#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_৪
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
বাড়ান্দাটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম ঠিক তখনই পেছন থেকে আমার নাম ধরে পরিচিত কিংবা অপরিচিত পুরুষ কণ্ঠে কেউ একজন ডেকে উঠলো।
কিন্তু কে সে?
রেহান ভাইয়াতো এখনও নিচেই আছে, ভেতরে এলে তো আমার সামনে দিয়েই আসতে হবে।
কণ্ঠ অনুসরন করে পেছনে ফিরতেই দেখি রাফি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
রাফি ভাইয়াকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম আমার।
উনি কি সত্যিই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন!
শিওর হওয়ার জন্য মুখ ফঁসকে আমি বলেই ফেললাম–
আপনি সত্যিই কি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন?
আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি বললেন–
— হ্যাঁ কিন্তু এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?
যাকে বাড়ির ধারে কাছেও কখনও দেখা যায় না।
মেয়ে দেখলেই যিনি দৌড়ে দৌড়ে পালান এমনকি কাজিন কিংবা কোনো আত্মীয় আসলেও লজ্জায় এড়িয়ে চলেন।
তিনি কিনা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার সাথে কথা বলছেন, হাউ স্ট্রেঞ্জ!
— কেমন আছো উপমা?
হ্যাঁ ভালোই আছি, আপনি কেমন আছেন?
— এইতো আছি কোনোরকম, অনেকদিন পর এলে এবার!
আসলে পড়ালেখার চাপ ছিলো, তাছাড়া বাবাও ছুটি পায়নি তাই কারোই আসা হয়নি।
অদ্ভুত! রাফি ভাইয়া আমার সাথে এত সাধারন ভাবে কথা বলছে কি করে?
রেহান ভাইয়া আর রাফি ভাইয়ার মধ্যে তো বেশ পার্থক্য।
দুই ভাইয়ের বড়জন বেশ মিশুক আর ছোটজনকে তো চোখের দেখাই দেখা যায় না।
রাফি ভাইয়াও তবে সামাজিক হচ্ছেন।
কিন্তু রাফি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে আমার বেশ অস্বস্তি হয়।
ছোট থাকতেও দূরে দূরে থাকতেন আর বড় হওয়ার পর তো ভালো করে কখনও কথাই বলেনি।
মাঝে মাঝে ভাবি দু’জনের মধ্যে কতটা পার্থক্য।
ইনি তো আমাকে ‘তুমি’ করে বলতেও লজ্জা পান।
কাজিনদের মধ্যে আবার কিসের ‘তুমি’?
উনি আমার ছোট হলে ‘তুমি’ টা মানা যেতো…
কিন্তু আজ কি এমন হলো উনি নিজে এসে আমার সাথে কথা বলছেন!
— তুমি ভেতরে যাও, জার্নি করে এসেছো রেস্ট নাও কিছুক্ষণ।
কোনো কথা না বলেই ভেতরে যাচ্ছিলাম তখনই আমার চোখ দড়জার দিক চলে যায়।
রেহান ভাইয়া আমাদের সবার ব্যাগ পত্র একা উপরে নিয়ে আসছেন। ভারি ভারি বড় দুইটা ব্যাগ কাঁধে আর হাতে বিশাল বড় ট্রলিটা টেনে টেনে নিচ থেকে তিন তলা এসে উনি যে হাঁপিয়ে গেছেন তা বেশ বুঝতে পারছি আমি।
উনার কাঁধটা যেনো প্রায় নুইয়ে গেছে।
এমন হাড্ডিষাড় মানুষ কি করে এত বোঝা বহন করে কে জানে?
আচ্ছা অন্য কেউ কি পারতো না ব্যাগগুলো নিয়ে আসতে!
একজন একটা করে আনলেও তো উনার এতো কষ্ট করতে হতো না।
উনার কি সবার বোঝা বইতে খুব ভালো লাগে?
ইচ্ছে করছে আমার সব কাজ উনাকে দিয়ে করাতে তারপর বুঝবেন খাটা খাটনির কত মজা।
ইশশ নিচ তলা কিংবা দোতলা হলেও তো কষ্ট কম হতো উনার, কিন্তু ভাড়াটিয়াদের তো খালুজি এই তিনতলাটা ভাড়া দেবেন না।
ব্যাগগুলো কাঁধ থেকে নামিয়ে দু’হাত কোমড়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন উনি।
এখান থেকে দরজার দূরত্ব প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাত হবে, তবুও আমি স্পষ্ট উনার তৃপ্তির হাসি দেখতে পাচ্ছি।
দেখে মনে হবে যেনো কিছুই হয়নি, কি প্রাণবন্ত হাসি উনার।
খুব রাগ হচ্ছে, কি দরকার ছিলো এতো কষ্ট করার!
রাগ সামলাতে না পেরে আমি সোজা রান্নাঘরে চলে এলাম।
চোখে আমি স্পষ্ট পানির আভাশ পাচ্ছি।
কিন্তু আমার চোখে পানি এনে লাভ কি?
যার জন্য মায়া হয় যার জন্য কষ্ট হয় যার জন্য রাগ হয় সেই তো বোঝে না।
বড় বড় শ্বাস নিয়ে চোখের দু’ফোটা পানি মুছে নিলাম আমি।
ঝটপট লুকিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে রহিমা খালার হাতে গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে রেহান ভাইয়ার রুমে পাঠিয়ে দিলাম।
🥀
🥀
🥀
চিরচেনা শহরটা বৃষ্টি ভেজা ঘ্রানে যেনো আবার নতুন করে রুপ নিয়েছে,
শীতল হাওয়ায় শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
মনেহচ্ছে কেউ কানেকানে বলছে এতো কিসের ভয় আমি আছি তো, তাই তো ভয় হয়।
জগতের অদ্ভুত নিয়মে পাল্টে যায় সবকিছু,
যেনো হারিয়ে ফেলছি নিজেকে।
সবার জীবনে প্রেম আসে কিন্তু আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়, ধরা দেয় না।
এই যে আমি নিজেকে খুঁজি, প্রতি মুহূর্তে মনে চায় তার প্রেমি পড়ি কিন্তু আমার যে ভয় হয়।
তাই নিজেকে আড়াল করতে দিধা বোধ করি না।
কই কেউ তো বলে না, হয়তো বলতে চায়ও না।
বলবে বা কেমন করে আমি তো রোমান্টিক নই।
সত্যি বলতে তা নয়, ঐ যে আমার ভয় হয়।
রেহান ভাইয়াদের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশটা দেখছি আমি।
কি বিশালতা ঐ আকাশের।
বৃষ্টি শেষে আকাশের এখন মন ভালো।
ঠান্ডা বাতাসটা গাঁয়ে লাগতেই কেমন যেনো এক ভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ হচ্ছে।
পুরো ছাঁদটা ভিজে যাওয়ায় কি সুন্দর পরিষ্কার দেখাচ্ছে।
ফুল গাছের টব থেকে ভেজা মাটির ঘ্রাণটা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।
খালি পায়ে ভেজা ছাঁদে এদিক ওদিক হাঁটছি ঠিক তখনই রেহান ভাইয়া ছাদে এলেন উম্মিকে নিয়ে।
উনার চোখে চোখ পড়তেই আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
তাকাবো না আমি ঐ চোখে, রেগে আছি যে।
🥀
উম্মির দিকে তাকিয়ে আছি, বেলি ফুল গাছের ছবি তুলছে সে।
উম্মির পাশে এসে বসে রেহান ভাইয়ার দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখি উনি এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
একটু পর রেহান ভাইয়া উম্মির ওপাশে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে একটা প্যাকেট বের করে উম্মিকে বললেন–
— উম্মি, কেউ একজন বোধহয় পন করেছে আমার সাথে কথা বলবে না।
এই প্যাকেটটা তার হাতে দিয়ে চলে আয় আমার সাথে।
তখনও নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।
রেহান ভাইয়া আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারলেন কি করে?
উনি কি বোঝেন না আমি উনার সাথে রাগ করে আছি?
চোখে পানি চলে আসার আগেই উম্মি আমার হাতে জোড় করে রেহান ভাইয়ার দেয়া প্যাকেট টা গুজে দিয়ে রেহান ভাইয়ার হাত ধরে ডেং ডেং করে নিচে চলে গেলো।
রাগে আমার গা জ্বলছে, ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।
রাগটাকে দমিয়ে রেখেই আমি প্যাকেটের ভাঁজ খুললাম।
ভেতরে তাকাতেই আমার চোখ ছানা বড় হয়ে গেলো।
প্যাকেটে ভর্তি কত কত চকলেট।
ভাগ্যিস উম্মি এটা খুলেনি, নাহয় উম্মিকেও এর ভাগ দিতে হতো।
সব রাগ নিমিসেই যেনো উধাও হয়ে গেলো আমার।
রেহান ভাইয়া আমাকে কতদিন পর চকলেট দিলেন।
সেই দু’বছর আগে এবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় দুই বক্স চকলেট দিয়েছিলেন আমাকে।
বিকেলের প্রকৃতির সাথে সাথে আজ মনটাও যেনো আমার ভালো হয়ে গেলো।
🥀
🥀
রেনু আপুর বিয়ের শপিংয়ে আজকে ছোটরা সবাই এসেছি।
রেহান ভাইয়া যেভাবে বলছিলেন ‘রেনু আপুর হবু বড়টা এতটাও সুন্দর না।
তবে রেনু আপুর সাথে বেশ মানিয়েছে।
বয়সটা রেনু আপুর থেকে ক’বছরের কম হলেও দেখতে রেনু আপুর বয়সিই লাগে।
রেনু আপুর ভাগ্যটাও কেমন অদ্ভুত।
বিয়ে করবেনা করবেনা বলতে বলতে ছত্রিশটা বছর পার করে তবেই বিয়ের পিরিতে বসছেন।
উনার হবু বরের বয়স আর রেহার ভাইয়ার বয়সে এক বছরের পার্থক্য মাত্র।
অবশ্য রেহান ভাইয়ার বয়সও কম না।
রেনু আপুর ভাগ্যটা সত্যিই অদ্ভুত।
এই দোকান থেকে ওই দোকান ঘুরছি সবাই।
এই পছন্দ হয় তো এই হয়না।
এত এত শাড়ি লেহেঙ্গার মাঝে আমার চোখ আটকে গেলো একটা সবুজ গাউনের উপর।
দূর থেকেই খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, এক নজরেই পছন্দ হওয়ার মতো।
কাছে গিয়ে গাউনটা যেই না হাতে নেবো তখনই…
চলবে…