||কৈশোরে প্রেম|| ||অংশ: ০৩|| [১৮+সতর্কীকরণ]

ভয়ে বুক ধুকপুক করছে প্রহেলির। কান দিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এক হাতে অন্য হাত মলে যাচ্ছে।

মোবাইল কানে লাগাতেই টুট টুট শব্দ করে লাইনটা কেটে যায়। ওপর পাশে কে ছিল তা আর বোঝা হয় না।

“কতক্ষণ ধরে মোবাইল খুঁজে পাই না। তোর খালাকে কল দিব। আর তুই এখানে কার সাথে কথা বলিস?”, প্রহেলির মা আরফা খাতুন ঝাঁজালো কণ্ঠে বললেন।

প্রহেলি ইতস্তত করে বলল, “ইলমার সাথে কথা বলছিলাম। ও আজকে আমার খাতা নিয়ে গেছে। কাল যেন নিয়ে আসে সেটাই বলে দিলাম।”

আরফা খাতুন ক্ষুদ্র চোখে একবার তাকিয়ে চলে যান। প্রহেলি যেন যমেরবাড়ির দরজা থেকে ফিরে এলো। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এবারে বেঁচে গেল তাই। এই প্রথম মায়ের সাথে মিথ্যে কথা বলল। প্রথম প্রেম তাকে মিথ্যে বলতে শিখিয়ে দিল। না জানি এরপর আর কি বাকি আছে।

সারারাত প্রহেলি ঘুমাতে পারে না। কেবল সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছে কখন রাত শেষ হবে আর কখন তার প্রিয় মানুষটাকে দেখতে পারবে। কিন্তু রাত যেন লম্বা হতে থাকে অপেক্ষার প্রহর আর ফুরোয় না সারারাত জাগার কারণে ভোরবেলা চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে। মায়ের ডাকে চোখ খুলে তাকায়। ঘড়িতে তখন ন’টা বেজে চল্লিশ মিনিট। কোনোরকমে তৈরি হয়ে স্কুলের জন্য বেরিয়ে পড়ে। সকালের নাস্তাটাও করে যায় না। স্কুলে এসে দেখে জাতীয় সংগীত শুরু হয়ে গেছে। লুকিয়ে গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকে ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে ঘাসের উপর রেখে সারির একদম পেছনে দাঁড়ায়। তার চোখজোড়া কেবল নাহিয়ানকে খুঁজছে। নাহিয়ান সবার সামনে দাঁড়িয়ে।

প্রহেলি কমন রুমে যেতেই ইলমা আর পূজা টেনে কোণায় নিয়ে যায়। অপি স্কুলে এসেই তাদেরকে গতকালের ঘটনা বর্ণনা করে দিয়েছে।

ইলমা তার একটা হাত ধরে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল, “তুই তো হারামি রে! প্রেমের মিষ্টি খেয়ে হজমও করে নিলি আর কিছুই বললি না!”

“কেন আমি বললে কী তুইও খেতে পারতি?”, প্রহেলির কণ্ঠে বিরক্তি।

“তুই চুপ থাক তো ইলমা। দেখ প্রহেলি আমি আগেই বলেছিলাম এসব প্রেম টেমে যাইস না। দেখলি তো কেমন লুচ্চা ওই নাহিয়ান। সুযোগে কাল তোকে চুমু দিয়েছে আজ শরীরের অন্য কোথাও হাত দেবে। বোঝার চেষ্টা কর এসব করার বয়স না এটা। আমার মা বলে…”

ইলমা পূজার সামনে দু’হাত জোড় করে বলল, “ওহে, সরস্বতী মাতা, থামেন আপনি।”

অপি পূজার একটা বেণি টেনে দেয়। আঘাত পেয়ে মাথায় হাত দেয় সে। অপি প্রহেলির কাঁধে হাত রেখে বলল, “পূজার কথায় কান দিস না তুই। ও তো তার মায়ের খুকি এখনো। মায়ের কথা ছাড়া পা ফেলে না। নাহিয়ানের চেহারাটা দেখেছিস? মুখটা কেমন কালো করে রেখেছে। আজকে তার রাগ ভাঙা গিয়ে নাহলে পরে সমস্যা বেড়ে যাবে।”

প্রহেলি কেবল নীরবে শুনে যায়। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল কিছুই বুঝতে পারছে না। পূজা আরো একবার ইশারায় সাবধান করে দিচ্ছে তাকে। প্রথম ক্লাস গণিত। বোর্ডে অংক করিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন স্যার। সেদিকে মনোযোগ নেই প্রহেলির। খাতায় কিসব আঁকিবুঁকি করছে। স্যারের নজর পড়ে সেদিকে। অংক বুঝিয়ে দিতে দিতে তার পাশে এসে থেমে যান।

“প্রহেলিকা দাঁড়াও।”

হতচকিত হয়ে দাঁড়ায় প্রহেলি। একমাত্র গণিত স্যার তার পূরো নাম ধরে ডাকেন। এ ছাড়া তাকে আর কেউ প্রহেলিকা বলে ডাকেন না।

“আমি কোন অনুশীলনের কত নম্বর অংক করাচ্ছি বলো দেখি।”

গলার পানি শুকিয়ে এসেছে। একটুও মনোযোগ দিয়ে শুনেনি। এখন কী বলবে সে! তার সামনের বেঞ্চেই বসেছিল পূজা। হাতের ইশারায় বারবার দেখাচ্ছে তাকে। প্রহেলির বুঝতে সময় লাগে না।

অপ্রস্তুত গলায় বলল, “স্যার ৯.২ এর অংক করছি।”

কথায় আটকাতে না পেরে মনোযোগী হতে বলে স্যার নিজের জায়গায় ফিরে যান।

পূজা মাথাটা তার দিকে হেলিয়ে ফিসফিস করে বলল, “তুই এই প্রেমে জড়িয়ে পড়ালেখার ক্ষতি করছিস তা নিশ্চয়ই তোকে বুঝাতে হবে না। এমন চলতে থাকলে তুই নিশ্চিত ফেল করবি পরীক্ষায়। হাতে বেশি সময় নেই।”

অপি প্রহেলিকে টেনে নিয়ে বলে, “নিজে প্রেম করে না বলে হিংসে করছে তোর উপর। তুই ওর কথায় কান দিস না।”

প্রহেলি আসলেই তার কথায় কান দেয় না। একটা চিরকুটে স্যরি লিখে অপির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় নাহিয়ানের কাছে। টিফিন পিরিয়ডের আগে কলপাড়ের পেছনে দেখা করতে বলে। শুভ্রত নাহিয়ানকে বলল, “দোস্ত আজকে প্রহেলিকে এত ভাও দিবি না। দূরে থাকবি। দেখিস কেমনে ময়না খাঁচায় ধরা দেয়।”

প্রহেলি যাওয়ার আগে অপি তাকে আটকে বলল, “দেখ, যদি দেখিস নাহিয়ান বেশি রেগে আছে তাহলে তার ঠোঁটে চুমু দিয়ে দিস। দেখবি সব রাগ পানি হয়ে যাবে।”

ক্ষীণ গলায় বলল, “এটা কী বেশি হয়ে যাবে না?”

“প্রেমে সব বেশি বেশিই হয় আমার জান। যা যা দেরি করিস না। আমি কিন্তু সব শুনবো।”

অপি তাকে ঠেলে পাঠিয়ে দেয়। নাহিয়ান যথারীতি সেখানে পৌঁছে যায়। শুভ্রতের কথামতো আজ দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে। প্রহেলি তার চিবুকে হাত রেখে মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল, “স্যরি, প্লিজ এভাবে রেগে থেক না। আমি আসলে তখন কিছুই বুঝিনি। জীবনে প্রথম তো। আমাকে অপি সব বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রেমে এসব মানে চুমু খাওয়া স্বাভাবিক। তুমি আমার সাথে যা করার করতে পারো আমি তোমাকে বাঁধা দিব না। কিন্তু…”

“আমি তোমার সাথে কিছুই করতে চাই না। আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমারই ভুল ছিল। তোমাকে স্পর্শ করার আগে অনুমতি নেওয়া প্রয়ো…”

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই প্রহেলি দু’হাতে তার গাল ধরে ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। নিজের আধিপত্য বিস্তার করে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু সে নাহিয়ানকে হারাতে চায় না। নাহিয়ানের পিঠ গিয়ে দেয়ালে ঠেকে। এক হাতে তার কোমর চেপে ধরে। শিউরে উঠে প্রহেলির শরীর। হৃৎপিণ্ডের চলন বেড়ে গেছে। নিশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠোঁটের পাতা ছুঁয়ে দিচ্ছে আরেক জোড়া ঠোঁট। নাহিয়ান তার হাত কোমর থেকে উপরের দিকে তুলছে। প্রহেলির কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। ঠোঁট ছেড়ে চোখ মেলে তাকায়। চোখ চোখ পড়তেই লজ্জা পেয়ে যায়। সোজা হয়ে বসে। সামনে চোখ যেতেই আৎকে উঠে সে। দিব্য দাঁড়িয়ে আছে। খালি গলায় ঢোক গিলে প্রহেলি।

জামা আর চুল ঠিক করে দিব্যের দু’হাত ধরে বলল, “তুই কী কিছু দেখেছিস?”

সে নিশ্চুপ মাথা নাড়ে। গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।

“কাঁদছিস কেন তুই?”

দিব্য কোনো উত্তর দেয় না। তার হাত কাঁধ থেকে সরিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। নাহিয়ান উঠে বলল, “তুমি ক্লাসে যাও, ছুটির পর দেখা হবে। আর চিন্তা করো না আমি তাকে সামলে নেব।”

প্রহেলি দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হৃৎস্পন্দনের শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। রাগে কান্না পাচ্ছে। ভয়ে কাঁপছে শরীর। দিব্য বাচ্চা মানুষ। কাউকে বলে দিলে কী হবে তার! স্কুলে মুখ দেখাতে পারবে না। হাঁটতে পারছে না ঠিকমতো। কল চেপে চোখেমুখে পানির ছিঁটা মেরে লম্বা করে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে। নাহিয়ান সব সামলে নেবে তার বিশ্বাস। কারণ একা তার নাম নয় এখানে তাদের দু’জনের নামই সামনে আসবে।

কমনরুমে বসে আছে একা একা। এখন আর ক্লাসে যেতে পারবে না সে। ভেবেছিল একটু ভালো সময় কাটাবে তা আর হয়ে উঠলো না। এমনিতেও ভয়ে ভয়ে দেখা করতে যায়। যা ভয় করছিল আজ তাই সত্যি হয়ে গেল। টিফিনের ঘন্টা পড়তেই সব ছাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসে কমনরুমে। অপি, ইলমা আর পূজা এসে চারদিকে ঘিরে ধরে তাকে। কীভাবে বলবে এসব ভাবতেই লজ্জায় মুখ কিছুটা আরক্ত হয় তার। অনুভূতিগুলো ঠিকমতো অনুভব করারও সময় পায়নি। সবকিছু শোনার পর ইলমা আর অপি তাকে খোঁচা মেরে কথা বলে। অন্যদিকে পূজা চুপচাপ বসে থাকে। তার চেহারাটা মলিন। চোখের সামনে বান্ধবীটা ভুল পথে চলে যাচ্ছে সে কিছু করতেও পারছে না।

চলবে…
লিখা: বর্ণালি সোহানা

[বিঃদ্রঃ গল্পের স্বার্থে এবং বাস্তবতার সাথে মিল রেখে কিছু ১৮+ কথাবার্তা উঠে আসছে এবং সামনে আরো আসবে। কোনোরকম অশ্লীলতাকে প্রচারের উদ্দেশ্যে কিছু লিখা হচ্ছে না। যাদের পড়তে সমস্যা অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here