#চাঁদ_সুন্দরী

সুরমা
পর্ব : ৭

জুঁই কান্না করে একদম নাকের পানি আর চোখের পানি এক করে ফেলে।আয়েশা বেগম বলে,,,
-কান্না করা শেষ হয়েছে?বাচ্চাদের মতো এভাবে কেউ কান্না করে?জুঁই মাথা তুলে চোখ দুটি মুছে আর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।কেমন বাচ্চাদের মতো করছিল জুঁই।মুখটা একদম কাঁচুমাচু করে রেখেছিল।জুঁইকে এভাবে দেখে পরাগে খুব হাসি পাচ্ছিল।এতো বড় মেয়েদের সে কখনও এভাবে কাঁদতে দেখে নি।অনেক কষ্টে সে হাসিটা আটকে রাখলো।আনিকা বলে,,,,
-আমার তো সেই মজা লাগছে।আমার একটা সঙ্গী হলো।এখন থেকে দুজন এক সাথে কলেজ যাবো আসবো।সব একসাথে।তুমি থাকবেও আমার রুমে আমার সাথে।আনিকার কথায় আয়েশা বেগম হেসে দিলেন।সাথে সাথে তিনি নিশ্চিন্ত হলেন।তিনি বুঝতে পারছিলেন না আনিকা বিষয়টা সহজ সরলভাবে নিবে কিনা।আজ কালকার ছেলে মেয়েরা এসব বিষয় সহজে মানতে চায় না।মনে করে মা বাবার ভালোবাসার ভাগ অন্য কেউ নিয়ে নিচ্ছে।হিংসা রাগ এসব চলে।অনেক বাড়িতে দেখা যায় কাজের মেয়েকে যদি মা বাবা বা বাড়ির গুরুজনরা একটু আদর করে,কেয়ার করে,তাহলে বাড়ির কিছু ছেলে মেয়ে হিংসায় রাগে ভয়ঙ্কর রুপ নেয়।এমন কি কিছু সময় ভুলবাল কাজ করে বসে।তারা মনে করে বাড়ির ছেলে মেয়েদের থেকেও বাহিরের লোকজনদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।অন্যজনকে ভালোবাসলেও যে ভালোবাসা কমে না এই বোধটা তাদের মধ্যে তখন কাজ করে না।সেক্ষেত্রে আনিকার তেমন কোনো রুপ প্রকাশ পেলো না।বরং জুঁই তাদের সাথে থাকবে শোনে আনিকা খুবই খুশি হলো।আয়েশা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।’আলহামদুলিল্লাহ। ছেলে মেয়ে দুইটাকে উপযোক্ত শিক্ষা দিতে পারলেন।তারা মানুষের মতো মানুষ হয়েছে।’এই তো চাওয়া ছিল।আর কি চাই এর থেকে বেশি।সন্তান মা বাবার মনের মতো হবে।এটাই প্রত্যেক বাবা মায়ের প্রত্যাশা।পরাগ বললো,,,,
-ঠিক আছে।আমি বরং কলেজে কথা বলে দেখি।
-ঠিক আছে।দেখ।আনিকা বলে,,,
-ভাইয়া তুমি যাওয়ার সময় আমাদের শপিং মলে ডপ করে দিও।আমি জুঁইকে নিয়ে মার্কেটে যাবো।আম্মু,জুঁইকে যতগুলো ড্রেস কিনে দিবো আমি সেইম ততোগুলো ড্রেস নিবো।দুজনে সেইম ড্রেস।লোকে দেখলেই বলবে ওরা দুই বোন।কষ্ট করে কাউকে বলতে হবে না।আনিকার কথা শোনে আয়েশা বেগম হেসে দিলেন। পরাগ বললো,,,,
-বুঝতে পেরেছি।ড্রেস কিনার জন্য এতো বুদ্ধি বের করছিস।সোজা বললেই পারিস আমারও ড্রেস চাই।এতো ড্রামার কি দরকার?
-মোটেই না।আমি ড্রামা করি নি। আম্মুুুুুুুুুুু
-হয়েছে।আর আম্মু বলতে হবে না।তোর যতো গুলো মন চায় ততোগু্লো ড্রেস নিস।এই নে আমার কার্ড।যা লাগে এখান থেকে তুলে নিবি।আনিকা পরাগের হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে বলে,,,
-ভাইয়া,তুমি খুব ভালো।
-হ্যাঁ।যা চাইবে সাথে সাথে তা দিয়ে দিলে সব ভাইয়াই ভালো হয়। জুঁই শুধু অবাক হচ্ছিল।এরা মানুষ নাকি ফেরেশতা? সবাই এতো ভালো কি করে?এতো ভালো মানুষ এখনও আছে?চিনে না জানে না একটা মেয়েকে নিজেদের বাসায় আশ্রয় দিলো।কতো সহজে তাকে আপন করে নিলো।মা বাবা ছাড়া দ্বিতীয় কেউতো কাউকে এতোটা আপন করে নিতে পারে না।জুঁই কখনও কল্পনাও করে নি।এতো সুখ তার কপালে ছিল।পরাগ খাবারটা রেখে বেসিনে হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে যায়।পরাগ জানে না জুঁইয়ের ব্যাপারে তার এতো আগ্রহ জাগছে কেন?আজ অফিসে অনেক কাজ ছিল।কিন্তু তার মায়ের কাছে বললো তেমন কাজ নাই।পরাগের আজকে সত্যি অনেক ভালো লাগছে।এতটা ভালো লাগার কারণ জানা নেই।পরাগ আবার একটু ফ্রেশ হয়ে আসে।ডয়িং রুমে জুঁই আর আনিকা বসে আছে।জুঁই ড্রেস চেঞ্জ করেনি।কিন্তু হালকা একটু সেজেছে।দুটি চোখে কাজল লাগিয়েছে।গোলাপি ঠোঁট দুটিতে হালকা লিপস্টিক দিয়েছে।চুল গুলো ফোলিয়ে বেঁধেছে।দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।একদম ফর্সা চেহারায় হালকা সাজ আর ব্ল্যাক থ্রি পিছ।চোখ সরানো যাচ্ছে না জুঁইয়ের উপর থেকে।পরাগ জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
-আনিকা,আমি রেডি।চল,আর লেইট করা যাবে না।তোরা গেলে তাড়াতাড়ি আয়।পরাগের কথা শোনে জুঁই মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে পরাগ তার দিকে তাকিয়ে আছে।এ চাহনি স্বাভাবিক চাহনি নয়।এই চাহনিতে চোখে কিছু লুকিয়ে আছে।জুঁই বুঝতে পারছে না,এই ছেলে কেন সব সময় তার দিকে এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকে।জুঁইয়ের চোখ পরাগের চোখের উপর গিয়ে পড়তেই জুঁই চোখ নামিয়ে ফেলে।কিন্তু পরাগ তাকিয়েই থাকে।আনিকা সোফা থেকে উঠে বলে,,,
-চলো।আমরাও রেডি।
-হুম চল।আনিকা,জুঁই আর পরাগ নিচে চলে আসে।বাহির থেকে বাড়িটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর।ভেতরটা ভালো করে দেখার সুযোগ পায়নি জুঁই।কিন্তু বাইরে থেকে দেখে বেচারি বেহুশ হওয়ার মতো।এতো বড় বাড়ি।রাজ প্রাসাদ।সে বুঝতেই পারে নি বাড়িটা এতো বড়।সে অনুমান করেছিল আনিকারা বড় লোক।কিন্তু এতোটা বড়লোক হবে কল্পনা করে নি।পরাগ ডাইভিং করছে।আনিকা আর জুঁই পেছনে বসেছে।আনিকা জুঁইয়ের সাথে এই সেই বিষয় নিয়ে কথা বলছে।জুঁই শুধু হু হা করছে।আর মাঝে মাঝে কিছুর উত্তর দিচ্ছে।এর বাহিরে কোনো কথা বলছে না।পরাগ লুকিং গ্লাসে জুঁইকে দেখতে থাকে।এ দেখার স্বাদ যেন মিঠে না।ইচ্ছে করে হাজার বছর এই মুখটার দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে।যতক্ষণ পরাগ গাড়িতে ছিল ততক্ষণ সে শুধু জুঁইকেই দেখেছে।কেন যে তার এই রকম হচ্ছে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা শপিং মলে চলে আসে।পরাগ আনিকা আর জুঁইকে শপিং মলের সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,
-যা কিনার দরকার এখান থেকে কিনে নে।শপিং শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে কল দিবি।আমি তোদের পিকাপ করবো।
-ঠিক আছে।পরাগ গাড়ি নিয়ে সোজা আনিকার কলেজে চলে যায়।আনিকা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে জুঁই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে শপিং মলের উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।আনিকা একটু পিছিয়ে এসে বলে,,,
-কি হলো?দাঁড়িয়ে আছো কেন?
-আমরা এখান থেকে জামা কাপড় কিনবো?
-হু,কেন?
-এতো বড় দোকান থেকে?আমি তো গ্রামে ছোট ছোট দোকান থেকে কিনতাম।
-এটা দোকান না।এটাকে মল বলে।শপিং মল।চলো ভেতরে অনেক সুন্দর।বাইরে তো কিছুই না।আনিকা জুঁইকে নিয়ে শপিং মলের ভেতরে ডুকে।জুঁইতো অবাক।এতো বড় দোকান জুঁই এর আগে কখনও দেখে নি।অনেক লোকজন।আনিকা বলে,,,,
-চলো দুতলায় যাবো।ঐখানে ভালো ড্রেস পাওয়া যায়।আনিকা এসে লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে বলে,,,,
-তাড়াতাড়ি আসো।জুঁই এগিয়ে আসলে আনিকা জুঁইয়ের হাত ধরে বলে।লিফটে উঠেছো কখনো??
-কিসে??
-এই যে লোকজন উপরে উঠছে এইটার নাম লিফট।কখনও উঠেছো এটা দিয়ে?
-না,
-অহ,আচ্ছা।সমস্যা নাই।আমি যেভাবে বলবো তুমি সেভাবে পা ফেলবা।মনে থাকবে?
-হু,
-এই যে হলুদ দাগ দেওয়া দেখছো?এই দুই হলুদ দাগের মাঝখানে পা রাখবা।আমি তোমার হাতে ধরে রাখবো।পড়বা না।আমার পায়ের সাথে সাথে পা দিবা।ঠিক আছে?
-ঠিক আছে।আনিকার কথা মতো জুঁই দাগ টানার মাঝখানে পা রাখে।কিন্তু লিফটের গতি উপরের দিকে তাকায় জুঁই একটা ঝাকুনি খেয়ে আনিকাকে ঝাপটে ধরে।আনিকা বলে,,,,
-ভয় পেয়েছো?
-হু,
-কিছু হবে না।আমি তোমার হাত ধরে রেখেছিলাম তো।এখন থেকে উঠতে পারবা?
-হু।জুঁই জামা কাপড় কি কিনবে,সে শুধু এদিক সেদিক তাকিয়ে থাকে।আনিকা এই ড্রেস ঐ ড্রেস সিলেক্ট করে।জুঁইকে ড্রেস সিলেক্ট করতে বললেও সে কোনো ড্রেস পছন্দ করতে পারছিল না।উল্টে ড্রেসের প্রাইজ দেখে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ছিল।জুঁই আনিকাকে বলে,,,,
-শোন,আমরা ছোট বলে এই লোক গুলো আমাদের ঠকাচ্ছে। এই জামাটার এতো দাম হবে না।একটা থ্রি পিছের দাম ১৪/১৫ হাজার?আমি জীবনেও শুনি নি।আমিতো ৩০০/৪০০ টাকা দিয়ে কিনতাম।আর সবচেয়ে ভালো কিনলে ৫০০ টাকা দাম নিতো।চলো আমরা চলে যাই।মামুনি এসে কিনবে।
-আমাদের কেউ ঠকাচ্ছে না।এগুলোর দাম এতোই।ফিক্সড প্রাইজ।
-তাই বলে এতো???
-হু এতো।
-থাক আমার জামা কাপড় লাগবে না।চলো বাসায় চলে যাই।এতো টাকা আমি জীবনেও দেখি নি।এতো টাকার ড্রেস তো দূরে।জুঁই আনিকার হাত ধরে একটু সামনে টেনে নিয়ে আসে।আনিকা জুঁইকে থামিয়ে বলে,,,,
-খালি হাতে বাসায় গেলে আম্মু বকা দিবে।তাছাড়া ভাইয়াতো কার্ড দিয়ে গেলো।টাকার জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।তুমি শুধু চয়েজ করো।বাকিটা আমি দেখছি।জুঁই না চাওয়ার শর্তেও আনিকা অনেক গুলো ড্রেস কিনে।সাথে সব রকম কসমেটিক্স।দুতলা থেকে শপিং করা শুরু করে আটতলায় তাদের শপিং শেষ হয়।এর পর আর জুঁইয়ের লিফটে উঠতে তেমন সমস্যা হয় নি।আনিকা যা যা কিনে জুঁই শুধু তার হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলে।না তে না বলে।যখন তাদের মার্কেট প্রায় শেষের দিকে।তখন আনিকা পরাগকে কল করে আসতে বলে।আনিকাদের মার্কেট শেষ হলে আনিকা জুঁইকে নিয়ে নিচে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে।রেস্টুরেন্টে কতোগুলো ছেলে জুঁইকে তীক্ষ্ণভাবে দেখতে থাকে।

চলবে————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here