#কমরেড_শায়লা (শেষ পর্ব)

সুপ্রিয় সুধী,যারা এতক্ষন কমরেড শায়লা তথা আমার স্ত্রীর ব্যক্তিগত জার্নাল পড়ছিলেন।
আপনারা হয়ত এর মাঝে জেনে থাকবেন আমার নাম ইকবাল হাসান ওরফে ছ্যাঁচড়া।
এও জেনে থাকবেন আমি অত্যাচারী পুরুষ জাতির একজন নিয়মিত সদস্য। আমি কতটা দুশ্চরিত্র শয়তান সেও শায়লার ব্যক্তিগত জার্নাল হতে এতক্ষনে আপনারা জেনে গেছেন। আপনারা যা জানেন না তা জানাতেই আজ আমাকে লিখতে হচ্ছে।
ঘটনার শুরু কোন এক বর্ষনমুখর সন্ধ্যায়। আমার দীর্ঘদিনের পুরনো বন্ধু সুজন, কফি খেতে খেতে সেদিন ধানমন্ডির একটা কফিশপে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা। কথা প্রসঙ্গে সুজন বলল,আজকে একটা বিচিত্র কিসিমের মেয়ে এসেছে অফিসে। কলাবাগান থানার ওসিকে হুমকি ধামকি দিয়ে এসেছে। মেয়ের বাপ ভালই প্রভাবশালী। মেয়েটা আমার কাছে এসে কী বলল জানিস? বলল, নামী ব্র্যান্ডের একটা পারফিউম কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করবে। সেখানে নাকি সকল নারীকে হেয় করা হচ্ছে। দেখানো হয়েছে পুরুষের বগলতলার পারফিউমের গন্ধে মেয়েরা পঙ্গপালের মত ছুটে যায়। এটার আশু প্রতিকার প্রয়োজন।
আমি শুনেই হেসে ফেললাম,
-ইন্টারেস্টিংতো! তারপর?
-আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম এরকম হলেতো অনেক কিছু নিয়ে মামলা হতে পারে। নারীকে অবজেক্টিফাই করে বিজ্ঞাপন যেমন আছে পুরুষকে পন্য বানিয়ে বিজ্ঞাপনও কম নেই। এ নিয়ে তর্কাতর্কি। অবাক হয়ে কী দেখলাম জানিস? মেয়েটা বারবার তার দাঁড়ানর পজিশন বদলাচ্ছে যেন যেকোন সময় আমাকে আক্রমন করে বসবে। আমি তাকে শান্ত হয়ে বসে কথা বলতে বললাম। কিন্তু কিছুতেই শুনলনা। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চোখমুখ লাল করে বের হয়ে গেল।
-অদ্ভুত!
-শেষ করতে দে! মেয়েটা বেরিয়ে যাওয়ার ঘন্টা দুই পর মেয়ের বাপ আসলো আমার অফিসে। জানাল তার মেয়েটা একটু অস্বাভাবিক। তিনি মেয়ের পেছনে চব্বিশ ঘন্টা লোক লাগিয়ে রেখেছেন। কোন ঝামেলা হলেই যাতে সামাল দেয়া যায়। ভদ্রলোক মেয়ের কথা বলতে বলতে কাঁদছিলেন। মেয়ে নাকি তীব্র পুরুষবিদ্বেষী। ফেসবুকে “পুরুষ হটাও” নামে একটা গ্রুপ খুলে রেখেছে। বিচিত্র সব কার্যক্রম এই গ্রুপের। শুনলাম আয়েশা নামে মেয়েটার একটা বান্ধবী ছিল। স্কুলে থাকাকালীন আয়েশা কোন এক কারনে সুইসাইড করে। তারপর হতেই নাকি মেয়েটা কিছুটা এবনরমাল হয়ে যায়।
আমি সুজনের শেষ কথাগুলো শুনে একটু চমকে গেলাম।
– সুজন এই মেয়েটার নাম কি শায়লা?
-হ্যা! তুই কী করে জানিস!
-সুজন, আয়েশা আমার ছোট বোন ছিল!

* * *
আয়েশা আমার ছোটবোন। ওর মৃত্যুর পর ওর ব্যক্তিগত ডায়েরী পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারি আমি। সেখানে শায়লার কথা ছিল, শায়লার বাবা মা, ভাইয়ের কথা ছিল, ওদের সাথে কাটানো আনন্দমুখর দিনের স্মৃতিচারন ছিলো, ওর ছোটছোট কষ্টের কথা ছিল, নিয়মিত ওকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করা ওর অংক স্যারের কথাও ছিল। আমি সেসব পড়তে পড়তে কান্নায় ভেঙে পড়তাম প্রতিবার, ডায়েরি প্রতি পাতার কষ্টগুলো পড়ে আমার ছোট বোনটার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে ইচ্ছে হতো।
বাবার হাতে মারধোর আমিও খেয়েছি,যন্ত্রণা আমারো ছিল। কিন্তু আয়েশার মত এতটা আমাকে সহ্য করতে হয়নি।
আয়েশার মৃত্যুর কিছুদিন পর বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মা কয়েকমাস পর আবার বিয়ে করেন। আয়েশার শোক ভুলতে না পেরে মা প্রায়ই পাগল হয়ে যেতেন,আমি আর নতুন বাবা মিলে মাকে তখন সামলাতাম। মা যাতে আয়েশাকে ভুলতে পারেন এজন্য ডাক্তারের পরামর্শে বাড়িতে থাকা আয়েশার সব ছবি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হলো।
আমরাও ভান ধরলাম আয়েশা নামে কখনো কেউ ছিলনা।
আস্তে আস্তে সময় যেতে থাকে। একটু একটু করে আয়েশার চেহারাটাও ফিকে হতে থাকে । মায়ের সাথে অভিনয় করতে করতে আমার সত্যিই এখন মনে হয় আয়েশা বলে আসলেই কেউ নেই,কখনো ছিলনা।
সেই আয়েশার স্মৃতি কেউ একজন এখনো বুকে করে আঁকড়ে রেখেছে এবং সেই সব স্মৃতি মানুষটাকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দিচ্ছেনা এটা আমার মেনে নিতে কষ্ট হলো।
আমি শায়লার বাবার সাথে দেখা করলাম। তাকে পরিচয় জানিয়ে বললাম যে আমি শায়লাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই। শায়লার বাবা হাসনাত সাহেব আমার পরিচয় জানতে পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। বললেন, এ কিছুতেই হওয়ার নয়। তিনি গত পনের বছর অনেক চেষ্টা করেও পারেননি।
আমি তবু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রইলাম। একসময় তিনি আমার কথা মত কাজ করতে রাজি হলেন।
শায়লার প্রথম সাইকোজেনিক হাইপারভেন্টিলেশন হয় ক্লাস এইটে। ওর বাবার কোন এক বন্ধুর ছেলেকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মারাত্মক রকম পিটিয়েছিল। বেচারা ওকে প্রেমপত্র দিতে গিয়েছিল খুব সম্ভবত। সেবারই প্রথম ছেলেটার ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরতে দেখেই ওর খিঁচুনী উঠে যায়।
শাওন ভাইয়ের মুখে গল্পটা শুনে আমি প্ল্যানটা দাড় করালাম।
শায়লাকে বিবাহ প্রস্তাব দেওয়া হবে এবং আমার পরিচয় হবে নারী বিদ্বেষী একজন যে কিনা শায়লার বাবার বন্ধুর ছেলে, ছোটবেলায় শায়লা যাকে পিটিয়ে দফারফা করে দিয়েছিল।
একটা ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে শায়লার “পুরুষ হটাও” গ্রুপের সদস্য হয়ে গেলাম।
গ্রুপের বিচিত্র সব কার্যক্রম দেখে আমার হাসি পেত একই সাথে শায়লা নামের মেয়েটির জন্য প্রবল মমতা অনুভব করতাম। কষ্টও হতো বেশ।
পুরুষবিদ্বেষী গ্রুপের কিছু কার্যক্রম প্রশংসা পাওয়ার মতো ছিল। যেমন কোথাও নির্যাতনের খবর পেলেই নির্যাতিত নারীকে আশ্রয় দেওয়া , অত্যাচারী স্বামীকে শায়েস্তা করা, ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে স্কুলে স্কুলে যেয়ে মেয়েদেরকে উদ্বুদ্ধ করা সহ আরো অনেক কিছু।
এর পরেও গ্রুপের সবার তীব্র পুরুষ বিদ্বেষ দেখে আমি ভড়কে যেতাম প্রায়ই, তাবত পুরুষসমাজের বিরুদ্ধে তাদের পরিকল্পনাগুলো জানলে আতংকিত হতে হতো।
তাদেরসর্ববশেষ পরিকল্পনামত অচিরেই তারা বড়সড় পরিসরে নারী বিদ্রোহ শুরু করবে। তার কড়া প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শায়লা আমাকে বিবাহ করে রাজি হয়েছিল। তার ইচ্ছে আমাকে শায়েস্তা করার মাধ্যমে তাদের মহাবিপ্লবের সূচনা হবে। আমি তাদের দাবার ঘুটি।
এসব পাগলামী দেখে আমার মায়া হতো শায়লার জন্য।
শায়লার ভেতরে যেন আমার আয়েশাই বাসা বেঁধে রেখেছে, শায়লার যাবতীয় সমস্ত পাগলামি আসলে আমার ছোট বোন আয়েশার প্রতিটাদিনের নীরব যন্ত্রণা,অনুচ্চারিত প্রতিবাদ আর হাহাকার।
আমার ইচ্ছে হতো আমি শায়লাকে অন্তত একটিবার পৃথিবীটাকে ভিন্নরূপে দেখতে শেখাই। তাকে বুঝতে শেখাই পৃথিবীর সব পুরুষ অসুন্দর নয়। তাকে দেখাই পুরুষ মানুষও কষ্ট পায়,ভালবাসে,ক্ষমা করে, কারো প্রতি প্রবল মমতায় আক্রান্ত হলে সমস্ত পৃথিবী তোলপাড় করে তাকে নিজের করে নিতে জানে।
বিবাহের দিন তার ন্যাড়া মাথায়, পাঞ্জাবী পরিধান করার পরিকল্পনা শুরু থেকেই জানতে পেরে আমিও বিচিত্র বেশে বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পুরো ব্যাপারটা আমি,শায়লার বাবা এবং শাওন ভাই ছাড়া কেউ জানতনা।
শায়লার গ্রুপ হতে,গ্রুপে নিয়মিত লেখা ব্যক্তিগত জার্নাল হতে আমি প্রতি মুহূর্তে জানতে পারছিলাম শায়লার চিন্তাভাবনাগুলো,আমাকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তাগুলো এবং যাবতীয় হাস্যকর পরিকল্পনাগুলো।
আমাদের বিবাহের দিন শায়লার সাথে যখন আমার প্রথম দেখা, ওর ন্যাড়া মাথা,পাঞ্জাবী লুঙ্গি পরিহিত রনাঙ্গিনী বেশ দেখে যতটা না হেসেছিলাম মনে মনে তারচে বেশি ব্যথিত ছিলাম। পৃথিবীর মানুষের উপর হতে মেয়েটার হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস যে করেই হোক আমি ফিরিয়ে দিব, নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেদিন।
বিয়ের পরদিন রাতে আমার ডিউটি ছিল। গ্রুপে ঢুকে জানতে পারি শায়লা এটা নিয়ে ওদের অনলাইন পোর্টাল হতে জ্বালাময়ী কিছু একটা লিখবে। মোটামুটি আঁতকে উঠে শায়লার বাবাকে জানালাম বিষয়টা,তিনি তার পাগলী কন্যাকে কী বুঝ দিলেন জানা নেই তবে আমি সেদিনের মত বেঁচে গেলাম।
আমি চাইছিলাম ধীরে ধীরে শায়লার কাছে যেতে, যতটা কাছে গেলে ও আমাকে ওর সবচেয়ে কষ্টের কথাটা বলবে। আমি ওকে বুঝব,বোঝাব। ওর ভুল ধারনাগুলো একটা একটা করে সরিয়ে দিয়ে আমি ওর ছোট্ট আকাশটায় ফের মায়াবী জোৎস্না লেপ্টে দেব।
কিন্তু শায়লার মারকুটে ভাবভঙ্গী দেখে সাহস পাচ্ছিলামনা এক পা বাড়িয়ে সামনে আসার।
বিয়ের রাতে ল্যাপটপ বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরা আমার নববিবাহিতা পাগলী বউকে দেখতে দেখতে আমার প্রচন্ডা মায়া হচ্ছিলো। ঘুমের ভেতর তাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছিলাম আমি, ঘুমের ঘোরে সে নড়ে উঠতেই সরে গেছি ওপাশে।
আমি আবিষ্কার করলাম মেয়েটাকে আমি একটু একটু করে ভালবাসতে শুরু করেছি।
এই মেয়েটা কি জানে একজন পুরুষ যখন ভালবাসে তখন সে কতটা ভালবাসতে পারে? হৃদয় দিয়ে প্রেয়সীকে কতখানি আগলে রাখার ক্ষমতা রাখে একটা পুরুষ, শায়লা যদি একবার বুঝত।
ভেবেছিলাম রোজ একটা করে চিরকুট পেলে ও হয়ত কিছুটা ভাববে আমাকে নিয়ে।
আমার চিরকুট পেয়ে সে যে আমাকে সন্দেহ করবে এবং ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের সদস্য ভেবে বসবে তা ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি।
দুদিন আগে এক বিকেলে দেখলাম এনজেল শিউলি নামের একটা আইডি আমাকে বার্তা পাঠিয়েছে,
“হ্যালো,
আপনি কি জানেন আপনার হাসিটা কত সুন্দর? আপনাকে আমি আন্তরিকভাবে প্রেমের কুপ্রস্তাব দিচ্ছি। গ্রহন করুন। আপনি বিবাহিত হলেও আমার কোন সমস্যা নেই।”
মেসেজ পাঠ করে হাসতে হাসতে বিষম খেলাম। ফিরতি বার্তায় জানিয়ে দিলাম আমি আগ্রহী নই। শায়লার গ্রুপের একটা কার্যক্রম হলো ভুয়া আইডি হতে মেসেজ পাঠিয়ে দুশ্চরিত্র স্বামী সমাজকে পরকীয়ার মামলায় ফাঁসানো। সেটা আমি জানতাম।
তাই শায়লার পাতানো ফাঁদে আমি পা বাড়াইনি।
শায়লার ব্যক্তিগত জার্নাল পাঠ করে থাকলে এর পরের ঘটনাগুলো আপনাদের জানার কথা।

* * *
-হাসান সাহেব!
মাথায় তিনটা স্টিচ, ঠোঁটে দুইটা স্টিচ নিয়ে এই মুহূর্তে আমি শায়লার ঠিক পাশে বসে আছি। শায়লার বাবা এবং ভাই আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিতে একটু তফাতে গেছেন।
-বলুন শায়লা।
-এসব কেন করলেন? আপনি কী চান আসলে আমার কাছে?
-সত্যি বললে আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করবেন?
-জানিনা।
শায়লার কন্ঠ কেমন যেন নিষ্প্রাণ শোনাল।
আমার হঠাৎ কী যেন হলো। পাশ ফিরে দুহাতে শক্ত করে ওর কাঁধ চেপে ধরলাম। শায়লা অবাক হলো। ওর দীর্ঘদিনের অভ্যাস এবং তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় রেগে উঠতে যেয়েও আশ্চর্যরকম শান্ত হয়ে গেল ও।
চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে রইল শুধু।
– শায়লা আমি চাই আপনি আপনার ওই পৃথিবীটা থেকে বের হয়ে আসুন। যে পৃথিবীতে পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ বর্বর এবং অত্যাচারী। আমি চাই আপনি বুঝতে শিখুন পৃথিবীতে যেমন ভাল পুরুষ আছে,তেমন খারাপ পুরুষ ও আছে। ভাল নারী যেমন আছে তেমনি খারাপ নারীও আছে। ভাল খারাপ নিয়েই পৃথিবী! পুরুষ হটাওর বদলে আপনার গ্রুপের নাম হওয়া উচিত খারাপ মানুষ হটাও! আন্দোলন হওয়া উচিত অত্যাচারী সকল মানুষের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনে আমি আমরা সবাই আপনার সাথী হবো। বিশ্বাস করুন!
-আপনি আয়েশার ভাই হয়ে এসব কথা বলছেন! আয়েশা কী সহ্য করে চলে গেছে আপনি জানেন?
শায়লা হঠাৎ প্রায় চিৎকার করে বলে উঠল। এক ঝটকায় কাঁধ হতে আমার হাত সরিয়ে দিল ও।
ইমার্জেন্সি রুমের বাইরে একটা বেঞ্চে আমরা বসেছিলাম। আশে পাশে যারা ছিল সবাই অবাক হয়ে তাকাচ্ছিল।
আমি সামান্য বিব্রত বোধ করলাম।
শায়লার মুখটা প্রচন্ড ফ্যাকাশে দেখাতে লাগল। যেন ও ভীষন ক্লান্ত। কারো কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমিয়ে পড়তে চায়। তার মাঝেও ওর কন্ঠে একটা পাগল পাগল ভাব, যেন এক পদাঘাতে সবকিছু ভেঙে ফেলবে এক্ষুনি!
এক মুহূর্ত চুপ থেকে আমি মুখ খুললাম।
-হ্যা বলছি। আয়েশার ভাই হয়েও একথা বলছি। আমি সবকিছু জানি। সব জেনেশুনেই বলছি এবং আমার বিশ্বাস বেঁচে থাকলে আয়েশাও ঠিক একই কথাই বলত। শায়লা আমি চাই আপনি স্বাভাবিক পৃথিবীতে ফিরে আসুন। সবাই যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!
শায়লা হঠাৎ করে দুহাতে মুখ ঢাকল। হুহু করে কেঁদে উঠল।
-আপনি কি বলতে চান আমি একটা পাগল?
-আমি তা বলিনি শায়লা। পৃথিবীতে আপনার মত স্নিগ্ধ নারী আর একটিও নেই বিশ্বাস করুন!
শায়লা কাঁদছে নিঃশব্দে।
আমি জানি ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি ওর দিকে খানিক এগিয়ে গেলাম। ইতস্তত করছিলাম ওকে জড়িয়ে ধরতে। শায়লা হয়ত নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাকে আঘাত করে বসবে আবার। এতদিনের ঘৃণা বিদ্বেষ একটু একটু করে মুছতে ওর হয়ত অনেক সময় লাগবে। হয়ত ওর চোখের কাছে আমার ব্যাকুল অপেক্ষারা এসে থেমে যাবে বারবার।
আমি তবু আমার সবটুকু সাহস জড়ো করে আজ ওর হাতের উপর হাত রাখলাম। হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখলাম। শায়লা কিছু বললনা। ভেজা চোখে সামনের কোন এক অদৃশ্য জগতের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি জানি শায়লা নামের মেয়েটার এখন একটু ভালবাসা প্রয়োজন। নারীর প্রতি নরের ভালবাসা নয়। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here