#উরন্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_৪
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

“সব সময় এত হাসতে কে বলেছে তোকে হ্যা?”

রুদ্ধর রাগী কন্ঠস্বর শুনে প্রজ্ঞা বুঝতে পারলো অভ্রর সাথে হেসে কথা বলাতে সাহেবের এত রাগ হয়েছে।রুদ্ধকে আর একটু রাগানোর জন্য প্রজ্ঞা দুষ্টু হেসে বললো,

“আমার মুখ,আমার হাসি,সবই আমার।তাই আমি কখন হাসবো আর কখন হাসবো না সেটা নিশ্চয়ই তুই বলে দিবি না আমাকে রাইট?”

রুদ্ধ কিছুটা জোর গলায় বললো,

“জ্বি নাহ।তুই সম্পূর্ণটাই তো আমার।তাই আমি যা বলবো তুই সেটাই করবি বুঝেছিস?”

প্রজ্ঞা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,

“এহহহ মামা বাড়ির আবদার নাকি হ্যা?”

“নারে,শশুর বাড়ির আবদার।”

রুদ্ধর এমন কথা শুনে প্রজ্ঞা মনে মনে হাসলো।

“আজ এতো হিংসা হচ্ছে কেন তোর?সেদিন তো বিয়েই করতে চাসনি আমায়।”

রুদ্ধ কিছুটা অভিযোগের সাথে বললো,

“বিয়ে করতে চাইনি।কারণ তখন তোর ও এই বিয়েতে মত ছিল না।কিন্তু এখন তো আমাদের বিয়ে হয়েই গেছে।তাই তুই সম্পূর্ণটাই আমার।শুধু এবং শুধুমাত্রই আমার।”

“আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে।এখন তো ছাড় আমাকে।”

“ছাড়ার জন্য ধরিনি।”

“তো এখন কি করবি শুনি একটু বল।”

রুদ্ধ প্রজ্ঞার হাত ছেড়ে দিয়ে কোমড় চেপে ধরে বলল,

“দেখতে চাস কি করবো?”

রুদ্ধর নিশ্বাস প্রজ্ঞার চোখে-মুখে আছড়ে পরছে।প্রজ্ঞা কোনো রকমে বলল,

“থাক বাবা দেখা লাগবে না আমার।এখন তুই আমাকে ছাড় প্লিজ।”

“আগে আমাকে তুমি করে বল।”

“ছোট থেকে তুই করে বলে এসেছি।এখন আবার তুমি করে বলতে হবে?”

“অবশ্যই বলতে হবে।কারণ আগে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।আর এখন আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে সাথে বর-বউ ও।”

“তাহলে আগে তুই তুমি করে বল।”

রুদ্ধ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আচমকাই বলে উঠলো,

“তুমি কি আমার স্বপ্নের প্রেয়সী হবে?”

প্রজ্ঞা প্রথমে চুপ করে থাকলেও পরে মাথা দুলিয়ে হ্যা বলে রুদ্ধর বুকে মুখ লুকালো।রুদ্ধ ও হালকা হেসে তার প্রেয়সীকে পরম আবেশে আগলে নিলো নিজের বাহুডোরে।

______________________

দেখতে দেখতে কেটে গেছে বেশ কয়েক মাস।এর মাঝেই রোহান আর প্রেমার প্রেমকাহিনী বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।প্রজ্ঞা আর রুদ্ধ বিয়ের পর বেশ অনেকটাই পাল্টে গেছে।একে-অপরকে সম্মান এবং ভালোবাসতে শিখেছে।কিন্তু ওদের দুজনের দুষ্টুমি ঠিক আগের মতোই আছে।সারাদিন দুজনের ভালোবাসাময় ঝগড়া দেখতে সবারই বেশ ভালো লাগে।

প্রজ্ঞা একদিন হঠাৎ করেই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি,দুহাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি,চোখে গাঢ় করে কাজল আর ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক দিয়ে রুদ্ধর সামনে গিয়ে হাজির হয় ঠিক প্রথম দিনের মতো।যেদিন ওরা ভালোবেসে একে-অপরের কাছে এসেছিল।রুদ্ধ অবাক হয়ে প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি ব্যাপার হুম?আজ এত সেজেগুজে ছাদে এসে বসে আছেন কেন ম্যাম?

প্রজ্ঞা লাজুক হেসে জবাব দিলো,

” সুখবর আছে স্যার!”

রুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

“কি সুখবর?”

প্রজ্ঞার মুখ মুহুর্তের মধ্যেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল।রুদ্ধ প্রজ্ঞার আর একটু কাছে যেতেই প্রজ্ঞা ওর হাতে থাকা একটা রিপোর্ট রুদ্ধকে দিলো।রুদ্ধ প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে রিপোর্ট টা খুলে অবাক হয়ে গেল।কারন এটা প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট।তাও পজিটিভ।রুদ্ধ খুশিতে প্রজ্ঞাক জরিয়ে ধরে বলল,

“এটা সত্যি?”

প্রজ্ঞা লাজুক হেসে উত্তর দিল,

“হুম”

রুদ্ধ ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না।ওও বাবা হতে চলেছে এটা ভেবেই ওর অন্য রকম ভালো লাগছে।

প্রজ্ঞা আর রুদ্ধ এই কথাটা সবাইকে জানাতেই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।রোহান আর প্রেমা ত এখন থেকেই বেবির জন্য এটা ওটা কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছে।কিন্তু প্রজ্ঞার প্রেগন্যান্সির কেবল চার মাস চলছে।পরিবারের প্রত্যেকটা লোকের মুখে হাসি দেখে প্রজ্ঞার নিজেরও অনেক ভালো লাগছে।

রুদ্ধ প্রজ্ঞাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“থ্যাংকস”

প্রজ্ঞা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“থ্যাংকস কেন?”

“আমাকে এত তারাতাড়ি বাবা হওয়ার সাধ উপলব্ধি করানোর জন্য।”

“তুমি সব সময় এমনই হাসিখুশি থাকো এটাই চাই আমি।”

“ভালবাসি প্রেয়সী।বড্ড বেশি ভালোবাসি।”

“আমিও আমার এই স্যারটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।”

“আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা যে কখন ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে তা বুঝতেই পারিনি।”

“এই ভালোবাসাটা যেন সব সময় থাকে।নয়তো লবণ,হলুদ ছাড়া এমনিই কাঁচা চিবিয়ে খাবো।”

“হ্যা তাই তো করবে।রাক্ষসী একটা।”

“আমার ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষটা শুধুই আমার।তাইএদিকে যে নজর দিবে সত্যি তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো আমি।”

“ওলে আমার রাক্ষসী টারে।আচ্ছা বাবা তোমার ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষটা শুধু তোমারই থাকবে।আর কারোর হবে না প্রমিস।”

কথাটা বলেই দুজন একে-অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।কি স্নিগ্ধ সেই হাসি!এই হাসিতে শুধু একরাশ ভালোবাসা আছে!আর চোখ গুলোতে আছে একে-অপরকে হারানোর এক তীব্র ভয়!

চলবে?

বিঃদ্রঃ আগামী পর্বেই গল্পের ইতি টানবো।স্যাড হবে নাকি হ্যাপি ইন্ডিং হবে গাইস?🤔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here