#উজানে_ফেরে_নদী

১২.

মেজাজটাই বিগড়ে গেল উজানের। এমন বোকামি সে করলো কিভাবে? আসলেই কারো নাম্বার কি কেউ কাউকে বলে ব্লক করে?
-কিরে কি হয়েছে?
-আর বলিস না। একটা নাম্বার থেকে এমন বিরক্ত করছে।
-কি করছে? কল?
-নাহ ম্যাসেজ।
-দেখি তো কি লিখেছে?
রনি চেয়ার টেনে বসে পড়লো। উজান ফোনটা এগিয়ে দিল।
-এটা কে রে ভাই?
-আমি কি করে বলবো?
-মেয়ে বলেই তো মনে হচ্ছে।
-তাতে আমার কি?
-আচ্ছা আমি দেখছি কার নাম্বার। এখন ওঠ।
-কেন?
-আরিফ বাড়ি থেকে খাবার এনেছে। ওর চাচী আর নদী এসেছে নাকি।
নদী নামটা শুনতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। এ জীবনে কি আর দেখা হবে না?
-আসবি এখন?
-চল।
তিনজনে মিলে নিমিষে সব খাবার শেষ করে ফেলল। হাঁসের মাংস আর চালের আটার রুটি।
-এত মজার হাঁসের মাংস অনেকদিন পর খেলামরে।
-ঠিক বলেছিস উজান।
-তোরা দুজন সামনের সপ্তাহে আমার বাসায় আসবি। তোদের দাওয়াত।
-মেনুতে এই হাঁসের মাংস থাকলে অবশ্যই আসবো।
রনির কথায় বাকি দুজন হেসে ওঠে।
-কাল আমি, হৃদি আর নদী মুভি দেখতে যাব। তোরা যাবি নাকি?
-যাওয়া যায়। তুই শো টাইম জানিয়ে দিস। এখন উঠি। না হলে চাকরী থাকবে না বলেই
রনি চলে গেল। তার নদীকে সে কিভাবে খুঁজে পাবে? মুভি দেখতে গেলে অবশ্য কনফার্ম হওয়া যাবে এই নদী তার নদী কি না?
-তুই কি চিন্তা করছিস? যাবি না?
-হ্যা যাবো । কখন যাবি জানিয়ে দিস।
-অবশ্যই।

জুম্মার নামায শেষে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করেই উজান রেডি হওয়া শুরু করলো। বিকাল চারটায় শো। রনি তাকে পিক করবে। এই সময়টা রাস্তা ফাঁকাই থাকে।
-এত সাজুগুজু করে কোথাও যাচ্ছিস ভাইয়া?
-মুভি দেখতে যাব। আর সাজের কি দেখলি?
-এত ফিটফাট হয়ে তো অফিসেও যাও না? ঘটনা কি?
-যত সব আজগুবি কথা।
-কোথায় যাও মুভি দেখতে? স্টার সিনেপ্লেক্স?
-হ্যাঁ।
-আমিও যাই? কয়েকটা জিনিস কিনবো।
উর্মিকে নিয়ে গেলে সব কিছু ভন্ডুল হয়ে যাবে। কিছুতেই ওর কথায় রাজি হওয়া যাবে না। কাটিয়ে দিতে হবে।
-আমি তো রনির সাথে যাব। বাইকে তিনজন বসা যাবে না।
-রনি ভাইকে যেতে বল। আমরা আলাদা যাই।
-আমি রনি আর আরিফ মুভি দেখতে যাচ্ছি। তুই তিনটা ছেলের মধ্যে কি করবি? আর আসতে আসতে তো রাত হবে। তোকে শপিংয়ে অন্যদিন নিয়ে যাব।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তবে কথাটা মনে থাকে যেন।
উর্মি চলে যেতেই ফোনটা বাজলো। রনির ফোন। এত তাড়াতাড়ি চলে এল কি করে? ব্যাটার বাইকে কি পাখা লাগানো নাকি?
-কইরে তুই?
-আসছি দোস্ত।
-তুই তো মেয়েদের চেয়েও বেশি সময় নিস।
-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নামছি।
মাথার চুলটা চিরুনী দিয়ে সে বেরিয়ে এল। এক সাথে দুই তিনটা সিঁড়ি টপকে নীচে এল। এসে দেখে রনি নেই। সাথে সাথেই ফোন দিল।
-কোথায় তুই? দেখছি না তো?
-আসতেছি দোস্ত। পাঁচ মিনিট লাগবে।
-শালা মিথ্যাবাদী।
-আমি তো বলি নাই আমি তোর বাড়ির সামনে।
-ফোন রাখ। আর তাড়াতাড়ি আয়। বেশি সময় নেই।

রনি পাক্কা দশ মিনিট পরে এল। উজান তখন বিরক্ত হয়ে বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে বসে আছে।
-এই তোর পাঁচ মিনিট?
-রাস্তা কাটতেছে জানিসই তো। কত কষ্ট করে এলাম। উঠে পড়। আরিফরা পৌছে গেছে।

১৩.

অনেকদিন পর ঘুরতে বাহির হয়ে বেশ ভালই লাগছে নদীর। যদিও সে আসতে চাচ্ছিল না। সব কিছুই কেমন বদলে গেছে। সে একা বাহির হলে হয়তো কিছু চিনতেই পারতো না। তারা আট তলায় উঠে আসতেই দেখলো টিকেট কাটার জন্য বিশাল লাইন। আরিফ চিন্তিত হল। পাঁচটা টিকেট পাওয়া যাবে তো? এমন হবে জানলে তো আগেই টিকেট কেটে ফেলতো। ওদের দুজনকে একপাশে থাকতে বলে আরিফ টিকেট কাটার লাইনে দাঁড়ালো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিল। মনে হয় না চারটার শো এর টিকেট পাবে। রনি আর উজান এখনো আসছে না কেন?

ভীড়ের কারনে দুই বোন সরে এসে একটা পিলারের কাছে দাঁড়ালো। এখান থেকে একদম নীচের ফ্লোর পর্যন্ত দেখা যায়।
-আরে নদী? এতদিন কোথায় ছিলি? তোকে অনেকদিন থেকে খুঁজতেছি

রাফাতকে দেখেই ভয় আর আতঙ্কে নদীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। নদীর চেহারা দেখে হৃদি ভয় পেয়ে যায়। সে পেছেনে ফেরে। তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে তার পিছনে। যে কথা বলছিল সে এগিয়ে আসে।
-কে আপনি?
-আমি নদীর পরিচিত। ও তো চেনে আমাকে। নদীকেই জিজ্ঞেস কর না কেন।

নদী এর মধ্যেই মেঝেতে বসে পড়েছে। তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সে জোরে জোরে শ্বাস নেবার চেষ্টা করে। সব কিছু অন্ধকার হতে শুরু করলো। হৃদি কোনো দিকে না তাকিয়ে আরিফকে ডাকার জন্য ছুটে গেল। কয়েকজন এগিয়ে এল সাহায্য করতে।

নদীর অবস্হা দেখে রাফাত অবাক হয়ে যায়। একটু আগেই তো ভালো ছিল। দুজনে বেশ হেসে হেসে গল্প করছিল। তাকে দেখে কি হল? ওর বন্ধুরা ওকে টেনে নিয়ে আসে সেখান থেকে। বিপদে পড়ে যেতে পারে।

আরিফ এসেই নদীকে কোলে তুলে নেয়। কয়েকজন সাহায্য করে ওদের ভীড় সরিয়ে দিতে। আরিফের মাথা কাজ করছে না। হৃদি ওকে টেন নিয়ে আসে বাইরে। একজন সিনএনজি চালককে অনুরোধ করে স্কয়ার হাসপাতালে তাদের নামিয়ে দিতে। ওদের দুজনকে বসিয়ে আরিফ নিজে উঠে বসে সিএনজিতে। নদীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে হৃদিকে ওর কাছে রেখে সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। চাচীকে নিয়ে আসতে হবে।

উজান আর রনি বসুন্ধরা সিটি মলের পুরো আট তলার সবখানে খুঁজে ফেলল। ওরা কোথাও নেই। ওরা পৌঁছেই আরিফকে ফোন করেছে। কয়েকবার ফোন করবার পরেও যখন আরিফ ফোন ধরলো না তখন তারা উপরে উঠে এসেছে।
-কি হল বলতো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
-কি করে বুঝবো?
-চল তাহলে চলে যাই। আর তো কিছু করার নেই।

দুজনে মিলে এস্কিলেটরের সামনে আসতেই রাফাতের মুখোমুখি পড়ে গেল। উজান দেখেও না দেখার ভান করে নামতে যাবে তখন রাফাত ওর হাতটা ধরল।
-আরে বড় ভাই আপনি? নদীর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন নাকি?
-নদী? কোথায় সে?
-এসেছিল তো এখানেই। আমার সাথে দেখা হতেই কেমন যেন হয়ে গেল। মনে হল অসুস্হ অনেক। ওর সাথের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেছে মনে হয়।
-কোন হাসপাতাল তুমি জান?
-না তো।
-কে ছিল সাথে?
-আমি তো চিনি না।
-অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
-সমস্যা নেই। ওর সাথে দেখা হলে বলবেন আমি অনেক সরি।
-সরি কেন?
-অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। সেটা বলতে অনেক সময় লেগে যাবে। অন্য কোনো সময় বলবো। আমার কার্ডটা রাখেন।
উজান হাত বাড়িত ভিজিটিং কার্ডটা নিল। ওরা চলে গেল সাথে সাথেই। আরিফকে আবার ফোন দিল।
-হ্যা উজান বল?
-কই তোরা?
-নদী অসুস্হ হয়ে পড়েছে খুব। আমি ওদেরকে স্কয়ারে রেখে এসেছি। চাচীকে নিতে বাসায় এসেছি।
-আচ্ছা আমরা আসছি।
এস্কিলেটরের কাছে থেকে রনিকে টেনে নিয়ে সে লিফটের দিকে ছুটলো। সময় নষ্ট করা যাবে না।

চলবে…

এমি।

*আগামী পর্বে সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here