আজ আমার কলেজের প্রথম দিন।তাই কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি কলেজে যাচ্ছি। তেমন ভালো কাপড়ও নেই, যেটা আমার চোখে সবচেয়ে ভালো মনে হয় সেই কাপড় গুলো পড়লাম।
রিকশা নিয়ে কলেজে নামালাম। তারপর ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে কলেজে ডুকতে যাব…….
দারোয়ানঃএই ছেলে কোথায় যাচ্ছ?
আমিঃকোথায় যাচ্ছি মানে,দেখতেছেন তো কলেজে যাচ্ছি।
দারোয়ানঃকিহ, কলেজে যাচ্ছ যাও এখানে কি কর?
আমিঃতাহলে সরেন ভিতরে যায়….
দারোয়ানঃভিতরে যায় মানে,তুমি যান এই কলেজে শুধু মাত্র বড় লোকের ছেলে-মেয়ে পড়তে পারে,তুমি এখানে ডুকবে কেন?তোমার কাপড় দেখে মনে হয় না,৩ বেলা ঠিক মত খেতে পার,আসছে আবার এই কলেজে।যাও যতসব…….
আমিঃঅযতা বকবেন না তো,আমি এই কলেজেই পড়ি।সরে দাড়ান,দেরি হয়ে যাচ্ছে।
দারোয়ানঃনা না তোমাকে………(আর কিছু বলার আগে প্রিন্সিপাল স্যার দারোয়ান কে ডাক দিল।দারোয়ান সে দিকে চলে গেল আমি এই সুযোগে কাজে লাগিয়ে ভিতরে ডুকে গেলাম)
সামনে গিয়ে দেখলাম, দুইটা ছেলেকে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখছে তাও আবার এক দল মেয়ে।কাহিনি টা খুব ভালো করে বুঝলাম।Ragin চলতেছে।তাই আমি সে দিকে না গিয়ে অন্য দিকে জোরে হাটা ধরলাম।
আমার ক্লাস রুম কোনটা হবে তাও জানিনা,কার থেকে জিজ্ঞেস করব তাও বুঝতেছি না।এদিও ওদিক তাকাচ্ছি,আর সামনে হাটতেছি।হঠাৎ কে যেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে পেলে দিল।আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।মাটি থেকে উঠে দেখি একটা মেয়ে মাটিতে পড়ে আছে।চেহারাটা দেখা যাচ্ছে না। আমার সাথে এই মেয়েটা ধাক্কা খাইছে মনে হয়।
তাই হাত বাড়িয়ে দিলাম মেয়েটা যাতে মাটি থেকে উঠতে পারে।মেয়েটা মাথা তুলে আমার দিকে থাকাতে মনে হল আমার পুরো পৃথিবীটা ঘুরে উঠল
মনে হয় এই প্রথম কোনো পরী আকাশ থেকে নেমে আসছে।কিন্তু মেয়েটা ছেলেদের মত করে পোশাক পড়ছে কেন
আমার হাত এখনো বাড়িয়ে আছি।কিন্তু মেয়েটা আমার হাত ধরে না ওঠে নিজে নিজে ওঠে গেল।
মেয়েটাঃঐ শালা চোখে দেখিস না খালি মেয়ে দেখলে ধাক্কা খেতে মন চায়
আমিঃসরি আমি দেখি নি।আর ধাক্কা আপনি মারছেন আমি না ওকে।
মেয়েটাঃকিহ আমার মুখের উপর কথা।আমাকে ধাক্কা মেরে আবার আমার উপরে দোষ দিচ্ছিস তুকে তো আজ আমি মেরেই পেলব।
আমাদের কথা হচ্ছে দেখে, কান ধরে দাড় করিয়ে রাখা মেয়েগুলো আসল।তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠল, কি হয়ছে মারিয়া এখানে?
আমি বুঝলাম যার সাথে ধাক্কা খাইছি তার নাম মারিয়া।
মারিয়াঃদেখ এই শালা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলছে আমি তাকে ধাক্কা মারছি। এখন একে কি করব বল নিশা।
(গুন্ডি মেয়ে গুলোর নাম নিশা,তানহা,শিমি,সিনতিয়া।)
নিশাঃতুই শুধু একবার বল একে কি করব বাকিটা আমি দেখব।
শিমিঃদেখে তো মনে হয় কোনো বন থেকে উঠে আসছে।ওয়াক থু…..
আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
মারিয়াঃদেখ শার্ট টা কেমন, মনে হচ্ছে কোনো চায়ের দোকানের ছেলে পড়ছে।
আমিঃদেখেন আপনারা যতা রীতি আমাকে অপমান করছেন।
মারিয়াঃতুর মুখে দেখছি অনেক বুলি ফুটছে।এই মার ভিখারির বাচ্ছাকে……..
মারিয়ার বলতে না বলতেই সবাই আমাকে মারতে লাগল।এক পর্যয়ে তার আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে পেলল।
আমিঃপ্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমার ভুল হয়ে গেছে।আর কখনো ভুল হবে না।প্লিজ……
তারপর তারা মার থামাল…
মারিয়াঃতুই এই কলেজে কি করিস?
আমিঃআমি এই কলেজে ভর্তি হয়ছি।
নিশাঃকিহ এই কলেজে, জানিনা কোত্থেকে কোন ভিকারি এই কলেজে পড়তে আসে।
মারিয়াঃকোন ইয়ারে পড়িস?
আমিঃজ্বী ২য় ইয়ারে….
সিনতিয়াঃমানে আমাদের সাথে…
মারিয়াঃআমি হলাম এদের লিডার মানে এই কলেজের বাবা।আমার সাথে লাগতে আসলে তুই শেষ।আমাদের আসতে যেতে সালাম দিবি।আর আমরা যা বলব করবি।
মনে থাকবে তো?
আমিঃজ্বী মনে থাকবে।
মারিয়াঃযা এখন সামনে থেকে…….
আমি চলে আসলাম।একটু সাইডে।আমি মার খাচ্ছিলাম আর সবাই দাড়িয়ে দেখছিল।কেউ কিছু বলে নি আজ গরীব বলে এমনটা করল…….
আমি একজনকে বললাম,বললাম ভাই ২য় বর্ষের ক্লাস রুম কোনটা?
ছেলেটা বললঃতুমিও কি ২য় বর্ষে পড়?
আমিঃহুম
ছেলেটাঃআমিও দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি।আমি সিকদার,তুমি?
আমিঃআমি রবিউল হাসান।
সিকদারঃতাহলে তো আমরা ফ্রেন্ডস
আমিঃআমার মত ক্ষেতের সাথে ফ্রেন্ডশীফ?
সিকদারঃআরে বন্ধুত্ব ধনী গরীব দেখে হয় না।চল ক্লাসে যায়।
আমিঃযদি আমরা ফ্রেন্ড তাহলে তুমি করা বলা যাবে না, তুই করে বলতে হবে।
সিকদারঃওকে তুই করে বলব, চল….
তারপর আমি আর আমার ফ্রেন্ড সিকদার কলেজের রুমে ডুকলাম।
আমরা পিছনের দিকে একটা সিটে গিয়ে বসলাম।তখনই কেউ একজন আমাদের সামনে এসে বলল…….
হাই আমি সাগর,এই ক্লাসে পড়ি।তোমাকে কখনো দেখলাম না।তুমি নতুন নাকি?
আমিঃহুম আমি এই কলেজে নতুন, ট্রান্সফার হয়ে আসছি।
সাগরঃহেই সিকদার কেমন আছ?
সিকদারঃএই তো ভালো তুমি?
সাগরঃভালো।তা তোমাকে দেখলাম মারিয়া আর তার গ্যাং মারতেছে।
আমিঃহুম আমি জানিনা তারা কেন এমন করল আমার সাথে।
সাগরঃহুম দেখলাম মারিয়া ইচ্ছে করে তোমাকে ধাক্কা মারছে।আর দোষ দিছে তোমার উপর।শেষে মারটা তোমাকে খেত হল।
আমিঃগরীব বলে এমন করল
সাগরঃএসব চিন্তা করো না।শুধু মনে রেখ মারিয়া হল তাদের গ্যাংয়ের লিডার।পুরো কলেজ তার কথায় চলে।কেউ তার সাথে বাজি নিলে তাকে মারিয়া মেরে পেলে।
আমিঃকিহ স্যারেরা কিছু বলে না?
সাগরঃনা, কি বা বলবে মারিয়া হল সাকিব ভাইয়ের বোন যে এই শহরের মাফিয়া। পুলিশও কিছু করতে পারে না।
আমিঃকিহ মাফিয়া
সাগরঃহুম নামকরা মাফিয়া।
আমিঃওহ আমার কোনো ক্ষতি করবে না তো?
সাগরঃমারিয়া কখন কি করে কেউ বুঝে না।তাই সাবধান থাকা ভালো।
আমিঃওকে
সাগরঃআচ্ছা আমি কি ফ্রেন্ড তোমাদের ফ্রেন্ড হতে পারি?
সিকদারঃহ্যা হতে পারি।
আমিঃআমিতো ক্ষেত আমার সাথে ফ্রেন্ডশীফ করবে তুমি?
সাগরঃআরে বন্ধুত্বে এসব চলে না।বন্ধুত্ব বন্ধুত্বই হয়।
আমিঃওকে।
সাগরঃতাহলে আজ থেকে আমরা তিন জন ফ্রেন্ড?
আমিঃহুম বাট তুই করে বলব।
সাগরঃওকে।
তারপর আমি, সাগর, সিকদার তিন জন এক সিটে বসলাম।
কিছুক্ষণ পর স্যার আসল।সবাই দাড়ালাম।স্যার সবাইকে বসতে বলে আমাকে দাড় করাল…..
স্যারঃতোমার নাম কি?
আমিঃজ্বী স্যার রবিউল হাসান।
স্যারঃবাসা কোথায়?দেখে তো মনে হয় কোনো বস্তিতে….
আমিঃজ্বী স্যার।পাশের বস্তিতে থাকি।
স্যারঃতুমি এই কলেজে কিভাবে ভর্তি হলে।এটা বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান কলেজ।তুমি কিভাবে ভর্তি হলে?
আমিঃজ্বী স্যার ইয়ে না মানে…….
তখনই মারিয়া তার গ্যাং নিয়ে ক্লাসে আসল।স্যারের অনুমতি ছাড়া ক্লাসে ডুকে গেল।আর সামনের সিটে গিয়ে বসল।
স্যার আমাকে বসতে বলল, আমিও আর কিছু না বলে বসে গেলাম।
তারপর ক্লাসে মনোযোগ দিলাম।তখনই প্রিন্সিপাল স্যার আসল।
প্রিন্সিপালঃ সবার ক্লাস কেমন চলতেছে?(সবাইকে)
সবাইঃভালো স্যার।
প্রিন্সিপালঃআচ্ছা যে জন্য আসলাম তাই বলি,এখানে একটা নতুন ছেলে ভর্তি হয়ছে কই সে?
তখনই আমি দাড়ালাম।
প্রিন্সিপালঃ সবাই ওকে চিনে রাখ,তোমাদের নতুন বন্ধু যদিও সবার মত বড় লোক না।কিন্তু ওর মনটা অনেক বড়।যাই হোক তোমার নামটা কি?
আমিঃস্যার আমার নাম রবিউল হাসান।
প্রিন্সিপালঃওলে সবাই রবিউল হাসান কে বন্ধু বানিয়ে নিবে।আর হ্যা বেশি ভাব ওর সাথে দেখাতে যেও না।বিশেষ করে মারিয়া তুমাকে বলছি।আসি….
স্যার এই বলে চলে গেল, আর এদিকে স্যারের শেষ কথাটাই মারিয়া রেগে আগুন।
প্রিন্সিপাল যাওয়ার সাথে সাথে মারিয়া দাড়িয়ে গেল।আর স্যারকে বলল…..
মারিয়াঃস্যার ভালো লাগছে না আজকে, আপনি আজ আসতে পারেন।
স্যারঃওকে।আসলাম তাহলে…..
মারিয়াকে সবাই ভয় পাই তাই স্যারও কিছু বলতে পারল না।স্যার চলে গেল।
স্যার যাওয়ার পরপর মারিয়া সোজা আমার কাছে আসল।এসে বলল…..
মারিয়াঃকেরে তুই?আজ প্রথম প্রিন্সিপালের বাচ্চা আমাকে সামনা সামনি এমন কথা বলল।তাও তুর মত একটা বস্তির ছেলের জন্য?তুই প্রিন্সিপালের কি?
আমিঃআমি…. আমি…. কিছু না…..
মারিয়াঃকি কিছু না ঠিক করে বল।
সাগরঃদেখ মারিয়া তুমি এভাবে সবার সাথে খারাপ আচরণ করতে পার না।কি পাও এসব করে?
সাথে সাথে মারিয়া সাগরকে চড় মেরে দিল।আর বলল….
মারিয়াঃকি করব কি করব না তা কি তুর থেকে শিখতে হবে? তুর সাথে কথা বলছি আমি
সাগরঃসরি ভুল হয়ে গেছে।
মারিয়াঃআর যদি ভুল হয় তাহলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিব।মনে রাখিস….
সাগরঃহুম মনে থাকবে।
মারিয়াঃবল কে তুই(আমাকে বলল)
আমিঃরবিউল হাসান।
মারিয়াঃতুর জন্য কেন প্রিন্সিপাল আমাকে এমন করে বলল?
আমিঃস্যার আমাকে আগে থেকে চিনে তাই বলল।
মারিয়াঃসত্যি তো?
আমিঃহুম সত্যি।
আমিঃহুম।
মারিয়াঃঠিক আছে আমি যখন যা বলব করবি।নয়তো টেং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিব।
আমিঃজ্বী করব।
মারিয়াঃমনে থাকে যেন।
তারপর মারিয়া নিজের সিটে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর প্রিন্সিপাল স্যার আবারো আসল।
প্রিন্সিপালঃমারিয়া তোমার সমস্যা কি কেন এমন করছ?
মারিয়াঃকই কোনো সমস্যা না তো।
প্রিন্সিপালঃতাহলে ক্লাস করাতে দিচ্ছ না কেন?আর স্টুডেন্টের সাথে খারাপ আচরণ করছ কেন?
মারিয়াঃআব্বে স্যার এটা আমার পাওয়ার। মাত্র বুঝাচ্ছিলাম।আমি চাইলে সব পারি।
প্রিন্সিপালঃযদি এই পাওয়ার না থাকে তখন কি করবা?
মারিয়াঃহা হা পাওয়ার থাকবে না।কয় কি
প্রিন্সিপালঃদেখ মা আমি তোমাকে বুঝাতে চায়,তুমি যা করছ ভালো করছ না।একটু মেয়েদের মত তো চলতে পার।
মারিয়াঃকেন মনে হল আমি মেয়েদের মত চলি না?
প্রিন্সিপালঃশার্ট প্যান্ট কোনো মেয়ে পড়ে না।সাথে তোমার সঙ্গীদেরও এমন বানিয়ে পেলছ।কেন মা? মেয়েদের মত বাচার ট্রাই কর,লাইফের মানেটা বুঝবে।
মারিয়াঃযাবেন আপনি এখান থেকে (অনেক জোরে চিল্লিয়ে)
প্রিন্সিপাল স্যার ভয়ে চলে গেল,কখন মারিয়া কি করে তার হিসাব নাই।পরের ক্লাস মারিয়া ঠিক মত করল।তৃতীয় ক্লাসে আবার আমার কাছে আসল……
মারিয়াঃঐ শুন বাইরে গিয়ে আমাদের জন্য আইসক্রিম নিয়ে আয়।
আমিঃএই সময় তো ক্লাস চলছে। আমার ক্লাস করতে হবে।আপনি যান।আমি ক্লাস করব…..
সাথে সাথে চড় বসিয়ে দিল আমার গালে
মারিয়াঃআমার কথা না শুনলে ক্লাস করাতো দূরের কথা কলেজেও আসতে পারবি না।
আমিঃকেন এমন করছেন এখানে আরো অনেকে আছে গিয়ে তাদের বলেন আমি পারব না।
মারিয়া আবারো চড় মারতে যাবে তখনই সিকদার মারিয়ার হাত ধরে পেলল।
সিকদারঃআমি এনে দিচ্ছি ওকে ছেড়ে দাও মারিয়া।
মারিয়াঃতুর এত বড় সাহস তুই আমার হাত ধরিস?আজ তো তুই শেষ….
সিকদারঃতোমার কাজটা আমি করব তাই হাত ধরলাম।
মারিয়াঃতুদের দুই জনের অনেক বুলি ফুটছে আজ তুদের অবস্থা এমন করব যেন আর কেউ আমার চুঃখে চুঃখ রেখে কথা বলতে না পারে।
তারপর মারিয়া আমাকে আর সিকদারকে কলার ধরে মাঠে নিয়ে গেল……….
দৌড়াবে…….
#ক্ষ্যাত যখন মাফিয়া
#পার্টঃ০১
লেখকঃরবিউল হাসান
#RK9023DXWC
❣️গল্পটা কেমন হল তা একটা বড় কমেন্ট করে জানাবেন✅
✅সবাই নিয়মিত নামাজ আদায় করবেন।✅
✅ভুল দেখলে ধরিয়ে দিবেন।✅
❌সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।নিজে নিরাপদে থাকুন অন্যকেও নিরাপদে থাকতে দিন❌
❌করোনার সময়ে অযথা বাইরে ঘুরাঘুরি করবেন না❌
❌অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ❌
…………..আল্লাহ হাফেজ…………