গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – ১৪
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া
বৃষ্টিতে ভীজছিল রুহি।হঠাৎ কে যেন রুহির জামার ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। তার কাঁধের চুল সড়িয়ে ঘন ঘন চুমু দিতে থাকে,,,,আচমকা এমন হওয়ায় রুহি পুরো ফ্রিজ হয়ে যায়,,,তার শ্বাস রুহির কাঁধে পড়ছে,,,এ শ্বাসটা রুহির খুব চেনা,,,এ তো রুহান,,,, “কিন্তু এত রাতে এখানে কেন সে,,,??আর আমার সাথে এমন করছেই বা কেন,,,,??” হঠাৎ রুহানের কথায় রুহির ধ্যান ভাঙ্গে……
রুহানঃ ইউ নো ওয়াট,,,ইউর লুকিং সো হট,,,খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার,,,আই জাস্ট কান্ট কন্ট্রোল,,,,[ রুহির গলায় কামড় দিয়ে ]
কথাটা শুনা মাত্র রুহি রুহানকে জোড়ে একটা ধাক্কা দেয়,,,সাথে সাথে সে রুহির কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়,,,,
রুহিঃ আপনার সমস্যা কি রুহান,,,সবসময় এমন কেন করেন আপনি,,,আর,,,আর আপনি এখানে কিভাবে,,,,??,,,,
রুহানঃ তুমি এখানে কেন,,,??
রুহিঃ ঘুমাতে যাবো তখন দেখলাম বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে,,,,আমার ছোট বেলা থেকেই বৃষ্টি খুব পছন্দ,,যখনই বৃষ্টি হয় তখনি আমি বৃষ্টিতে ভীজি,,,,তাই নিজেকে আটকাতে পারিনি,,,আর ছাদে চলে আসি,,,কিন্তু আপনি এত রাতে এখানে কেন,,,??
রুহানঃ মাই জান,,,সত্যি বলতে বৃষ্টি আমার এত পছন্দ না,,, কিন্তু তুমি যখন বৃষ্টিতে ভীজচ্ছিলে,,তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি,,তাই চলে এলাম তোমাকে সঙ্গ দিতে,,,,[ চোখ টিপ মেরে ]
রুহিঃ কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে,,,,??
রুহানঃ তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল খুব,,,তাই তোমার রুমে গিয়েছিলাম,,,,কিন্তু তুমি সেখানে ছিলে না,,, তোমাকে খু্ঁজতে খুঁজতে এখানে পাই,,,,
বলেই রুহান রুহিকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে,,,তারপর রুহির কোমড় জড়িয়ে তার একদম কাছে নিয়ে এসে বলে,,,,
রুহানঃ চলো না জান বিয়ে করে ফেলি,,,আই কান্ট কন্ট্রোল,,,খুব করে ইচ্ছে করছে তোমাকে নিজের করে পেতে,,,,,[ রুহির কানে চুমু দিয়ে ]
রুহিঃ অসভ্য……
রুহানঃ অসভ্যের কি আছে,,,প্লিজ চলো না বিয়ে করি,,,তুমি বললে এখনই বিয়ে করতে পারব,,,জাস্ট ১ ঘন্টা লাগবে সব এরেঞ্জ করতে,,,তাড়াতাড়ি বিয়ে,, তাড়াতাড়ি বাসর,,এন্ড তাড়াতাড়ি বেবি,, ওকে,,,আমরা অনেক গুলো বেবি নিবো,,একদম তোমার মতো,,,,গুলুমুলু…..
রুহিঃ দেখুন রুহান,,,,
রুহানঃ তো দেখাও না,, কে মানা করেছে,,,না,,না,,এখন দেখলে পাপ হবে,,,বিয়ের পড়ে দেখাইও ওক্কে,,,,😁😁
রুহিঃ রুহান,,,😠😠চুপ চাপ নিজের রুমে যান,,,কালকে আবার রোদের বিয়ে,,,অনেক কাজ আছে,,,
রুহানঃ তাহলে তুমিও আসো,,,অনেক্ষন তো বৃষ্টিতে ভিজলে,,,জ্বর হয়ে যাবে তো,,,পড়ে আমি কাকে জ্বালাবো,,,তুমি তো সারাদিন শুয়েই থাকবা,,,,
রুহিঃউফফ রুহান আপনিও পারেন,,,,এখন চলুন,,,,
বলেই রুহি যেতে নিলে রুহান রুহিকে কোলে তুলে নেয়,,,আর বলে,,,
রুহানঃ তোমার এত কষ্ট করে নিজের রুমে যেতে হবে না,, আমি আছি না,,,
বলেই রুহিকে তার রুমে দিয়ে আসে,,,আর নিজেও চলে যায় নিজের রুমে,,,কিন্তু রুমে যাওয়ার আগে রুহিকে কপালে একটা ডিপ কিস দিয়ে যায়…..
বিয়েরদিন…..
খুব সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয় সাহেল আর রোদের বিয়ে,,,,অনেক আনন্দেই দিনটা কাটে রুহির,,,,সাথে আছে রুহানের সাথে দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া,,,,
সাহেল আর রোদ রুহানের বাসায়ই থাকবে কিছুদিন,,,,এটা রোদের ইচ্ছা,,,ঠিক রোদের না রুহানের ইচ্ছা,,,কারন রোদ চলে গেলে রুহিও চলে যাবে,,,,তাছাড়া পাক্কা ৭ দিন হওয়া ছাড়া রুহান রুহিকে যেতে দিচ্ছে না,,,তাই এমন করা,,, রুহানের ধারণা ৭ দিনের মধ্যেই সে রুহিকে নিজের করে নিতে সক্ষম হবে,,,আর এটা শুধু সাহেলই জানে,,,,তাই সেও আপত্তি করে নি আর সাহেলের পরিবারও,,,যদিও প্রথমে তারা মানা করেছিল,,,কিন্তু পরে সবার জোড়াজুড়িতে মেনে নেয়,,,তাছাড়া রুহানের বাবা আর সাহেল বাবা অনেক ভালো বন্ধু,,,তাই এত সমস্যা হয় নি,,,!!
রোদ এখানে আরও কয়েকদিন থাকবে দেখে রুহি অনেক খুশি,,, সাথে দুঃখীও,,,কারন তাকে যে সায়ানকে বারবার দেখতে হবে,,,,সে তো চলেই যেতে চেয়েছিল,,,,কিন্তু তাকে কেউ যেতেই দিচ্ছে,,,একদম আপন মেয়ের মতো খেয়াল রাখছে তার,,,তাই রুহিরও যেতে ইচ্ছা করছে না,,,,সে আনন্দেই আছে,,,,
এর মাঝে রুহি বেশভাবে খেয়াল করেছে,,সায়ান তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে,,, কিন্তু প্রতিবার হয়তো রুহান সায়ানের কথার মাঝখানে বাঁধা দেয়,,,নতুবা রুহি সায়ানকে পাত্তা দেয় না,, আর দিবেই বা কেন,,,সে যা করেছে তার জন্য এটাই তার পাওনা,,,রুহু কেন তার সাথে কথা বলবে,,,সায়ান তো একজন বিশ্বাসঘাতক,,,,যদি সে প্রিয়াকেই বিয়ে করত,,,তাকেই ভালোবাসত,,,,তাহলে রুহির সাথে ভালোবাসার নাটক করার কি দরকার ছিল,,,তার স্বপ্ন গুলো এভাবে ভাঙ্গল কেন,,,,??
রুহি বিছানায় শুয়ে শুয়ে এগুলো ভাবছিল,,,হঠাৎ দরজা থাক্কানোর আওয়াজ পায়,,,,রুহি দরজা খুলতেই দেখে রুহান দাড়িয়ে আছে,,,, কেমন যেন ঢুলছে সে,,,ঠিক মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না রুহান,,,,রুহি কিছু বলতে যাবে,,, তার আগেই রুহান বলে উঠে,,,,
রুহানঃ জান জানো,,সাহেল আর রোদের না এখন বাসর,,,,😁😁
রুহান কথা বলতেই রুহি রুহানের মুখ থেকে খুব বাজে একটা স্মেল পায়,,,,সাথে সাথে রুহি অবাক হয়ে রুহানকে জিজ্ঞেস করে,,,
রুহিঃ আপনি ড্রাংক,,,??
রুহানঃ ইয়াপ,,,,[ মাথা নাড়িয়ে ]
রুহিঃ কেন খেলেন এমন ফালতু জিনিস,,,😠😠
রুহানঃ আসলে কি বলত,,,সাহেলের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম,,,তখনই ১ বন্ধু আমাদের জন্য কি যেন আবে,,, ,,,পরে দেখি মদ,,,আমি কিন্তু এগুলো খাই না,, আসলে ওরা জোড় করে খাওয়াই দিসে,,,ফলে আমিও জোড় করে খেয়ে ফেলছি,,,মনে হয় একটু বেশিই খাইছি,,,,
রুহিঃ সাহেল ভাইয়াও খাইছে,,,??
রুহানঃ না,, ছেসড়ায়,,,খালি তাকাই তাকাই গিলছে,,,,,
রুহিঃ ভাগ্যিস,,,আচ্ছা এখন যান,,, নিজের রুমে যান,,আপনার অবস্থা ভালো না,,,
রুহানঃ আমি তো যাওয়ার জন্য আসি নই,,, আমি তো তোমার সাথে ইটিস পিটিস করতে এসেছি,,,,[ মুচকি হেসে ]
রুহিঃ মানে,,,,??🤨🤨
রুহানঃ ইয়ে মানে,,,সাহেল আর রোদের তো এখন বাসর,,,তাই,,, চলো না আমরা এখন বাসর করি,,,,
রুহিঃ আপনার মাথা ঠিক আছে,,, জান নিজের রুমে যান,,,😠😠[চিল্লিয়ে]
রুহানঃ এমন করো ক্যান,,,??🥺🥺তাহলে চলো বিয়ে করি,,,,তারপর বাসর করবো,,,,ওক্কে😁😁
রুহিঃ রুহান নিজের রুমে যান,,আপনার মাথা এখন ঠিক নেই,,,,😠😠
রুহানঃ নোপ,,,আম টোটালি ফাইন,,,ওক্কে,,,আচ্ছা রুহি,,, তুমি কি জানো তুমি কত্ত সুন্দর,,,,
রুহিঃ জানা লাগবে না আমার,,,আপনি যান,,,,
রুহান রুহির কথায় পাত্তা না দিয়ে রুহি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়,,,তারপর বিছানায় বসে,, রুহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার তাকিয়ে বলে,,,,
রুহানঃ জানো তোমাকে না ওড়না ছাড়া অনেক হট লাগে,,,একেবারে স্পাইসি স্পাইসি,,,,ইচ্ছা করে,,,,!![ বলতে না দিয়ে ]
রুহিঃ চুপ থাকেন,,,নিজের রুমে যান বলছি,,,,😠😠
রুহানঃ নোপ,,,, আমি তোমার সাথে বাসর করেই যাবো,,,,[ ঢুলতে ঢুলতে ]
রুহিঃ আল্লাহ,,এটা কেমন মুছিবতে ফালাইলা আমারে,,,,[ বিরক্তি নিয়ে ]😠😠
রুহানঃ আহা রুহি এমন কিরো কেন,,,,রাগিও না প্লিজ,,,রাগলে তোমাকে না অনেক কিউট লাগে,,,একদম লাল লাল,,, আর তোমার ও-ই ২টা ঠোঁট,, আমার খুব পছন্দের জানো,,,দেখলেই কামড়াইতে ইচ্ছা করে,,,[ নিজের ঠোঁট কামড়ে বলল ]
রুহিঃ রুহান আরেকটা কথাও বলবেন না প্লিজ,,,,[ হাত জোড় করে ]
রুহানঃ চুপ,,,আজকে আমি বলব আর তুমি শুনবা,,,জানো জান,,,,আজকে না আমি একটা কিছু দেখছি,,,,[ লজ্জা পেয়ে ]
রুহিঃ কি দেখছেন আপনি,,?? [ ভ্রু কুচকে ]
রুহানঃ তোমার গলায় না একটা তিল আছে,,, আই জাস্ট লাভ দেট,, আমার না ওইখানে কামড় দিতে ইচ্ছা করছে,,, দি প্লিজ,,,,
রুহিঃ একদম না ,, যান এখান থেকে এক্ষুনি যান,,,,
কিন্তু কে শুনে কার কথা,,,, রুহান এক টানে রুহিকে বিছানায় ফেলে দেয়,,,তারপর রুহির গলায় ছোট্ট একটা কমড় দিয়ে রুহির ঠোঁট দখল করে নেয়,,,রুহি নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,,,,রুহান রুহির ঠোঁট ছেড়ে গলায় চুমু দেওয়া শুরু করে,,,,হঠাৎ রুহান রুহিকে চুমু দেওয়া বন্ধ করে দেয়,,,এতে রুহি রুহানের দিকে তাকাতেই দেখে রুহান ঘুমিয়ে গেছে,,,,যা দেখে রুহি একটা মুচকি হাসি দেয়,,,,,
.
.
.
এদিকে রোদ অনেক্ষন ধরে সাহেলের জন্য অপেক্ষা করছে,,, কিন্তু সাহেলের কোনো দেখা নেই,,,রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার,,,, ” এতক্ষন কেউ নতুন বউকে অপেক্ষা করায়,,তাও বাসর রাতে,,,আসুক আজকে,,,, তার একদিন কি আমার একদিন “,,,,
অবশেষে সাহেল আসে রোদের কাছে,,,,সাহেল আসতে আসতে রোদের কাছে আসছে,,,তা দেখে রোদ বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
রোদঃ কি হইছে তোমার পায়ে,,,এভাবে লেংড়ার মতো হাঁটছো কেন,,,,??
রোদের কথা শুনে সাহেল ভেবাছেকা খেয়ে যায়,,,তাড়াতাড়ি রোদের কাছে গিয়ে তার পাশে বসে,,,,সাহেল রোদের পাশে বসতেই রোদ সাহেলের কলার ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে,,,তারপর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,,,,
রোদঃ এ-ই তুই মদ খাইছোস,,,তাই না,,,,??😠😠
সাহেলঃ কোই ,,, না তো,,,,
রোদঃ ও-ই মিথ্যা একদম কবি না,,,,, তোর গায়ের থেকে মদের গন্ধ বাইর হয় ক্যান,,,??
সাহেলঃ জান আমার,,,আমি সত্যি বলছি,,,আমি মদ খাই নাই,,,,মদ তো রুহানরা খাইছে,,,আমি না,,,,
রোদঃ তাহলে তুই জানোস কেমনে ওরা খাইসে,,,,তার মানে তুইও ছিলি,,,আর তাছাড়া কোনো কি গেরান্টি আছে যে তুই মদ খাস নাই,,,তুই নিশ্চয়ই মদ খাইছোস,,,,হায় আল্লাহ,,, এ কি দিন দেখতে হইলো আমার,,,যা এখান থেকে,,,আমার পাশে ঘেষবি না,,,,😠😠
সাহেলঃ জান আমার,,,কলিজাটা,,, এমন করিও না প্লিজ,,,,আজকে তো আমাদের বাসর রাত তাই না,,,,
রোদঃ তো কি হইসে,,,,মদ খাওয়ার সময় মনে ছিল না,,,,
সাহেলঃ রোদ বিশ্বাস করো,,আমি ওগুলো খাই নাই,,,,
রোদ কিছু না বলে সাহেলকে এক ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়,,,তার একটা বালিশ ছুড়ে মেরে বলে,,,
রোদঃ আমার কাছে আসবি তো দেখিস,,,তোর দাঁত টেরা করি দিমু,,,আমি কিন্তু দাঁতের ডাক্তারি সম্পর্কেও জানি,,,কিভাবে দাঁত সব ভাঙ্গার বদলে টেরা করা যায়,,,তা আমার থেকে কেউ ভালো জানে না বলে দিলাম,,,,!!
তারপর রোদ রাগে গজগজ করতে শুয়ে পড়ে,,,,সাহেল ভেবে পায় না এ মেয়ের এত রাগ কিসের,,,মনে মনে শুধু একটা কথাই ভাবে,,,,
” ” যে খাইছে সে আদর পাইছে,,,যে কিছু খায় নাই সে লাথ্থি উসঠা খাইছে,,,,আসলে ভালোর কোনো দামই নাই,,,হায়রে ফাটা কপাল,,,” ”
…………..
…………………
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……….]