#খুনসুটি_প্রেম

writer : সুরমা
part: 3

মিতু আশেপাশে থাকিয়ে দেখলো আর কোনো চেয়ার নেই।করুন দৃষ্টিতে রাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলো।রাকিব তাকিয়ে দেখে মিতু তার দিকে চেয়ে আছে।রাকিব একটা হাসি দিয়ে মিতুকে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।

তার পর রাকিব মিতুকে নিজের হাতে তুলে খাইয়ে দিতে থাকে।রাকিব মিতুকে খাইয়ে দিচ্ছে আর মিতু খেয়েই যাচ্ছে।রাকিব যে খাচ্ছে না মিতু একবারো সেটা খেয়াল করছে না।আর রাকিবকে খেতেও বলছে না।

-বাবুইটা,তোমার কি মনে হয় না তুমি একটু বেশি খাও?

রাকিবের কথা শুনে মিতু রাকিবের দিকে তাকায়।তারপর খাবার গুলোর দিকে তাকায়।কিন্তু খাবার তো সবেই রয়ে গেছে।কিছুই তো এখনো শেষ করতে পারে নি।তাহলে রাকিব এই কথা কেন বলছে?মিতু বিষ্ময় নিয়ে রাকিবের দিকে তাকায়,,,,,

-তুমি তো দেখছি একাই খেয়ে যাচ্ছো।একবারো তো আমাকে খেতে বলছো না।আমারও তো খেতে ইচ্ছে করে।নাকি?সেই কখন থেকে খাইয়ে দিচ্ছি আর তুমি গপাগপ খেয়েই যাচ্ছো।তোমার পাশে যে একটা নাদান বাচ্চা বসে আছে এটা কি তোমার চোখে পড়ে না??

রাকিবের কথা শুনে মিতুর মনে পড়লো।সত্যি সে একাই খেয়ে যাচ্ছে।রাকিবকে তো একবারো খাইয়ে দেয়নি,,
-আসলে আমি খেয়াল করি নি।নাও,এবার তুমিও খাও।

-তুমি খাইয়ে দাও।আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।তাহলে তুমি আমায় খাইয়ে দিচ্ছো না কেন?আর তোমার শাশুড়ির একমাত্র বাচ্চাটার দেখা শুনার দায়িত্ব তো তোমারেই তাই না।এই বাচ্চাটাকে না খাইয়ে রেখে যদি অসুস্থ বানিয়ে দেও তাহলে কিন্তু শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে অনেক বকা শুনতে হবে,হুম।

-হয়েছে হয়েছে।সব সময় তো আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।আজ একটু আমায় খাইয়ে দিয়ে আবার কথা শুনাচ্ছো? তার পর মিতু নিজের হাত দিয়ে রাকিবকে খাইয়ে দিতে থাকে।দুজন দুজনকে খাইয়ে দেয়।

-টুনির মা,তুমি একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
-কি?
-তুমি কিন্তু আগের থেকে অনেক ভারী হয়ে গেছো।
-কিহ্!!!
-হু,মনে হচ্ছে আমার কোলে কোনাে আটার বস্তা নিয়ে বসে আছি।

-তুমি কি বলতে চাইছো?আমি মোটা হয়ে গেছি?
-ওমা,আমি কখন বললাম তুমি মোটা হয়ে গেছো।আমিতো বললাম আগের থেকে ভারী হয়ে গেছো।আর অনেকটা গুলুমুলো হয়ে গেছো।

-আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমায় ইনডাইরেক্টলি এটাই বুঝাতে চাইছো যে আমি মোটা হয়ে গেছি।তুমি আমাকে মটু বলেছো।আবার আটার বস্তাও বলেছো।এ্যা ভ্যা ভ্যা
-আরে কাঁদছো কেন?আমিতো ফান করছিলাম।

-ভ্যা ভ্যা ভ্যা,তুমি আমাকে আটার বস্তা বলেছো।সব সময় আমাকে পচাও।বলে জোরে কান্না করতে থাকে,

-প্লীজ লক্ষীটি থামো।নিচে আম্মু আছে।কান্নার শব্দ শুনলে চলে আসবে।এই নাও,সব খাবার খেয়ে ফেলো।আমারটাও তোমাকে দিয়ে দিলাম।তুমি খুব চিকন। বেশি করে খেয়ে একটু মোটা হও।তাও আর কেঁদো না।

-ভ্যা ভ্যা ভ্যা।তুমি আমাকে একটুকুও ভালোবাসো না।আমি আর তোমার সাথে থাকবো না।(ন্যাকা কান্না করতে করতে)

-প্লীজ,সোনা,আমার বাবুইটা,এবার থামরে বাপ।আমি আর জীবনেও তোরে কিছু কমু না।এবার থাম।নয়তো আম্মু এসে আমাকে বকা দিবে।

-ভ্যা ভ্যা ভ্যা,আমি তোর কোন জনমের বাপ।যে,তুই আমাকে বাপ বলছিস।একতো আমাকে মটু বলেছিস।এখন আবার বাপ ডাকা হচ্ছে।

-ওরে আল্লাহ,তুমি একটা মই ফেলাও,আমি উপরে উঠে যাই।তুমি আমার বাপ হতে যাবে কেন,তুমি আমার বউ।এটা কথার কথা বলেছি।এই দেখো কান ধরলাম।আর কিছু বলুম না।এবার কান্না থামিয়ে আমাকে রক্ষা করো।

মিতু কান্না করেই যাচ্ছে।রাকিব কিছুতেই মিতুকে থামাতে পারছে না।বেচারা মিতুর কান্না দেখে নার্ভাস হয়ে যায়।কতো কি বললো তাও মিতু কন্টিনিউ কেঁদেই যাচ্ছে।রাকিব আর কোনো উপায় না পেয়ে মিতুর দুগালে হাত দিয়ে ধরে মিতুর ঠোঁট দুটি নিজের দখলে নিয়ে নেয়।

মিতু রাকিবকে ছাড়ানোর জন্য চিংড়ি মাছের মতো লাফাতে শুরু করে।দুহাত দিয়ে রাকিবকে ধাক্কাতে থাকে।রাকিব মিতুর হাত দুটি ধরে পেছনে বাজ করে মিতুকে নিজের বুকের সাথে আকড়ে ধরে গভীর ভাবে চুমু খায়।মিতু অনেক চেষ্টা করলেও আর নড়তে পারে না।

মিতুর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।চোখ থেকে টপটপ করে দুফোঁটা জল বের হয়ে আসে।প্রথমে মিতু ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পরে রাকিবের সাথে রেসপন্স করতে থাকে।উপভোগ করতে থাকে রাকিবের ঠোঁটের স্পর্শ।

হঠাৎ করেই রাকিব নিজের অজান্তেই মিতুর ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দেয়। মুহুর্তেই মিতু রাকিবকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।মিতু নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখে ঠোঁটটা হাল্কা একটু কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে।মিতু রাগে দুঃখে রাকিবের বুকে কিল ঘুষি মারতে থাকে।

-কুত্তা,শয়তান,ইতর,খবিশ,তুই একটা খারাপ।সব সময় আমাকে জ্বালাস।নিজে রাক্ষস আর আমাকে বলিস আমি বেশি খাই?আর এখন আমার ঠোঁটটাও খামড়ে দিয়েছিস।আমি মামুনিকে গিয়ে সব বলবো।কথাটা বলেই মিতু রাকিবের কোল থেকে উঠে নিচে চলে আসতে থাকে।রাকিবও মিতুর পেছন পেছন আসে।

-ও টুনির মা,আমার জানপাখিটা,বাবুইটা,আমি সত্যি বুঝতে পারি নি।আম্মুকে কিছু বলো না।আম্মু আমাকে বকা তো দিবেই সাথে সাথে আমার মান সম্মান সব ধুলায় মিশে যাবে।

মিতু রাকিবের কথা না শুনে ন্যাকা কান্না করতে করতে নিচে নেমে আসে।মিতুর পেছন পেছন রাকিবও আসে।মিতুর কান্নার শব্দ শুনে শাশুড়ি নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসে।এসে দেখে মিতু কান্না করছে।সাথে রাকিবও আছে।

রাকিব তার মাকে দেখে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।মিতু গিয়ে শাশুড়ি মায়ের সামনে দাঁড়ায়।

-কি হয়েছে?কাঁদছিস কেন?
-মামুনি,তোমার ছেলে আমাকে বলে আমি নাকি বেশি বেশি খাই।আমি নাকি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি।আমাকে মটু বলেছে।ভ্যা ভ্যা ভ্যা
-রাকিব,তুই মিতুকে এসব বলেছিস?
-আম্মু আমিতো ফান করছিলাম।
-না মামুনি,ফান করে নি।আমাকে সিরিয়াস বলেছে।আমাকে বলে আমি নাকি আটার বস্তা হয়ে গেছি
-তুই আমার মেয়েটাকে এসব কথা বলেছিস?কান ধর বলছি,,
-আম্মু আমিতো..
-আমি কান ধরতে বলেছি তুই কান ধরে এখানে উঠবস করতে থাকবি।

রাকিব বেচারার অবস্থা আর কে দেখে।মা আর বউ মিল্লা নাজেহাল করে ছাড়লো।রাকিবের আজ মান সম্মানের ১২ টা বাজিয়ে দিলো মিতু।মিতুর খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে।রাকিব মিতুর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালে মিতু রাকিবকে জিভ বের করে দেখায়।

শাশুড়ি মা মিতুকে একটু আদর করে দেয়।আর রাকিব ওয়ান,টু,ফোর করতে থাকে।শাশুড়ি হঠাৎ খেয়াল করে মিতুর ঠোঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।

-কিরে,তোর ঠোঁটে কি হয়েছে?রক্ত বের হচ্ছে কেন??
শাশুড়ির কথা শুনে মিতু দুহাত দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটি ঢেকে ফেলে।

-কিরে কি হয়েছে?কিছু বলছিস না কেন।
-না,,মা,,,,,নে,,,,,ই,,,,,য়ে,,,
-কি সব না মানে ইয়ে ইয়ে করছিস।এদিকে আয় দেখি কি হয়েছে।
-না মামুনি,কিছু হয়নি।আসলে ওয়াশরুমে ডুকার সময় পিছলে পড়ে গিয়ে একটু কেটে গেছে।
-তোকে কতোবার বলেছি সাবধানে হাটা চলা করবি।নিজের এখনো কোনো খেয়াল রাখতে পারিস না।এখনো বাচ্চাটি রয়ে গেলি।কেটে গেছে তো ওষুধ লাগাবি না।রক্ত পড়ছে এটা নিয়ে চুপচাপ বসে আছিস।এদিকে আয়।আমি ওষুধ লাগিয়ে দেই।
-ওষুধ লাগানো লাগবে না মামুনি।এমনি ঠিক হয়ে যাবে।
-তোকে আমি এদিকে আসতে বলছি না?

মিতু রাকিবের দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে শাশুড়ির কাছে গেলে শাশুড়ি খুব যত্ন করে ওষুধ লাগিয়ে দেয়।

-অনেক রাত হয়েছে।এবার দুজনে গিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়।আর রাকিব তোকে বলছি,মিতুকে কিন্তু একটুকুও আর জ্বালাবি না।আর একবার যদি শুনি না তখন কিন্তু আরো বেশি শাস্তি দিবো।মনে থাকে যেন।

কথা গুলো বলেই শাশুড়ি মা নিজের রুমে চলে যায়।মিতুও রাকিবকে একটা ভ্যাংচি কেটে নিজের রুমে চলে আসে।মিতুর পেছন পেছন রাকিবও নিজের রুমে আসে।রাকিব ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে মিতু শুয়ে পড়েছে।রাকিব বিছানার কাছে গিয়ে বিছানার দিকে হা করে থাকিয়ে থাকে।এক পাশে মিতু মাঝখানে ইয়াাাাাাাাা বড় কোলবালিশটা।অন্য পাশে রাকিবের বালিশ।

রাকিব বিছানা থেকে কোলবালিশটা নিয়ে ডিল মেরে সোফায় ফেলে দেয়।মিতু শুয়া থেকে উঠে বসে,

-এটা কি হলো?তুমি কোলবালিশটা ফেলে দিলে কেন?
-এই কোলবালিশটাকে আমি সহ্য করতে পারছি না।এর জায়গা আমাদের বিছানায় হবে না।
-জায়গা হবে না মানে?এখন থেকে এই কোলবালিশটা আমাদের সাথে এখানেই থাকবে।
-না থাকবে না
-থাকবে
-থাকবে না
-থাকবে,থাকবে থাকবে,বলে মিতু উঠে গিয়ে আবার কোলবালিশটা এনে মাঝ বরাবর রেখে দেয়।

-এই টুনির মা,তুমি এমন করছো কেন?আমাদের দুজনের মাঝে কেন এটাকে কাবাবমে হাড্ডি বানাচ্ছো?এটাকে ফেলে দাওনা গো,
-না,এটা এখানেই থাকবে।আমি তোমার জন্য ৩৬৫+৩৬৫+৩৬৫ দিন শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি।এটা নিয়ে আর কোনো কথা বলবে না তুমি।চুপচাপ শুয়ে ঘুমাও।

একপাশে মিতু,অন্যপাশে রাকিব মাঝখানে কোলবালিশ নিয়ে দুজনে শুয়ে পড়ে।রাকিব শুধু এপাশ ওপাশ করছে।বেচারার একটুকুও ঘুম আসছে না।

-টুনির মা,তোমার কি মনে হচ্ছে না তোমার আর আমার মাঝখানে তোমার সতিন শুয়ে আছে।

রাকিবের কথায় মিতু রাকিবের দিকে রাগি লুকে তাকায়।মিতুর তাকানো দেখে রাকিব ডুগ গিলে বলে,,
-না মানে,সতিন হলে তো জামাই বউয়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।এখন আমাদের দুজনের মধ্যেও এই বালিটার জন্য দূরত্ব তৈরি হয়েছে।তাই আমার কাছে এটাকে তোমার সতিনের মতো মনে হচ্ছে।তাই বললাম।
-চুপ করে ঘুমাও।আর একটা কথাও বলবে না।
-ঠিক আছে,তবে এই কোলবালিশটাকে সোফায় রেখে আসি?রাকিবের কথায় আবার মিতু রাকিবের দিকে তাকালে রাকিব বলে,,,
-আসলে এটা এখানে না থাকলে একটু নড়েচড়ে ঘুমানো যেতো আর কি।আর কোলবালিশটাও একটু আরামে ঘুমাতে পারতো।
-তোমাকে এটার কথা চিন্তা করতে বলেছি?
-না,ওকে।চুপ।আর কথা বলবো না।

মিতু অন্য পাশে ঘুরে ঘুমিয়ে পড়ে।রাকিব বালিশটাকে দেখে।,

-হায়রে কোলবালিশ,তোর জায়গা সিঙ্গেলদের পাশে?আমার পাশে আসতে গেলি কোন দুঃখে?তোর জন্ম হয়েছে সিঙ্গেলদের চিপায় পড়ে যাথাযাথি খাওয়া।আমাদের চিপায় এসে কি খেতে চাস?তুই সিঙ্গেলদের সঙ্গী।এখন আমার পাশে এসে দিলিতো আমার বউয়ের থেকে আলাদা করে?ইচ্ছে করছে তোকে এক লাথি মেরে জাপান পাঠিয়ে দেই।

মনে মনে কিছুক্ষণ বকবক করে রাকিবও ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে মিতুর ঘুম ভাঙ্গলে নিজেকে রাকিবের বুকে আবিষ্কার করে।মিতু দেখে রাকিব তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।

ঘুমন্ত রাকিবকে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।মিতুর রাকিবের ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে থাকে।নিজের মাথাটা একটু তুলে রাকিবের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে আবার রাকিবকে জড়িয়ে ধরে রাকিবের বুকে মাথা রাখে।হঠাৎ মিতুর মনে পড়লো রাতে তো দুজন দুপাশে শুয়েছিল।আর মাঝখানে কোলবালিশ ছিল।এখন সে রাকিবের বুকে।পাশে কোলবালিশটাও নেই।এমনকি মিতুর মাথার বালিশটাও নেই।

মিতু রাকিবের বুকে মাথা রেখেই চিন্তা করতে লাগলো।মিতু রাকিবের বুক থেকে মাথাটা তুলে দেখে রাকিব ঘুমিয়েই আছে।ঘুমন্ত রাকিবের চেহারাটা একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগে।মিতু রাকিবের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে উঠে পরে।

বিছানা থেকে নেমে দেখে বালিশগুলো ফ্লোরে পড়ে রয়েছে।মিতু ফ্লোর থেকে বালিশ গুলো কুড়িয়ে বিছানায় রেখে দেয়।

এভাবে কেটে যায় কয়েকটা দিন।সেদিনের পর থেকে রোজ মিতুর একটা বাড়তি কাজ যোগ হলো।সেটা হলো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্লোর থেকে কোলবালিশ কুড়ানো। মিতু বুঝতে পারে এটা রাকিবের কাজ।রোজ রাতে মিতু ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ডিল মেরে কোলবালিশটা মেঝেতে ফেলে দেয়।

কোলবালিশটা কেনার পর থেকেই রাতে মিতুর একদম ঘুম হয় না।রাকিবের যতোবার জেগে যায় ততোবার মিতুর মাথা টেনে তার বুকে উপর রাখে। আর তখনই মিতুর ঘুম ভেঙে যায়।

বেচারি,কোলবালিশ না থাকতেই ভালো ছিল।নিজে রাকিবের কোলবালিশ হয়ে যেত।এখন কোলবালিশ এনে প্রত্যেকদিন ঘুম ভাঙ্গায়।

কোলবালিশটাকে এখন সত্যি সত্যি মিতুর সতিন মনে হচ্ছে।এই কোলবালিশের জন্য তার ঘুম শুধু চোখ থেকে নয়,মনে হয় দুনিয়া থেকে উদাও হয়ে গেছে।

বিয়ের আগে মিতু আর রাকিবের অন্যদের মতো খুব বেশী চ্যাটিং করতো না তবে তাঁরা ফোনে প্রচুর কথা বলতো। প্রায় সারা রাত ফোনে কথা বলতাে। সে সময়ই আমাদের বিয়ের পরের সব প্ল্যান করা হয়ে গেছিল। এমনকি ফ্যামিলী প্ল্যানিংও করা হয়ে গেছিল।

তাঁদের কয়টা ছেলে মেয়ে হবে।কার কি নাম রাখবে। মিতু রাকিবকে বলতাে।কিন্তু রাকিব একদম মিতুর সাথে এক মত হতো না।

রাকিবব কখনই চাইতো না তাদের বেবি হওক।রাকিব খুব ভয় পেতো।বেবি হলে যদি মিতু মরে যায়। তাই সে সব সময় মিতুকে বলতো কোনোদিনও মিতুকে বেবি নিতে দিবে না।

কিন্তু মিতুর বায়নার কাছে হার মেনে রাকিব রাজি হয়।শেষে দুজনে প্ল্যান করলো,তারা প্রথমে টুইন বেবি নিবে।কিন্তু অনেক দিন পর।বিয়ের আগে থেকেই রাকিব মিতুকে টুনির মম বলতো আর মিতু রাকিবকে টুনির বাপী বলতাে।

সারাদিন মিতুকে বাসায় বসে থাকতে হয়।একা একা মিতু বুরিং ফিল করে।রাকিব দিনে মিতুকে একশোবার ভিডিও কল দিবে।

খেয়েছি কিনা,কি করছি,ঘুমিয়েছি কিনা।শরীর ঠিক আছে কিনা।কিছু খেতে মন চাচ্ছে কিনা।পাগটা সারাদিন মিতুকে নিয়েই ব্যস্থ থাকে।মিতু জানেনা রাকিব অফিসের কাজ করে কখন।

মিতু কতোবার বলেছে অফিসে গিয়ে যেন মিতুকে কল না করে।কিন্তু পাগলতো কারো কথাই শুনতে চায় না।

মিতুর সারা দিনের একাকীত্বের কষ্ট ভুলিয়ে রাখতে রাকিব প্রচুর খেয়ার করে মিতুর।অফিস থেকে আসার সময় নানা রকম বই কিনে আনে।

সুযোগ পেলে মিতুকে নিয়ে বাহিরেও ঘুরতে যায়।কিন্তু অন্য কোথাও যায় না,শুধু রেস্টুরেন্ট আর ঢাকার আশেপাশের ছোট ছোট কিছু জায়গায়।যেখানে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডরা বসে আড্ডা দেয়।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার সেই কাহিনী।কোলবালিশ দরজার কাছে পড়ে আছে।প্রত্যেক দিন এইটাকে আর নিতে পারছে না মিতু।সকাল সকাল মিতুর মাথাটা বিগড়ে গেলো।

মিতু এসে কোলবালিশটাকে নিয়ে সিলেকোটার ঘরে ডিল মেরে ফেলে দিয়ে আসে।এইটার কাজ আর মিতু করতে পারবে না।এসে দেখে রাকিব উল্লুক ভাল্লুকের মতোই ঘুমাচ্ছে।

মিতু ওয়াশরুম থেকে বালতি ভর্তি পানি এনে রাকিবের শরীরে ঢেলে দেয়।রাকিব এক লাফে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।

-টুনির মা,তুমি এটা কি করেছো?
-কি আবার করেছি।পানি ঢেলে দিয়েছি।এটাও বুঝতে পারছো না?
-বুঝতে পারছি।কিন্তু এতো পানি?কেন?
-আমি সারা রাত নির্ঘুমে থাকি আর তুমি পড়ে পড়ে ভাল্লুক স্টাইলে ঘুমাবে এটা আমি মানতে পারছি না।
-আমার সাথে তুমিও একটু ভাল্লুক স্টাইলে ঘুমালেই তো পারো!নিজে ঘুমাতে পারো না এটাতো একবারো বলো না।আমি ঘুমাই কোথাই প্রশংসা করবা তা নয় উল্টা।
-আমি যদি তোমার মত ঘুমাই তাহলে তোমার বস খুশি হয়ে বলবে রাকিব সাহেব আপনাকে আর কষ্ট করে কাল থেকে অফিসে আসতে হবে না।এখন থেকে বাসায় থাকবেন।
-তাহলেতো ভালোই হতো।সারাদিন তোমার সাথে রোমান্স করতে পারতাম।কতো চেষ্টা করছি যেন আমার চাকরীটা চলে যায়।কিন্তু বস শুধু আমার প্রমোশন করিয়ে উপরে তুলে দেয়।
-দূর,তোমার সাথে কথা বলাই বৃথা।তোমার যন্ত্রনায় আমি অতিষ্ঠ।

কথাটা শেষ করেই মিতু ওয়াশরুমে চলে যায়।,শাওয়ায় নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।রাকিব খেয়াল করে মিতু ভালো করে মাথার চুল মুছে নি।

রাকিব ও ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে।এসে দেখে এখনো মিতুর মাথা থেকে টপটপ পানি পড়ছে।

-টুনির মা,তোমার বিরুদ্ধে আমার অনেক অভিযোগ আছে।তুমি আমার একটা কথাও শোন না।

-তোমার বিরুদ্ধেও আমার অভিযোগ আছে টুনির বাবা। তুমিও এখন আর আমার কথা শুনো না।

-আমি তোমার সব কথা শুনি টুনির।মা।কিন্তু ইদানিং তুমি আমার কথা শুনো না।আমি খেয়াল করেছি টুনির মা তুমি প্রতিদিন গোসল করে ভালো করে চুল মুছনা।আমি স্পষ্ট দেখেছি তোমার চুল দিয়ে বৃষ্টির মত ঝরঝর করে পানি পড়ছে। এ জন্যই তোমার সারা বছর সর্দি লেগেই থাকে।

-তুমিও তো লুঙ্গী ঠিকঠাক পরতে পারো না। তাহলে লুঙ্গি পরো কেনো টুনির বাবা?

-তোমাকে বলেছি ছাদে কাপড় মেলতে যাবে না।কারণ পাশের ছাদে একটা লুচু বসে থাকে। ঐ লুচুর কি কোনো কাজ কর্ম নেই নাকি?সারাদিন ছাদে বসে থেকে কি করে।

সালার বজ্জাতের হাড্ডি।পরের বউয়ের দিকে এমন কুনজর দেয় কেন?ইচ্ছে করে চোখ গুলো তুলে মার্বেল খেলি।

-তো আমি কি করবো? আমি তো আর ঐ লোককে ছাদে বসে থাকতে অনুরোধ করিনি।আজিব লোক তুমি।কে কখন কি করে সব আমাকে বলো কেন?

-ঘরে সুন্দরী বউ রেখে কত টেনশনে যে অফিস করি সেটা শুধু আমিই বুঝি।আমার মতো আরো অনেক হতভাগা হয়তো এমন টেনশনেই মরে।

-ওমা তাই নাকি? তো কাল থেকে অফিসে আমাকে সাথে নিয়ে যেও।তাহলে তো আর টেনশন করতে হবে না।তুমি কাজ করবে আমি পাহাড়া দিবো।

-এই না না, আমার বসের চরিত্রও ঠিক নেই।তাকেও দেখি নিজের বউ রেখে অন্যের সুন্দরী বউয়ের দিকে নজর বেশি।তিনি তো আর জানেন না আমার ঘরেও একটা পূর্ণিমার চাঁদ আছে।

-শোনো টুনির বাবা এই সব প্যাঁচাল বাদ দিয়ে কাজের কথা শুনো।কাল থেকে কি কি কাঁচা বাজার লাগবে সেটা শোনো।এখন থেকে সব তুমি একাই করবে।

-কিহহহহহহহহহহহহ!!!!!!!!!!

চলবে😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here