#কমরেড_শায়লা ৩য় পর্ব
০৩.০২.২০১৯
বিবাহ করার পূর্বে শর্ত দিয়েছিলাম ছ্যাঁচড়া আর আমি আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকব। একটা বাসা যার অর্ধেক ভাড়া দিব আমি, বাকী অর্ধেক ছ্যাঁচড়া। যার একাংশে আমার জিনিসপত্র,আরেকাংশে তার। কেউ কারো অংশে অনধিকার প্রবেশ করবেনা। সীমানা ডিঙালেই যুদ্ধ!
আব্বা কথা রেখেছেন। ছ্যাঁচড়ার বাপ জামান সাহেবের সাথে কথা বলে নাকি এগার হাজার টাকার একটা দুই রুমের বাসা ভাড়া হয়েছে। সেই বাসায় যখন বিবাহরাতে প্রথম গৃহপ্রবেশ হলো তখন রাত একটা বেজে দশ। আমার মাথায় তখন অনেক দুশ্চিন্তা। আমি গৃহপ্রবেশের পূর্বে বলে দিয়েছি আজ হতে বাসায় যেন শুধু আমি আর ছ্যাঁচড়াই থাকি। কেউ যেন বাসার ধারে কাছে না আসে। শুনে ছ্যাঁচড়াপক্ষের আত্মীয় স্বজন মুচকি মুচকি হাসছিল! হাসুক!
তাদের হাসির পিছনে অশ্লীল ইঙ্গিত থাকলেও তারাতো আর জানেনা এর আসল কারন!
আমি চাই আজ রাতেই যাতে নারীবিদ্বেষমূলক আচরনসহ যেকোন ধরনের উল্টাপাল্টা আচরন করতে উন্মুখ হওয়ামাত্রই ছ্যাঁচড়াকে আরামসে পিটাতে পারি। ছ্যাঁচড়া গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। আমি ব্ল্যাকবেল্ট কমরেড শায়লা আমার পিটনি থেকে বেঁচে ফেরা এত সহজ না! হুহ! পিটুনি দেওয়ার পরদিন আমাদের নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল হতে অনলাইন খবর বেরুবে “নির্যাতন করার মুহূর্তে স্ত্রীর হাতে প্রহৃত হলেন জনৈক নারী বিদ্বেষী অত্যাচারী ডাক্তার।” “ডাক্তার” শব্দটা দেখলেই মানুষ ভিমড়ি খেয়ে পড়বে। ডাক্তার পিটানো সংক্রান্ত খবর সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে।
খবর ভাইরাল হবে,দাবানল হবে, পৃথিবীর সবাই জানবে আমাদের আন্দোলন সম্পর্কে। দলে দলে নারীরা পুরুষ হটাও দীক্ষায় দীক্ষিত হবে। জগতে কোন নির্যাতিত,নিপীড়িত দুঃখী নারী রবেনা,রবে শুধু অত্যাচারী পুরুষ খেদানো সাহসী নারী!
এজন্যইতো আমি, কমরেড শায়লার এত এত আত্মত্যাগ!
এখন এই মুহূর্তে আমার অনেক কাজ।
জানেনইতো আমি ব্যক্তিগত জীবনে একটা পত্রিকার সাংবাদিক, সেই পত্রিকার মালিক আবার আমার খালু। একই সাথে আমি আমাদের ‘পুরুষ হটাও’ গ্রুপ পরিচালিত অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক। আমাদের সেই অনলাইন পোর্টালের নাম “নারীর আলো”। সেখানে নারীদের যাবতীয় সাফল্য নিয়ে ঘন্টায় ঘন্টায় খবর বেরোয়।
এইতো কিছুদিন আগে বরিশালের এক কমরেড ঘুষি মেরে তাঁর দুশ্চরিত্র স্বামীর হাত ভেঙে দিয়েছিলেন। তাকে এ সপ্তাহে একটা পুরস্কার দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে তার চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন সিলেটের এক কমরেড। নিজ স্বামীর প্রজননতন্ত্র তিনি এক লাথিতে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে তার স্বামী ছ্যাঁচড়ার মতলব ছিল খারাপ। গভীর রাতে বাসার কাজের মেয়ে তথা আমাদেরই আরেক সম্মানিত কমরেডের রুমে প্রবেশ করেছিল খারাপ মতলব নিয়ে। আমরা সকল কমরেড হাজার দেহ এক প্রাণ। আমাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নাই! একের বিপদে অন্যে নিঃস্বার্থে এগিয়ে আসি সর্বদা, এভাবেই!
আমার খালু তিনিও একজন পুরুষ তবে তাকে আমার কেন জানি তেমন অত্যাচারী মনে হয়না,বরং তার ঝুলে পড়া চেহারা দেখলে তাকে মনে হয় তিনি আমার কমরেড খালা কর্তৃক নিপীড়িত! খালুকে নিয়মিত নানারকমভাবে তৈল মর্দন করতে হয়, যাতে অদূর ভবিষ্যতে সন্তানহীন খালুর মালিকানাধীন পত্রিকাটা আমার কুক্ষিগত হয়! আন্দোলনের ব্যাপক বিস্তারের জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে!
সেসব কথা যাক, আজ বিবাহ দিবস,নতুন গৃহে প্রবেশের পর রুমে ঢুকেই দ্রুত হাতমুখ ধুয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। ল্যাপটপটা বগলদাবা করে নিয়ে এসেছি বাসা থেকে। এখন আমাকে গ্রুপে প্রতি ঘন্টার আপডেট জানাতে হবে। লোকটা যদি আজকে রাতে উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করে কোন দয়ামায়া না দেখিয়ে নাকটা ফাটিয়ে দিতে হবে।
“এনড দিজ উইল বি জাস্ট বিগিনিং! তারপর হাত,তারপর পা,এরপর মেরুদন্ড! ” মনে মনে চিৎকার করলাম আমি।
আজ হতে আমার অগ্নি পরীক্ষা শুরু। হাসান নামের নারী বিদ্বেষী ছ্যাচড়াটার পিছনে আঠার মত সেটে থাকতে হবে। ছ্যাঁচড়ার চেম্বারে,ঘরে বাহিরে যে কোন খানে, কোথাও নারী নির্যাতন করতে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তে হবে সাথে সাথে।
রুমের খাটটা ফুল দিয়ে সাজানো। সেদিকে তাকিয়ে আমি দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলাম।
দাঁত কিড়মিড় করতে করতেই দেখি ছ্যাঁচড়াটা রুমে ঢুকল।
রুমে ঢুকতেই তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। জোব্বা বদলে একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে এসেছে। সম্ভবত জোব্বার ভেতরেই পরনে ছিল। ঢং করে রাখা খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে রীতিমত ভদ্র দেখাচ্ছে। ভদ্রবেশি ছ্যাঁচড়া!
সামনে আসতেই আমি সতর্ক হয়ে মার্শাল আর্টের একটা পজিশন নিয়ে নিলাম।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিল তার বিনীত কন্ঠস্বর
-আপনি কি কিছু খাবেন,মাননীয়া?
কিঞ্চিত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। ঘটনা কী! এরপর অবাক হয়ে দেখলাম নিজের অজান্তেই মাথা নাড়ছি।
-আপনার সারাদিন অনেক কষ্ট হয়েছে। ল্যাপটপটা রেখে কি একটু ঘুমাবেন যদি আপনার কষ্ট না হয়?
আবার ভ্যাবাচেকা খেলাম। ছ্যাঁচড়ার চাল বুঝতে পারছিনা। কী চাইছে আসলে!
-আগামীকাল আপনার অফিস আছে। আমি শুনেছি আপনি বিবাহ উপলক্ষ্যে কোন ছুটি নেননি। ঘুমিয়ে পড়বেন কি এখন?
এতক্ষনে মতলব বোঝা গেল! আমি ঘুমালেই তার আসল চেহারা বের হবে! রোসো। আমার ঠোঁটে একটা ক্রুর হাসি খেলে গেলো।
দ্বিরুক্তি না করে ল্যাপটপ নামিয়ে রেখে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। ঘুমের ভান ধরে কারাতের কোপ দেয়ার জন্য প্রস্তুত আমি,কমরেড শায়লা!
চোখের কোনা দিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দীর্ঘ অনেকক্ষন হয়ে গেলো কোন অশ্লীল নড়াচড়া খেয়াল করা গেল না।
একটু বাদে ছ্যাঁচড়ার বিনীত, বিগলিত এবং ইতস্তত কন্ঠস্বর শুনলাম,
-মাননীয়া,আমি কি এই যৌথ বিছানার একাংশে ঘুমাতে পারি? মধ্যখানে বালিশ রেখে? খাটতো আমাদের দুইজনের জন্যই কেনা। আমারোতো আপনার মতই সমঅধিকার।
আমি চোখ বন্ধ করে মাথা চুলকালাম। বেটাকে খাটে ঘুমাতে দেওয়া যায়? হুম যায়! তাহলে পিটিয়ে তক্তা বানানর একটা অজুহাত পাওয়া যাবে।
গম্ভীর কন্ঠে বললাম,ঠিক আছে।
কিন্তু ব্যাপারখানা কীহে?
ছ্যাঁচড়া এত বিনয়ী হলো কবে হতে? হিসেব মিলছেনাতো!
এরপর সারারাত পঞ্চইন্দ্রিয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সবই সজাগ রইল। ছ্যাঁচড়ার একটা চুলও যদি বালিশের সীমানা অতিক্রম করে ব্রাশফায়ার করা হবে।
সজাগ থাকতে থাকতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম আমি। একেবারে ঘুমিয়ে কাদা যাকে বলে।
ঘুম ভাঙল সকাল সাতটায়। দেখি রুমে কেউ নাই।
রান্নাঘরে এক কাপ চা ঢেকে রাখা।
টেবিলে চিরকুট,
“মাননীয়া স্ত্রী,
চা পান করে নেবেন।
বিনীত
আপনার একান্ত অনুগত স্বামী!”
ঘটনা বুঝতে পারছিনা। একদম না। তারপর চিরকুটখানা আরেকবার পাঠ করে খেপে গেলাম। আমাকে স্ত্রী বলে ডাকে এত বড় সাহস! আবার লুখেছে সে নাকি আমার অনুগত স্বামী! দাঁতে দাঁত চাপলাম! কত্ত বড় সাহস! হাত দুইটা ভেঙে যদি তার ঘাড়ের দুপাশে না ঝুলিয়েছি আমার নাম কমরেড শায়লা না।
#কমরেড_শায়লা (৩য় পর্ব)