#পর্ব_২
#এক_দেখায়
#লেখনীতে_পুষ্পিতা_প্রিমা
মেজবানের পরের দিন ফুপীর বাসা থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফুপী বলল,
‘ আর কিছুদিন থেকে যাও আম্মা। কতদিন পর এসেছ।
আমি মাথা নাড়ালাম। বললাম,
‘ তুমি ও তো যাওনা। দাদু কতবার তোমার কথা বলে। হাঁটতে চলতে অসুবিধা হয়,তাই আসতে চায়নি। নয়ত চলে আসত।
ফুপী বলল,
‘ যাব । তোমার শাহেদ ভাইয়ার বউকে নিয়ে যাব। তোমার আব্বা নতুন বউকে দাওয়াত খাওয়াবে বলছে না? যেতে তো হবে। কিন্তু তুমি থেকে যাও আর কয়দিন। আমাদের সাথে একসাথে যাবা?
আমি ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে বললাম,
‘ না না আম্মা একসাথে সবকাজ সামলাতে পারবেনা। আমি থাকলে আম্মার হেল্প হয়।
ফুপী হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ বিয়ে দিয়ে দিলে তখন কি হবে?
আমি বললাম।
‘ আমি যাবই না। এমনিতে ও ভাবি আছে না? আমি তাকে কাজ করতে দিইনা। বাচ্চার মা তাই। বেশি ধোয়ামোছা করলে মামুনির ঠান্ডা লেগে যাবে তাই। নাহলে ভাবি সব কাজ করে নেয়। কাউকে বলতে হয়না।
ফুপী হাসল। বলল,
‘ আহারে কি বুঝদার আমার ভাইঝিটা। আমারটাকে দেখোনা সারাক্ষণ আছে টো টো করে ঘুরে বেড়ানোর কাজে। মোবাইল ছাড়া তার চলেই না। কি আছে ওই মোবাইলে আল্লায় জানে।
আমি মনে মনে হেসে বললাম।
‘ এইটা প্রতিটা মায়ের জাতীয় ডায়লগ।
ফুপী বলল,
‘ মাথার পাশে ব্যাথা কি কমেছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
‘ আরেহ না তেমন বেশি ব্যাথা পাইনি।
ফুপী ঘনঘন মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ আচ্ছা। তোমার আম্মারে এসব কিছু বলিওনা। বলবে আমার মেয়েটা দুদিনের জন্য বেড়াতে গেছে তার ফুপী খেয়াল রাখেনাই।
আমি হেসে দিলাম। হেসে বললাম,
‘ ফুপী তোমরা আসলে পার। একটা সামান্য ব্যাপার জটিল করো শুধু।
রুমের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কে যেন হঠাৎই বলে উঠল,
‘ নিজেই তো জটিল করলেন। সামান্য বলের আঘাতে কি কেউ ব্যাথা পায়?
ফুপী হেসে বলল,
‘ রায়ান।
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,
‘ যেখানে সেখানে হাজির ছেলেটি। বিরক্তিকর।
ফুপী ঠোঁট টিপে হাসলেন। বললেন,
‘ একটু দুষ্টু। তবে খুব ভালো।
আমি ফুপীর রুম থেকে বেরোলাম। মনে মনে বিড়বিড় করলাম
‘ এর ভালো দিয়ে আমি কি করব?
গাড়ি অনেক আগেই এসেছে। আমার জন্য অপেক্ষা করছিল বাবা। বাবা তাড়া দিলেন তাড়াতাড়ি এসো।
আমি বাবার কাছে যেতেই বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ তোমার ওই আন্টিটার সাথে কথা হয়েছে? চলে আসার সময় ওনার সাথে কথা বলেছ?
আমি চুপটি মেরে গেলাম। বললাম,
‘ রোহিতা আন্টি?
বাবা বললেন,
‘ হ্যা। যাও। তোমাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বলে আসিও।
আমি সামান্য বিরক্তিবোধ করলাম।
‘ উফ আবার আমাদের বাড়িতে যাওয়ার কি দরকার?
সৌজন্যে রক্ষার্থে রোহিতা আন্টির কাছে যাওয়ার আগে পথ আটকালেন ওনার ছেলে। গলা কাত করে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কাকে চাই?
আমি অন্যদিকে মুখ করে বললাম,
‘ ওই আপনার আম্মা মানে আন্টিকে।
ছেলেটি গলার স্বর লম্বা করে দিল,
‘ আম্মুউউউউউ!!!
আন্টি দৌড়ে এলেন যেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,
‘ কি হয়েছে আব্বা। এভাবে ডাকছিস কেন? কিছু কি হয়েছে?
ছেলেটি হেসে দিল উচ্চস্বরে। আন্টি ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকান। আমাকে দেখে বলেন,
‘ তোমার সাথে আবার দুষ্টুমি করেছে রুশা ? কি হয়েছে?
আমি ছেলেটির হাসি উপেক্ষা করে বললাম,
‘ না। ওই চলে যাচ্ছি তো তাই আপনাকে খুঁজছিলাম।
ওনার ছেলে বললেন,
‘ আরেহ যাওয়ার জন্য আপনাকে বলতে হবেনা। আপনার বাবা অলরেডি বলে দিয়েছেন। আর আমরা পুরো আজিমপুর না ঘুরে ঢাকায় ফিরছি না ম্যাডাম।
আমার এমন রাগ লাগল কিছু একটা বলে ফেলতে ইচ্ছে হলো। তারপর ঠোঁটের কোণায় মেকি হাসি ঝুলিয়ে আন্টিকে সালাম দিয়ে চলে আসলাম৷ এমন একটা ভদ্রমহিলার এত বেয়াদব ছেলে কেমনে হলো?
সিএনজিতে উঠে বসে ওড়নাটা সামলে নিয়ে বসলাম। ছেলেটি দূরে শাহেদ ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে নিজেকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ মিস. রুউউউশা আমি যাচ্ছিইইইই।
আমি চেপে গেলাম সিএনজির সিটে। চরম অসভ্য ছেলে। লজ্জা শরম সামান্যটুকু ও নেই।
______________________
প্রায় এক সপ্তাহ পর হবে। বাবা তার ভাগিনার বউকে দাওয়াত খাওয়ানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। হরেক রকম পদের রান্না। হরেক রকম মাছ। মাংসের নানান রকম স্টাইল। আমি বুঝে পাইনা এত ঢং করার কি আছে। তিন চার পদ রান্না করলেই তো হয়ে যায়। ফজরের নামাজ পড়ে সেই কাজে লেগে গেলাম আর ছাড়াছাড়ি নেই। আম্মা কানের উপর প্যানপ্যান শুরু করে দিয়েছে।
‘ এই এক জাতের মেয়ে আমার। সারাদিন বললে ও কাজে হাত দিবেনা। আবার দিলে সারাদিনে ও খাওয়াদাওয়ার তালে নাই। কাজ করলে কি খাইতে পারেনা? একদম বাপের মতো হয়েছে।
বেসিনে রাখা চামচ বাটি ধুতে ধুতে জবাব দিলাম,
‘ আম্মা এই অবস্থায় কিছু খেলে আমার গলা দিয়ে নামবে না। মাছ,মাংসের গন্ধ গায়ে লেগে আছে মনে হচ্ছে। গোসল নিব। তারপর খাব। তারপর আর কেউ আমাকে কাজ করতে বলিও? লম্বা ঘুম দিব আমি।
আম্মা মুখে কাপড় গুজে বললেন,
‘ এইটা কোনে কথা হলো? কাজ তো মেহমান আসার পরেই শুরু হবে। তুই এমন করলে চলবে? ঘরে মেহমান আসবে আর তুই ঘুমাবি?
আমি বাটি গুলো কিচেনে টেবিলের উপর উপুড় করে রাখতে রাখতে জবাব দিলাম,
‘ আম্মা শিখা আসবে। তাকে কিছু কাজ ধরিয়ে দিও। ফুপী বলেছে সে বাসায় নাকি কোনো কাজ করেনা। মামার বাড়িতে এসে কাজ করতে পারে। আর ভাইয়া আছে, বাবা আছে,ভাবি আছে।
ভাবি পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বললেন,
‘ তুই তোর ভাইঝিকে নিয়ে ঘুমা। অনেক করেছিস আর কাজ করতে হবেনা। বাকিগুলো আমরা সামলে নেব।
আমি বললাম,
‘ সবচাইতে কঠিন কাজ তো তোমার মেয়েকে সামলানো। না নিজে ঘুমায়, না আমাকে ঘুমাতে দেয়।
ভাবি হাসল। আমি রান্নাঘরের আনাচে-কানাচেতে নজর বুলিয়ে বললাম,
‘ আম্মা দেখো রান্নাঘরটা একদম ঝকঝকে করে দিয়েছি। আমার আর কোনো কাজ নাই। এবার আমি যাই।
আম্মা কিছু বললেন না। আমি গোসল সেড়ে সবার আগে নিজে খেয়ে নিলাম। এত রান্না হয়েছে কোনটা ছেড়ে কোনটা খাব? দেড়বছরের ভাইঝিটা জিহৃবা দেখিয়ে বলল,
‘ রুউউউ রুউউউ।
আমি বললাম,
‘ আমাকে খেতে দেখলে তোমার খিদা লেগে যায় কেন আম্মা?
মিশা হাসল দাঁত দেখিয়ে। আমি আঙুলে ভাত চ্যাপ্টা করে গালের ভেতর ডুকিয়ে দিতেই দাঁতগুলো দিয়ে কামড় বসাল আমার হাতে। আমি ধমক দিয়ে বললাম,
‘ হারামি তোর সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা আছে? এভাবে কামড় দিলি কেন?
মিশা মুখ কালো করে ফেলল। মাথা নিচু করে বলল,
‘ আমমমো আমমমো রুউউ। আবববো রুউউ।
আমি হাসলাম। গাল টেনে দিয়ে বললাম,
‘ আম্মুকে আব্বুকে রুউউর নামে বিচার দিবা? সাহস তো কম না আম্মা তোমার।
মিশা আমাকে ধরে উঠে দাঁড়াল। আমার চুল টেনে ধরে আমার ওড়নায় মুখ মুছে রেগে বলল,
‘ রুউউউউ।
খেয়েদেয়ে তাকে কোলে নিয়ে রুমে গিয়ে একদম দরজায় খিল দিলাম। মিশা ডাকল,
‘ রুউউউ।
আমি বললাম,
‘ চুপ থাক বোবানি। এত বড় বুড়ি হয়ছে এখনো ভালো করে কথা বলতে পারেনা। আমার নামটা কেমন করে ডাকে।
মিশা হাসল। আবার ডাকল,
‘ রুউউউ আতো !
আমি বিছানায় শুয়ে তাকে বুকের উপর রেখে পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে গাইলাম,
‘ ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি
মোদের বাড়ি এসো
খাট নাই পালঙ্ক নাই
পিড়ি নিয়ে বসো।
মিশা উঠে গেল৷ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আতে।
আমি হাসলাম। বললাম,
‘ হ্যা হ্যা আতে। খাট আছে । পালংক আছে তাতে গিয়ে বসো। ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি তোমরা তাড়াতাড়ি আসো।
মিশা ঘুমিয়ে পড়ল কিছুক্ষণের মধ্যে। আমি গালের দুইপাশে চুমু বসিয়ে পাশে শুয়ে দিয়ে কাঁথা জড়িয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম আমার এত ভার, ভূমিকম্প গেলেও টের পাই না।
_____________
প্রায় সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাঙল। ঘড়ির সময় দেখে আছরের নামাজটা পড়ে বের হলাম ঘর থেকে। মিশু এখনো ঘুমোচ্ছে। আহা কি ভালা মাইয়্যা আমার।
বাড়িতে মেহমানের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। বুঝেই গেলাম এখন গেলে আমাকে কাজে ধরিয়ে দেবে। বলবে,
‘ রুশারে যাহ কথা বলে আয়। নতুন বউকে তোর চাচিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আয়।
মিশুকে টেনে ঘুম থেকে তুলে কোলে নিয়ে একদম ছাদে চলে গেলাম। মিশু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। আমি হাসলাম। বললাম,
‘ তোমাকে আর রাতে ঘুমাতে হবেনা আম্মা।
ফুপী ছাদে চলে এল। নতুন বউ ও সাথে। আমাকে দেখে ফুপী হায় হায় করে উঠল।
‘ তুমি এখানে? আমি তোমারে ঘুম ভেবে আর ডাকতে যায়নাই।
আমি লম্বা সালাম দিলাম। রোহিতা আন্টি হেসে বললেন,
‘ মুখ তো একদম ফুলেফেঁপে গেছে। ঘুমালে মুখ ফুলে যায়, পুরো আমার মতো।
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,
‘ বালিশ সরে গিয়েছে তাই।
মাগরিবের নামাজ পড়ে ভাইয়ারা সবাই ঘরে এল। বারান্দায় এত গমগম আওয়াজ। বাপরে বাপ। এই ছেলেরা একজন কথা বললে মনে হয় একশজন মেয়ে কথা বলছে। বারান্দার যাওয়ার আগে পর্দা টানানো। আমি পর্দা সরালাম না। চিকন ক্লিপ দিয়ে ফুটো করে দেখলাম কে কে এসেছে?
ভাইয়া পছন্দ করেনা এত লোকের মাঝে যাওয়া। তার বোনটা তার কাছে এতই আদরের।
সেই ভাইয়া আমাকে ডাকল।
‘ এই রুউউউ কোথায় রে তুই?
আমার কোলে থাকা মিশু জাগ্রত হয়ে গেল বাপের গলা শুনে। নিজে নিজে বলে উঠল,
‘ আববববো। আবববো।
ভাইয়া বলল,
‘ আসো। কোথায়?
মিশু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে চাইল,
‘ আমাকে নিয়ে যাও।
আমি পর্দা সরিয়ে গেলাম। বললাম,
‘ ভাইয়া নাও।
মিশু হাত টেনে ঝাপ দিল বাপের কোলে। এখন তার দাম বেড়ে যাবে। ফুপী টুপি কেউ এখন নেই তার। কাউকেই লাগবে না।
সুজন ভাইয়া বললেন,
‘ রুশা কেমন আছ তুমি? তুমি নাকি ঘুমোচ্ছ? এই সময়?
আমি দেখলাম কে কে এসেছে?
সুজন ভাইয়া আর শাহেদ ভাইয়াকে দেখে বললাম,
‘ এজন্য ভাইয়া আমাকে আসার পারমিশন দিয়েছে। সুজন ভাইয়ার সাথে খুব ফ্রি। তাই বললাম,
‘ ভাইয়া অন্য কথা বাদ দেন। শাহেদ ভাইয়া বিয়ে করেছে এবার আপনি কখন করবেন সেটা বলুন। দুটো ভাবি দিয়ে আমার পোষায় না।
সুজন ভাইয়া হাসলেন। নড়েচড়ে বসে বললেন,
‘ আগে বোন বিয়ে বিয়ে দিই। তারপর দেখা যাবে।
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,
‘ সবার মুখে এক কথা। এই কথা ছাড়া আর কোনো কথা নাই? আমি কি তোমাদের বউদের কামড়াচ্ছি?
তিনজনই হেসে উঠল। মিশু ভাইয়ার কোল থেকে ডাকল,
‘ রুউউ বিইয়েইই।
আমি মনে মনে বললাম,
‘ তুমি আর কোলে আসিও আম্মা? গাল টেনে ছিড়ে দেব একদম৷
তিনজনই চলে গেল। টিভিটা চলছে। রিমোট হাতে নিয়ে টিভি বন্ধ করে দরজা বন্ধ করতে গেলাম। পারলাম না। দরজা ঠেলে ফোন কানে দিয়ে কেউ একজন ডুকে পড়ল ঘরে। কথা বলা শেষ করে আমার দিকে ফিরে বলল,
‘ আশ্চর্য মেয়ে মানুষ তো আপনি। মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন? ডেঞ্জারাস তো।
আমি ঢোক গিললাম।
‘ এই কে রে বাপ?
ছেলেটি সোফায় বসে বললেন,
‘ পানি খাওয়ান তো। কথা বলতে গিয়ে গলাটা শুকিয়ে গেছে।
আমি দাঁড়িয়েই থাকলাম। ছেলেটি নিজে উঠে পানি ঢেলে নিল। পানি খেয়ে হেঁটে আমার সামনে এসে আমার হাতে গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ বলেছি না আসব!
আমি চোখ তুলে তাকালাম। বললাম,
‘ তো আমি কি করব?
ছেলেটি হাসল। বলল,
‘ যান। গ্লাসটা রেখে আসুন।
আমি বললাম,
‘ যাব না।
ছেলেটি বলল,
‘ তাহলে দাঁড়িয়ে থাকুন। নড়লে খবর আছে।
আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম। এক পা এগোতেই ছেলেটি আদেশের সরূপ বললেন,
‘ যান তো।
আমার রাগে কান্না পেল। চলে আসতেই পেছনে হাসির আওয়াজ শুনলাম। রাগটা ও আর ও বাড়ল। রাগের চোটে কাঁদলাম। একাপাশ কাত করে বিছানায় শুয়ে পড়ে বললাম
‘ বাড়ি খালি না হওয়া পর্যন্ত আর বেরোবোই না এ ঘর থেকে।
সে আর হলো কই?
রোহিতা আন্টি নিজেই ডাকতে আসলেন খাওয়ার জন্য। ভাইয়া চেয়ার দেখিয়ে বলল,
‘ রুউউ তুই আন্টির পাশে বোস। আমি চেয়ার পেছনে দিয়ে দাঁড়িয়ে টেবিলে বসা সবার দিকে চোখ বুলালাম। যখন দেখলাম হাঁদারামটা নেই তখনই বসে পড়লাম। ছেলেটা কোথা থেকে উড়ে এসে তার মায়ের পাশে বসে পড়লেন। আমার অবস্থা তখন বারোটা। এই ছেলেটি কেন এল? সুজন ভাইয়া আমার বরাবর বিপরীত পাশে বসায় বললেন,
‘ রুশা মন খারাপ কেন? এখন বিয়ে দিচ্ছিনা।
মনটা আর ও খারাপ হলো।
‘ সারাক্ষণ বিয়ে বিয়ে। কোনোমতে গোগ্রাসে গিলে চলে এলাম৷
আম্মাকে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘ বিয়ে বিয়ে করলে একদম বাড়ি ছেড়ে চলে যাব আমি।
আম্মা হেসে বললেন,
‘ বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতেই যাবি আর কি। আর কোথায় যাবি? তোর বিয়ের এমনিতেই কথাবার্তা চলছে। তোর বাবা জানাতে বলছিল, জানিয়ে দিলাম। পছন্দ, অপছন্দ জিজ্ঞেস করলে বলে দিস। পরে আবার খ্যাঁ খ্যাঁ শুনতে পারব না তোর।
রাগ মাথায় চড়ল। গলার আওয়াজ উঁচু করে বললাম,
‘ এই মাঝপথে এসে বিয়ে টিয়ে কেন আম্মা? এটা কেমন বিচার? আমার পড়ালেখা মাঝপথে। আম্মা স্বাভাবিক গলায় বললেন,
‘ পড়ালেখা করতে পারবে। মেয়ে যখন হয়েছ পরের বাড়িতে তো যেতেই হবে। আজ না হয় কাল। এটাই নিয়ম। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলে আর আপত্তি কেন?
শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি। পায়ের আঙুলের উপর ফোঁটা ফোঁটা গরম জল পড়ল। মাথা তুললাম না আর। আম্মা শাড়ির আঁচলে হাত মুছে আমার কাছে এসে মুখে হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ কাঁদছিস কেন? যার তার হাতে তো তোকে তুলে দেবনা।
আম্মার হাত সরিয়ে দিলাম আমি। হনহন পায়ে হেঁটে চলে গেলাম।
আম্মা পিছু ডাকল।
‘ আচ্ছা তোর বাপ ভাইকে দেখাস এই রাগ। তাদের সামনে তো কিছুই বলিস না।
________________
বাড়ির পেছনের বাঁকা হয়ে যাওয়া আম গাছের সাথে দোলনা বাঁধানো। আমি বসি সেখানে মাঝেমাঝে। বাড়িতে বিরক্ত লাগছে। মিশু ঘুম। তাই একাই এসে বসেছি। দোলনায় দুলতে দুলতে মনে হলো কথা বলে বলে কেউ একজন এদিকেই আসছে। বাড়ির পেছনের জায়গাটা নিরিবিলি হওয়ায় তেমন কেউ আসেনা। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই ছেলেটি ও আমাকে দেখে থমকে গেল যেন। কিন্তু তার ফোনে কথা বলা শেষ হলোনা৷ যেই না শেষ পা টিপে টিপে ছেলেটি দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ মন খারাপ?
আমি না শোনার মত করে থাকলাম। ছেলেটি নিজ থেকেই বলল,
‘ চলুন এদিকে নাকি একটা বিল আছে। ঘুরতে যাব। সুজনকে ও ডাকি।
আমি বললাম,
‘ আমি যাব না। আপনারা যান।
ছেলেটি বলল,
‘ যেতেই হবে। চলুন।
কিছুক্ষণের মধ্যে সুজন ভাইয়া চলে আসলেন। আমাকে বললেন,
‘ রুশা চলো। তোমার বাড়ি, তোমার এলাকা, ঘুরিয়ে দেখাবে।
সুজন ভাইয়ার জোরাজুরিতে যেতে হলো। ছেলেটি যা দেখে তাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। আমি পিছু পিছু হাঁটলাম তাদের। ছেলেটি ধীরে ধীরে যেতে যেতে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ কালকের জন্য সরি। আমি ভাবতে ও পারিনি আপনি এতটা বিরুক্ত হবেন।
আমার অবাক লাগল।
‘ এই ছেলেটা আমায় সরি বলছে?
আমি বললাম,
‘ আমি কিছুই মনে করিনি। সরি বলতে হবেনা।
ছেলেটি বলল,
‘ গুড। তাহলে তো ঠিক আছে। কিন্তু হাসছেন না কেন?
আমি বললাম,
‘ হাসতে ও হবে?
ছেলেটি বলল,
‘ অবশ্যই। যাদের হাসলে ভালো দেখায়, তাদের হাসা উচিত সবসময়।
আমি আর কিছু বললাম না।
ছেলেটি নিজ থেকেই বলল,
‘ আমি আপনাদের বাসায় এসেছি। আপনি ও আমাদের বাসায় যাবেন।
আমি বললাম,
‘ কেন?
ছেলেটি হেসে ফেলল। বলল,
‘ ভয় পাবেননা। ভাইয়ার বিয়েতে যাবেন। খুশি হবো।
আমি বললাম,
‘ ভাইয়া? আচ্ছা। চেষ্টা করব।
ছেলেটি জোর খাটিয়ে বলল,
‘ যাবেনই। নইলে আমি নিতে আসব।
আমি হা করে তাকিয়ে বললাম,
‘ কেন আসবেন?
ছেলেটি একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে জবাব দিলেন,
‘ আসব। এমনি এমনি। এসেছিলাম যেমনি যেমনি।
আমি একটুখানি হেসে বললাম,
‘ আপনার উপর রাগটা এখন দশ থেকে পাঁচে নেমেছে।
ছেলেটি হেসে বলল,
‘ শূন্যতে নামিয়ে আনতে ও চাইনা। কজ রাগ ও যার তার উপর হয়না কিন্তু।
আমি ভ্রু উঁচালাম।
‘ আচ্ছা?
ছেলেটি হেলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে পা দিয়ে শুকনো মড়মড়ে পাতা ছিটকে বললেন,
‘ জ্বি। আমি যে সে নই।,,
চলবে,
এটি ছোটখাটো একটা গল্প হবে। মন্তব্যের আশায়।