অরুর_সংসার
পর্ব-২৮
-নিশিকথা
_________________
-ভাবী চল তোমাদের বাসায় দিয়ে আসি
– …………………
-ভাবী???
-হু
-চল তোমাদের বাসায় দিয়ে আসি।এই অবস্থায় এখানে থাকতে হবে না।
-বাবা আর আপুদের দিয়ে আসেন বাসায় । আমি যাবো না
-না ভাবী প্লিজ এমন জেদ করবেন না।আর এখনো তো অয়নকে কেবিনে দেওয়া হয় নি।দেখা করতে পারবেন না এখন।আর আমি তো থাকবোই
-আমিও থাকবো।
(সবাই অনেক বলার পর ও অরু হাসপাতাল থেকে এক পা ও নড়লো না….)
.
.
অয়নকে কেবিনে সিফট করার পর এক এক করে সবাই দেখা করে গেল।অয়নের নজর কেন জানি অরুকে খুঁজছে….
অয়ন বলল……
-এই সাদ কবে বাড়ী যাবো রে
-মানে কি! এই অবস্থায় বাড়ী…. শখ কত।এখনো ১সপ্তাহ থাকতে হবে এখানে
-বা*
– হা হা।এখন বেটার লাগছে তো??
-হয় সেই বেটার। হাত একটা ভাঙ্গা, পা একটা… too Much pain…. আর কোন দিন নিজের পায়ে দাড়াতে পারবো কি না…? Don’t know….!
-কেন পারবি না দোস্ত। বেস্ট ট্রিটমেন্ট করানো হচ্ছে এখানে।
-ছাতা ট্রিটমেন্ট…! আমি এইখানের সি.এফ.ও। এখানের ট্রিটমেন্ট মানে বিল বাড়ানো I know
-হয় একারনেই তোর কথা মত মৌ কে ডঃফারহানর চেম্বারে দেখাই।ভাবীকে কোথায় দেখাচ্ছিস??
-ডঃজয়ার কাছে ফাস্ট কনফার্ম হতে দেখিয়েছিলাম। আরক দেখানো হয় নি
– কি বলিস….??
(সাদ অয়নের কাছে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা শুনে বেশ বোল্ড ই হয়েছে…সাদের ফোন আসার সাথে সাথে সাদ কথা বলতে বলতে বের হয়ে গেল……)
<অয়নের ভাল লাগছে না......অরু আসলোই না একটাবার দেখতে ???....সব মেয়েরাই এক।
অরু বলেছিল স্বামীস্ত্রির সম্পর্ক মানে.............১)ভালবাসার সম্পর্ক....২)সম্মানের সম্পর্ক আর ৩) ... আস্থা, ভরসার সম্পর্ক যে যাই হোক ওই ২ ব্যক্তি একে অপরকে বিপদের সময় ছেড়ে চলে যাবে না....... >
অয়ন অরুর এমন কথার প্রতিউত্তরে বলেছিল যা তার প্রথম দুইটা অয়নের ক্ষেত্রে ভুল প্রমান হলেও অরুর ক্ষেত্রে হয় নি….. অরু তাকে ভালবাসা, সম্মান দুইটাই দিয়েছে তবে আজ??? ৩য় কথাটা অয়নের ঠিকই প্রমাণিত হল তাহলে …….????
অয়ন তাচ্ছিল্যের হাসি দিল আর বলল….আমি কি অরুকে কাছে পাবার আশা করেছিলাম….????
#LOL
.
.
রাতের দিকে অয়ন ঘুমিয়েই ছিল…… হটাৎ খুব পরিচিত স্মেল পেল সে….হ্যা এটা অরুর স্মেল……. অরুর শরীরের এই স্মেল ই তো অয়ন কে মাতাল করে দেয়…..
অয়ন হালকা চোখ খুলে তাকাতেই দেখে অরু খুব মন দিয়ে প্রেস্ক্রিপশন দেখছে আর ওষুধ মিলাচ্ছে….
-ভাবী
-হু
-এবার তো একটু বাড়ী গিয়ে কিছু খেয়ে নেও। রেস্ট করে আসো। সারা রাত দিন তো ঠাঁয় দাড়িয়ে ছিলে আই সি ইউ এর সামনে….. খাও নি ঘুমাও নি এভাবে তো তুমি সিক হয়ে পরবে…. আর তুমি একা না এখন তোমার মাঝে তো আমদের চাম্প আছে তার কথা ভাববে না ভাবী?
-ভাইয়া আপনাদের চাম্প ত তার আব্বুকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না
-না ভাবী প্লিজ! অনতত কিছু সময় এর জন্য গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আস।আমি আছি অয়নের সাথে।
-হু।ভাইয়া আমি না আসা পর্যন্ত উনার পাশেই থেকেন প্লিজ।কখন কি লেগে বসে।
-ওকে
( অরু চলে গেল।অয়ন অরুকে আবার ভুল বুঝেছিল। অয়নের কেন জানি খুব মায়া হল মেয়েটার প্রতি। চোখ দিয়ে ২ ফোটা পানি অজান্তেই বের হয়ে এলো। অরু কি তাহলে নিজের বলা ৩য় কথা টাও প্রমান করে ফেলতে যাচ্ছে????
.
.
অরু বাসায় গিয়ে গোছল করে একটা হলুক রং এর ছাপার ফ্রোক পরে নিল, নিচে স্কার্ট…. ওরনা টা গায়ে দিতে দিতে দেখলো তার হাত খালি। দ্রুত অয়নের দেওয়া সোনার চুরি টা পরে নিল… আজকাল অরু সুতির নরম কাপড়ের ঢোলা ফ্রক আর স্কার্ট পরে …….. অয়ন ই ৭সেট এই ধরনের ড্রেস কিনে দিয়েছিল অরুকে যাতে কষ্ট না হয় অরুর……….)
রাত ১০ টায় অরু হাসপাতালে গেল আবার।
অয়ন চোখ বন্ধ করে আছে… সাদ টিভি দেখছে।
-ভাইয়া
-ইয়েস
-আপনি এবার বাড়ী যান।আমি আছি। মৌ আপি বাসায় একা
-কিন্তু তুমি রাতে একা সামলাতে পারবে?
-হুম পারবো
-ওকে। কিছু লাগলে ফোন দিবা
-জ্বি
– আসি দোস্ত
-হুম
অরু অয়নের কাছে গিয়ে বসলো এক বাটি সুপ নিয়ে। নিজের হাতে খাইয়ে দিল…..
সময় এভাবেই যাচ্ছিল। ৫দিন মত অয়ন হাসপাতালে ছিল। তাও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয় নি । হাত পা নাড়াতেই পারছিল না।অয়ন ডঃ শুশান্ত কে বলেছে একজন ছেলে অয়নের বাসায় পাঠানোর জন্য যে অয়নের দেখাশোনা করবে… অয়ন গাড়ীতে বসলো । অরু বসতে যাবে তখন ছেলেটা গাড়ির সামনে এসে অরুকে বলল…
-মেডাম আমি রাজু। ডঃ শুশান্ত আমাকে ঠিক করেছেন আপনার দেখা শুনার জন্য…
-ওহ।দরকার নেই আপনার। জান আপনি
-কেন??
-কেননা আমি বলছি। আমার স্বামি আমি নিকে দেখাশুনা করবো।
-আচ্ছা
অরু গাড়ীতে অয়নের পাশে বসতেই অয়ন বলল…
-কি হল? ছেলেটা আসলো না যে?
-আমি মানা করেছি
-কেন???
-কারন আমি এনাফ আপনার সেবা করার জন্য। বাইরের কাউকে দরকার নেই
-তুমি বেসি বুঝো না অরু
-বললাম তো। এটাই ফাইনাল….
(অয়ন আর কিছু বলে নি সেদিন। ইদানিং অয়ন অরুর সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলে না..অরুও বলে না..)
♥ইদানিং অরু বাচ্চার নাড়াচাড়া অনুভব করতে পারে….. অরুর মন টা ভরে যায় এটা ভেবে যে তাদের সন্তান তাকে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে………. ♥
এভাবেই ২৫ দিন চলে যায়। অরু অয়নের সেবায় কোন কমতি রাখে নি একয়দিনে। অয়ন এখন মোটামোটি সুস্থ।
দেখতে দেখতে আজ অরু আর অয়নের বিয়ের ১টা বছর পুরোন হতে যাচ্ছে। আর মাত্র ৫মিনিট বাকি ১২ টা বাজতে।
অরু তখন পাশে স্কাইচ এ বসে কুরআন হাতে নাজিরা তিলাওয়াত করছিল…..
হটাৎ……..
-অরু
-জ্বি
-এটা তোমার জন্য
-কি এটা??
-দেখো
(অরু বাক্স খুলে অবাক। চোখ ২ টা বন্ধ হয়ে গেল জ্বলন্ত হীরার উজ্জ্বলতায়…. বক্স টায় হীরার সলিডার কানের টপ আর লকেট ছিল, চেইন টা প্লাটিনামের, আর ২ টা প্লাটিনামের চুরির উপর হীরার পাথর বসানো….
অসাধারন চয়েজ অয়নের…..)
-কেমন লাগলো??
-এটা তো অনেক দামী
-তো? ♥ Happy Anniversary ♥ oru ♥
-Happy Anniversary
তবে এতে খরচ করা আপনার উচিৎ হয় নি
-কেন??
-এত দামী জিনিস!! এমনিই আপনার এই কিছুদিনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। তার উপর আবার এসব।
-পছন্দ হয় নি??
-না হওয়ার মত কথা না! অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।
-তবে????
-আমি তো আগে কখনো এসব চোখে দেখি নি…তাই আমার কাছে এসব বিলাসিতা। ওই বাড়ীতে খাবার ই ঠিকমত জুটতো না।নতুন কাপড় কোনদিন পাই নি। এখানে এসে আপনি অনেক দিয়েছেন.!
(অয়ন অরুর কথা শুনে অবাক। অরুর জায়গা অন্য কোন মেয়ে থাকলে এমন উপহার পেয়ে আকাশে উড়তো….. সত্যি অরু আলাদা…)
-থাক পুরানো কথা অরু।আসো পরিয়ে দেই
(অয়ন অরুকে পরাতে যেয়ে হাতের ব্যাথাহ আহ করে উঠলো….)
-লেগেছে..?? ইশ আপনি হুট করে হাত টা কেন উঠাতে গেলেন। আমি কিছু বলার আগেই….! ইশ ব্যাথা পেলেন….
-হুম ভুলে গেছিলাম যে আমি এখন অক্ষম
-ছি এমন বলে না। আপনি খুব জলদি সুস্থ হয়ে যাবেন… দেখেন
-হুম।
-সকালে হাত,পায়ের কি একটা খুলতে যেতে হবে না আপনার??
-হু
– তারপর আপনি হাটতে পারবেন ঠিক মত তাই না
-আশা করা যায়…….
………
…………….
………
ডঃফাইয়াজ অয়নের পায়ের আর হাতের প্লাস্টার খুলে দিল। কিন্তু তাও অয়ন হাটতে পারছে না…… বাম হাত ও নাড়াতে পারছে না……
ডাক্তার অনেক অবাক হয়ে গেল…… এমন তো হবার কথা না।এক্স-রে রিপোর্ট অয়নের পুরো নরমাল কোন ডিফেক্ট নেই।
বারবার করে চেক করলো ডঃফাইয়াজ। ডঃশুশান্ত ও ছিল। কেউ ই বুঝতে পারছিল না যে কেন তাও অয়ন হাটতে পারছে না বা হাত নাড়াতে পারছে না…
অয়ন কেবিনে আধাশোয়া হয়ে আছে….
ডঃ ফাইয়াজ কেবিনে ঢুকতে যাবে অরু বের হল।
-কি হয়েছে ডাক্তার?? উনি এখনো হাটতে পারছেন না কেন?? হাত নাড়াতে পারছেন না কেন?? আপনি তো বলেছিলেন উনি আজকের পর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবেন …. তাহলে?? উনার রিপোর্ট ও তো নরমাল বলেছিলেন……
-রিপোর্ট এখনো নরমাল ই দেখাচ্ছে… কিন্তু!!!!
-কিন্তু কি ডাক্তার??
-আমার মনে হচ্ছে অয়ন স্যার আর কোন দিন হাটতে পারবে না…….
চলবে……..