#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_৫
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

এই দোকান থেকে ওই দোকান ঘুরছি সবাই।
এই পছন্দ হয় তো এই হয়না।
এত এত শাড়ি লেহেঙ্গার মাঝে আমার চোখ আটকে গেলো একটা সবুজ গাউনের উপর।
দূর থেকেই খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, এক নজরেই পছন্দ হওয়ার মতো।
কাছে গিয়ে গাউনটা যেই না হাতে নেবো তখনই রেনু আপু পেছন থেকে এসে গাউনটা হাতে নিয়ে বললেন–

— উপমা, দেখতো এটা সুন্দর না?

হ্যাঁ আপু তোমায় বেশ মানাবে।

— সত্যি বলছিস তো?

হুম, নিয়ে নাও। তোমাকে পরির মতো দেখাবে।

বলে আমি যেই না সেখান থেকে সরে আসবো তখনই কোথা থেকে রেহান ভাইয়া এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন।

— আপু, বিয়েতে সবুজ রংটা বড্ড বেমানান।
তুই বরং ওদিক থেকে লেহেঙ্গা ট্রাই কর।
উপমা তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস?
দ্রুত কাজ শেষ কর, তোদের জন্য কি ঘন্টার পর ঘন্টা এখানে বসে থাকবো?

রেহান ভাইয়ার কথা শুনে কিছু না বলেই রেনু আপু অন্য সাইডে চলে গেলেন।
রেহান ভাইয়া আমার পাশে এসে গাউনটা আমার হাতে দিয়ে বললেন–

— নিজের পছন্দের জিনিস নিজের কাছে আগলে রাখতে কবে শিখবি তুই?
আর কত সহ্য করবি?
মুখ ফুটে কিছু বলতে খুব সমস্যা হয় তোর?

চুপ করে আছি আমি, এর কি জবাব দেবো?
আমি যে এভাবেই বড় হয়েছি।
প্রিয় মানুষগুলির শত অবহেলার পরও চুপ করে থাকি।
তাছাড়া যার বিয়ে তার অধিকারটা তো একটু বেশিই থাকবে।
রেনু আপুর ক্ষেত্রে এই বিয়ের প্রতিটা মোমেন্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা কি রেহান ভাইয়া বোঝেন নাম?

🥀

শপিং শেষে পুরো রাস্তা রেহান ভাইয়ার পাশে বসেই এসেছি।
রেহান ভাইয়ার পাশে বসতে এবার কেউ বাঁধা দেয়নি।
আগের বারের মতো বড় কেউ আমাদের সাথে আসেনি তাই বোধহয় কেউ ততটা গুরুত্বই দেয়নি।
চুপচাপ পুরো রাস্তা উনার পাশে বসে মাথা নিচু করে ছিলাম।
উনিও বোধহয় বুঝতে পেরেছেন আমি লজ্জা পাচ্ছি, তাই আমাকেও আর কিছু বলেন নি।

🥀

খালামনিদের বাসায় ফিরে আসতেই আমার মনটা ভীষন রকমের খারাপ হয়ে গেলো।
মা কথা বলছে মারুফ ভাইয়ার সাথে।
কি সেই আদর মাখা কথা বলছে মা ভাইয়ার সাথে। আমার রুমে এসেই কেনো মা কথা বলছে?
বড় ভাইয়ার সাথে মায়ের আবেগঘন কথা-বার্তা শুনে আমার মন যে শুধু খারাপ হয়ে গেছে তা কিন্তু না।
সেই কবে মা আমার সাথে এভাবে কথা বলেছে তা আমার সত্যিই মনে নেই।
যখন হোস্টেলে ছিলাম, প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম মায়ের একটা ফোনের জন্য।
প্রতিদিন কথা না হলেও দু’তিন দিন পর পর ঠিকই ফোন দিতো।
ফোন দেয়ার পর হোস্টেলের খালা যখন আমার হাতে এসে মোবাইলটা ধরিয়ে দিতো; ডুকরে কেঁদে উঠতাম আমি।
কান্নার জন্য কথাও বলতে পারতাম না।
মা বিরক্ত হয়ে কিছুক্ষন কথা বলেই ফোন রেখে দিতো।
হাসতাম আমি, খুব হাসতাম।
আধুনিক যুগে এসেও যে ছেলে মেয়ের পার্থক্যের শিকার আমাকে হতে হবে সেটা কল্পনাতেও ছিলো না।
শুনেছি সব পেরেন্টিং শিক্ষা নাকি সঠিক হয়না।
প্রথমে বিশ্বাস না হলেও মানতে বাধ্য হয়েছে ধিরে ধিরে।
ভালোবাসা তো আর সব যায়গায় পাওয়া যায় না।
বিভিন্ন যায়গায় ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছি আমি।
যেখানে পাচ্ছি সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিচ্ছি।
একজনকে কতটুকু ভালোবাসা যায় সেটা কখনো পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব হয়না।
অর্ধেক অনুভূতি গুলোই অপ্রকাশিত থেকে যায়।
যতই ভালোবাসা হোক না কেনো তবুও প্রাণ ভরে ভালোবাসতে না পারার আকুতি থেকেই যায়।
থাকুক না কিছু অতৃপ্তি, কিছু অপূর্ণতা, থাকুক কিছু হারিয়ে ফেলা, কিছু ব্যার্থ স্বপ্ন, থাকুক না পরবর্তি মুহূর্তের অনিশ্চয়তা।
হয়তো এই অনিশ্চয়তার মাঝে, অপূর্ণতার মাঝেই পূর্ণতা লুকিয়ে আছে যা ভালোবাসাময় পথটিকে করবে আরো দীর্ঘায়িত।।

🥀
🥀
🥀

আজ রাতে ছাঁদে ছোট বড় সব কাজিনরা মিলে আড্ডা দেয়া হবে।
ভাবতেই মন ভালো হয়ে যাচ্ছে আমার।
কত বছর পর আবার সব কাজিনরা এক হলাম।
তবে গুটি কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ কাজিনই বিবাহিত।

খাবার পানি সহ সব কাজিনরা ছাঁদে চলে এলাম।
কেউ কেউ তো গিটার হাতেও এসেছে, বুঝলাম আজ রাতে জমিয়ে আড্ডা হবে।
রাতের অন্ধকারে রঙ বেরঙের আলোতে মুখোরিত হয়ে আছে ছাঁদটা।
যে কেউ দূর থেকে দেখলেই বুঝবে এটা বিয়ে বাড়ি।

কেউ কৌতুক বলছে তো কেউ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে।
সকলেই উপভোগ করছিলাম বসে বসে।
আমার আনন্দ আরো দ্বিগুণ হচ্ছিলো।
রাতের আবছা অন্ধকারে আমি যে রেহান ভাইয়ার দিকে বার বার তাকাচ্ছি সেটা কেউই দেখতে পাচ্ছে না।
আড্ডা তখন জমে উঠেছিলো মাত্র ঠিক তখনই রেহান ভাইয়া উম্মিকে বললো–

— এই উম্মি, একটা কবিতা শোনা তো।

রেহান ভাইয়ার কথায় আর কেউ না হাসলেও আমি ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড হাসছি।
উম্মি যে কবিতায় বেশ কাঁচা তা আমি ঠিকই জানি।
বেচারা উম্মির চেহারা দেখার মতো ছিলো।
স্পষ্ট চেহারা না দেখা গেলেও এতটুকু বুঝতে পারছিলাম উম্মি খুব বিপদেই পরেছে।
আমার মুচকি হাসির মাঝেই উম্মি যা বললো তাতে আমার চোখ ছানাবড় হয়ে গেলো।

–” আমি তেমন ভালো কবিতা পারি না, কিন্তু উপমা আপু খুব ভালো কবিতা পারে।”

উম্মির এক বাক্যের এই কথাটি শুনে সবাই আমার দিকে কেমন দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
সকলের তাকানোর ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারছি আমি ফেসেই গেছি।
কিন্তু এত মানুষের সামনে আমি কি করে বলি?

— কি হলো উপমা, চুপ করে আছিস কেনো, শুরু কর।

রেহান ভাইয়ার কথা শুনে আমি আপনা আপনিই হাত দু’টো ঘষতে লাগলাম।
উনাকে এখন আমার কবিতা শোনাতে হবে?

মনে হয় এইতো সেদিন
তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হলো।
তোমায় প্রথম দেখাতেই ভালোলাগা ছুঁয়ে গেলো হৃদয়ে।
তোমার সাথে আমার সেই প্রথম পরিচয় প্রথম ভালোলাগা প্রথম প্রেম ।
সবকিছুর অনুভূতি যেনো আকাশ ছোঁয়ার আনন্দের মতো ছিলো।
তোমার কাছে লিখে পাঠানো প্রথম চিঠির অনুভূতি ঠিক কতটা ছিলো প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।
মনে হয় এইতো সেদিন
চোখের সামনেই ভেসে ওঠে তোমার বইয়ের ভাজে লুকিয়ে দেয়া একটি গোলাপ।
বই দেয়ার বাহানায় তোমার হাত স্পর্শ করার প্রথম অনুভূতি।
সারা রাস্তা ঘুরে দু’জনার একসাথে বাড়ি ফেরা
কত শত বাহানায় তোমার বাড়িতে তোমায় দেখতে যাওয়া।
সারাটা দিন যেনো কেটে যেতো ভালোবাসায়, ভালোবাসার মানুষের সাথে।
আজ দুরত্ব বেড়েছে অনেক
দৃষ্টির আড়ালে তুমি থাকো কিন্তু মনের আড়ালে নয়।
রোজ দেখা না হলেও দেখা তোমার আমার।
রাতভর কথা না হলেও ভাবনায় থাকো তুমি।
দূরত্বটা আমাদের মাঝে না এলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না তোমায় ঠিক কতটা ভালোবাসি।
কতটা শূন্যতা আমি অনুভব করি তোমায় ছাড়া।
ভালোবাসা যেনো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে
রোজ বাড়ছে তোমায় কাছে পাওয়ার আকুলতা।
এভাবেই ভালোবাসা ভালো থাকুক তোমার আমার প্রথম প্রেমের প্রথম অনুভূতিতে।
অনুভূতি কখনো পুরোনো হয় না,
মায়া কখনো কমে না,
দিন দিন আকাশ ছাড়িয়ে যায়।
ভালোবাসার বয়স যুগ যুগ পার হয়ে গেলেও
মনে হয় যেনো,
এইতো সেদিন তুমি আমার হলে।
তারপর যখন আর কোনো কিছুকেই
আকড়ে ধরে থাকা যায়না,
দিনশেষে তখন একা বেঁচে থাকাটা শিখে নিতে হয় প্রিয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here