#চাঁদ_সুন্দরী
সুরমা
পর্ব : ১৫
জুঁই ভয়ে আতঙ্কে মুখটা কাঁচুমাচু করে ফেলে।তার সাজ দেখে সে নিজেই হতভম্ব।তার মাথায় একটা কথায় ঘুরছে।তাকে এমন বউয়ের পোশাক পড়ালো কে?জুঁই সামনে থাকিয়ে দেখে পরাগ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পরাগের গায়ে পাঞ্জাবি।হাত দুটি বগলের নিচে রেখে তার দিকে কেমন অদ্ভুত ভাবে চেয়ে আছে।জুঁই খেয়াল করে সে বাসায় নেই।এটা কোনো অফিস মনে হচ্ছে।সোফায় সে শুয়েছিল।জুঁই ভয়ে ভয়ে বলে,,,,
-আমি কো,থা,য়?আমার গায়ে এই পোশাক কেন?জুঁইয়ের কথা শোনে পরাগ জুঁইয়ের কাছে এসে বলে,,,
-তুমি কাজি অফিসে।এখন তোমার বিয়ে।তাই তোমার শরীরে এমন পোশাক।
-বি,য়ে?
-হু বিয়ে।চলো অনেক ঘুমিয়েছো।পরাগ জুঁইয়ের হাত ধরতে গেলে জুঁই নিজের জায়গা থেকে নড়ে বসে।জুঁই বলে,,
-আমি বিয়ে করবো না।আমি বাসায় যাবো।আমি মামনির কাছে যাবো।আমি আনিকার কাছে যাবো।
-হু যাবে।আগে বিয়েটা হোক তারপর।
-আমি বিয়ে করবো না।
-কেন করবে না?আকাশকে তো বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে।তাহলে এখন করবে না কেন???
-করবো না।
-করতে হবে।চলো।বিয়ে তোমাকে করতেই হবে।গতকালের চড়টার কথা মনে আছে?
-ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ।আমি বিয়ে করবো না।আমি বাসায় যাবো।ভ্যাঁ ভ্যাঁ।জুঁইয়ের কান্না শোনে ওপর পাশ থেকে আনিকা আর পরাগের বন্ধুরা বের হয়ে আসে।জুঁই আনিকা কে দেখে সোফা থেকে উঠে দৌঁড়ে গিয়ে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে।আনিকা বলে,,,
-আরে কাঁদছো কেন??
-তোমার ভাই জোর করে আমার বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে।আমি বিয়ে করবো না।
-কি বলছো তুমি জানো?আমার ভাইয়ার জন্য সব মেয়েরা পাগল।সেখানে ভাইয়া নিজে তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে।আর তুমি বলছো তুমি বিয়ে করতে চাও না?আনিকার কথা শোনে জুঁইয়ের কান্না বন্ধ হয়ে যায়।জুঁই একবার আনিকাকে আর একবার পরাগকে দেখে।১০মিনিট একে অপরের মুখ দেখেই চলে যায়।জুঁই বলে,তোমার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে?
-হুম।হঠাৎ করে জুঁই আবার কাঁদতে শুরু করে।পরাগ অবাক।এই মেয়ে কি।কাঁদছে আর নাকের পানি ফেলছে।আনিকা বোকার মতো জিজ্ঞেস করে,,,
-আবার কাঁদছো কেন?আবার কি হলো?
-আমি তোমার ভাইকেই বিয়ে করবো না।ভ্যাঁ ভ্যাঁ
-কেন?আমার ভাইকেই কেন বিয়ে করবে না?জুঁইয়ের কথা শোনে পরাগ,আনিকা সহ পরাগের সব বন্ধুরা অবাক হয়।পরাগ হা করে জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।জুঁই বলে,,,,
-তোমার ভাই পচা।আমাকে শুধু মারে।কাল মেরে আমার গাল ভর্তা বানিয়ে ফেলেছে।জুঁইয়ের কথা শোনে পরাগ বোকা বনে চলে যায়।বাকি সবাই পরাগের দিকে তাকিয়ে থাকে।পরাগ আনিকার কাছে গিয়ে জুঁইয়ের হাত ধরে টেনে জুঁইকে একটু নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-কি হচ্ছে কি?কি সব বলছো?
-সত্যি কথাই তো বলছি।আমি মিথ্যা কথা বলি না।আপনি আমাকে মেরেছেন।খুব জোরেই মেরেছেন।
-এই মেয়ে চুপ করোতো।আর একটা বাজে কথা বললে এক চড় মেরে উপর থেকে নিচে ফেলে দিবো।
-ভ্যাঁ ভ্যাঁ।আবার আমাকে বকছে।আমি কিন্তু আপনার পাঞ্জাবিতে নাক মুছবো।জুঁইয়ের কথা শোনে পরাগ এতোটা শকড হয় যে ভ্যাবলার মতো চেয়ে থাকে শুধু।কিছুক্ষণ পর পরাগ বলে,,,
-কি করবে?
-আমাকে ছাড়ুন না হলে আমি আপনার পাঞ্জাবিতে নাক মুছবো।জুঁই পরাগের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আনিকার কাছে এসে বলে,,
-আমি বাসায় যাবো।আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।পরাগ আবার এসে জুঁইয়ের হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে।জুঁই বলে,,,,
-আমাকে এভাবে টানছেন কেন?আমার হাতটা তো ছিড়ে যাবে।ছাড়ুন বলছি।পরাগ জুঁইকে ভেতরে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।পাশের চেয়ারটায় পরাগ নিজে বসে।সামনে কাজি সাহেব।পরাগ জুঁইকে আস্তে করে বলে,,,,
-আর একবার যদি আজে বাজে কিছু বলতে শোনি কষে একটা চড় খাবে।চুপচাপ বসে থাকবে যতক্ষণ বিয়েটা সম্পূর্ণ না হয়।পরাগের কথা শোনে জুঁই আবার কান্না করতে থাকে।জুঁই আনিকাকে বলে,,,
-তোমার ভাইয়া আবার আমাকে বকছে।ভ্যাঁ ভ্যাঁ।জুঁইয়ের কান্না দেখে কাজি সাহেব বলেন,,,,,
-মেয়ে কান্দে কেন?পরাগ বলে,,,
-বিয়ের কথা চলাকালীন মেয়েরা একটু কেঁদেই থাকে।এর উপরও সেরকম প্রভাব পড়েছে।আপনি চিন্তা করবেন না।বিয়ে শেষ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।আপনি বিয়ে পড়ান।পরাগের কথা শোনে জুঁই কান্না থামিয়ে বলে,,,,
-আমি বিয়ের জন্য কাঁদছি না।আপনি বকেছেন তাই কাঁদছি।জুঁই কাঁদছে আর কাজি সাহেব বিয়ের সব নিয়ম কানুন শেষ করে।এখন সাইন করার পালা।পরাগ সাইন করেছে কিন্তু জুঁই কিছুতেই সাইন করতে চাইছে না।এবার পরাগ অনেকটা রেগে যায়।পরাগ বলে,,,,,
-ভালোয় ভালোয় সাইন করবে নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো?জুঁই পরাগের দিকে চেয়ে ভয়ে কুঁকড়ে যায়।জুঁই বলে,,,,
-আ,মি,তো
-বেয়াদব মেয়ে।আমার কথা কানে যায় না?সাইন করতে বলছি সাইন করো।
-ভ্যাঁ ভ্যাঁ।আমি বেয়াদব মেয়ে না।আমি গুড গার্ল।আমাকে আপনি খালি বকেন আর বকেন।আমি আপনার সাথে কথা বলবো না।
-কথা বলতে হবে না।
-বাসায় গিয়ে আমি আপনাকে দেখে নিবো।
-সাইনটা করে তারপর থেকে সব সময় তুমি শুধু আমাকেই দেখবে।আমি মানা করবো না।এখন সাইনটা করে দাও।তাহলেই হবে।জুঁই কাঁদতে কাঁদতে পেপারে সাইন করে দেয়।বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলে পরাগ জুঁই আর আনিকা নিজের বাসার দিকে রওনা দেয়।গাড়িতে জুঁই একটাও কথা বলে নি।বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলে পরাগ আনিকা নেমে যায়।কিন্তু জুঁই গাড়িতেই বসে থাকে।আনিকা গাড়ির কাঁচ নামিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে বলে,,,
-কি হলো নামছো না কেন?
-নামবো কি করে?আমার শাড়ি তো খুলে গেছে।
-অহ তুমি যে কি।এখন শাড়ি পরবে কি করে।পরাগ একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে পাশে আনিকা জুঁই কেউয়েই নেই।পরাগ আবার পিছিয়ে এসে আনিকাকে বলে,,,,
-এখন আবার কি হলো?গাড়ি থেকে নামছে না কেন?
-নামবে কি করে।ম্যাডামের শাড়ি খুলে গেছে।
-অহ।এই মেয়ে যেখানে যাবে সেখানেই ঝামেলা করবে।পরাগ গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে জুঁইকে কোলে তুলে নেয়।জুঁই নিজের শাড়ির কুচি ধরে বসেছিল।পরাগ হঠাৎ গিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয়।জুঁই বলে,,,,
-কি করছেন?কি করছেন?
-চুপচাপ থাকো।নাহলে কোল থেকে ফেলে দিবো।পরাগের কথা শোনে জুঁই শাড়ি ছেড়ে দিয়ে পরাগের গলা জড়িয়ে ধরে।পরাগ মুছকি হাসতে থাকে।আর জুঁই পরাগের দিকে তাকিয়ে থাকে।পরাগ জুঁইকে নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ায়।আয়েশা বেগম ডালাতে বরন করার সব জিনিস নিয়ে এসে বলেন,,,
-একটা বিয়ে করতে এতো সময় লাগে?আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি।কখন ছেলের বউকে দেখবো।জুঁই হা করে আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে।জুঁই বলে,,,
-মামনি,তুমিও?
-হু,কি করবো বল।ছেলের আবদার। তাছাড়া ছেলের পছন্দটা যে আমারও পছন্দ।কেন আমাকে শাশুড়ি হিসাবে মানতে কি তোর কোনো সমস্যা আছে?আয়েশা বেগমের কথা শোনে জুঁইয়ের চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।আয়েশা বেগম বলেন,,,,,
-এখন কাঁদবি না।পরে কাঁদিস।এখন গিয়ে শাড়িটা চেঞ্জ করে আয়।পরাগ ওকে রুমে নিয়ে যা।
-ঠিক আছে।পরাগ জুঁইকে নিজের রুমে নিয়ে যেতে লাগলে জুঁই বলে,,,,
-আপনি কি কানা হয়ে গেছেন?আমার রুম ঐ দিকে।
-কানা হইনি।তুমি ভুলে যাচ্ছো আমাদের বিয়ে হয়েছে।এখন তুমি আমার রুমে আমার সাথে থাকবে।
-না না না।আমি আপনার সাথে থাকবো না।আমি আনিকার সাথে থাকবো।আমাকে আনিকার রুমে নিয়ে যান।পরাগ জুঁইয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে জুঁইকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।নিজের বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,,,,
-যাও।শাড়িটা বদলে আসো।পরাগ গিয়ে নিজের আলমারি খুলে একটা টাওজার আর একটা টিশার্ট বের করে দেখে জুঁই বসেই আছে।পরাগ বলে,,,,,
-বসে আছো কেন?যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
-আপনি এতো বোকা কেন?শাড়ি চেঞ্জ করে পরবো কি?আমার সব জামাতো আনিকার রুমে।
-অহ,ভুলে গেছি।তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।পরাগ নিজের জামা কাপড় বিছানায় রেখে বাইরে চলে আসে।
চলবে——–