“বিয়ের আসর থেকে বর-কনে দু’জনেই গায়েব”

এই কথাটা খুব দ্রুতই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো।জীবনে হয়তো এটায় প্রথম বিয়ে যেখান থেকে বর-কনে দু’জনেই পালিয়ে গিয়েছে।

বিয়ে বাড়িতে ইতোমধ্যেই হৈচৈ পরে গেছে।প্রজ্ঞা আর রুদ্ধর পরিবারের সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।ছেলে-মেয়ে দু’টো যে এমন কোনো কাজ করবে সেটা তাদের কল্পনার বাইরে ছিল।কিছুক্ষণ পর রুদ্ধর বাবা মিস্টার আরিয়ান হাসান বলে উঠলেন,

“ওদেরকে খুঁজতে হবে।সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ো।দেখো ওরা কোথায় গেছে।”

এর মধ্যেই প্রজ্ঞার ছোট বোন প্রেমা হাতে একটা চিরকুট এনে হাজির হলো।

“প্রজ্ঞা আপু পালিয়ে গেছে।আর ওকে যেন কেউ না খোঁজে সেটাও বলে গেছে এই চিরকুটে।”

তখনই সেখানে রুদ্ধর বড় ভাই রোহান এসে বলল,

“রুদ্ধ ও একটা চিরকুট লিখে চলে গেছে।ওর নাকি এই বিয়েতে মত নেই।”

প্রেমা আর রোহানের কথা শুনে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।বিয়ে বাড়ির সকলের সামনে দুই পরিবারের এমন অপমান মেনে নিতে পারলেন না কেউ।

অন্যদিকে, বিয়ের লাল বেনারসি পড়ে ছুটে চলেছে প্রজ্ঞা।পেছনে কোনো বখাটে নয় বরং স্বয়ং রুদ্ধ ধাওয়া করেছে প্রজ্ঞাকে।

“প্রজ্ঞা দাড়া বলছি,আজ তোকে আমি খুন করে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে।”

প্রজ্ঞা ছুটতে ছুটতেই বলল,

“সাহস থাকলে ছুঁয়ে দেখা আমাকে।শালা শয়তান,তোকে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না।”

“ওও আচ্ছা আমার মনে হয় ঠ্যাকা পরেছে তোর মতো শাঁকচুন্নিকে বিয়ে করার তাইনা।”

হঠাৎই প্রজ্ঞা হোঁচট খেয়ে রাস্তার মাঝখানে পড়ে গিয়ে চিৎকার করে উঠলো।রুদ্ধ দৌড়ে গিয়ে প্রজ্ঞার সামনে বসে পরলো।

“এই কি হয়েছে?কাঁদছিস কেন?কোথায় ব্যাথা লেগেছে বল আমাকে?”

প্রজ্ঞা কাঁদতে কাঁদতে ওর ডান পা রুদ্ধর সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“পায়ে খুব ব্যাথা করছে।মনে হয় মরেই যাবো রেএএএএএএ”

“দিবো এক থাপ্পড় বেয়াদব মেয়ে।সব সময় ফালতু কথা বলিস কেন হ্যা?”

রুদ্ধর রাগী কন্ঠস্বর শুনে প্রজ্ঞা চুপ হয়ে গেল।রুদ্ধ খুব সাবধানে প্রজ্ঞার পায়ের যেখানে কেটে গিয়ে রক্ত পরছে সেখানে নিজের শেরওয়ানি থেকে কাপড় ছিঁড়ে বেঁধে দিল।

“নে তোর পা বেঁধে দিয়েছি।এখন চল তারাতাড়ি।এই জনশূন্য জায়গায় বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।”

প্রজ্ঞা উঠতে গেলেই আবার পায়ে ব্যাথা পেয়ে বসে পরলো।তারপর ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,

“খুব বেশি ব্যাথা করছে।দাড়াতেই পারছি না।”

“কে বলেছিল দৌড়াতে হ্যা।এখন দেখ কত ধানে কত চাল।”

রুদ্ধর ধমক খেয়ে প্রজ্ঞা আবারো ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদতে লাগলো।

“এই একদম কাঁদবি না।এখান থেকে যেতে হবে আমাদের।কোথায় যাবো সেটাও তো বুঝতে পারছি না।”

“এখান থেকে একটু দূরেই আমার একটা ফ্রেন্ড এর বাসা।আমি তো ওখানে যাওয়ার জন্যই বেড়িয়েছিলাম।”

“তাহলে চল সেখানেই যায় আমরা।”

“আরে পাগল নাকি।আমরা দু’জন এখন এই বিয়ের সাজে ওদের বাসায় গিয়ে কি বলবো হ্যা?”

“তাহলে এখন কি করবি তুই বল।এইসব কিছু তো তোর জন্যই হয়েছে।”

“ওহ তাই না?এখন সব দোষ আমার?তুই যে আমাকে বললি পালিয়ে যেতে।তাহলে তুই আমার পিছু পিছু আসলি কেন?”

“আমি তো তোকে একা ছাড়িনি কারণ এত রাতে তুই একা একা কই যাবি,কি করবি,যদি কোনো বিপদ হয় এসব ভেবেই সাহায্য করতে এসেছিলাম।”

“খুব ভালো কাজ করেছিস।তোর জন্য নতুন করে ঝামেলায় পড়েছিলাম।”

“তোকে বাঁচাতে গিয়ে আমি নিজে একটুর জন্য গণধোলাই খাইনি।”

“ঝামেলা তো তুই পাকিয়েছিলি।”

“হয়েছে হয়েছে।এখন বল কি করবি?আজকের রাতটা কি এখানেই কাটাবো না-কি?”

“কি করবি সেটা তুই ভাব।আমি এমনিতেই পায়ের ব্যাথায় মরে যাচ্ছি।”

“এই চল আমরা বাসায় ফিরে যাই।”

“ঐ শালা তুই কি পাগল?এখন বাসায় গেলে পাপা আমাকে মেরেই ফেলবে।”

“আরে একটু বকা কেলে কিচ্ছু হবে না।চল তো তারাতাড়ি।”

“এই পায়ে আমি এখন এতদূর কিভাবে যাবো?”

কিছু একটা ভেবে রুদ্ধ প্রজ্ঞাকে কোলে তুলে নিল।তারপর হাঁটতে শুরু করলো।

“উফফফ কি ভারি রে তুই?তার উপর পরেছিস তো এই ৫০ কেজি ওজনের শাড়ি।”

“তোর বাসা থেকে দিয়েছে এটা ওকে?আর আমার ওজন মাত্র ৪৮ কেজি।”

“এখন চুপ থাক তো।তোকে কোলে নিয়ে আমার কোমড়ের বেহাল দশা হবে এইবার।”

“হুহ তোর থেকে সাত কেজি কমই আছি আমি।”

কথা বলতে বলতে কিছু দূর গিয়েই একটা সিএনজি ডেকে সেটাতে বসে পরলো রুদ্ধ আর প্রজ্ঞা।সিএনজি তে বসেও দু’জন ঝগড়া করতে লাগলো।

“দেখ রুদ্ধ,তোর জন্য যদি আজ আমার কিছু হয় তাহলে তোকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো আমি।”

“হ্যা তুই তো রাক্ষসী।পারিস তো শুধু গিলতে।”

“এই খবরদার আমাকে রাক্ষসী বলবি না।এইসব কিছু তোর জন্যই হয়েছে।”

“অ্যাহহহহ,সব দোষ তোর।বিয়ে করবি না এটা তো ভালো কথা।কিন্তু সেটা আগেই পরিবারকে জানালে কি হতো?”

“পাপা মানত আমার কথা?আর এই,তুই নিজেও তো এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারতি।দিলি না কেন?”

“আমি পারলে তোকে আর বলতাম না।বাবা যে রাগী,বিয়ে ভাঙ্গার কথা বললে হয়তো আমাকেই ভেঙ্গে দিত।”

“সেটাই ভালো হতো।তোকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা উচিত অসভ্য ছেলে।”

“তোকে তো আমার গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে শাঁকচুন্নি কোথাকার।”

“আর আমার তোকে কি করতে ইচ্ছা করছে জানিস?”

রুদ্ধ ওর এক ভ্রু বাঁকা করে অন্য ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

“কি করতে ইচ্ছে করছে শুনি?”

প্রজ্ঞা কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,

“তোকে আমার এখন চিকেন কিমার মতো রুদ্ধ কিমা মানে তোর কিমা করতে ইচ্ছা করছে।”

“ওরে শাঁকচুন্নি,তোর মতো মেয়েকে যে বিয়ে করবে তার জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে।”

“তোর বউয়ের ও তো কপাল খারাপ।কারণ তোর মতো একটা খাটাশ ছেলে তার বর হবে।আহারে মেয়েটার কপাল কত্ত খারাপ।”

ওদের দু’জনের ঝগড়ার জন্য সিএনজি ড্রাইভার নিজেও বিরক্ত হলো।এত বড় বড় দু’জন ছেলে-মেয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো করে ঝগড়া করছে আজব!!

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা বিয়ে বাড়ির সামনে চলে এলো আবার।দু’জনের বুকেই ধকধক শব্দ হচ্ছে।ভয়ে ভয়ে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই সবাই ওদের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন ওদের দু’জনকে আজ এখনই কিমা বানিয়ে ফেলবে।ভয়ে দুজনের গলা শুকিয়ে এলো।

প্রজ্ঞা রুদ্ধর হাত শক্ত করে ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভেতরে গিয়ে সবার সামনে দাড়ালো।এখনো বাসায় সবাই আছে।এমন কি কাজি সাহেব ও উপস্থিত আছেন।সবার চোখে-মুখেই রাগ আর কৌতূহল স্পষ্ট।রুদ্ধ আর প্রজ্ঞা একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে এক সাথেই বলে উঠলো,

“আমরা এই বিয়েটা করবো না দেখেই পালিয়ে গিয়েছিলাম।তাই প্লিজ কেউ আমাদেরকে বকা দিও না।”

এই কথাটা বলেই প্রজ্ঞা কিউট ফেস করে ওর বাবার সামনে আর রুদ্ধ কোনো রকমে একটা মেকি হাসি দিয়ে ওর বাবার সামনে গিয়ে দাড়ালো।

তখনই……

চলবে?

#উরন্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here