#গল্পঃবর্ষণ_মুখর_দিন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্বঃ০৬

রাজিয়া বেগম জারার মায়ের নাম্বারে কল দিলেন।ফোন বেজে উঠতেই জারার মা হাতের কাজ ফেলে আঁচলে হাত মুছে কল রিসিভ করলেন।
প্রথমেই সালাম দিয়ে বোনের সাথে মুছাফাহ করে করে নিলেন রাজিয়া বেগম।কিছুক্ষণ কথা বলার পর রাজিয়া বেগম বললেন মুহিত কোথায় ওকে ডাক তোদের সাথে কথা আছে আমার।
জারার মা গলা উঁচিয়ে জারার বাবাকে ডাক দিলেন।জারার বাবা এসে রাজিয়া বেগমের সাথে কথা বলেন।কেমন আছেন আপা?

উত্তরে রাজিয়া বেগম মুচকি হেসে বললেন,আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমি ও ভালো আছি।
রাজিয়া বেগম আর অন্যদিকে কথা না বাড়িয়ে সরাসরি বললেন,জারার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।ছেলে জারার অফিসের বস।বিকালেই এসে দেখে গেছেন জারাকে।এখন তোমরা ঢাকায় এসে সবকিছু দেখেশুনে গেলে ভালো হবে।আমার মনে হচ্ছে সমন্ধটি খারাপ হবে না।
মুহিত হাসান লম্বা শ্বাস ফেলে বললেন,আমার কিছু শর্ত আছে।সেগুলো তাদেরকে মানতে হবে।শুধু ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলেতো হবে না ছেলেটা কেমন?আমার মেয়ের জন্য উপযুক্ত কিনা সেটাও দেখতে হবে।
রাজিয়া বেগম বললেন,সেই জন্যইতো বলছি তোমরা ঢাকায় এসে সব কিছু দেখে কথা বলে যাও।
মুহিত হাসান রাজিয়া বেগমের কথায় সম্মতি দিলেন।রাজিয়া বেগম বললেন,তোমরা বরং কালকেই ঢাকায় রওনা দিও।

রাতে বারান্দায় বসে নিয়াজ খুশিমনে আকাশ দেখে চলেছে।আজ সত্যি নিজেকে অনেক সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।এই সুখটা প্রগাঢ় হবে সেদিন,যেদিন জারাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে পাবে।হুট করে নিয়াজের মনে একটা অনুশোচনা জাগে আজ কি করে ফেললাম মেয়েটার অমতে?আমিতো এমন ছিলাম না?আবেগের বশবর্তী হয়ে আমি কিভাবে ওর কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালাম।এটাতো অন্যায়।মুহূর্তেই খুশি হওয়া মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
যতক্ষণ না জারার কাছে ব্যাপারটা নিয়ে ক্ষমা চাইবে ততক্ষণ নিয়াজের শান্তি হবেনা।

এই মেদী আমাকে তোর নোট খাতাটা দিস তো?
ছেলেটা কোমরে হাত দিয়ে করুন চোখে বলল,আমার নাম মাহাদী!অনেকে ভুল করে মেহেদী ডাকে তুইতো সেটারো বারোটা বাজিয়ে দিলি।
জারা কপাল চুলকে বলল,যাহাই মাহাদী তাহাই মেদী।এখন তুই আমাকে নোট খাতা দে।বাসায় যেতে হবে।
মাহাদী বলল,আজকে তো আমি নোট আনি নি।কালকে নিয়ে নিস আমি আসার সময় মনে করে নিয়ে আসবো।কালকে হলেতো সামিয়ার কাছ থেকেই নিতে পারবো।
মাহাদী কিছু একটা ভেবে বলল,আচ্ছা আমি বিকালে তুহিনের কাছে দিয়ে দেবো।
ঠিক আছে বলে জারা বাড়ির পথে রওনা হয়।

দুপুরে খেয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে জারা।আজকে কি করে নিয়াজ স্যারের মুখোমুখি হবে সেটা ভেবেই কেমন অস্বস্তি লাগছে।আজকে আর দেরি করলোনা তাড়াতাড়ি রিকশা ডেকে উঠে পড়লো।এদিক দিয়ে একটা সুবিধা আছে তাসিনদের বাসার কাছেই কতগুলো রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে।তাই যখন-তখন রিকশা পাওয়া যায়।কিন্তু অফিস থেকে ফেরার পথে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা লাগে।ভাড়া মিটিয়ে অফিসের ভেতর চলে গেলো জারা।সারাদিন তেমন কারো সাথে কথা বলেনি।রহিম এসে জানালো জারাকে নিয়াজ ডাকছে।হাতের কাজটা সম্পূর্ণ করে জারা নিয়াজের কক্ষে গিয়ে নক করে।নিয়াজের অনুমতি পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই নিয়াজ জারাকে একটা প্রজেক্ট কমপ্লিট করার দায়িত্ব দিলো।
নিয়াজ খেয়াল করেছে জারা পুরোটা সময় নিচের দিকে দৃষ্টি নত রেখেছে।একবারের জন্যে ও নিয়াজের দিকে তাকায়নি।হয়তো গতকালের নিয়াজের করা কাজের জন্য অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
নিয়াজের নিজেরই এখন গিল্টি ফিল হচ্ছে।
জারা চুপচাপ নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো।
রিহা এসে জারাকে বলল,কাল আমার জন্মদিন।গ্রীনল্যান্ড রেস্টুরেন্টে পার্টি রেখেছি।কাল অফিস শেষে তুমি চলে আসবে।আর হ্যাঁ সবাইকে বলে দিয়েছি শাড়ি পড়ে আসতে।আমি নিজেও শাড়ি পড়বো।জারা মুচকি হেসে বলল,চেষ্টা করবো পার্টিতে উপস্থিত থাকার।
রিহা রাগ দেখিয়ে বলল,আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা তুমি আসবে মানে আসবে।
জারা হেসে দিয়ে বলল,ঠিক আছে আসবো।রিহা মেয়েটা মিশুক।অল্পতেই যে কারো মনে জায়গা করে নিতে জানে মেয়েটা।

অফিস শেষে জারা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।রিকশা পেয়ে উঠে বসতেই নিয়াজ হুড়মুড়িয়ে জারার পাশে এসে বসলো।জারা প্রথমে চমকে উঠলেও নিজেকে সামলে রিকশা থেকে নামতে উদ্যত হতেই নিয়াজ জারার হাত চেপে ধরে।হাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে নিয়াজের দিকে তাকাতেই নিয়াজ সামনে তাকিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলল আপনি রিকশা চালিয়ে যান।জারা হাত মোচড়ামুচড়ি করে বলল,আমার হাতটা ছাড়ুন।
নিয়াজ জারার হাত ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলে সরি!

জারা কৌতুহল দৃষ্টিতে নিয়াজের দিকে তাকাতেই নিয়াজ দৃষ্টি সামনে আবদ্ধ রেখেই বলল,কালকের ব্যাপারটার জন্য সরি!আসলে আমার উচিত হয়নি তোমাকে ওভাবে স্পর্শ করা।
জারা কিছু না বলে নিয়াজের থেকে আরেকটু সরে বসে।নিয়াজ খপ করে জারার হাত চেপে ধরে ক্ষীণস্বরে বলল,পড়ে যাবে।আমিই নেমে যাচ্ছি।রিকশা থামিয়ে নিয়াজ নেমে পড়তেই জারা লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে থাকলো।আরো কিছুক্ষণ এভাবে নিয়াজের এতটা কাছে বসে থাকলে মনে হয় জারা শ্বাস আটকে মরেই যেতো।একবার রিকশার পেছনে তাকিয়ে দেখার ইচ্ছে হলো।নিজের ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় দিয়ে চলন্ত রিকশায় থেকে একবার পেছনে তাকালো।নিয়াজ রিকশার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।জারাকে পেছনে তাকাতে দেখে ঠোঁট প্রশ্বস্ত করে হাসে।
বাসায় ফিরে সোফায় বাবা মাকে বসে থাকতে দেখে জারা নিজের দেখার ভুল ভেবে চলে যেতে নেয়।কি মনে করে আরেকবার সোফার দিকে তাকিয়ে চোখ কছলে আবার তাকায়।সত্যিইতো বাবা আর মাকে দেখছে।
জারার মা বাবা মেয়ের পাগলামি দেখে মিটিমিটি হাসছেন।জারা দৌঁড়ে গিয়ে বাবা মা দুজনকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।রাজিয়া বেগম সামনে চায়ের ট্রে রেখে বলেন,তোকে সারপ্রাইজ দেবে বলে আমাকে জানাতে বারণ করেছে।

জারা মুখ ফুলিয়ে বলল,তোমাদের সাথে কথা নেই।
মুহিত হাসান হেসে দিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,সত্যিই কথা বলবেনা?জারা মাথা নেড়ে না জানাতেই জারার মা বললেন,তাহলে আমরা চলে যাচ্ছি।
জারা বলল এত ঢং করতে হবেনা।হঠাৎ আমাকে না জানিয়ে এসেছো কেনো?তোমরা আসবে সেটা কি আমাকে জানানো যেতো না?

মুহিত হাসান বললেন,তেমাকে চমকে দেওয়ার জন্যই বলা হয়নি আমরা আসবো।আচ্ছা পরে কথা হবে।অফিস থেকে এসেছো যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।জারা সোফা ছেড়ে নিজের ঘরে চলে আসে।ব্যাগ রাখতে গিয়ে টেবিলের উপর নোট খাতাটার উপর নজর পড়ে।নিশ্চয়ই তুহিন এখানে এনে রেখেছে।
রাতের খাবার খাওয়ার সময় কথায় কথায় জারা জানতে পারে ওর বাবা মা নিয়াজের ফ্যামিলির সাথে কথা বলতেই এখানে এসেছে।চুপচাপ খাবার খেয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।

নিয়াজের হঠাৎ ইচ্ছে জাগলো জারার কন্ঠস্বর শোনার।ফোনে নাম্বার তুলে ডায়াল করলো জারার নাম্বারে।একবার বাজতেই জারা রিসিভ করে সালাম দেয়।নিয়াজ চুপ করে জারার কন্ঠের মাদকতা অনুভব করছে।

কে বলছেন?হ্যালো!হ্যালো!
ওপাশ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে জারা বিরক্ত হলো।বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল,কি আশ্চর্য!কল দিয়ে কথা বলছেন না এটা কোন ধরনের ভদ্রতা?
এখনো কোনো সাড়া না পেয়ে জারা লাইন কেটে দেয়।লাইন কেটে গিয়েছে বুঝতে পেরে নিয়াজ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।অন্তত কন্ঠটাতো শুনতে পেরেছে এতেই শান্তি।

সকাল সকাল বেশ পরিপাটি হয়ে রোহান রুম থেকে বের হতে নিলেই তানিশা প্রশ্ন করলো কোথায় যাচ্ছেন?
তানিশার প্রশ্নে পেছন ঘুরে কোনো ভনিতা ছাড়াই রোহান জবাব দিলো ঢাকায় যাচ্ছি।
তানিশা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,ঢাকায় কেনো যাচ্ছেন?কোনো কাজ পড়লো নাকি?
সবচেয়ে বড় কাজ সামলাতে ঢাকায় যাচ্ছি।
মানে?

জারা আমাকে ভুল বুঝে আছে।ওকে মানিয়ে নিয়ে আসার জন্য যাচ্ছি।
তানিশা চমকে উঠে বলল,এসব কি বলছেন আপনি?তাছাড়া জারা কখনো আপনার কাছে ফিরবেনা।
রোহান রেগে গিয়ে বলল,সব সমস্যার মূল তুই।তোর কারণে এত কিছু হচ্ছে।আমি জারাকে ঠিক মানিয়ে নিয়ে আসবো।সেখান থেকে ফিরে তোকে এই বাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে দেবো।

না আপনি যাবেন না বলে তানিশা রোহানের পথ আটকে দাঁড়ায়।
রোহান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,এখন এই অবস্থায় আমি তোর গায়ে হাত তুলতে চাইনা।সামনে থেকে সরে দাঁড়া।
তানিশা ত্যাড়ামি করে বলল,নাহ আমি সরবোনা।রোহান তানিশার হাতের কব্জি চেপে ধরে নিজের সামনে থেকে সরিয়ে বেরিয়ে যায়।
রাগে তানিশা টেবিলের উপর থেকে গ্লাস তুলে নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে।

জারা আজ আর ভার্সিটিতে গেলোনা।তুহিন সকালেই বেরিয়ে গেছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।জারা মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।ওর মা জারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।এদিকে নিয়াজের বাবা মাকে খবর দেওয়া হয়েছে যেন জারার খালার বাসায় আসেন।
#চলবে……..।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here