#জলছবি
#পার্ট_১৪
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
আশ্বিন মাসের ১৯ তারিখ। শ্রেয়ার বাবা মারা যাওয়ার পনেরো দিন পেরিয়ে গিয়েছে। ফয়সাল আর নিষাদও ঢাকা ফিরে এসেছে শ্রীতমা ফিরতি আসার একদিন বাদেই। আসার পথে শ্রেয়ার সঙ্গে দেখা করে এসেছে। শ্রীতমা সবকিছু শুনে মন খারাপ করে ফেলেছিলো। কিন্তু বান্ধবীকে শান্তনা দেয়ার জন্য স্ব-শরীরে হাজির হতে পারেনি। নতুন সংসার নামক বন্ধনে আবদ্ধ যে সে। চাইলেও তো সব করার ক্ষমতা তার হাতে নেই এখন। যদিও শায়ন কথা দিয়েছে এদিকটায় একটু সামলে তারপর শ্রেয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাবে এক সঙ্গে। বরের কথায় শান্তনা পায় মেয়েটা। এইটুকু ভরসার স্থান অবশ্য শায়ন তার নিজ যোগ্যতায় অর্জন করে নিয়েছে। ভরসার যোগ্য মানুষ এই দুনিয়ায় খুব কমই আছে!
সময় চলছে, জীবন চলছে তার সঙ্গে চলছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প। সেই ভিন্ন ভিন্ন সৃষ্ট গল্পের সঙ্গেই জীবন মানিয়ে নিতে হয়। মানিয়ে নিতে প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও শিখে নিতে হয়।
নিজের সঙ্গে সেই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে হারানো বেদনা নিয়েই শ্রেয়া ঢাকা ফিরে এসেছে।
সবাই সবার বিষন্নতা ঝেড়ে কাল থেকে কাল থেকে ক্যাম্পাসে ফিরবে বলে ঠিক করে। অনেক বুঝিয়ে তাই শ্রেয়াকেও ঢাকায় ফেরায় তারা।
শ্রেয়ার মন খারাপের কিছুটা ভাগ নিয়ে এই কয়েকদিন কেউ ক্যাম্পাসেও যায়নি আর দেখাসাক্ষাৎ ও করেনি।
দিন পেরিয়ে রাত, সকাল হলেই আবার চঞ্চল কিছু প্রাণের মিলন।
অনেকদিন বাদে সকলের সঙ্গে দেখা হবে ভেবেই নোলক উত্তেজিত। নবনী বই পড়ছে আর নোলক বোনের পাশে শুয়ে শুয়ে পা নাড়াচ্ছে। এপাশ-ওপাশ করে নানান কথা ভাবছে। কখনো হাসছে, কখনো-বা বিরক্তিতে কপালে ভাজ পড়ছে। ঠোঁট খুঁটছে, দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে।
বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতেই বোনের এসব কর্মকান্ড আড়চোখে দেখছে নবনী। এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করে বসে,
“না ঘুমিয়ে, এমন তিড়িংবিড়িং করছিস ক্যান?”
নোলক শোয়া থেকে উঠে বসে। ভ্রু জোড়া সামান্য কুঞ্চিত করে বলে,
“ঘুম আসছে না। তোমার মতো বই পড়ার অভ্যাস থাকলে নাহয় বই পড়তাম।”
“উমম…এসব কেমন কথা? অন্য বই না পড়িস, কিন্তু একাডেমীক বই তো পড়তে হবে। রেজাল্ট ভালো না হলে কিন্তু মাইর।”
নোলক ভাব নিয়ে বলে,
“ওসব রেজাল্ট-ফেজাল্ট নিয়ে ভেবো না। পরীক্ষার আগের রাতে পড়লেই আমার হয়ে যায়।”
নবনী বইয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে বলে,
“সারা বছর না পড়ে, এক রাতে পড়ে কেমনে রেজাল্ট ভাল হয় আল্লাহ্ মালুম।”
নোলক নবনীর কথার সুর নকল করে বলে,
“আর তোমরা যে সারাদিন কেমন এত বইয়ে দিকে তাকিয়ে থাকো, আল্লাহ্ মালুম! এই? চোখ ব্যথা করে না?”
শেষের কথাটা নোলক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটু ঝুঁকে এসে বলে।
নবনী হেসে দিয়ে বলে,
“ফাজিল!”
এরপর নোলক কিছুক্ষণ চুপ থেকে উসখুস করে বলল,
“তোমাকে তো কত কিছু শেয়ারই করা হয়নি আপু। কত কিছু যে হলো ল কয়েকদিন!”
নবনী মৃদু হেসে বলে,
“হুম, আপনি যেখানে থাকবেন সেখানে যে কত কিছু হবে, তা বেশ ভালোভাবেই ধারনা করতে পারছি।”
নোলক নিজেকে সর্বচ্চ চেষ্টায় নির্দোষ প্রমাণ করার মত করে বলে,
“বিশ্বাস করো, আমি কিন্তু কিছুই করিনি। সব দোষ ঐ বই-মানবের।”
নবনী এবার বইটা বন্ধ করে পাশে রেখে বোনের গল্পে পুরো মনোযোগ দিলো। গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভাব করে বলে,
“এই বই-মানবটা আবার কে, হুম?”
নোলক ঠোঁট উল্টে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“খুবই পঁচা পাঁজি একটা লোক। অভদ্র, বেয়াদপ। আমাকে জানালার পাশে সিট দেয়নি। মুখের উপর না করে দিয়েছে। কত সুন্দর করে রিকোয়েস্ট করলাম, আর সে কি একটা ভাব নিয়ে বলল, ‘আমি কারো সাথে শেয়ার কিংবা এক্সচেঞ্জ করে অভ্যস্ত নই!’ কেমন অভদ্রের অভদ্র!”
আদ্রর বলার কথাটা নোলক ব্যাঙ্গ করে ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বলে। যার দরুন নবনী আওয়াজ করে হাসে।
নোলক আক্রশ নিয়ে বলে,
“হেসো না, হেসো না। আমি তো পারলে তাকে জাস্ট চিবিয়ে খেয়ে ফেলতাম।”
“তখন তো সবাই তোকে মানুষ খ্যাঁকো নোলক বলতো। হা হা হা!”
নোলক কপট রাগ নিয়ে বলে,
“ধ্যাত, তুমি আমার কথাগুলো সিরিয়াসলি নিচ্ছো না।”
নবনী হাসি থামিয়ে বলে,
“আচ্ছা আর হাসবো না, নাও আ’ম সিরিয়াস। এখন বল, কেন সেই মানবকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়েছিলো? শুধু জানালার পাশে সিট দেয়নি বলে?”
“না-আ। সে আমায় ইনডিরেক্টলি পাগল বলেছে, জানো? আমার নাকি ম্যান্টাল ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন! ভাবতে পারো? কেমন পাঁজির পাঁজি!”
নবনী মৃদু মৃদু হাসে। বোন যে তার আসলে একটু পাগলাটে তা আর মুখ ফুটে বলতে পারে না। তাহলে রণক্ষেত্র বেধে যাবে। গলা খ্যাঁকাড়ি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“বেশি ঝগড়া করেছিস?”
নোলক মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“আমি করিনি, সে করেছে।”
“তুই খুব ঝগড়ুটে নোলক। জানালার পাশে বসা নিয়ে ঝগড়ার করে এসেছিস। কি সাংঘাতিক!”
বলেই নবনী উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
নোলক রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
“ও…এখন আমার দোষ না? আর সে যে আমায় কত কিছু বলেছে, তাতে দোষ নেই, তাই না? যাও কথাই বলবো। তোমাকে বলাই ভুল হইছে।”
বলে মুখ ফুলিয়ে উল্টো ফিরে শুয়ে পড়লো। নবনী নোলকের রাগে বিশেষ পাত্তা দিলো না। এই মেয়ের রাগ যে ‘ওয়ান টাইম’ সে ব্যাপারে সে অবগত। চশমাটা খুলে ড্রেসিং টেবিলে রেখে এক পাশ হয়ে শুয়ে হাতের উপর মাথা রেখে মাথাটা একটু উঁচু করে নোলককে স্মিত স্বরে জিজ্ঞাস করে,
“ছেলেটার নাম কি রে?”
নোলক গজগজ করে বলে,
“জানি না যাও।”
“বল না?”
“জানিনা বলেছি না? ডিস্টার্ব করবা না তো।”
নবনী নত স্বীকার করার মতো করে বলে,
“আচ্ছা যা স্যরি। আর ঐ ছেলেএ গুণগান গাইবো না। এবার তো বল?”
বেশ কয়েকবার জোর করার পর নোলক ভাব নিয়ে বলে,
“নাম দিয়ে কাম কি?”
“বহুত কাম আছে। বল না?”
নোলক কপাল কুঁচকে বলে,
“আদ্র-টাদ্র, হবে কিছু একটা। বেটা এক নাম্বারের বদ!”
নবনী পুনরায় হেসে ফেলে। নোলক ভয়ানক কিছু বলার মতো করে বলে,
“সবচাইতে ডিসগাস্টিং ব্যাপারটা কি হয়েছে জানো?”
নবনী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। নোলক চোখমুখ কুঁচকে বলে,
“মহাশয়, শ্রীতমার দা’ভাইর বেস্ট ফ্রেন্ড! ভাবতে পারো?”
এইবার যেন নবনীও অবাক হলো। বিস্ময় নিয়ে বলল,
“আরে বাহ! দারুন তো! কেমন যেন ফিল্মি ফিল্মি ঘ্রাণ পাচ্ছি! তারপর, তারপর কি হলো? মারামারি-টারামারি করেছিস নাকি?”
নোলক বোনের কথায় হেসে দিলো। তারপর বলল,
“আরেহ নাহ! মারামারি করার উপায় নাই। কঠিন কঠিন কথাগুলো যে ভয়ানক শান্ত ভাবে বলে, তার সাথে কি মারামারি করার উপায় আছে?”
নবনী উদগ্রীব হয়ে সব শুনতে চায়। নোলকও সব কিছু নবনীকে খুলে বলল। নবনী সব শুনে বলল,
“যাহ এটা কিছু হইলো? এত কিছুর পরও কোনো লাইন-ফাইন কিছু হলো না! দুঃখ, দুঃখ! ভুড়ি ভুড়ি দুক্কু পেলুম বোন।”
কথাটা নবনী মজার ছলে বললেও নোলক সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো। বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
“দেখ আপু? এসব ফাইজলামি ভালো লাগে না। এসব লাইন-ফাইন আবার কি কথা হ্যাঁ? আমি যদি পারতাম, তাকে দুই বেলা নিয়ম করে, ঘুষি দিয়ে চশমা-টশমা ফাটিয়ে দিতাম। তখন তার নাম হতো, ‘চশমা ফাটা আদ্র’! হা হা! নাইস না নামটা?”
বলে মনের খাস মিটিয়ে এক দফা হাসলো। নোলকের সঙ্গে যুক্ত হলো নবনীও। বোন যতক্ষণ পাশে থাকে ততক্ষণ-ই তার মন ফুরফুরা থাকে। তার অদ্ভুত অদ্ভুত কথা এবং কাজে না হেসে পারাই যায় না। দুই বোন মিলে এক ছেলেকে নিয়ে ঘর কাঁপিয়ে হাসে!
.
আদ্র ল্যাপটপের দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। কিবোর্ডে কিছু টাইপ করছে আবার সঙ্গে সঙ্গেই মুছে ফেলছে। ইশান ডিম ভাজি করতে করতেই রান্নাঘর থেকে তা দেখতে পায়। দুইটা ডিম ভেজে এনে আদ্র’র ল্যাপটপের পাশে রাখতে রাখতে বলে,
“কি হইছে? কোনো সমস্যা?”
আদ্র চশমাটা খুলে টেবিলে রাখে। মাথার পেছনে হাত রেখে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে বলে,
“লেখায় মনযোগ দিতে পারছি না দোস্ত। আগে তো এমন হয়নি কখনো!”
“টেনশন করছিস কিছু নিয়ে?”
“টেনশন কেন করবো?”
“তাহলে এমন হবে কেন?”
“বুঝতে পারছি না।”
ইশান বিছানায় বসে মৃদুমন্দ হেসে বলে,
“কই যেন শুনেছিলাম, মানুষ প্রেমে-ট্রেমে পড়ার আগে আগে কোনো কাজে মনোযোগ-টনোযোগ দিতে পারে না। কেমন যেন প্রেম প্রেম ঘ্রান পাচ্ছি।”
আদ্র কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফেলে বলে,
“কই থেকে শুনিস এসব ফালতু কথা?”
ইশান ভাব নিয়ে বলে,
“‘দ্যা গ্রেইট ইশান’ কোথা থেকে শুনে বলে, সেটা ফ্যাক্ট না। ফ্যাক্ট হচ্ছে সে যাহা বলে তাহা সত্য বটে!”
আদ্র বাঁকা হেসে বলে,
“ছোট্ট একটা মিস্টেইক করেছিস, দ্যা গ্রেইট ইশান না হয়ে, দ্যা গ্রেইট বলদ ইশান হবে। যা সর কাছ থেকে, লাত্থি খাবি নাহলে।”
ইশান দাঁড়িয়ে ব্যাথিত হওয়ার মতো করে বলে,
“মূল্য দিলি না। ব্যাথা পেলাম।”
“ড্রয়ারে ব্যথার ঔষধ আছে। খেয়ে নে।”
ইশান হেসে দিয়ে বলে,
“কাল একবার জগন্নাথে যাবো। যাবি তুই?”
“হুম, যাবো। আমারও একটু কাজ আছে।”
“তাহলে এখন আমার স্পেশাল ডিম ভাজি খেয়ে শুয়ে পড়।”
কথাটা বলে আবার রান্নাঘরের দিকে যায় ইশান। আদ্র হাঁক ছেড়ে জিজ্ঞেস করে,
“ডিমে লবন দিয়েছিস?”
রান্নাঘর থেকে উত্তর আসে,
“লবন দেইনি বলেই তো স্পেশাল। লবন দিলে তো আর স্পেশাল হতো না। হয়ে যেত কমন ডিম ভাজি।”
আদ্র সুন্দর হেসে অস্ফুট স্বরে বলে,”বদমাইশ একটা!”
.
তখন মধ্যরাত। চারদিকে পিনপতন নিরবতা। কোথাও কেউ নেই যেন! নিষাদের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুমিয়েছে তা বলা যায় না। একটু চোখ লেগেছিলো কিন্তু তা ঘুমের জগতে প্রবেশ করতে পারেনি। বারবার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে বেশি কড়া কথা শুনিয়ে ফেলেছে। এখানে মেয়েটা হলো নিশিতা। যার সঙ্গে নিষাদের গভীর প্রণয়। এক্ষেত্রে নিষাদের চাইতে নিশিতাই এই সম্পর্ক নিয়ে একটু বেশি কেয়ারিং এবং পসেসিভ। যেটা নিষাদের কাছে মাঝে-মধ্যে বিরক্তি ঠেকে। যার ফলে প্রায়শই মনমালিন্য হয়ে থাকে। যদিও রাগ শেষমেশ নিষাদেরই ভাঙাতে হয়। এই যে রাতে ঝগড়া করলো, বকাঝকা করলো, এখন ঘুমাতে পাড়ছে না। গিল্টি ফিল হচ্ছে।
কিছুক্ষণ বারান্দায় পায়চারী করলো তারপর আবার রুমে ফিরে এলো। অনেক ভাবনা চিন্তার পর শেষে ইগো ঝেড়ে নিশিতার নাম্বারে ফোন করলো। কিন্তু ফোন অফ। ফেইসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ কোনো ভাবেই যখন পেলো না তখন কল দিলো নোলককে। কারন প্রতিবার সমস্যার সমাধানে নোলককেই প্রয়োজন পরে। নোলককে নিশিতা একটু বেশি পছন্দ করে। নোলকের কথা ফেলে না। তাই নিষাদ অস্র হিসেবে নোলককেই ব্যবহার করে প্রতিবার।
নোলক প্রথমে ধমকা-ধমকি করলে শেষমেশ সমাধান করেই দেয়।
নিষাদ উদগ্রীব হয়ে ফোন দিতেই থাকলো নোলককে। কিন্তু নোলকের ঘুম তো এত সহজে ভাঙার না। প্রায় সাত আটবার কল দেয়ার পর নবনী ঘুম ভেঙে নোলককে ডেকে দেয়ার পর সে কল ধরেছে। কানে ফোন রেখে আধোঘুম আধো জাগরণে নোলক কিড়মিড় করে বলে,
“নিষুর বাচ্চা! এখন ফোন দেয়ার সময়? ঘুমাতে দিচ্ছিস না ক্যান?”
নিষাদ আক্ষেপ নিয়ে বলে,
“আমি এদিকে ঘুমাতে পারছি না আর তিনি আছেন তার ঘুম নিয়ে।”
“থাপ্পড় খাবি, আমি তোরে ঘুমাতে নিষেধ করলাম কখন? ক্যান ফোন দিয়েছিস ডিরেক্ট বল।”
নিষাদ মিনমিনে স্বরে বলে,
“নিশি আমায় সব জায়গা থেকে ব্লক করে রাখছে। কন্টাক্ট করতে পারছি না। একটু ম্যানেজ করে দে দোস্ত।”
নোলক খ্যাটখ্যাট করে বলে,
“গুস্টি কিলাই তোর ম্যানেজের। খালি ব্লক করছে ক্যান? তোরে তো বেটা বাক্সবন্দী করে করে বুড়িগঙ্গার ময়লা পানিতে ফেলে দেয়া উচিত। ফোন রাখ, ফাউল।”
বলে ফোন কেটে দেয় নোলক। নিষাদ যেন সত্যি সত্যি বুড়িগঙ্গায় পড়লো এবার। ‘কি করবে’ ‘কি করবে’ ভাবতে ভাবতেই, মিনিট পাঁচেক পর নিষাদের ফোনে টুং করে ম্যাসেজ এলো,
“কাল সকালে সময় মতো ক্যাম্পাসে চলে আসবা। নয়তো নোলক আপুর কথা মতো সত্যি সত্যিই কিক মেরে বুড়িগঙ্গায় ফেলবো। ঘুমাও এখন। শুভ রাত্রি।”
নিষাদের মুখে হাসির রেখা চওড়া হলো। বার’কয়েক ম্যাসেজটা পরে আবার নোলককে ফোন দিল। নোলক ফোন রিসিভ করে ঝাঁজ নিয়ে বলল,
“আবার ফোন দিয়েছিস বেয়াদপ! উষ্ঠামু এবার।”
নিষাদ সুন্দর হেসে বলে,
“থ্যাংক ইউ দোস্ত। লাভ ইউ।”
কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো নোলক। নিষাদও আর জ্বালালো না। চিন্তা মুক্ত হওয়ায় ঘুম ঝেঁকে ধরেছে। ফোনটা রেখে শুয়ে পড়লো। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো নিশাতার সঙ্গে অযথা আর ঝগড়া করবে না। যতই হোক মেয়েটার মনটা খুব নরম। এটাই লাস্ট টাইম। যদিও তার এই প্রতিজ্ঞা আর দুই-তিনবার হলেই হাফ-সেঞ্চুরি করে ফেলবে!……(চলবে)