#চিঠি

(রিপোস্ট)

পর্ব ১

আমি পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলাম। আগামী মাসে আমার পরীক্ষা। বাবা কড়া আদেশ দিয়েছেন কোনোভাবেই যেন পরীক্ষার ফলাফল খারাপ না হয় কারণ গতবার পরীক্ষাতেও আমার ফলাফল ছিল অসন্তোষজনক। মনটা যখন পড়ার মধ্যে ডুবে ছিল ঠিক তখনই কে যেন হুড়মুড় করে আমার রুমে প্রবেশ করল। আমি পিছু ফিরে তাকালাম।
“ইতি! কী করছিস তুই? ”

“দেখছো না পড়ছি যে।”

সোয়েব ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে টেবিলের উপরে রাখা বইটি হাতে নিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।

“এসব তোর পড়ে লাভ নাই ইতি। আমি নিশ্চিত যে তুই সারাজীবন পড়লেও এগুলো বুঝবি না। ”

সোয়েব ভাইয়ার করা এই অপমানটা আমার মোটেই সহ্য হলো না কিন্তু আমি মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারলাম না কারণ আমার কাছে বলার মতো কিছুই নাই। সোয়েব ভাইয়া ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেছেন আর আমি সাধারণ একটা বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়ন করছি তাই তার অহংকার থাকাটা ও আমাকে অপমান করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তিনি বইটা আবারও টেবিলে রেখে বললেন,

“তুই এসব রেখে আমার সাথে আয়। জানিস আজ আমি নুডলস বানিয়েছি তা-ও জীবনে প্রথমবার।”

“তোমাদের বাসায় এতো কাজের মানুষ থাকতে তুমি কেন নুডলস বানাতে গেলে সোয়েব ভাই?”

“তুই এসব বুঝবি না। এজন্যই তো আমি তোকে গাধা বলি”
কথাটি বলেই সোয়েব ভাই আমার চুল ধরে জোরে একটা টান দিলেন। এটা নতুন কিছু না এগুলো তার নিত্যদিনের অভ্যাস। আমিও এতে অভ্যস্ত। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় তার কোনোকিছুতেই বাঁধা নেই। তাইতো আদরে আদরে বাঁদর হয়ে গিয়েছ।

“সোয়েব ভাই! তোমাকে কতোবার বলেছি এভাবে আমার চুল ধরে টানবে না।”

“তুই বুঝিস না কেন ইতি! আমার মনে হয় তোর বুদ্ধিগুলো সব মাথার মধ্যে জ্যাম হয়ে আছে তাই চুল ধরে টানি যাতে তোর বুদ্ধি খুলে যেতে পারে। আর আমার ধুমধাম মাইর খেলে দেখবি তোর বুদ্ধি বেড়ে যাবে এককথায় আমার মাইর তোর জন্য বুদ্ধি বেড়ে যাওয়ার ওষুধ হিসেবে কাজ করবে”

“হয়েছে তোমার! এবার যাও এখান থেকে। আমার অনেক পড়া আছে।”

“তুই কি আমার সাথে যাবি না ইতি?”

“না”

সোয়েব ভাই কোনো কথা ছাড়াই আমার হাত ধরে হেঁচকা টান মারলে। আমার হাত ধরে টানতে টানতে তার ঘরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন। মাঝেমধ্যে সোয়েব ভাই সবকিছুর সীমা অতিক্রম করে ফেলেন তাও আমি কখনো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি না। সে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে একটা নুডলসের বাটি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।

“খেয়ে বলতো কেমন হয়েছ? ”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক চামচ নুডলস মুখে দিলাম। নুডলসে এতোটাই লবণ দেওয়া ছিল যে আমার চোখমুখ কুঁচকে গেলো।
“কী হয়েছে এমন পেঁচার মতো মুখ করে রেখেছিস কেন?”

আমি কোনোমতে মুখের খাবারটুকু হজম করে জবাব দিলাম।
“কিছু না দারুণ স্বাদ হয়েছ। ”

” তাহলে আরও খা।”

আমি আমতাআমতা করে জবাব দিলাম।

“না আমি আর খাব না। এখন বাসায় গিয়ে পড়তে হবে।”

সোয়েব ভাইয়া আমার চুলগুলো ধরে আবারও টান মারলেন।
“মিথ্যা বলাতো দেখি তুই ভালোই শিখেছিস। এতবড় সাহস তোর আমার সাথে মিথ্যা বলছিস। তুই কী ভেবেছিস আমি না খেয়েই তোকে খেতে দিয়েছি এতো গাধা ভেবেছিস আমাকে। আমার ভালো করেই জানা আছে খাবার কেমন হয়েছ। ”

আমি জবাবে কিছু বললাম না। কারণ বলেও লাভ নেই। আমার প্রত্যেকটা কথায় ভুল ধরা সোয়েব ভাইয়ের অভ্যাস।

……
আমাদের এক প্রতিবেশীর বিয়ে। আমাদের বাসার সবাই এসেছে এই বিয়েতে। সেই সাথে এসেছে সোয়েব ভাই ও তার পরিবারও। আমাকে দেখতেই সোয়েব ভাই দৌড়ে এসে বললেন।
“আজ তোকে দেখতে দারুণ লাগছে ইতি। নির্ঘাত আজ কোনো ছেলে তোর প্রেমে পড়বে।”

আমি অস্পষ্ট স্বরে বললা,
“যার প্রেমে পড়ার দরকার সেই তো পড়ে না।”

“কী বললি?”

আমি থতমত খেয়ে বললাম,
“কোথায় না তো কিছুনা।”

সোয়েব ভাই পিছু ফিরে চলে যেতে লাগল। আমি ডাক দিলাম,
“সোয়েব ভাই! ”

তিনি ঘুরে আমার দিকে তাকালেন।
“আজ তোমাকেও সুন্দর লাগছে সোয়েব ভাই।”

তিনি আমার কিছুটা কাছে এগিয়ে আসলে,
“আচ্ছা! তুই সবসময় আমাকে সোয়েব ভাই সোয়েব ভাই কেন করিস। আমি তোর কোন সম্পর্কের ভাই লাগি বলতো?”

“কী হয়েছে? ”

“তুই আমাদের প্রতিবেশী আর আমি তোদের প্রতিবেশী। শেষ এটুকুই। আরেকবার কখনো যদি আমাকে ভাই ভাই করিস তাহলে দেখিস আমি থাপ্পড় মেরে তোর দাঁত সবগুলো ফেলে দিবো।”

আমরা সোয়েব ভাইদের বিল্ডিং এ ভাড়া থাকছি দুইবছর ধরে। শুরু থেকেই আমি তাকে সোয়েব ভাই ডেকে অভ্যস্ত তবে আজ তার কী হলো তা বুঝতে পারলাম না।

(চলবে)

#মারিয়া_নূর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here