোমার ছেলেমেয়েরা এরকম হয়েছে
বড়ভাই কি আর এমনি এমনি প্রান দিয়ে তোমায়
ভালবাসতো?

আমরা গিয়ে পৌঁছানোর পর ছোট ফুপু ভীষণ খুশি। আমাদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন
তোদের মা যে সময় দিয়েছিল,ঠিক সেই সময় তোরা এসেছিস। আমি যে কি খুশি হইছি বাজান। খুব চিন্তায় ছিলাম দোলা টারে নিয়ে। আসবে না আসবে ভাবছিলাম। আমার গরু ছেলেমেয়েরা তো এখনও ঘুমায়। আমি বলি,কাজ থাকলে বলো ফুপু করে দেই। ফুপু বলছে, পিছনের খালি জায়গায় বাবুর্চিরা রাঁধছে। কাজ কিছু হবে করতে
হবে না। শেষ বিয়ে,তোমরা শুধু খুব খুশি করো‌।

গত রাতে আমাকে সাহায্য করার জন্য শাওনও এসেছে। আমি ভাবি, হায়রে এখানেও শাওনের হানা !!! চাইছিলাম আর যেন দেখা না হয়। নিজের অজান্তেই আবেগে ভেসে যাই আমি। কখন কোন
দুর্বল মুহূর্তে আবার কি কথা দিয়ে ফেলি কে জানে? সাথে সাথেই দেখি এক ট্রে শাওনের হাতে
ও অন্য ট্রে সহকর্মীর হাতে দিয়ে,রাজ্যজয়ের হাসি নিয়ে শাওন ডাইনিং স্পেইসে ঢুকলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here