#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_২
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)

প্রায় এক হাত দুরত্ব আমার আর রেহান ভাইয়ার মাঝে। দু’হাত বুকে ভাজ করে আমাকে বললেন–

— আমি সুন্দর?

চুপ করে আছি আমি, কোনো উত্তর নেই আমার।
একে তো উনাকে দেখলেই আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়, তার উপর এমন প্রশ্নের কি করে উত্তর দেই আমি ?
তবুও জড়তা কাটিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই রুমের দরজায় বাহির থেকে কেউ একজন নক করলো।
রেহান ভাইয়া আর আমি দরজার দিকে তাকিয়ে আছি।
সাথে সাথেই দরজা ঠেলে উম্মি রুমে প্রবেশ করে বললো–

— রাতের খাবারের জন্য সবাইকে নিচে ডাকছে।
রেহান ভাইয়া আপু তোমাদেরকেউ ডাকছে নিচে এসো, আমি গেলাম।

এই মুহূর্তে ছোট বোনটাকে ধরে চুমুতে ইচ্ছে করছে।
একদম সঠিক সময়েই রুমে এসেছে।
সাধারনত উম্মির কোনো কাজই আমার পছন্দ হয়না, কিন্তু আজ উম্মির কাজে আমি বেজায় খুশি।
আর দেরি না করে এক প্রকার দৌড়েই আমি রেহান ভাইয়ার সামনে থেকে চলে এলাম।
পেছন থেকে অবশ্য কয়েকবার আমার নাম ধরে ডেকেছে, কিন্তু কে শোনে কার কথা?

🥀
🥀

খাবার টেবিলের এক পাশের চেয়ারে এসে বসতেই পেছন থেকে রেহান ভাইয়া আমার পাশের খালি চেয়ারটায় এসে বসে পড়লো।
বড় বড় চোখ করে রেহান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন।
ওফ কি সেই হাসি, একদম হারিয়ে যাওয়ার মতো।
তার হাসিতে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে কিংবা তার একটা হাসির জন্য কেউ অপেক্ষায় থাকবে এমন কিন্তু নয়!
মোটেও ক্রাশ খাওয়ার মতো হাসি দেন না উনি।
তবুও তার একটা হাসিতেই আমার দিনটাই ভালো চলে যায়।
মনে হয় যেনো তাকিয়েই থাকি, কিন্তু আবারও সেই অস্থিরতা।
দুই তিন সেকেন্ডের বেশি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না আমি।
কাঁপা কাঁপা হাতে প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে লাগলাম।
কিন্তু কোথায় আর খাচ্ছি আড় চোখে বার বার রেহান ভাইয়ার দুকে তাকাচ্ছি।
অথচ উনি দিব্যি বসে বসে খাচ্ছেন।
যেনো কতদিনের না খাওয়া মানুষ উনি।

পানির গ্লাসে হাত দিতেই উনার হাতের ছোঁয়া লাগলো।
দ্রুত হাত সরিয়ে নিলাম, কেউ দেখে ফেললো না তো?
ইশশ দু’জনের একই সাথে কেনো পানির গ্লাসে হাত দিতে গেলাম।
সব দোষ উনার, আমার পাশেই কেনো বসতে হলো?
আর দেরি করিনি আমি, কোনোরকম তাড়াহুড়ো করে ভাত মুখে দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লাম।
এই মানুষটা সামনে থাকলে আমার খাওয়া কোনোদিনই হবে না।

🥀
🥀
🥀

ঘুমোবার আগে ব্যাগপত্র গুছিয়ে তবেই বিছানায় গেলাম।
ভালো দেখে সব জামাকাপড় নিয়েছি, তবুও মনে হচ্ছে কম হয়ে গেছে।

বিছানায় শুয়ে এদিক ওদিক গড়াগড়ি করছি আমি।
কিছুতেই ঘুম আসছে না আমার।
ফোন হাতে নিয়ে রেহান ভাইয়ার নাম্বারটা বার বার দোখছি।
আচ্ছা কল করলে কেমন হয়?
না না থাক, পরে কি বলব আমি, মুখ থেকে তো একটা কথাও বের হবে না আমার।

এই একটা মানুষকে আমি কতটা ভালোবাসি তা বলে বোঝানো সম্ভব না।
ছোট বেলা থেকেই রেহান ভাইয়ার সাথে আমার বন্ডিংটা খুবই ভালো।
কিন্তু বড় হওয়ার পর কিভাবে কিভাবে যেনো আগের মতো আর কথা হয় না।
না উনি মজা করতো না আমি উনার কাছে ঘেষতাম।
দুরত্ব হলেও আলাদা একটা টান ছিলো।
আমাদের বাড়ির কোনো বড় সিদ্ধান্তে আত্মীয়রা মতামত রাখলেও ছোট খাটো কোনো ব্যাপারে কেউ ঘাটাতে আসে না।
আমরা এমনই সবাই, কেমন যেনো নিজেদের মধ্যেই আবদ্ধ।
প্রেম ভালোবাসা কোনো পরিবারেই মেনে নেবে না তা নিশ্চিত।
এসব নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ বাড়াবাড়ি করেনি।
করবে কিনা তাও সন্দেহ।

আর আমি?
আমি হলাম আমার পরিবারের সবচেয়ে অবহেলিত সদস্য।
কেনো জানিনা আমাকে কেউ দেখতেই পারে না।
দেখতে না পারাটা অবশ্য পরিবারের মধ্যেই বিদ্যমান।
এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি যে আমাকে সবাই অবহেলা করবে।
খুবই ঘরকুনো মেয়ে আমি।
মা বাবার মোটেও অবাধ্য হই না কখনও।
তবুও কেনো যে কারো পছন্দের মানুষ হতে পারিনা কে জানে।
কথায় আছে নিজের দোষ কেউ কখনও দেখেনা।
কিন্তু সত্যিই আমি কখনই নিজের দোষ দেখিনা।

বাবা মায়ের সবটুকু আদর বড় ভাই দখল করে বসে আছে।
আর সবটুকু মায়া ছোট বোনের জন্য।
মাঝখানে আমার জন্য অবহেলাটাই নির্ধারিত।
বাবা মায়ের সাথে বন্ডিংটা আমার এ জন্মে হবে না তা আমি বেশ বুঝে নিয়েছি।
মাঝে মাঝে খুব হিংসে হয় ভাই বোনদের প্রতি।
আমাকেও যদি একটু বেশি বেশি আদর দিতো তবে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?
এমনটাও না যে, আমি এ বাড়ির মেয়ে নই, কিংবা এমনটাও না যে আমাকে তারা আশ্রয় দিয়েছে।
আমি এ বাড়িরই মেয়ে। খুব বেশি না জানলেও শুনেছি কিছু বাবা মায়েরা নাকি সন্তানদের এক সমান দেখতে পারে না।
এক সমান আদর দিতে পারে না, এক চোখে দেখতে পারে না।
আমি মেনেই নিয়েছি আমার বাবা মাও তাদেরই দলে।
বড় ভাইটাও তাদের প্রশ্রয়ে আর আদরে আমার ভালো না লাগা মানুষদের মধ্যে পড়ে আছে।
আমি চাইলেও পরিবারের সাথে কিছু শেয়ার করতে পারি না।
কেমন যেনো অস্বস্তিবোধ হয়।
এখন অবশ্য আমার এতে কিছুই এসে যায় না।
তাদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্যই সাহস করে বলেছিলাম আমাকে যেনো হোস্টেলে রেখে আসে।
কোনো কিছু না বলেই আমাকে হোস্টেলে রেখে এসেছিলো বাবা।

যখন থেকে ভালোবাসা কি সেটা বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই রেহান ভাইয়াকে মনে মনে ভালোবাসতে শুরু করেছি।
ওমম খুব সম্ভবত ক্লাস নাইন থেকেই বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা কি।
বোঝার বুদ্ধিটুকু কম হলেও এতটুকু বুঝতাম কাউকে পেতে হলে মন থেকে ভালোবাসতে হবে তাকে মন থেকে চাইতে হবে।
শুরু হয়ে গেলো রেহান ভাইয়াকে প্রতিটা মোনাজাতে চাওয়া।
আমার ভালোবাসাটা কোনো লুতুপুতু টাইপ ভালোবাসা ছিলো না।
খুব বেশি হলে বছরে একবার রেহান ভাইয়াদের বাসায় যাওয়া হতো, খুব ঘরকুনো টাইপ মেয়ে ছিলাম কিনা।
উনিও সময় করে আসতো কিছু দিনের জন্য।
আমি বড় হওয়ার পর বিনা কারনে কখনও আমাকে স্পর্শও করতো না, কথা বলাটাও খুব কম হতো।
বেহায়ার মতো যে তাকিয়ে থাকবে তাও না।
তখনকার অনুভূতি এমন না হলেও এতটুকু বুঝতাম তাকে ভালোবাসতে হবে, তার জন্য প্রার্থনা করতে হবে।
সেই থেকে শুরু তার প্রতি আমার সম্মান এবং ভালোবাসা।
কেউ জানেনা আমি রেহান ভাইয়াকে কতটা ভালোবাসি, কাউকে জানতেও দেইনি।
আর বাসায় যে জানাবো সেই সাহস এবং মন মানসিকতা আমার কোনো কালেই হবে না।
মা বাবা যা বলবে আমি তাই মেনে নেবো, তবুও মুখ ফুটে কাউকে ভালোবাসি একথা আমার দ্বারা বলা হবে না।
মা আমি তোমার বোনের ছেলেকে ভালোবাসি, একথা বলার মতো এতটা নির্লজ্জ আমি নই।
নির্লজ্জ কেনো বলছি? আমি আসলে প্রেম ভালোবাসা প্রকাশ করাকে নির্লজ্জতাই ভাবি।
তবুও ভালোবেসে যাবো আমি রেহান ভাইয়াকে।
জানিনা ভবিষ্যৎ কি হবে কিন্তু ভালোবাসতে দোষ কিসে?

আজ এভাবে রেহান ভাইয়ার সামনে পড়ে যাবো ভাবতেই লজ্জায় আমার মাথা কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
কি জন্য যে বিছানায় উঠে লাফাতে গেলাম কে জানে।
আজকের সারাদিনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম আমিও জানিনা।

🥀
🥀
🥀

সকালে নাস্তা করে সবাই রেহান ভাইয়াদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
রুমে বসে হিজাব বাঁধছি ঠিক তখনই রেহান ভাইয়া আমার রুমে প্রবেশ করে।
হাতে পিন নিয়ে হিজাবে লাগাতে যাবো তখনই রেহান ভাইয়াকে দেখে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।
বেখায়ালি ভাবে হোক আর যেভাবেই হোক হাতে থাকা পিন আমার আঙুল ভেদ করতেই আমি চিৎকার করে উঠলাম।
আমার চিৎকার খুব বেশি জোড়ে না হলেও রেহান ভাইয়ার কান অবদি ঠিকই গেলো।
দৌড়ে রেহান ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার…

চলবে…

(গল্পের নাম শুনে অনেকেই বুঝে গেছেন শেষটা কেমন হবে। অনেকেই ইন্ডিংটা হ্যাপি দিতে বলেছেন। গল্প তো শুরু করলাম, এক পর্বই দিয়েছি মাত্র। তবে এটাই বলব যাদের গল্পে স্যাড ইন্ডিং পছন্দ না তারা দয়া করে গল্পটি এড়িয়ে যাবেন। গল্পের ৮০% ই বাস্তব জীবন থেকে নিয়ে লেখা হচ্ছে। সৌন্দর্যের দিকে লক্ষ্য রেখে কিছু এদিক সেদিক করতে হচ্ছে। তাই বলছি আমাকে আমার মতো লিখতে দিন। বানানের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here