#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ৬
সুরমা

অবাক রুমে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে অনুর অনেকগুলো কল। অনুকে কখন থেকে কল করা হয়নি। অনু নিশ্চয় অভিমান করেছে। এরকম তো আগে কখনও হয়নি।

কিন্তু অনু যদি সব জানতো নিশ্চয় এতক্ষণে কান্না করতে করতে মেয়েটা অর্ধেক মারা যেতো। অনুকে এসব কথা বলার প্রয়োজন নেই। অযথাই টেনশন করবে। অবাক অনুকে কল করে।

একবার রিং হতেই রিসিভ করে। নিশ্চয় এতক্ষণ এই কলটার অপেক্ষায় ছিল। অস্বাভাবিক তো কিছু নয়। অবাক বলে,,,,

-অনু, কেমন আছো তুমি???
-,,,,,,,,,,, অনু কথা বলছে না। সে চুপ করে আছে।
অবাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে শোনে অনুর নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

অনুর নিঃশ্বাসটা অবাকের খুব পরিচিত। এই নিঃশ্বাসের শব্দই তো সে এতদিন মগ্ন হয়ে শুনেছে। অবাক মনে মনে বলে, “ভালোবাসার মানুষের নিঃশ্বাসটা শোনলেও সবার মনে শান্তি বিরাজ করে?

নাকি সে একাই এমন পাগলামি করে? হয়তো করে।” অবাক বুঝতে পারছে অনু সত্যি অভিমান করেছে। অনুর নাড়ি নক্ষত্র তার মুখস্থ। অনুযে তারই একটা অংশ। অবাক মধুর কণ্ঠে আবার বলে,,,,,,,

– কথা বলবে না আমার সাথে?? অনু এবারও চুপ। তার কান্না করতে ইচ্ছে করছে এখন। মানুষটা এমন কেন? এতক্ষণ পর কল করে বলছে কেমন আছো? তারতো জানা উচিত কেমন আছি। যাও না জানলে বলবো আমি ভালো আছি।

নিজে কিছুই বুঝে না। আজ সারাদিন বাসায়। অথচ আমার জন্য সময় হলো না। অথচ অফিস গেলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর নেয়। তাহলে বাসায় বসে থাকার কি দরকার। অনু চুপ মনে মনে এসব চিন্তা করে । অবাক আবেগময় কণ্ঠে বলে,,,,,

– আমার জন্য জন্ম নেওয়া তোমার এক রাশ অভিমানেও আমি সুখ খোঁজে পাই এই ভেবে যে,, ‘তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি থাকি।’ অনু এবার চুপ করে থাকতে পারলো না। সে অভিমানী কণ্ঠে বললো,,,,,

– ঢং করো নাতো। আজ নিশ্চয় তুমি অন্য কোনো শাঁকচুন্নির পিছনে দৌঁড়ায়ছো। তাইতো আমার কথা মনে পড়েনি। আমার কলটা রিসিভ করার সময়ও পাওনি। অনুর এমন কথায় অবাক হো হো করে হেসে দেয়।

অনুর মুখে আগে কখনও এমন কথা শোনে নি সে। অবাক কিছুতেই নিজের হাসি থামাতে পারছে না। অনুর এমন একটা বাচ্চাসুলভ স্বভাব আছে সে কখনও জানতো না। অবাকের হাসি শোনে অনু চোয়াল শক্ত করে বলে,,,,

– খুব রঙে আছো মনে হয়। অবাক এবার হাসি থামিয়ে বলে,,,
– আরে না। দুঃখের সাগরে ভাসছিলাম এতক্ষণ। বাট তোমার কথা শুনে খুব মজা পেয়েছি।

– মজা পাওয়ার জন্যই বলেছি।
– অনু, আমি আজ একটা জিনিস ফিল করেছি।
– কি?
– তুমিও জেলাস ফিল করো।
– মোটেও না।

– ইয়েস। নাহলে হঠাৎ অন্য মেয়ের কথা বলতে না। অনু চুপ হয়ে যায়। অবাক আবার বলে,,,,
– বললে না তুমি কেমন আছো?
– তুমিহীনা বিন্দাস আছি।

– অভিমান করেছো আমার উপর?
– না
– সরি। তোমার সাথে কথা না বলে আমিও যে খুব ভালো আছি তা নয়। আমি মনে হয় পৃথিবী সবচেয়ে অসহায় মানুষ অনু। অবাকের কথাটা অনুর বুকে গিয়ে লাগলো। অসহায় কথাটা যেন খুব অসহায় হয়ে বললো। অনু বিচলিত হয়ে বললো,,,

– কি হয়েছে তোমার? শরীর ভালো আছে? মামী ভালো আছে? কারো কি কিছু হয়েছে? অবাক মৃদু হেসে বললো,,,,,,

– কিছু হয়নি। সব ঠিক আছে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেও ভালো ছিলাম না।
– কেন? কি হয়েছিল বলছো না কেন?
– তুমিহীনতায় ভুগছিলাম। প্রেম নামক রোগে আহত হয়েছিলাম। অনু জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,,,

– এই কথাটা এতো হার্ড ভাবে বলতে হয় নাকি। আমার হার্ট আরেকটু হলে ব্লক হয়ে যেতো। দুজন যেন দুজনের ভালোবাসায় হারিয়ে যাচ্ছে। দুজনেরই মনে হচ্ছে হারানোর মুখ থেকে কিছু একটা ফিরে পেয়েছে।

বিলকিস বেগম অনেক্ষণ ধরে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু অবাকের কোনো খবর নেই। এই পর্যন্ত কোনদিন এমন হয়নি। জাস্ট টাইমে অবাক খাবার টেবলি আসে। আজ এক ঘণ্টা ধরে তিনি ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন। ছেলে বাসায়।

তবুও আসছে না। তিনি টেবিল ছেড়ে উঠে এগিয়ে গেলেন অবাকের রুমের দিকে। অবাক রুমে নেই। আশ্চর্য! অবাক বাহিরে গেলো কখন? বাহিরে গেলে অন্তত বিন্তি দেখতো। কিন্তু বিন্তিতো কিছু বললো না।

বিলকিস বেগম রুম থেকে বের হওয়ার সময় অবাকের কণ্ঠ শুনতে পেলেন। তিনি আবার ঘুরে দাঁড়ালেন। হয়তো ব্যালকনি থেকে কথা আসছে। তিনি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন। অবাক ফোনে কথা বলছে। বিলকিস বেগম কিছুক্ষণ তার বলা কথা শোনে বুঝতে পারলেন অবাক অনুর সাথেই কথা বলছে।

তিনি চুপচাপ বের হয়ে আসলেন। সোজা নিজের রুমে চলে গেলেন। হঠাৎ বুকে ব্যথা লাগছে। খুব কঠিন ব্যথা। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাসটা আটকে যাবে। বিন্তি গিয়ে দেখে বিলকিস বেগম শুয়ে আছে। সে বলে,,,,

-আপনে শুয়ে পড়ছেন কেন খাবেন না? বিলকিস বেগম চোখ বন্ধ করেই বলেন,,,,
-না খাবো না।
-আপনের তো ওষুধ আছে। কিছু না খেয়েতো ওষুধ খাইতে পারবেন না।

-একদিন ওষুধ না খেলে কিছু ক্ষতি হবে না। তুই খেয়ে শুয়ে পড়।
-ভাইজান খাইবে না?
-খেলে নিজের হাতে নিয়ে খাবে। তুই শুয়ে পড়। বিন্তি আর কিছু না বলে বের হয়ে যায়।

অবাক অনু দুজন কতক্ষণ ধরে কথা বলছে কেউ জানে না। সময় যেন লাফিয়ে চলে যাচ্ছে। অবাক বলে,,,,

-অনু, আজ রাতের চাঁদটা দেখছো কতো বড় আর কতো সুন্দর??
-হুম।
-চলো আজ দুজন জোছনা বিলাস করি।
-আমার এভাবে জোছনা বিলাস করতে ভালো লাগে না। তুমি যদি পাশে থাকতে তাহলে প্রতিদিন জোছনা বিলাস করতাম। কিন্তু এভাবে একা একা আমার ঘুম চলে আসে।

-খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। আম্মাকে পাঠাবো তোমাদের বাসায়। আজ আম্মাকে তোমার কথা বলেছি। অনু উল্লাসিত হয়ে বলে,,,,,,
-সত্যি?
-হুম

-আমার এভাবে আর ভালো লাগছে না। কতদিন হয়ে গেলে তোমার মুখটা দেখিনা। কতদিন হয়ে গেলো শান্তিতে পরম আবেশে কারো বুকে মাথা রাখি না। অবাক হেসে বলে,,,,,

-গানটাকে পুরাই নকল করে ফেললে।
-সত্যি তোমাকে দেখতে খুব খুব ইচ্ছে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কতজনম দেখিনা তোমাকে। অবাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,,

-একটা আইডিয়া,
-কি?
-আমি এখন তোমাদের বাসায় আসলে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এই রাতের বেলায় কেউ দেখবে না।

-কচুর আইডিয়া। আম্মু না করেছে না আসতে?
-ফুফি যদি না দেখে তাহলেই তো হলো।
-বাসায় আসবে আর আম্মু দেখবে না? আম্মু না দেখলেও ঘুম থেকে উঠে ঠিক শোনবে তুমি এসেছিলে। ভাইয়া ভাবি যে কেউ হোক বলে ফেলবে। অবাক কিছুক্ষণ ভেবে বলে,,,,,

-আচ্ছা ফোনটা রাখো। আমি একটা কাজ করবো এখন। অবাক অনুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দেয়। অনু বুঝতে পারছে না হঠাৎ অবাকের কি হলো। এভাবে ফোন কেটে দিলো কেন। অনু রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমের রাজ্যে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার তার ঘুম ভাঙ্গে প্রিতির ডাক শুনে। সে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
-ডাকছিস কেন? দেখছিস না ঘুমাচ্ছি।
-পরে ঘুমাবি আগে উঠ।
-না উঠবো না। তুই এখান থেকে সর।
-একটা খবর শুনলে তুই লাফিয়ে উঠবি।

-উঠবো না। আর এখন কোনো খবর দেওয়ারও দরকার নেই। সকালে যা খবর দেওয়ার দিস। তখন আমি শোনবো।

-অবাক ভাইয়া এসেছে। তাকে কি বলবো সকাল না হওয়া পর্যন্ত ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে? প্রিতির কথাটা বাতাসের গতিতে অনুর মস্তিষ্কে পৌঁছায়। অনু হুরমুড় করে উঠে বসে চোখ কচলিয়ে বলে,,,,,,

-অবাক এসেছে?? প্রিতি হেসে বলে,,,,
-বলছিলাম না লাফিয়ে উঠবি। এবার ছাদে গিয়ে দেখ সে একা একা বোর হচ্ছে। অনুর বিশ্বাস হচ্ছে না। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত একটা বাজে। এই সময় অবাক? কেমনে?? প্রিতি অনুর হাত টেনে দাঁড় করিয়ে বলে,,,

-সব প্রশ্নের উত্তর ছাদে গেলে পাবি। যা। অনু আর কিছু না ভেবে টিপটিপ পা ফেলে ছাদে যায়। গিয়ে দেখে অবাক বুকে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। অনু ঘুমে মাখা কণ্ঠে বলে,,,,
-এতো রাতে তুমি? অনুর কণ্ঠ শুনে অবাক ফিরে তাকায়। স্নিগ্ধ হেসে বলে,,,,,
-তোমার সাথে জোছনা বিলাস করবো বলে চলে এলাম।

-কিন্তু ছাদে কিভাবে আসলে? আর কেউ জানলে? আম্মু?? অবাক হাসে। সে অনুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় টি টেবিলেরে কাছে। আর বলে,,,,

-ওসব নিয়ে কিছু ভাবতে হবে না। কেউ কিচ্ছু জানে না। শুধু তুমি আমি আর প্রিতি জানে। অনু আশ্চর্য নয়নে তাকায় অবাকের দিকে। এই চাঁদের আলোয় কি সুন্দর লাগছে তাকে। সব সময় অবাককে ফরমাল ড্রেসে দেখা হয়।

আজ প্রথমবার টাওজার আর টিশার্টে দেখছে। ফর্সা চেহারায় ছোট ছোট দাড়ি গুলো চিকচিক করছে। অবাক বলে,,,,
-আজ আমরা জোছনা বিলাস করবো আর কফি খাবো। অনু নিজের ভাবনার জগৎ থেকে এসে বলে,,,,
-এখন কফি? এখন কফি বানাতে গেলেতো আম্মু জেগে যাবে। অবাক হেসে বলে,,,,

-তোমাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। অবাক টেবিলের নিচ থেকে একটা ছোট প্লাক্স আর দুটো মগ বের করে কফি ঢালে। আর অনু হা করে চেয়ে থাকে। অবাক একটা মগ অনুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,,

-নাও। খেয়ে বলো আমি কেমন কফি বানাই। অনু আশ্চর্য হয়ে বলে,,,,
-তুমি বানিয়ে নিয়ে এসেছো?
-ইয়েস মহারাণী। অনু পরশ আবেশে কাপে চুমুক দেয়। চোখ বন্ধ করে কফির স্বাদ গ্রহণ করে বলে,,,,

-দারুণ। খুব ভালো হয়েছে। আমার খাওয়া বেষ্ট কফি এটা। আমাকে রেসিপিটা শিখিয়ে দিও। আমি এতো ভালো কফি বানাতে পারি না। অবাক নিঃশব্দে হাসে। অনু বলে,,,,,,

– হাসার কি হলো?
-সবাই জানে অনুর মতো ভদ্র, শান্ত ইনোসেন্ট মেয়ে হয়না। অনু সব পারে। তার হাতের রান্না অমৃত। যে খায় হাত চাটে। আমিও খেয়ে দেখেছি সে কতো ভালো রান্না করে। অথচ এখন সে বলছে সে নাকি সামান্য কফিটা বানাতে পারে না। এটা কি হাস্যজনক নয়? অনু ভ্রু কুঁচকে বলে,,,,,

-আমি সত্যি কফিটা ভালো পারি না। অবাক অনুর বাম হাত নিজের ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,,,,,
-কিছু নাহয় আমার থাক। কফিটা নাহয় আমিই বানাবো।

অনু অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অবাকের দিকে। অবাকও গালে হাত দিয়ে চোখ ছোট করে তাকিয়ে থাকে অনুর দিকে। অবাকের এমন চাহনি দেখে অনু লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। তারপর বলে,,,,,

-এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
-তোমাকে দেখছি। আজ তোমাকে এতো মায়াবী লাগছে কেন বলতো? অনু হেসে বলে,,,,

-মাথায় তেল দিয়েছি তো তাই। অনু উঠে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়ায়। অবাকও হেসে দিলো। সে অনুর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,,,

-উহু, আজ তোমাকে সত্যি সুন্দর লাগছে। কারণ আমি বলবো? অনু আড়চোখে তাকিয়ে বলে,,,,,
-বলো শুনি।

-তুমি ঘুম থেকে উঠে এসেছো তাই। এখনও তোমার মায়াবী চোখে ঘুম লেগে আছে। ঘুমানোর সময় নিশ্চয় তোমাকে অপরূপ লাগে। ছোট এন্জেল।

-জ্বি না। এসব আপনার কল্পনা স্যার। প্রিতি বলে ঘুমের সময় নাকি আমাকে কাউটঠর মতো লাগে। এবার অবাক বেশ মজা পেলো। সে হাসতে হাসতে বলে,,,,,,

-প্রিতির এমন আজগবি কথার জন্য ওকে নোবেল দেওয়া উচিত। কোথায় থেকে এসব পায়। অনু মুখ বাকিয়ে বলে,,,,

-তুমি হাসছো আর আমার রাগ লাগে যখন ও সবার সামনে আমাকে এভাবে পঁচায়। অবাক হাসি থামিয়ে বলে,,,,,
-ওও মজা করে। তুমি সিরিয়াস নেও কেন? আচ্ছা এসব কথা বাদ। অনু চুপ করে যায়। অবাকও চুপ করে থাকে। কিছুক্ষণ পর অবাক আবার বলে,,,

-অনু আজকে চাঁদ এতো মায়া ছড়িয়েছ কেন জানে? অনু শুধু ভ্রু কুঁচকে তাকায় অবাকের দিকে। অবাক হাত দুটো টাওজারে ঢুকিয়ে রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে বলে,,,,,

-আমরা দুজন পাশাপাশি আছি বলে। অনু মৃদু হেসে বলে,,,,,
-ভাব নিও না তো। আমরা না আসলেও চাঁদ নিজের মতো করে আলো বিলি করে যাবে। সে কারো জন্য কিছু করে না। নিজের জন্য করে। আর আমরা আমাদের মতো করে চাঁদের আলো গায়ে মেখে আনন্দ উপভোগ করি।

-তাই নাকি ম্যাডাম।
– হুম। আচ্ছা ধরো কোনো কারণে আমরা দুজন দুজনের থেকে অনেক দূরে। তখন তুমি কি করবে? অবার অনুর হাত ধরে কাছে এনে বলে,,,,,

– নেক্সট টাইম কখনও এসব কথা বলবে না। আমি সহ্য করতে পারবো না। পাগল হয়ে যাবো। তোমাকে বড্ড ভালোবাসি যে। তুমি অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছো। অবাক অনুর দিকে তাকিয়ে সুরে সুরে বলে,,,,,,

একলা হলেই বুঝতে পারি ভালবাসি কত,
আমি একলা হলেই বুঝতে পারি ভালবাসি কত,
একটা তুমি আছো বলে ভাল আছি এত।
এই জীবনে কেউ তো আর হয়না তোমার মতো,
একটা তুমি আছো বলে ভাল আছি এত।

দূরে গেলে তোমার প্রতি মায়া বাড়ে আরো,
কেমন করে এমন প্রেমে বাঁধতে আমায় পারো।
দিনগুলো সব তোমার নামে হোক না আমার গত,
একটা তুমি আছো বলে ভাল আছি এত।

জুড়ে থাকো আমার এ মন অবুঝ অনুরাগে,
তোমায় নিয়ে ভাবতে গেলে সবচে ভাললাগে।
দিনগুলো সব তোমার নামে হোক না আমার গত,
একটা তুমি আছো বলে ভাল আছি এত।

একলা হলেই বুঝতে পারি ভালবাসি কত,
আমি একলা হলেই বুঝতে পারি ভালবাসি কত,
একটা তুমি আছো বলে ভাল আছি এত,।

অনু চোখ বন্ধ করে মগ্ন হয়ে শুনছে অবাকের গান। অবাকের গানের গলা খুব সুন্দর। অবাক প্রচুর গান পছন্দ করে। এই জন্য অনু কতবারই না গান গাইতে চেষ্টা করলো।

কিন্তু ভালো হয়না। গান গাওয়ার সময় তার কণ্ঠটা কেমন বেসুরে হয়ে যায়। গান একটুকুও ভালো হয়না। অবাক গান শেষ করে দেখে অনু চোখ বন্ধ করে আছে। অবাক অনুর কাছে গিয়ে বলে,,,,,,

-অনু! অবাকের ডাকে অনু চমকে তাকায়। সে ইতস্ততভাবে বলে,,,,,
-গান শেষ?
-হু। তুমি কি ঘুমিয়ে যাচ্ছো নাকি?? কথাটা বলে অবাক হেসে দেয়। অনু মুখ কালো করে বলে,,,,

-আমি কি ঘোড়া নাকি যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে যাবো। আজিব। অনু অন্যদিকে ফিরে তাকায়। অবাক অনুর সামনে গিয়ে বলে,,,,,

-আসলে ফোনে কথা বলার সময় তুমি ঘুমিয়ে যাও। তাই ভাবলাম,,,,,
-তখন তো বসে বা শুয়ে থাকি তাই ঘুমিয়ে যাই। এখন তোমার কণ্ঠের প্রতিটা ধ্বনি আমার হৃদয়ে লাগছিল। তাই আমি পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলি। অবাক ফাজলামি করে বলে,,,,

-এখন একটু ঘোড়ার মতো ট্রাই করো। আমি দেখি। অনু অবাকের বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে বলে,,,,
-ফাজিল একটা। অবাক সাথে সাথে অনু হাত ধরে বলে,,,,

-বাপাশে আঘাত করো না। বাপাশে আমার ভালোবাসা থাকে। সে আঘাত পাবে। অনু অবাকের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে। একটা মানুষ কিভাবে এতটা ভালোবাসতে পারে? এই মানুষটাকে সারা জীবন ভালোবাসার মতো ভাগ্যবতী সে? সুখে অনুর চোখ জলে ভরে উঠে।

এখন ১ টা বাজে। অবাক এখন অফিসে। রাত প্রায় তিনটায় বাসায় আসে। তারপরও অফিসে আসতে হয়েছে। কারণে অকারণে অফিস মিস করা খারাপ অভ্যাসে পরিণত হয়।

একদিন মিস করলে পরদিন আর যেতে ইচ্ছে হয় না। বিলকিস বেগম রেডি হচ্ছেন। বিন্তি দাঁড়িয়ে আছে অল্পকিছুটা দূরে। সে জিজ্ঞেস করে,,,,,,

-আম্মা, আপনে কই যাবেন? বিলকিস বেগম না তাকিয়েই বললেন,,,,,
-অবাকে বিয়ের কথা বলতে। বিলকিস বেগমের কথা শুনে বিন্তির মুখ হাসি হাসি। সে খুশিতে কিছুটা এগিয়ে এসে বলে,,,,,,,

-সত্যি বলতেছেন?
-হুম
-ভালো হইবো আম্মা। ভাইজানেরতো বিয়ার বয়স হইছে। বিয়েটা করাই ফেলেন। আমরাও ভালো মন্দ কিছু খাইতা পারুম।

আর আপনেরও তো বয়স হয়েছে। বেশিরভাগ সময় অসুস্থ তাহেন। ভাইজানে বিয়া করলে আপনারেও দেখবো ভাবিজানে। ঠিক ঠিক সময় ওষুধ দিবো। দুইজনে গল্পও করতে পারবেন। বিলকিস বেগম এর প্রতি উত্তরে কিছু বললেন না। শুধু মৃদু হাসলেন। বিন্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,,,,

-আম্মা, ভাইজানের বউ আইলে কি আপনে আমারে তাড়ায় দিবেন? এবাসায় থাকতে দিবেন না?? বিন্তির চোখ জলজল করছে। বিলকিস বেগম হেসে বললেন,,,,

-এ বাড়ির কিছুই পাল্টাবে না। যারা এখন আছে সবাই থাকবে। শুধু নতুন একজন সদস্য বাড়বে। এবার বিন্তির মুখ হাসি হাসি।

বিলকিস বেগম বের হলেন। নিজের গাড়ি করে এসে নামলেন অনুদের বাসার সামনে। গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। অনেক বছর পর এ বাড়িতে পা রাখলেন। বাড়ির পরিবেশটা অনেক বদলে গেছে। নতুন রং করা হয়েছে। ধবধবে সাদা রং। বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে। তিনি মৃদু পায়ে এগিয়ে গেলেন বাসার দিকে।

কাজল রেখা বসে আছেন ড্রয়িংরুমে। রিমি তাঁর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরামে চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। প্রিতিও বসে আছে। বিলকিস বেগমকে দেখে প্রিতি লাফিয়ে উঠে বলে,,,,

-আম্মু মামী আসছে। প্রিতির কথায় কাজল রেখা চোখ মেলে তাকান। রিমিও তাকায়। কাজল রেখা এগিয়ে গিয়ে বললেন,,,,,,,,
-ভাবি তুমি হঠাৎ। একবার তো বললেও না তুমি আসবে। বিলকিস বেগম বললেন,,,,,,,

-কেন হঠাৎ করে আমি আসতে পারি না?
-কেন পারবে না। আসো। প্রিতি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,,,
-মামী কেমন আছেন?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
-আমরাও ভালো আছি। রিমি গিয়ে সালাম করলো। জিজ্ঞেস করলো। বিলকিস বেগম দাঁড়িয়ে রইলেন। কাজল রেখা বললেন,,,,,,,

-দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো। বিলকিস বেগম এসে বসলেন সোফায়। চারপাশ তাকিয়ে বাসাটা দেখলেন। দশ বছর আগে দেখেছিলেন। এখন আর কিছুই আগের মতো নাই। সব নতুন লাগছে। প্রিতিও বড় হয়ে গেছে। অনুও নিশ্চয় অনেক বড় হয়ে গেছে। সেই কবে দেখেছিলেন। আর দেখেনি। তবে প্রিতি মাঝে মাঝে বাসায় যেতো।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here