গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_২১
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

“সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না” কথাটি হয়তো পুরোপুরি সত্য।মূলত
“সময় হলো এক মুঠো বালির মতো।এক মুঠো বালির যেমন হাতে ধরার পর আমাদের অগোচরেই ধীরে ধীরে পড়ে যায়,ঠিক তেমনি সময় আমাদের অগোচরেই আমাদের হাত থেকে ফুরিয়ে যায়।”
মারুফ-পৃথিশাদের বিয়ের পর কীভাবে যেন দুইটা মাস কেটে গেলো ব্যস্ততায়।বৌভাতের পর মারুফের হাসপাতাল আর পৃথিশার অফিস নিয়ে ব্যস্ততায় কেটে গেছে।দুজনের দুজনকে সময় দেওয়াটা একটু কমই পড়ে গেছিলো বোধ হয়।তবে ওদের মধ্যকার বন্ডিং আর আন্ডারস্যান্ডিং এর জন্য সম্পর্কে কোন রকম আঁচ আসতে দেয় নি।

ফজরের আজান শুনতেই ঘুম ভেঙে গেলো পৃথিশার।উষ্ণতার এক অমায়িক চাদরে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে। মারুফের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু অনেক কাজ পড়ে আছে।তাই জোরপূর্বক নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলেই মারুফ জেগে যায়।
ঘুম ঘুম চোখে পৃথিশাকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাও?”
পৃথিশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে, “আরে আজকে না সিলেটে যাবো ভুলে গেছেন?কাল রাতে তো ব্যাগ-পত্র ঠিক মতো গুছাতে পারিনি।”
পৃথিশার কথায় মারুফের মনে পড়ে আজ তাদের সিলেটে যাওয়ার কথা।বিয়ের কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনি বলে তারা সিলেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মারুফ পৃথিশার কপালে নিজের ওষ্ঠোদ্বয় ছুঁয়ালো। এক প্রশান্তিময় অনুভূতি ছুঁয়ে গেলো দুজনের মনে।
নামাজ পড়া শেষ করে মারুফকে টেনেটুনে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেয়। যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে ভরা শেষ করে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।সকালের নাস্তা করেই তারা বাহিরে বের হবে।

সকালের নাস্তাটা করে নয়টার আগেই বাসা থেকে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলো তারা। পৃথিশার বাসে জার্নি করতে অসুবিধা হয় বলে ট্রেন দিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে।এটাতে পৃথিশারও অসুবিধা কম হবে আবার তারা প্রকৃতিও উপভোগ করতে পারবে।
সব কাজ শেষ করে ট্রেন ছাড়ার পনেরো মিনিট আগে তাদের বুক করা নির্দিষ্ট কেবিনে গিয়ে বসতে পারলো তারা। ট্রেন পথ চলা শুরু হওয়ার সাথে সাথে যেন পৃথিশার গল্প বলাও শুরু হলো।
একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে।আবার মাঝে মাঝে নিজেকে থামিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করছে।
ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরে গ্রামের সরিষা ক্ষেত দেখা যাচ্ছে।মাঠের মধ্যে কিছু বাচ্চাদের খেলতে দেখে পৃথিশা উত্তেজিত হয়ে বলল,”জানেন আমি না কখনো এমন সরিষা ক্ষেতে যাই নি।গ্রামেই যাওয়া হয়নি আমার।খুব কম সময়ই ঢাকার বাহিরে গেছি আর গেলেও কোন কাজে।কখনো ঘুরতে যাওয়া হয়নি।কয়েকবছর আগে বিদেশে যাওয়ার পর ঘুরার সুযোগ থাকলেও আমি ভয়ে কারো সাথে কোথাও যেতাম না।”
মারুফ পৃথিশার গাল টেনে দিয়ে বলল, “এবার আপনার সব জায়গায়ই ঘুরা হবে ম্যাডাম। বেঁচে থাকলে প্রতিবছরই এভাবে ঘুরতে আসবো।”

মারুফের কথায় বাচ্চাদের খুশি হলো পৃথিশা।উত্তেজিত স্বরে বলল, “আচ্ছা আমরা সিলেটে কোথায় কোথায় ঘুরবো?”
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল মারুফ বলল, “কোথায় যেতে চাও?”
পৃথিশা বাহিরে হাত বের করে বলল, ” শ্রীমঙ্গলের চা বাগানটা তো ঘুরে দেখবোই দেখবো।আরো আছে, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হযরত শাহজালাল (রা.) এর মাজার।ও হ্যাঁ জাফলং!জাফলং তো মাস্ট!”
আর বিছানাকান্দি!সেটা কোনভাবেই বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।”
পৃথিশার এক নাগাড়ে কথা বলা দেখে হাসলো মারুফ। পৃথিশার দিকে একটা চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল, “অনেক কথা হয়েছে।এবার কিছু খাও।এই জার্নির খুশিতে আপনি যে কিছুই গলাধঃকরণ করতে পারেন নি তা আমি জানি।”

একেবারে অ্যাকসিডেন্টলি পৃথিশার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সাথে দেখা হয়ে গেলো তাদের।মেয়েটার নাম দিশা।দিশা তো পৃথিশাকে দেখেই একেবারে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।পৃথিশাও দারুণ খুশি তাকে দেখে।মারুফ তাদেরকে আলাদাভাবে গল্প করতে দিয়ে ভিতরের কেবিনে গিয়ে বসলো।পৃথিশা আর দিশা বাহিরে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।
হঠাৎ দিশা বলতে লাগলো, “উফ পৃথু তোর লাক অনেক ভালো!তুই অনেক লাকি!যাই বলিস না কেন ভাইয়া কিন্তু দেখতে সুন্দ..
আর কিছু বলার আগেই পৃথিশা দিশার মুখ চেপে ধরে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো।
রাগান্বিত স্বরে দিশাকে বলল, ” চোখ ফেরানোর কথায় পরে আসছি।আগে বল তুই ওনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবি কেন?কেন?টেল মি!তোর ওই বয়ফ্রেন্ড কি হাওয়া হয়ে উড়ে গেছে?এরপর যদি তোর দৃষ্টিকে আমার জামাই-এর আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখি তাহলে খবর আছে।”
নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দিশা মুখ ঘষতে ঘষতে বলল, “আরেহ্।আই ওয়াজ কিডিং!”
পৃথিশা মুখ বাঁকিয়ে বলল, “বাট আই ডোন্ট লাইক কিডিং। বাই!”

পৃথিশা হনহনিয়ে হেঁটে চলে গেলো।দিশা অবাক হয়ে পেছন থেকে তাকিয়ে রইলো।
পৃথিশাকে এভাবে রেগেমেগে আসতে দেখে মারুফ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আরে বাহ্!এত তাড়াতাড়ি কথা বলা শেষ?”
পৃথিশা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, “হুম শেষ।”
পৃথিশাকে চুপচাপ থাকতে দেখে মারুফ তাকে জিজ্ঞেস করলো, “মুড অফ গেছে নাকি?”
পৃথিশা কিছু না বলে ঢুলুঢুলু চোখে মারুফের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।

__________

ওদের বুকিং করা হোটেলে এসে পৌঁছাতেই পৃঘিশা অবাক হলো।ছবিতে হোটেলটা দেখে এতটাও সুন্দর লাগেনি যতটা এখন লাগছে।রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়েই পৃথিশা মারুফকে জমি করলো, “আচ্ছা আমরা বেরোব কখন?”
মারুফ ভ্রুঁ কুঁচকে বললো, “আজকে আমরা কোথাও যাচ্ছি না।এতটা পথ জার্নি করে এসেছ তাই আজকে রেস্ট নাও।”
পৃথিশা বাচ্চাদের মতো জেদ করে বলল, ” না না।আজকেই যাবো আর এটাই ফাইনাল।”
মারুফ ক্লান্ত স্বরে বলল, “পৃথিরানী প্লিজ!আমার মাথাটা ধরেছে খুব।আর এখন সন্ধ্যে হতে চলল।”

মারুফের মাথা ব্যাথার কথা শুনে পৃথিশা আর জেদ করলো না।মারুফের কথাই মেনে নিলো।খাওয়া-দাওয়া করে বিছানায় শুতেই ঘুম এসে চোখে ভর করলো পৃথিশা।মারুফের বুকের সাথে লেপ্টে এক ক্লান্তিময় প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ করলো সে।
অপেক্ষা একটি সুন্দর সকালের!

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here