#গোধূলী_শেষে_তুমি_আমি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১২
“ওহে শ্যামবতী মেয়ে
তোমার ডাগর ডাগর আঁখিখানায়।
আমার নামে আজ থেকে কাজল দিও।”
হঠাৎ রজনী পল্লবের বুক থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো। কড়া সুরে বললো।
_ কি বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে।
_ একদম ঠিক আছে,কিন্তু তুমি এভাবে দূরে সরে থাকলে হয়তো মাথা ঠিক থাকবে না।
_ কি সব আবোল তাবোল বকছেন। আপনি একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি,তাই এমন কিছু করবেন না,যাতে পরে আফসোস করতে হয়।
_ তোমার কি তাই মনে হয় রজনী।
_ দেখুন আবেগে ভেসে এখন সব কিছু রঙিন লাগছে। আবেগ ফুরিয়ে যখন বাস্তবতা সামনে আসবে,তখন সব ভালোবাসা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যাবে।
_ আমার আবেগের বয়সটা আমি অনেক আগেই পার করে এসেছি।
_ ভুল বলছেন পল্লব আপনি। প্রতিটা মানুষ প্রথমে আবেগে ভাসে,তারপর বাস্তবতা শেখে। তাতে তাঁর বয়স সতেরো হোক বা সাতাশ। হ্যা হয়তো সতেরো বছরের কিশোরদের মতো সাতাশ বছরের যুবক পাগলামো করে না! কিন্তু তাঁরা শুরুতে আবেগেই গা ভাসিয়ে স্বপ্ন দেখে।
_ আমার বয়স না সাতারো,না সাতাশ! আমার রানিং বয়স ঊনত্রিশ। তাই তুমি আমার সম্পর্কে যা ভাবছো,সব ভুল ভাবছো রজনী । একটু আগেও যে দ্বিধা ছিলো! তা তোমার এই মুহূর্তের কথায় কেটে গেছে। আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি,সেটা আমি অনুভব করতে পারছি।
_ ভুল আপনি! হুট করে কখনো ভালোবাসা হয় না! যা হয় তা হলো প্রেম। আর প্রেম মানেই ক্ষনিকের মোহ।
_ তুমি কিন্তু আমার ভালোবাসাকে অপমান করছো রজনী।
_ যদি মনে হয় অপমান করছি, তো হ্যা করছি। কারণ আপনাদের মতো ছেলেরা আমাদের মতো মেয়েকে ব্যবহার করতে পারে, ভালোবাসতে পারে না। বেশি হলে তাঁদের বিছানার সঙ্গী করতে পারে,এর থেকে বেশি কিছু না।
_ রজনী।
চিৎকার করো উঠলো পল্লব। কিন্তু সেই চিৎকারে কোন ভাবান্তর নেই রজনীর মাঝে। সে আগের মতোই কঠিন চোখে চেয়ে রইলো। কারণ এখন যদি একটু ভয় তাঁর চোখে পল্লব দেখতে পায় তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এটা ঠিক পল্লবের প্রতি রজনীরও একটা দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু সেটা খুব গোপনে হৃদয়ে লুকানো। কোন মেয়ের সাধ্য আছে এমন ছেলের প্রতি দূর্বল না হওয়ার। যে না বলতেই সব কষ্ট বুঝে যায়,যত্ন করে সকল ক্ষত সারিয়ে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু অতীত! অতীত কখনোই রজনীর পিছু ছাড়বে না। তাই সে পল্লবের সুন্দর জীবনটা তাঁর কালো অতীত দিয়ে ঢেকে দিতে পারে না। তাই জন্ম নেওয়া সুপ্ত অনুভূতি বুকের মাঝেই দাফন করা হয়েছে। নিজেকে আরো কঠিন করে আঙুল উঁচু করে হিসহিসিয়ে রজনী বললো–
_ ভুলে যাবেন না আমি আপনাদের বাড়ির আশ্রিতা। আর আমার অতীত কী? আমাকে নিয়ে মানুষ ফুর্তি করার কথা ভাবতে পারে! ভালোবাসতে বা সংসার করার কথা ভাবে না। ওসব গল্পে সিনেমায় হয়,বাস্তব জীবনে নয়।
_ রজনীইই
আর নিজেকে সামলাতে পারলো না পল্লব। নিজের শক্ত হাতের চড় বসিয়ে দিলো রজনীর নরম গালে। হঠাৎ এমন কান্ড হতে পারে তা হয়তো রজনী কল্পনাতেও ভাবেনি। তাই তো নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি, পল্লবের পুরুষালী শক্ত হাতের থাপ্পড়ের কাছে! হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পরে গেলো সে। ঠোঁটের কোণা ফেটে ছুটতে রইলো লাল টুকটুকে রক্ত। শ্যামলা গালে বসে গেলো পাঁচ আঙুলের দাগ। প্রতিটা দাগ স্পষ্ট জানান দিলো কতোটা কষ্ট পেয়ে চড় বসিয়ে দিলো পল্লব। কিছু আঘাত রাগ থেকে আসে আর কিছু আঘাত কষ্ট থেকে। তুমি সেটা কীভাবে নেবে সেটা তোমার একান্ত বেপার।
তাঁর ভালোবাসাকে এভাবে রজনী অপমান করলো। গ্রহণ না করতো ফিরিয়ে দিতো! কিন্তু অপমান করলো কেন? সে তো একবারও জোর করেনি। সে তখন কেন ওসব বললো তাও জানে না। কিন্তু সে যদি জানতো রজনী তাঁকে এতোটা নিচুস্তরে দেখে,তাহলে কখনোই নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ্যে আনতো না। কিভাবে বললো কথাটা রজনী! সে তাঁকে বিছানার সঙ্গী বানাতে পারে মাত্র আর কিছু না। তাঁর ভালোবাসা কি সত্যি এতোটা ঘৃর্ণিত। যা দেখলেই মানুষ বুঝতে পারে সঠিক না ভুল। তাহলে কি সে নিজের অনুভূতি প্রকাশ সঠিক ভাবে করতে পারেনি,নাকি রজনী বুঝতে পারেনি। রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে রজনীকে টেনে তুললো পল্লব। হাত টেনে ঘরের মাঝে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। দরজার ধারাম আওয়াজে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো রজনীর। ধুকধুক করা বুকটা নিজের গতিবিধি বারিয়ে দিলো কয়েকগুণ। রজনীর শুধু মনে হলো একটাই কথা। মানুষের রাগের মাথায় নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে! তাহলে কি পল্লবও হারিয়ে ফেলেছে। রজনীকে বেশি ভাবার সময় দিলো না পল্লব। ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। ভয়ে রজনী গুটিয়ে নিলো নিজেকে। রজনীর দুই হাত নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে রজনীর দিকে ঝুকে পড়লো পল্লব। রজনীর চোখে চোখ রাখলো। পল্লবের প্রতিটা নিশ্বাস আছরে পরছে রজনীর মুখে। প্রতিটা নিশ্বাস যেন রজনীর ভয়কে বারিয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। হাতের বাঁধনটা আরো শক্ত করলো পল্লব। রজনীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
_ আমি চাইলে তোমার কপাল ছুঁয়ে দিতে পারি পুরুষালি চাহিদা নিয়ে।
কথা শেষ করেই একটা চুমু দিলো রজনীর কপালে। আবার মুখ তুলে কানে কানে বললো —
_ আমি চাইলে তোমার গাল ছুঁয়ে দিতে পারি নিরর্দ্বিধায়।
এবারও একি কাজ করলো পল্লব, রজনীর গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে। আবারও বলে উঠলো।
_ আমি চাইলে তোমার ওই কেটে যাওয়া ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে পারি কামনার বসে।
কথা শেষ হতেই তা কাজে সম্পূর্ণ করলো পল্লব। আবারও বললো সে।
_ আমি চাইলে তোমার গলার মাঝে মুখ ডুবাতে পারি নিজের পরুষত্ব জাগিয়ে তুলতে।
প্রতিবারের মতোই এবারও রজনীর গলায় ডুবিয়ে দিলো নিজের মুখখানা। আর রজনী তখন বরফের মতো জমে উঠলো। সে যেন একটা পাথরের মুর্তি হয়ে পড়ে রইলো। গলা থেকে মুখ তুলে পল্লব বললো–।
_ আমি চাইলে এমন অনেক কিছুই করতে পারি। রজনী আমি হিংস্র হায়নাদের মতো তোমার শরীরের প্রতিটা অংশ খুবলে খেতে পারি। কারণ আমি পুরুষ। আমি যতটা ভালো, ঠিক ততোটাই খারাপ। তাঁর জন্য আমাকে মিথ্যা বা ছলনার আশ্রয় নেওয়ার কোন দরকার নেই।এমন কি তোমাকে আমার ভালোবাসার ফাঁদে ফেলতেও হবে না। কারণটা নিশ্চয়ই তোমার অজনা নয়। আমি জানি আমি যা করলাম,তা ভুল নয় পাপ। কিন্তু তোমাকে সঠিকটা না বোঝালে তুমি কখনোই বুঝতে না,উল্টে আমায় ভুল বুঝতে! যেমনটা এখন বুঝছো। আমি আরো অনেক কিছু করলেও তোমার কোন ক্ষমতা নেই আমাকে কিছু বলার। কেউ যদি কিছু ফ্রী পায়,তাহলে কেউ নিশ্চয়ই টাকা খরচ করবে না। আমাদের দেশে আবার ফ্রী জিনিসগুলোর একটু বেশি চাহিদা। তাহলে আমি তো চাইলেই তোমাকে আমার বিছানার সঙ্গী করতে পারি,তাহলে ভালোবাসার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কি মানে? চাইলে আমিও মঈনুলের মতো হতে পারি। তোমাকে খুন করে গুম করতে মঈনুলের থেকেও আমার কম সময় লাগবে। কিন্তু মঈনুল মাঈনুলের জায়গায়, আমি আমার। রক্ষক আর ভক্ষক দু’জনেই কিন্তু পরুষ মানুষ হয়। তাই খারাপকে যদি ভালোর সাথে গুলিয়ে ফেলো,সেটা তোমার মনের সমস্যা ! তোমার কঠিন রোগ এটা।আমি তোমাকে ভালোবাসি,মনের গভীর থেকে অনুভব করি এসব মিথ্যা বলার তো কোন প্রয়োজন নেই। তাহলে বুঝে নিতে হবে আমি কেন এসব বললাম। মানেটা হলো আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি।
একদমে কথাগুলো শেষ করেই পল্লব উঠে দাঁড়ালো। এক পলক রজনীর দিকে চেয়ে হঠাৎ দেয়ালে সজোরে আঘাত করে বসলো। সর্বশক্তি দিয়ে নিজের হাতখানা ক্ষতবিক্ষত করলো। হাতের মাংস তৎক্ষনাৎ ফেটে গলগল করে রক্ত বের হতে রইলো। সেই দিকে কোন নজর না দিয়ে আবারও রজনীর দিকে তাকালো। রজনী তখন ভয়ে আরো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। যেটা দেখে পল্লব আবারও দেয়ালে সজোরে আঘাত করলো। কিন্তু এবারের আঘাতটা যেন বহুগুণ! তাই তো দেয়ালে কেমন বিকট আওয়াজ হলো। ঘরের প্রতিটা জিনিস যেন কেঁপে উঠলো সেই আঘাতে, সাথে কেঁপে উঠলো রজনী। পল্লবের পাগলামী দেখে নিজেকে সামলে রজনী এগিয়ে আসতে নিলেই পল্লব অন্য হাত দিয়ে ইশারা করলো।
_ দয়া দেখানোর কোন দরকার নেই। আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনার একটু আগের বলা কথাগুলো। আপনি আমাদের বাড়ির আশ্রিতা! তাই মালিকের ছেলের প্রতি দয়া দেখানোর কোন প্রয়োজন নেই। থাকুন নিজের অতীত আর কালো অধ্যায় নিয়ে। আমি আর কখনোই আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না। আমি ভুল জায়গায়, সাথে ভুল মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ফেলেছি। তাই আমি দুঃখিত। আর কখনোই আসবো না।
পল্লব গটগট পায়ে দরজা খুলে চলে গেলো। আর সেখানেই মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়লো রজনী। কি করলো সে। দূরে সরাতে গিয়ে যে মানুষটাকে সে আঘাত দিয়ে ফেলেছে। রজনীর থেকে একটু দূরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পল্লবের হাতের তাজা রক্ত।এগিয়ে গিয়ে রক্ত ছুঁয়ে দিতেই শরীর শিউরে উঠলো। রক্তমাখা হাতের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো রজনী। কি হলো তাঁর সাথে। মানুষটা এমন পাগলামি কেন করলো? কেন বুঝতে চাইছে না বাস্তবতা বড্ড কঠিন। বাস্তবতা মুখে বলাটা যতো সহজ, করতে পারা ঠিক ততোটাই কঠিন।
চলবে,,
আজকে পর্বটা কেমন হয়েছে জানি না। ভুল হলে প্লিজ মাফ করবেন।