#আপনাকেই_চাই
#Sumaiya_Moni
#পর্ব_০৪
________________________
তিনদিন কেঁটে যায়। অহান এই তিন দিনে ইহিতাকে ওঁর ফাঁদে ফেলতে পারেনি। কোনো না কোনো ভাবেই ইহিতা অহানের ফাঁদ ধরে ফেলেছে। অহান আর ইহিতার এমন লুকোচুরি খেলা বেশ ভালোই চলেছে এই তিনদিনে।শেষে অহান হার মেনে নেয়। আজ অহানের অফ ডে। তাই সে ইহিতাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়।তাও ওর আম্মুর কথায়। অহান রাজি ছিল না। চায়নার একটি বড়ো পার্কে আসে ওঁরা দু’জন। ইহিতা সেখানকার বাকি মানুষদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারো নাক বোঁচা,কারো চোখের নিচের অংশ ফুলানো। মানে চায়নাদের দেখতে যেমন হয় আরকি। তাঁদের ভাষা শুনে ইহিতা কিছুই বুঝতে পারে না। কিন্তু অহান বুঝতে পারে। এবং কথাও বলতে পারে।
ইহিতা অহানকে নিয়ে একটি দোকানে আসে। সেখানে বিভিন্ন রঙের গোল গোল ললিপপ বিক্রি করছে। ইহিতা অহানকে কিনে দিতে বললে। অহান প্রথমে মুখ গুরিয়ে রাখলেও পরে কিনে দেয়। ইহিতা নিজের ও অহানের জন্য ললিপপ নেই। মজা করে ইহিতা ললিপপ খেলেও অহান হাতে নিয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে হাঁটছে। ইহিতা,অহান একটি বেঞ্চে বসে। অহান মুখ ভার করে রাখে আর ইহিতা ললিপপ খেতে থাকে। তখনি ইহিতার নজর কিছু বাচ্চাদের উপর পড়ে। তারা কানামাচি খেলছিল। ইহিতা অহানের হাতে ওঁর খাওয়া ললিপপ টা ধরিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের কাছে যায়। অহান বিরক্ত ও রাগ নিয়ে ইহিতার খাওয়া ললিপপ টার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এটা আমার হাতে দেওয়ার কি হলো।ধ্যাৎ!” বলেই ফেলে দিতে নিলে পরক্ষণেই হাতেই রাখে।বলে,
-“ফেলে দিলে যদি আবার আম্মুর কাছে নালিশ দেয়। বলা তো যায় না।”

বিরক্ত হয়ে হাতেই ধরে রাখে ললিপপ। অনেকক্ষণ পর ইহিতা ফিরে এসে অহানের হাত থেকে ললিপপ নিয়ে খেতে যাবে তখন অহান সেটা ফেলে দেয়। ইহিতা রাগ নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে অহানের দিকে তাকাতেই অহান বলে,
-“আসলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ললিপপ টা খোলা ছিল। তাই ফেলে দিয়েছি। আপনি আমারটা নিন।” বলেই অহান ওঁর ললিপপটি ইহিতার দিকে এগিয়ে দেয়।

ইহিতা অহানের কথা শুনে ঘাড় হালকা কাত করে বলে,
-“বাব্বাহ! যে কি না এই তিনদিন আমার ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে,আজ সে আমাকে তাঁর নিজের ললিপপ দিচ্ছে।”

অহান চট করে ঘাড় গুরিয়ে নেয়। মনে মনে বলে,
-“শীট! ইহিতা এটা জানলো কিভাবে।” তারপর পরক্ষণেই ঘাড় ঘুরিয়ে কথা পাল্টে বলে,
-“না খেলে আমিই খেয়ে নিচ্ছি।”

কথাটা শুনেই ইহিতা চট করে অহানের হাত থেকে ললিপপ নিয়ে অহানের গাল টেনে টেনে বলে,
-“না,না পিচ্চি অহান দিয়েছে আর আমি খাব না। ধন্যবাদ অহান।” বলেই উঠে চলে যায় ইহিতা।

অহান গালে দু হাত রেখে ইহিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,
-“আমার গাল এবার ঝুলেই যাবে। এ কয়দিনে যা টেনেছে। কথায় কথায় খালি গাল টানে। ফাজিল একটা।”

অনেকক্ষণ অহান ইহিতা সেখানে বসে সময় কাঁটায়। ইহিতার মনটা আজ বেশ ফুলফুরা হয়ে গেছে। অনেকদিন পর এতটা খুশি হয়েছে সে। সেখান থেকে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশেই ইহিতা একজন ছোট চার-পাঁচ বছরের মেয়ে ও অন্ধ একটি বৃদ্ধ লোককে দেখতে পায়। সামনে একটি থালা রেখে ভিক্ষা চাইছে তারা। ইহিতার খুব খারাপ লাগে। অহানকে টেনে তাঁদের সামনে নিয়ে এসে বলে,
-“অহান আমাকে কিছু টাকা দেও।”

-“এই ছোট লোকদের দিবেন।” আঙ্গুল দিয়ে তাঁদের দেখিয়ে বলে।

-“মুখটা বন্ধ রাখো আর টাকা দেও।”

অহান টাকা না দিয়ে তাঁদের সামনে রাখা থালায় লাথি মেরে দূরে ফেলে দেয়।রেগে জোরে জোরে বলে,
-“এদের মতো ছোটো লোকদের জন্য আমি টাকা উপার্জন করি না। আপনার দিতে মন চাইলে আপনি নিজে দিন।” বলেই চলে যেতে নিলে ইহিতা দাঁত কিড়মিড় করে অহানের শার্টের কলার ধরে টেনে ওর সামনে দাঁড় করায় দাঁতমুখ খিঁচে বলে,
-“ছোট লোক তারা নয়।ছোট লোক তুমি, তোমার মন। তুমি কী পশু? নিশ্চয়ই না! এদের মতোই সাধারণ মানুষ। যারা মানুষকে দান করে। মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যায়। তারাই বড় মনের মানুষ। তোমার মতো জঘন্য লোকরা কখনোই বড়ো মনের মানুষ ও বড়লোক হতে পারে না। ভুলে যেও না তুমি একজন মুসলিম ঘরের ছেলে। তোমার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে অনেক আগেই। মানুষকে ভালোবাসতে শিখো। দানশীল হও। আল্লাহকে ভয় করতে শিখো। সব সময় গরিবের থালে লাথি মেরে তাঁদের অপমান করে নিজেকে বড় মনে কোরো না। তুমি সব সময় আল্লাহর কাছে ছোটই থাকবে। আর আমি এসব লোকদেরই ছোটলোক বলে মনে করি।”কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলেই ইহিতা সেই প্লেট ও টাকা গুলো কুঁড়িয়ে তাঁদের সামনে রেখে দেয়। সঙ্গে কিছু টাকাও তাঁদের প্লেটে দিয়ে অহানকে রেখেই আগে আগে হাঁটতে লাগলো।

অহান একি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ আশ্চর্য হচ্ছে সে। ইহিতার লাস্টের কথা শুনে অহান এখনো ঘোরের মাঝে আছে। ওঁর মাথায় কাজ করছে না ইহিতা কি করে জানলো সব সময় তাঁদের সাথে এমন আচরণ করে। গরিব মানুষদের অপমান করে। সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কে ওঁর বিষয় সব কিছু ইহিতাকে বলল। কে?
অহান সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে একবার তাঁদের দিকে তাকায়। তারপর চোখ সরিয়ে চলে যায়। ইহিতা রোডের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। অহান ইহিতাকে দেখতে পেয়ে সেখান থেকে টেক্সি নেয়। অহান আগে টেক্সিতে উঠে বসে। ইহিতা ওঁর পাশে না বসে ড্রাইভারের সিটে বসে৷ এতে অহান ও ড্রাইভার কিছুটা অবাক হয়। তবুও তারা কিছু বলে না চুপ করে থাকে। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে থাকে। অহান বুঝতে পেরেছে ইহিতা বেশ রেগে আছে ওঁর উপর।

ওঁরা পৌঁছে যায়। অহান রিফাদের ফ্ল্যাটে আসে। রাগী ভাব নিয়ে সোফায় চুপ করে বসে থাকে। রিফাত অহানের চেহারায় রাগের আভা দেখে ওঁর পাশে বসে বলে,
-“কিছু হয়েছে কী?”

অহান রাগী কন্ঠে তীক্ষ্ণ নজরে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বিয়ার আছে?”

-“না,জানিস তো আমি এসব খাই না।”

অহান রিফাতের উপর থেকে নজর সরিয়ে নেয়। রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর কিছু না বলেই ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যায়। বাসায় না গিয়ে বেরিয়ে আসে বাহিরে। জোরে জোরে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকে। সামনেই একটি বার ছিল। ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইহিতার কথা মনে করে থেমে যায়। রাগে চোখ বন্ধ করে সামনে থাকা দেয়ালে ঘুষি মারে। তারপর আবার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে।

সারাদিনে অহান বাসায় যায়নি। একটি পার্কে বসে সময় কাঁটিয়েছে। এখন রাত নয়টা বাজে।
ইহিতা লাইফে আসার পর জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। না পারছি ঠিক মতো বাঁচতে,না পারছি ঠিক মতো চলতে। সব সময় তাঁর কথা অনুযায়ী চলতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে পাগল হয়ে যাব।
কথা গুলো মনে মনে ভাবছে আর হাঁটছে অহান। হঠাৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো। সাথে জোরে বাতাসও বইতে শুরু করেছে। মনে হয় খুব জোরে বৃষ্টি হবে। কিছু দূর যেতেই খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়। রাস্তায় যে মানুষজন ছিল তারা দৌড়াতে শুরু করে। কেউ কেউ ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ গাছের নিচে। বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছে তারা। কিন্তু অহান এসব তোয়াক্কা না করে ধীরে পারে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মনে আছে এক রাশ ক্রোধ। সেটা শুধু ইহিতাকে নিয়েই। আর থাকবেই না কেন!
যে ছেলে অফিসের ভেতরে ও বাহিরে মেয়েদের সাথে ফ্রার্ট করতো। সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করতো। গরিব অসহায় মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। সুযোগ পেলে মেয়েদের সাথে রাত কাঁটাত। তার কি আর এমন লাইফ ভালো লাগে। সে নিশ্চয়ই চাইবে না তার জীবনটা এমনি থাকুক সব সময়। সে তো তার আগের লাইফে যেতে চায়। এমন বোরিং লাইফ সে চায় না। ভীষণ রাগ হয় তার। তার ধারণা আশেপাশের মানুষ এখন তাকে দেখে হেসে মজা নিচ্ছে। কানাঘুষা করছে। যেগুলো অহানের কাছে খুব বিষাক্ত মনে হচ্ছে।

বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এগারোটার দিকে বাসায় আসে অহান। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় ইহিতা।অহানকে ভেজা অবস্থায় দেখে ইহিতা ভারী কন্ঠে প্রশ্ন করে।
-“এতক্ষণ কোথায় ছিলে? ভিজলে কেন?”

ইহিতার কথা শুনে অহান ইহিতার দিকে তাকায়।কোনো কারণে অহানের চোখের ভেতরটা লাল হয়ে আছে। অহান গম্ভীরমুখে তাকিয়ে আছে। অহানের এমন চাহনি দেখে ইহিতা পথ ছেড়ে দেয়। অহান দ্রুত রুমে চলে যায়। ইহিতা দরজা লাগিয়ে দেয়। অহানের এমন চাহনি ও অবস্থা দেখে ইহিতাকে বেশ ভাবাচ্ছে। ইহিতা খাবার ভেড়ে অহানের জন্য বসে রয়। কিন্তু অহান রুম থেকে বের হয় না। ইহিতার যতটুকু মনে পড়ে বিকেলেও তেমন কিছু খায়নি অহান। ইহিতা অহানের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু অহান রুম থেকে বের হচ্ছে না ।
অহানের রুমে যেতে চেয়েও পিছু পা হচ্ছে ইহিতা বার বার। তবুও,যেতে হবেই।
ইহিতা অহানের রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে আসে। ভেজা কাপড়চোপড় নিয়ে গুটিশুটি মেরে বিছানায় শুয়ে আছে অহান। ইহিতা দ্রুত অহানের কাছে যায়। কপালে গলায় হাত রাখতেই বুঝতে পারে অহানের শরীর গরম। জ্বর এসেছে। ইহিতার বুঝতে বাকি থাকে না। অহানের বৃষ্টিতে ভেজার ফলে জ্বর এসেছে। অহান চোখ বন্ধ করে শীতে কাঁপছে।এমন অবস্থা দেখে ইহিতা কি করবে বুঝতে পারছে না। এখনি অহানের ভেজা কাপড়চোপড় পাল্টাতে হবে।কিন্তু ইহিতা এটা করতে চাইছে না। পরক্ষণেই ইহিতার মনে পড়ে।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To………..

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here