#অভিশপ্ত_জীবন
পর্ব ১১
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

জমিতে দেওয়া অনেক রকম কীটনাশক বাড়িতে সব সময় থাকে, আমি সেগুলো থেকে এক বোতল নিয়ে আম বাগানের শেষ প্রান্তে চলে যায়। বি/ষ খাওয়ার পরে ছটফট করতে লাগলে যেন কেউ দেখতে না পায়।বুকের ভেতর হার্টবিট এর ধকধক শব্দ বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে । পৃথিবীর মায়া অদ্ভুত, বারবার ইচ্ছে করছে এমনটা না করতে। কিন্তু এইভাবে অন্যের ঘাড়ে চেপে আর কত,, অন্য ৮/১০ জন মেয়ের মতো আমার জীবন না। হাটতে হাটতে বাগানের শেষে ঝোপের পাশে বসেছি। জীবনের ব্যাথা-কাতুর পরিত্যক্ত অতীত গুলো কে মনে করছি, যেন আত্মহত্যার মতো পাপ করার সাহস পায়। না আর দেরি করা যাবে না, বুকে সাহস এনে একবারে বোতলের সব বি/ষ খেলেই সবার অশান্তি দূর হয়ে যাবে। হয়তো সবাই কয়েকদিন কান্নাকাটি করবে কিন্তু কালের বিবর্তনে সবাই দিব্বি আমাকে ভুলে যাবে।

বাড়ির ভিতর থেকে এখনো কোলাহল শোনা যাচ্ছে। এটাই শেষ কোলাহল আমাকে নিয়ে,, দম বন্ধ করে বোতলের মুখ খুলে এক সাথে সব গুলো বি/ষ ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম। নিঃশ্বাস ফেলতেই কেমন বিশ্রী গন্ধ লাগছে। বোতল টা একটু দূরে ফেলে দিলাম। শুধু গন্ধ লাগছে অন্য তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে কি আমি ভুল ঔষধ খেলাম। এটা খেলে কি মানুষ মরে না? এখন যদি আমি না মরি তাহলে তো নতুন কেলেঙ্কারি সৃষ্টি হবে। দৌড়ে আবারও বোতলের কাছে গেলাম কি কি লেখা আছে দেখার জন্য। খুব ভালো করে স্বতর্কীকরণ দেওয়া আছে, “বিষ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন” এবং স্প্রে করার সময় কি কি সমস্যা হতে পারে সেইসব। আমি বোতলের বাকি দুই এক ফোটা যা ছিলো সেগুলো ও খেয়ে নিলাম।

ভাগ্য খারাপ হলে বি/ষ ও বেঈমানী করে,, হয়তো আরো কিছু বাকি আছে জীবনে তাই এমন হচ্ছে। আমি উঠে দাড়াতেই গন্ধে মুখ ভর্তি বমি উঠে এলো,, সাদা সাদা দুধের মতো কি সব মুখ দিয়ে বের হচ্ছে। বমি হওয়ার সময় বুঝতে পারলাম বুক এবং গলায় জ্বালা করছে। হয়তো বি/ষে কাজ শুরু হয়েছে। হ্যাঁ সত্যিই শুরু হয়েছে, পেটের নাড়ীভুঁড়ি মনে হচ্ছে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে ঝাঁঝালো নিঃশ্বাস বের হচ্ছে। বমির গন্ধের জন্য আবারও বমি পাচ্ছে,হাত পা কাপছে, উয়াক উয়াক করে বারবার শব্দ করছি কিন্তু আর বমি বের হচ্ছে না তবে মনে হচ্ছে এখনই বের হবে। যতই কষ্ট হোক জোরে চিৎকার বা বাড়ি যাবো না, এখানেই অভিশপ্ত জীবনের ইতি টানবো। উফফ কেমন যেন গোঙ্গানি আসছে ভেতর থেকে,, না চাইতেও এমন শব্দ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হঠাৎ আমাদের এলাকার একটা চাচা এইদিক দিয়ে যেতে গেলে আমার গোঙ্গানি শুনতে পায়। উনি আমার কাছে দৌড়ে এসে, সামনে এমন সাদা বমির দৃশ্য আর গন্ধ দেখে বুঝতে পারে আমি নিজের সাথে কি ঘটিয়েছি। উনি চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকে, সুমি বি/ষ খেয়েছে তোরা কে কোথায় আছিস এদিকে আয়, সুমি বি/ষ খেয়েছে। মাঠের মধ্যে থেকে দুজন লোক ছুটে আসে তারাও চিল্লাচিল্লি শুরু করে, এভাবে একে একে অনেক লোকজন আসছে,আব্বা মা পপি এসেই কান্না শুরু করেছে।

আমার বুকের ভেতর মনে হচ্ছে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এখন বাঁচার আগ্রহ জাগছে কিন্তু কিছু বলার মতো শক্তি নাই, মুখে শুধু উয়াক উয়াক শব্দ,, চাইলে ও কথা বলতে পারছি না। শামিম কোথায় থেকে যেন একটা ভ্যান গাড়ি নিয়ে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করে। চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখতে পাচ্ছি, কারো মুখই স্পষ্ট না, মা আমার মাথার কাছে বসে বুকের সাথে হেলান দিয়ে রাখে আমাকে, পিছনে পপি সহ কে কে যেন ভ্যান ঠেলে রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। শামিমের পায়ে সেন্ডেল নাই অন্য এক পায়ে আমার বমি গুলো লেগে আছে, হয়তো আমাকে ভ্যানে উঠাতে গিয়ে লেগেছে কিন্তু সেদিকে শামিমের খেয়াল নেই।

অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে, আমি মরতে চাইনা, আল্লাহ আমাকে বাচিঁয়ে দাও। বাঁচার আর্তনাদ বাড়ার সাথে সাথে মৃত্যুর ভয় ঘিরে নিয়েছে আমাকে। মনে মনে কালিমা পড়ছি সব সময়, মৃত্যুর সময় মুখে কালিমা আসলে নাকি জান্নাত পাওয়া যায়। আমি চাইনা মারা যেতে,, সবার এমন ভালোবাসা দেখে বুঝতে পারছি আমি আবারও অনেক বড় ভুল করছি। সবার কান্নার আওয়াজ আমার কানে আসছে কিন্তু ভয়ে চোখ খুলছি না, কারণ মৃত্যুর আগে নাকি আজরাইলকে দেখা যায়। আমি চাইনা উনাকে দেখতে , বাঁচতে চাই। সবাই তারাতাড়ি আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাক,হে আল্লাহ তুমি একবার আমার জীবন ভিক্ষা দাও। আমি আর কখনো আল্লাহর দেওয়া জীবন কে নিজ হাতে শেষ করতে চাইবো না।

আমাকে নিয়ে ডাক্তারের বাড়িতে আসছে, উনি বি/ষ খাওয়া রোগীর চিকিৎসা করেন শুধু। আমি মায়ের হাত নিজের শেষ শক্তি দিয়ে ধরে আছি, শামিম কোলে করে ভ্যান থেকে নামিয়ে, পা নিচে দিয়ে বারান্দার খুটি এবং শামিমের বুকের সাথে আমাকে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। কি যেন দিয়ে মুখ হা করিয়ে অনেক বড় পাইপ মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। আমার কাছে মানে হচ্ছে উত্তপ্ত লোহার শিক দেওয়া আছে গলার ভেতর। ডাক্তার হালকা কুসুম গরম পানি ঢেলে দিচ্ছে আর কিছুক্ষণ পরপরই পাইপ দিয়ে ওয়াশ করে করে বের করছে। কেন যেন ডাক্তার কে আমার আজরাইল মনে হচ্ছে।

সবাই মনে করে মৃত্যু খুব সহজ কিন্তু আল্লাহর দেওয়া জীবন কে নষ্ট করা এতোটাও সহজ ব্যাপার না। হয়তো আল্লাহ এমন কঠিন শাস্তি দেন তার নিয়ামত কে অগ্রাহ্য করার জন্য।

না এখন আর পানির সাথে সাদা ওইসব বের হচ্ছে না। কি কি সব ইঞ্জেকশন দিলেন এবং একটা স্যালাইন দিলেন। আগামী দুইদিন আমাকে কিছু খেতে দিবেন না। ডাক্তারের বাড়িতে এমন ক্রিটিকাল রোগী রাখার জন্য আলাদা ঘরে ৩ টা বেড রাখা আছে। আমাকে ওখানে দুই দিন রাখবেন তারপর রিলিজ দিবেন। মনে মনে অনেক আগেই তওবা করেছি, জীবনে যতই কষ্ট আসুক আর কখনো এমন সিদ্ধান্ত নিবো না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন উনিই আবার ফিরিয়ে নিবেন মাঝখানে থেকে বান্দার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া আল্লাহ কে অবমাননা করা।

( প্রিয় বন্ধুরা,, আমার কিন্তু বিষ খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই,,আমি একবার বিষ খাওয়া রোগীকে দেখেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই লিখলাম)

বাড়িতে আসার পরে সব কিছু স্বাভাবিক। আর ঝামেলা নেই আপাতত। কিন্তু সবার সাথে কথা বলতে বা মিশতে লজ্জা করছে,মানিয়ে নিতে হালকা সময় লাগবে। নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে পার হলো আরো কিছু দিন। কোন বাবা মা বা ভাই চাইবে না তার মেয়ে বা বোন কে বাবার বাড়িতে রাখতে। হয়তো দুই চার বছর পরে দুষ্টু মানুষের খারাপ নজর বা আবারও সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হবে এই আশংকায় থাকেন তারা।আর মেয়ে জাতির নিরাপদ স্থান হলো স্বামীর বাড়ি। নিজেকে দিনে দিনে প্রস্তুত করেছি নতুন সংসার করার জন্য মানিয়ে নিতে। এদিক সেদিক থেকে বিভিন্ন বিয়ের প্রস্তাব আসে এখন। পাত্র অবশ্য বউ মারা যাওয়া, তালাক দেওয়া বা দ্বিতীয় বউ করবে এমন। ঠিক এমনই একটা প্রস্তাব এসেছে আজ। পাত্রের আগের বউ নাকি বাড়ির পাশে কসমেটিকস এর দোকানদারের সাথে পালিয়ে গেছে। তাদের ৭ বছর এবং ৩ বছরের দুটো মেয়ে আছে। ভাবছি কিভাবে একটা মেয়ে স্বামী সন্তান রেখে অন্য কারো সাথে পালাতে পারে। আসলে কি তারা মেয়ে নাকি মেয়ে জাতির কলঙ্ক।

আমাকে দেখতে আসা লোকজনের মধ্যে থেকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, ওখানে কতদিন সংসার করেছি??

উনার কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম।আমি বিনয়ী সুরে বললাম,,,

চলবে,,,

ছোট করে দেওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। সকলের অনুরোধে সামান্য সময় বের করে লিখলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here