#গল্প_শান্তির_খোঁজে,
পর্ব:-০১
Writer:- Hassab Bin Ahmed
আজ আমার বিয়ের রাত আর আমি বারান্দায় একা একা বসে আছি আর ভাবছি জিবনে কোতো কি হতে পারে। কিছু সময় আগেই তো কতো আশা আর সপ্ন নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকেছিলাম কিন্তু বউ আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে কারণ আমার কিছুই তার পছন্দ হয়নি। এখনো তিন দিন আগের কথা মনে হয়।
তিনদিন আগে……
আমার নাম সাজিদ। উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে মাস্টার ডিগ্রী করছি। আমার দুইটা বিষয় বহুত পছন্দের ১. ইসলাম আর 2. উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা।
কলেজ থেকে আসলাম রুমে জাবো তখন
আম্মু:- কিরে আসলি একটু কথা আছে এদিকে আয়।
আমি:- পরে শুনি মাত্র তো এলাম।
আম্মু:- না এখনি শুনতে হবে এদিকে আয়।
আমি:- আচ্ছ কি বলবে তড়াতারি বলো।
আম্মু:- তিনদিন পর তর বিয়ে । তোর আব্বুর বন্ধুর মেয়ে। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তর বন্ধুদের আসতে বলবি।
এই কথা শুনার পর আমি কি পৃথিবীতে আছি না অন্য গ্ৰহে আছি বলতে পারব না। 🤔 বলা নেই কওয়া নেই এমনি এমনি বিয়ে হয়ে যায়। কমছে কম আমাকে একটি বার বলতে পারতো। বিয়ে ঠিক করে বলছে তিনদিন পর তর বিয়ে। তাহলে কিরকম লাগে বলেন তো । আব্বুর উপর রাগও হচ্ছে আবার ভালোও লাগছে😂। কারণ বিয়ে করা অর্ধেক দ্বিন। আর আমি একটি দুয়া মাঝে মাঝে করতাম:-‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে।( সূরা আল ফুরকান:৭৪)
হাদীস আছে:-
১.আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্‌ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য হতে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সবসময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌কে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সলাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। [১] সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। [২] [মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৬৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
২.
(24:32)
তোমাদের মধ্যে যারা ‘‘আইয়িম’’ (বিপত্নীক পুরুষ বা বিধবা মহিলা) তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন; আল্লাহতো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
৩. সহীহ বুখারী ৭ নং খন্ড book of Nikaah ৩ নং অধ্যায় র ৪ নং হাদীস বলা হয়েছে ” হে যুবক – যুবতীরা তুমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিয়ে করে ফেলো।
৪. হজরত আবু জর রা. থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ সা. আক্কাফ রা. কে বললেন, হে আক্কাফ! তোমার স্ত্রী আছে? তিনি বলেন, না। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তোমার কি সম্পদ ও স্বচ্ছলতা আছে? সে বললো, আমার সম্পদ ও স্বচ্ছলতা আছে। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি এখন শয়তানের ভাইদের দলভূক্ত। যদি তুমি খ্রিস্টান হতে তবে তাদের রাহেব (ধর্ম গুরু) হতে। নিঃসন্দেহে বিয়ে করা আমাদের ধর্মের রীতি। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি যে অবিবাহিত। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যেও নিকৃষ্ট ব্যক্তি যে অবিবাহিত। তোমরা কি শয়তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাও। শয়তানের কাছে নারী হলো অস্ত্র। সবাই নারী সংক্রান্ত ফেৎনায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যারা বিয়ে করেছে তারা নারীর ফেৎনা থেকে পবিত্র। নোংড়ামি থেকে মুক্ত। তারপর বলেন, আক্কাফ! তোমার ধ্বংস হোক। তুমি বিয়ে কর নতুবা তুমি পশ্চাৎপদ মানুষের মধ্যে থেকে যাবে। (মুসনাদে আহমদ, জমউল ফাওয়ায়েদ, ইমদাদুল ফাতওয়া খ- ২, পৃষ্ঠা ২৫৯।)
৫.যে চায় দুনিয়া থেকে পূত পবিত্র ও নিষ্কলুষ অবস্থায় কবরে যাবে বিয়ে তার জন্য অপরিহার্য। এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাও বলেছেন,
‘যে পূত পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেনো স্বাধীনা মেয়েদেরণ বিয়ে করে।’
বিয়ে করাও একটি ইবাদত । আমরা অনেকেই জানি না। কিন্তু আবার ভয়ো হচ্ছে কারণ আধুনিক যুগের মেয়েরা তো ইসলাম কে পছন্দ করে না। আমার হবু বউ কিরকম তাও তো জানিনা ? (হবু বউ ভাবতেও কিরকম লজ্জা লজ্জা লাগছে 😂) মনে হয় ভালোই হবে । কারণ আব্বু আম্মু র উপর এইটুকু ভরসা করাই যায়।
সব কিছু মেনেজ করতেই তিন দিন চলে গেলো। এখন পর্যন্ত আমি আমার হবু বৌয়ের চেহারা,ফোটো, কিছুই দেখি নাই 😭। এমন কি নাম টাও তো জানিনা না। লজ্জায় কারো কাছে জিজ্ঞেস ও করতে পরি নি।
কিছু সময় আগেই বিয়ে পরানো হয়ে গেছে। আমাদের বিয়ে টি খুবই সাধারণ ভাবে হয়েছে। কারণ হজরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন :- সব থেকে উত্তম বিয়ে ওইটা যে বিয়েতে খরচ কম হয়।
তো সব কার্য সম্পন্ন করে এখন বিদায় বেলা । মনে হচ্ছে সবাই নিরাবতা পালন করছে। আর আমার বউ ( আমার বউ ভাবতেই ভালো লাগে 🤩) কান্নাকাটি করছে , তার বাবা মা বোন সবাই কাঁদছে। বউ টা নিকাব পড়ার জন্যে কতো কাঁদলো তাউ বুঝতে পারলাম না। তো জাই হোক অবশেষে আমার শশুর আব্বা এসে আমার হাতে আমার বউ র হাত রেখে শুধু একটা কথাই বলেছিলেন। ভালো থেকো তুমরা । বলেই কেঁদে কেঁদে আমাদের বিদায় দিলো সবাই। আমার গাড়িতে আমি আমার বউ পিছনে আর সামনে পিচ্ছি আছে দুজন। বউ টা এখন অল্প সান্ত হয়েছে । বউ আমার কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে গেছে ।বাবা মা কে ফেলে অচেনা এক বাসায় আসা। আসলেও দুঃখ জনক তাই ভাবলাম বৌটাকে অল্প শান্তনা দেই । কিছু বলতেও পারছি না সামনে দুই দুস্টু আছে ( আমার কাজিনের ছেলে মেয়ে)। তাই কিছু না ভেবে হত ধরে ফেলি। মনে হচ্ছে কারেন্টের শক খেলাম হাত টা ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে নিলো আর অন্য দিকে ঘুরে কাঁদতে আরম্ভ করলো। আমি ভাবলাম হয়তো মন ভালো না তাই এরকম করলো।
( চলবে…………)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here