#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_৬
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
আমার কবিতা বলা শেষ হয়েছে সেই কখন।
অথচ কারো মুখ থেকে আর কোনো কথাই বের হচ্ছে না।
কেনো? আমার বলার ধরনটা কি এতই খারাপ হয়েছে?
আবেগ মিশ্রিত কবিতাটা অন্তত একটা তারিফ পাওয়ার তো যোগ্যই ছিলো।
রেহান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি চোখ নামাতেই উনি বললেন–
— তুই তো বেশ ভালোই কবিতা বলতে পারিস উপমা।
কিন্তু এই আড্ডার মহলটাকে শান্ত করে দেয়া তোর একদমই উচিত হয়নি।
উনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না আমি।
কোথায় একটু প্রশংসা করবেন তা না আড্ডা নিয়ে পরে আছেন।
সে যাই হোক আমার কবিতার শীতল শব্দগুলি আড্ডা মহলকে বেশিক্ষণ ঠান্ডা করে রাখতে পারেনি।
আবারো জমে উঠলো আড্ডা, সাথে হালকা চা নাস্তা তো আছেই।
তবে আমার সব ভালোলাগা জুড়েই তো রেহান ভাইয়া আছেন।
আজকের আড্ডার মধ্যমনিই উনি।
আর আমার?
উনি তো আমার প্রত্যহ দিনলিপিতে,
আস্ত এক-একটি জীবন্ত কবিতা।
আমার সুক্ষ্ণ ভালোবাসার চিন্তা ভাবনা জুড়ে যখন রেহান ভাইয়া বিদ্যমান তখনই আমার পাশে রাফি ভাইয়া এসে বসলেন।
প্রথমে আমি লক্ষ্য না করলেও একটু পর যখন বুঝতে পারি তখনই আমার চক্ষু ছানাবড় হয়ে গেলো।
রাফি ভাইয়া যে শুধু আমার পাশেই বসেছেন তা না, উনি বসে পরার সাথে সাথেই আমার হাত ছুঁয়ে দিয়ে এমন ভাবে সামনে তাকিয়ে আছেন যেনো উনার স্পর্শটা অসতর্কতাবসত লেগে গেছে।
ব্যপারটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি।
আমাদের কাজিনদের মধ্যে আমরা কেউই এমন বেখায়ালি নই।
যতোই হাসি ঠাট্টা হোক না কেনো সেটা সীমাবদ্ধতার মধ্যেই হয়।
রাফি ভাইয়ার আমার পাশে বসাটা মোটেও ভালো লাগছে না আমার।
সোজা ভাবে বলতে গেলে এক প্রকার অস্বস্তি হচ্ছে।
তবুও মুখে হাসি রেখেই বসে আছি রেহান ভাইয়ার টার্ন আসার অপেক্ষায়।
বাহির বলে দূরে থাকুক
ভিতর বলে আসুক না!
ভিতর বলে দূরে থাকুক
বাহির বলে আসুক না…..
ঢেউ জানা এক নদীর কাছে
গভীর কিছু শেখার আছে
সেই নদীতে নৌকো ভাসাই
ভাসাই করে ভাসাই না
না ডুবাই, না ভাসাই
না ভাসাই, না ডুবাই
বাহির বলে দূরে থাকুক
ভিতর বলে আসুক না!
ভিতর বলে দূরে থাকুক
বাহির বলে আসুক না!
জল ডাকে আগুন টানে
আমি পড়ি মধ্যিখানে
দুই দিকে দুই খন্ড হয়ে
যাই আবার যাই না
না নিভাই, না জ্বালাই
না জ্বালাই, না নিভাই
রেহান ভাইয়ার গান শেষ হওয়ার আগেই আমি দৌড়ে নিচে চলে এলাম।
আর পারছি না আমি সেখানে বসে থাকতে।
রাফি ভাইয়া আমায় বার বার ছোট ছোট বাহানায় ছোঁয়ার চেষ্টা করছেন।
রাফি ভাইয়ার কি হলো?
কেনো করছেন উনি এরকম?
না, আমি এখন আর ছাঁদে যাবো না।
🥀
🥀
🥀
আজ রেনু আপুর গায়ে হলুদ।
কালই ছাঁদ সাজানো হয়ে গেছে তাই গায়ে হলুদে নতুন করে আর সাজানোর প্রয়োজন পরেনি।
এদিকে হলুদ শাড়ির কুচি ধরে আমি রুমের ভেতর দাঁড়িয়ে আছি কারো আসার অপেক্ষায়।
এক হাতে শাড়ির কুচি ধরে দাঁড়িয়ে আরেক হাতে ফোন টিপছি তখনই রেহান ভাইয়া রুমে প্রবেশ করেন।
হুট করে রেহান ভাইয়ার আগমনে আমি বেশ অবাকই হই বটে।
প্রতিবারের মতো এবারও মাথা নিচু করে ফেলি আমি।
উনি কি এখানে আসার আর সময় পেলেন না?
আমাকে লজ্জায় ফেলতে উনি ওস্তাদ।
ওদিকে আমার ফোনে মেসেজের টোন বেজেই যাচ্ছে, অথচ আমার সেদিকে বিন্দু মাত্র প্রতিক্রিয়া নেই।
এখন কি হবে?
আচ্ছা উনি কি আমার দিকে এখনও তাকিয়ে আছেন?
মাথা হালকা উচু করে সামনে তাকাতেই দেখি রুমে আমি ছাড়া আর কেউই নেই।
এতক্ষণ কি তবে আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিলাম?
নাকি সত্যিই উনি রুমে এসেছিলেন?
আমার ভাবনার মাঝেই রুমে লিপি আপু প্রবেশ করে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলেন।
লিপি আপু আমার থেকে মাত্র তিন বছরের বড়।
মামাতো বোন হিসেবে উনাকে আমার দারুন লাগে।
কিছু না বলেই উনি আমার হাত থেকে শাড়ির কুচিটা নিয়ে ঠিক করতে লাগলেন।
বেশি না মাত্র পাঁচ মিনিটেই সম্পূর্ণ শাড়ি পড়িয়ে দিলেন আমাকে।
খোপায় বেলি ফুলের মালাটা পড়তে বলে চলে গেলেন রুম থেকে।
আমিও আর দেরি করিনি।
বেলি ফুলের মালাটা সযত্নে খোপায় বেঁধে নিলাম।
চোখের নিচের পুরোনো কাজলের দাগটা মুছে নতুন করে চোখে গাঢ়ো কাজল একে নিলাম।
শাড়ির সাথে মিল রেখে কপালের টিপ টা দিতে গিয়েও দিলাম না।
থাকনা কপালটা খালি, এভাবেই যথেষ্ট ভালো লাগছে।
🥀
একমাত্র আমিই বোধহয় দেরি করে ফেলেছি।
ইশশ এখন কি হবে?
ছাদে যাওয়ার সাথে সাথেই তো সবাই তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে, ধ্যাৎ।
মাথায় গাট্টি মেরে ছাদের শেষ সিড়িতে পা রাখবো ঠিক তখনই কেউ আমায় সামনে থেকে ধাক্কা দেয়।
ধাক্কার জোড়ে আমি ব্যালেন্স না রাখতে পেরে যেই না পেছনে পরতে যাচ্ছিলাম তখনই এক জোড়া ঠান্ডা হাত আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে…
চলবে…