#এক_চিলতে_রোদ।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৯

আগুন বাসায় গিয়ে বাবাকে কালকে অফিসে যেতে বলল। কাল গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বলে বাবাকে রাজি করালো।পরদিন…..

সকালে ঘুম থেকে ওঠে খেয়ে আগুন আর তার বাবা অফিসে চলে গেল।অফিসে গিয়ে বসতে না বসতে অহনা আপু আর রবির মা আসলো।তিনজন আগুনের অফিসে ঢুকল।মা আগুনকে দেখে কেঁদে জড়িয়ে ধরল। প্রতিবারের মতো এবারও আগুন অবাক।যে আসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেন…..?
মাঃরবি তুই ঠিক আছিস তো?
আগুনঃআমি রবি?
মাঃহ্যাঁ তুই আমার ছেলে।

আগুন বাবার দিকে তাকালো।সে মাথা নিচু করে আছে। আগুন বুঝতে পারল এখানে নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে।আগুন তার বাবাকে বলল…
আগুনঃবাবা কিছু বল আমি আসলে কে রবি না আগুন? আর আমি তোমার ছেলে তো নাকি অন্য কেউ?

তিনি আর চুপ থাকতে পারলেন না।বলা শুরু করলেন…
–আমি জানি না কে তুই।সেদিন রক্তাক্ত অবস্থায় তোকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছি আমি কেউ তোকে সাহায্য করতে আসে নি।আমি তোকে হসপিটালে নিলাম তারপর আমার রক্ত দিয়ে তোকে বাঁচালাম। তোর মেমোরি লস হয়ে গেছে তুই নিজেই জানিস না আমি তোর বাবা নয় আর আমিও জানি না কে তুই।
আগুনঃ তাহলে এত দিন আমার সাথে মিথ্যা বললে কেন?
— আমি জানি সন্তান না থাকার কষ্ট কি। আমি তোমার মাঝে আমার ছেলেকে দেখে ছিলাম। তাই তোমাকে আমার ছেলে বললাম।
আগুনঃ তাহলে তুমি আমার বাবা নয়?
—না।
আগুনঃওনারা যেটা দাবি করছেন আমি ওনাদের পরিবারের একজন সেটা কি সত্যি?
–আমি তাও জানি না।

তখনই অহনা বলে ওঠল..
অহনাঃহ্যা তুমি রবি।চাইলে আমি প্রমাণ করে দেব।আর আমি তোমার বিবাহিত স্ত্রী।তোমার একটা মেয়েও আছে।আমরা মিথ্যা বলছি না।
আগুনঃঠিক আছে আপনি যদি আমার স্ত্রী হন তাহলে তা প্রমাণ করতে হবে।কারণ আমি কিছু জানি না।আমার কোনো কিছু মনে নেই।
অহনাঃহ্যাঁ প্রমাণ করে দেব। বলুন কি জানতে চান?
আগুনঃআপনি যদি স্ত্রী হন তাহলে এখানে সবার সামনে আমি জিজ্ঞেস করতে পারব না।চলুন আমার সাথে…

আগুন অহনাকে একটা রুমে নিয়ে গেল।তারপর আগুন অহনাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে বলল….
আগুনঃ আপনি যে আমাকে স্বামী দাবি করছেন তা কি সত্যি?
–হ্যাঁ শত ভাগ সত্যি।
আগুনঃতাহলে আপনি জানেন আমার শরীরে কোথায় কি আছে?
–হ্যাঁ জানি।
আগুনঃতাহলে বলুন আপনার সাথে আমার বিয়ে কখন হয়ছে?
–আজ থেকে দেড় বছর আগে।
আগুনঃতাহলে এত দিন খোঁজ নেন নি কেন?
–নিয়েছি খোঁজ তুমি ব্যাবসার কাজে আসছিলে এই শহরে তারপর থেকে নিখোঁজ। আমরা সারাক্ষণ তোমায় খুঁজেছি এমন কি আমরা কোথাও গেলে তোমাকে খুঁজি।
আগুনঃআপনি বললেন আমার মেয়ে আছে রাইট?
–হুম তুমি নিখোঁজ হওয়ার ছয়মাস পর তোমার মেয়ে হয়েছে।
আগুনঃতাহলে আপনি আমার শরীরে কোথায় কি আছে বলেন?
–তোমার ডান হাতের কনুই একটা বড় কালো তিল আছে।আর হাতের তালুতেও অনেক তিল আছে।ঠোঁটে নিচে তিনটা তিল আছে আর….(থেমে গেল)

আগুনঃআর কি?
–তোমার বুকের বাম পাশে একটা চিহ্ন আছে পোড়ার চিহ্ন।

আগুন পুরো অবাক হয়ে গেল কারণ অহনা যা বলল সব তো ঠিক বলল।আগুন এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হলো অহনা তার বউ।তাও আগুন অহনাকে বলল….

আগুনঃআপনি যদি আমার স্ত্রী হন আর আমার মেয়েও থাকে তাহলে আমি আমার মেয়ের সাথে ডিএনএ টেস্ট করব।আপনি রাজি তো?
–তোমাকে পেতে আমি সব করব আমি হারাতে চাই না আর তোমাকে।
আগুনঃতাহলে আপনি আমার বউ।
—এক কথা আর কত বার বলব আমি তোমার বউ।

আগুন এবার অহনার দিকে এগুতে লাগল।অহনা বুঝতে পারল রবি কি করতে চলেছে।অহনা বসা থেকে ওঠে পেছনে যেতে লাগলো এক সময় দেয়ালে লেগে গেল।রবি অহনার হাত চেপে ধরল দেয়ালের সাথে।রবি নিজের মুখটা অহনার মুখের দিকে নিয়ে যাচ্ছে অহনা চোখ বন্ধ করে ফেললো।অহনার ঠোঁট কাঁপছে রবি চেয়ে আছে সে ঠোঁটের দিকে। বেশ কিছু সময় অহনা রবির ঠোঁটের স্পর্শ না পাওয়ায় চোখ খুলে দেখে রবি তার দিকে চেয়ে হাসছে।

অহনাঃকি হল এটা?
–দেখলাম কোনো ভয় পাও কি না।
অহনাঃভয় কেন পাব স্বামীর অধিকার আছে তোমার।
–তাই দেখলাম ভাবছিলাম ভয় পাবে কিন্তু না।
অহনাঃএখন তো বিশ্বাস করলে তুমি রবি?
–হুম বিশ্বাস করলাম।

তারপর তারা দুইজন বেরিয়ে সবার সামনে আসলো।সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। রবি বলল….

–আমি হয়তো সব ভুলে গেছি কিন্তু আমি এখন কি করব?কার সাথে থাকব?
অহনাঃআমাদের সাথে থাকবে।
—পুরো দেড়টা বছর যাকে বাবা ডেকে এসেছি তাঁকে ছাড়া কি থাকতে পারব?আর বাবা তুমি কি থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া?
রফিক সাহেবের কাছে গিয়ে রবি কথা গুলো বলল।তিনি এবার রবির দিকে তাকালো আর বললো…
–দেখ বাবা তুই অনেক দিন মায়ের আদর পাস নি।এখন তুই তোর মায়ের সাথে যা। মনে করিস আমি তোর বাবা হয়ে ছিলাম আর বাবা হয়ে থাকবো।

রবিঃকেন বাবা?তুমি আমার বাবা হয়ে থাকলে কত ভালো হয় চলো না সবাই একসাথে থাকি।

রবির কথা শুনে সবাই মাথা তুলে রবির দিকে তাকালো।সত্যি তো সবাই একসাথে থাকলে কত আনন্দ হবে সবার।কেউ কান্নাকাটি করবে না।সবাই মিলে এক আনন্দময় জীবন পার করতে পারবে।

রবির কথায় সবাই রাজি হয়ে গেল।সিদ্ধান্ত নিলো সবাই একটা বাসায় থাকবে। কিন্তু মা বলে ওঠল..

মাঃআমি কিছু দিন থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যাব।
অহনাঃমা কি বলছ সবার সাথে এখানে থেকে গেলে কি হয়?
মাঃনা গ্রাম ছেড়ে অনেক দিন থেকেছি এখানে গ্রামের মানুষ গুলোর জন্য অনেক মায়া জমে আছে।সপ্তাহ খানেক থেকে আমি চলে যাব।

সবাই কত খুশি রবি আজ সবার মাঝে আছে।মা সাপ্তাহ খানেক পর গ্রামের বাসায় চলে গেল।রবি,অহনা,আপু,আর বাবা বাসায় আছে।সাথে কাজের মেয়ে রিফাও আছে।আছে রবি আর অহনার মেয়ে।রবি এখন চা খাই কফি তেমন খাই না।

আজ অফিসে গেল।রফিক সাহেব রবিকে নতুন ভাবে নিজের ছেলে হিসেবে সবার সাথে রবি নামে পরিচিত করিয়ে দিল।রবি এখনো রফিক সাহেব কে নিজের বাবার মতো দেখে।রফিক সাহেব সব থেকে বেশি খুশি কারণ একটা পুরো পরিবার পেয়েছে।সবাইকে নিজের ছেলে মেয়ের মতো দেখে।

রবি নিজের রুমে বসে আছে হঠাৎ পিয়ন বলল কেউ একজন তার সাথে দেখা করতে চাই।রবি ভেতরে আসতে বলে। একটা মেয়ে ভেতরে আসে দেখে বুঝে গেল এটা সে মেয়ে যে রবিকে ভার্সিটিতে দেখে কথা বলতে আসছিল।মেয়েটা এসে বসতে না বসতে কোথা থেকে আপু অফিসে চলে আসে।

রবি আপুকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।আর আপুকে বলে…
রবিঃআপু তুমি অসময়ে এখানে কেন?
–দেখতে আসলাম তোর কাজ কেমন চলে…

আপু কথা শেষ করে বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাকাতে কেমন যেন আঁতকে উঠল আর মেয়েটা আপুকে দেখে নিজের মুখ লুকাতে চেষ্টা করলো।কিন্তু আপু মেয়েটার হাত ধরে ফেললো আর মেয়েটার চেহারা দেখার জন্য জোর করল।কিন্তু প্রতিবার মেয়েটা নিজের মুখ লুকাতে চেষ্টা করলো।

রবিঃআরে কি করছ আপু মেয়েটা কে আর ওর হাত এভাবে ধরলে কেন?

আপুঃএটা আর কেউ নয় রিহি যে তোর এক্সিডেন্টে করিয়েছিল।যার কারণে তুই সব কিছু ভুলে গেছিস।সানির কথা মনে আছে তোর সানি আর এই রিহি তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য ক্রমে তুই বেঁচে যাস তোর থেকে দেড়টা বছর কেড়ে নিয়েছে এই মেয়ে আর সানি।চিনতে পারবি না তুই এই মেয়েকে।

রবিঃএসব কি সত্যি আপু?
আপুঃহ্যাঁ শুধু তাই নয়।এই মেয়ে তোর ভালোবাসা নিয়ে খেলেছিল পরে রাশেদ শাস্তি দিয়েছিল এই মেয়েকে।তারপর থেকে তোকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছিল।যখন এই শহরে আসলি তুই সে সময়টা তারা দুই জন কাজে লাগায়।এই মেয়ে সানিকে বিয়ে করার কথা বলে সানির সাথে মিলে তোকে গাড়ি ছাপা দেয়।

রবিঃকি বলছ আপু এই মেয়ে তাহলে আমাকে তোমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিছে?এই মেয়েকে তো আমি ছাড়ব না।

রবি ওঠে যখনই রিহির দিকে যাবে তখন রিহি আপুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আর টেবিলে থাকা ফুলদানি নিয়ে রবির মাথায় সজোরে আঘাত করে।আঘাত এত জোরে করে রবির মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয় আর রবি অজ্ঞান হয়ে যায়। আপু কিছু করার আগে রিহি সেখান থেকে পালিয়ে যায়।রবির মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে দেখে আপু তাড়াতাড়ি এলার্ট সুইচ চেপে দেয় সাথে সাথে তিনজন সিকিউরিটি রবির রুমে চলে আসে।আর বাইরের সব স্টাপ ভয়ে দাঁড়িয়ে যায়।সবাই মিলে রবিকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যায়।

মাথা থেকে অনেক রক্ত বের হওয়ায় জ্ঞান ফিরতে রাত হয়ে যায়।সবাই হসপিটালে অপেক্ষা করতে থাকে কখন রবির জ্ঞান ফিরবে সে ভেবে।দীর্ঘ সময় পর ডাক্তার রবির রুম থেকে বের হয়ে আসে।

আপু আর অহনা এগিয়ে যায় ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তারঃদেখুন এই পর্যন্ত রোগী ভালো আছে তবে জ্ঞান না ফেরার আগে ভালো বলাটাও ভুল।আপনারা অপেক্ষা করুন রাত দশটা হতে জ্ঞান ফিরবে।

ডাক্তার চলে গেল আপু আর অহনা রবির রুমের সামনে বসে আছে।দীর্ঘ সময় পর একটা নার্স রবির রুমে গেল।নার্সটা খুব ধীর পায়ে নার্স রবির রুমে গেল মুখে মাস্ক। কিন্তু অসময়ে তো নার্স যাওয়ার কথা না।নার্স যাওয়ার পেছন পেছন আপু ঢুকে গেল।কারণ আপুর কেন যেন নার্স টাকে সন্দেহ হচ্ছিল। নার্স গিয়ে একটা ইনজেকশন পুশ করে দিল স্যালাইনে যা দেওয়ার সাথে সাথে পুরো স্যালাইন হলুদ হতে শুরু করল।আপু দেখার সাথে সাথে চিৎকার দিল।অহনা বাইরে থেকে চলে এলো।নার্সটা দৌড়ে চলে যেতে আপু ধরে ফেলে।অহনা ডাক্তার বলে ডাক দেয়। একটু পর ডাক্তার এসে স্যালাইনটা রবির হাত থেকে খুলে ফেলে।নার্সকে ধরে অহনা চড় মারে।

ডাক্তার আরেকটা স্যালাইন লাগিয়ে দেয়।ডাক্তার নার্সটার সামনে গিয়ে নিজের হাতে নার্সটার মাস্ক খুলল।
ডাক্তারঃইতফি তুমি?
—–(নিশ্চুপ)
ডাক্তারঃতুমি কেন বিষ দিলে ওখানে?
—স্যার আমি এসব করতে চাই না কিন্তু একটা মেয়ে আমাকে টাকা দিয়ে এসব করিয়েছে। যদি রোগী মারা যায় তাহলে আরো ৫০ হাজার টাকা দেবে বলল।

অহনাঃকে দিছে টাকা?
–আমি তার নাম জানি না তবে ফোনে কথা বলতে শুনেছি।
ডাক্তারঃফোনে কি বলেছিল?
–ফোনে কোনো সানি মেয়েটাকে রিহি বলে ডাকছিল।

কথাটা শোনার পর পর আপু আর অহনা একে অপরের দিকে তাকালো। আপু ইফতিকে বলল…
আপুঃতোমার পরিবারে কে কে আছে?
–বৃদ্ধ বাবা-মা। ছোট ভাই বোন।
আপুঃউপার্জন করার মতো কে কে আছে?
–উপার্জন করার মতো কেবল আমি আছি।আর কেউ নেই।ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ দিতে আমার কষ্ট হয়ে যায় তাই এই অপরাধের পথটা বেছে নিলাম।প্লিজ আমাকে পুলিশের কাছে দেবেন না।আমার পরিবার না খেয়ে মারা যাবে।(কেঁদে)

আপুঃমেরে দিছ….
—মানে?

#To_be_continue…….
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here