#অবাক_মেঘের_বাড়ি
পর্ব : ২৬
সুরমা
বেশ কিছুক্ষণ সাইকেল রাইডিং এর পর অবাক আর মেঘ ছেঁড়াদ্বীপ পৌঁছায়। ছেঁড়াদ্বীপের সুন্দর্য মেঘকে মুগ্ধ করে। এর আগে কখনও এতো মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। আজ প্রথম এতো সুন্দর একটা জায়গায় এলো। সেটাও নিজের সোলমেটের সঙ্গে।
সব কিছু মিলিয়ে মেঘের খুশির সীমা নেই। মেঘ খুশিতে প্রায় লাফালাফি শুরু করে দেয়। মেঘের অবস্থা দেখে সাকিল প্রমি দুজনেই হাসে। অবাক মেঘের হাত চেপে ধরে বলে,
-এই মেয়ে এমন লাফাচ্ছ কেন? চারদিকে লোকজন তোমাকে দেখে তো হাসাহাসি করবে। মেঘ মুখটা বাচ্চাদের মতো করে বলে,
-দেখছে তো কি হয়েছে? খুশিতে একটু লাফালাফিও করতে পারবো না?
-না পারবে না। সবাই তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে এটা হবে না। অবাকের কথা শোনে সাকিল আর প্রমি এগিয়ে আসে। সাকিল হেসে বলে,
-আরে লাফাতে দিন। বাচ্চা মেয়ে। কেউ কিছু মনে করবে না। অবাক আর কিছু বলেনি। মেঘ খুশিতে এবার আরো বেশি লাফালাফি করতে থাকে। প্রমি মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে,
-আপনাদের এতোটা দেরি হলো কেন?
-অনেকদিন ধরে সাইকেল চালাইনা। এজন্য দ্ূরত চালাতে পারছিলাম না।
-ওও আচ্ছা। ঠিক আছে। আমরা তাহলে যাই। পানিতে গা ভিজিয়ে নেই। আপনারাও আসুন।
-ওকে।
সাকিল প্রমি দুজনেই পানিতে নেমে মজা করতে থাকে। অবার আর মেঘ উপরে। অবাক মেঘের এমন ব্যাঙের মতো লাফানো দেখছে। মেঘ কিছুক্ষণ পর সাকিল আর প্রমিকে খেয়াল করে। কি সুন্দর দুজন পানিতে খেলা করছে। কিন্তু মেঘ সেটা করতে পারছে না। সে সাঁতার জানে না। এজন্য পানিতে নামতেও ভয় পায়। মেঘ অসহায় দৃষ্টি নিয়ে সাকিল আর প্রমির দিকে চেয়ে থাকে।
অবাক খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মেঘ কেন এভাবে চেয়ে আছে। অবাক জিজ্ঞেস করে,
-পানিতে ভিজবে? মেঘ ঠোঁট ভেঙ্গে বলে,
-সাঁতার জানিনাতো।
-আচ্ছা চলো আমি তোমাকে ধরে রাখবো। ডুববে না।অবাকের কথা শোনে মেঘ চোখ ঘুরায়। অবাক বলে,
-কি হলো আবার?
-ভাবছি
-কি ভাবছো?
-আপনি নিজেই আমাকে পানিতে নামতে বলছেন।
-হ্যাঁ বলছি।
-আমাকে পানিতে নামিয়ে আবার ছেড়ে দিবেন নাতো? আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছেন নাতো? মেঘের কথা শোনে অবাকের বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে যায়। কি মেয়েরে ভাবা। ভালোর জন্য বলেও সন্দেহ করছে? অবাক দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-এজন্য মানুষের উপকার করতে নেই। যাও তোমার যা মন চায় করো। আমি একাই পানিতে ভিজবো। অবাক নিজেই পানিতে নেয়ে যায়। মেঘ হা করে অবাকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এখন তার আফসোস লাগছে। কেন যে এই কথাটা বলতে গেলো। মেঘ একটু এগিয়ে গিয়ে বলে,
-অবাক বাবু আমাকে একটু নিয়ে যান না। আমিও নামবো।
-থাক। তোমাকে আর নামতে হবে না।
-না আমি নামবো।
-একটু আগে কি বলেছো মনে আছে?
– আর বলবো না। সত্যি বলছি। আমাকে নিয়ে যান। মেঘের কথা শোনে অবাক হেসে দেয়। এই মেয়ে কখনও ভেবে চিন্তে কথা বলে না। অবাক পানি থেকে উঠে এসে বলে ,
– চলো। পানিতে নিয়ে শাস্তি দিব। অবাকের কথা শোনে মেঘের মুখটা একদম কাঁচুমাচু করে ফেলে। অবাক হেসে দিয়ে বলে,
– আরে কিছু করবো না। এমনি বললাম।
– সত্যি তো?
– হ্যাঁ সত্যি।
– তিনবার সত্যি বলুন। মেঘের কথা শোনে অবাক কোমড়ে হাত বেঁধে দাঁড়ায়। মেঘ বলে,
– আচ্ছা বলতে হবেনা। আমি আপনাকে বিশ্বাস করলাম।
– আমার অনেক বড়ই উপকার করেছো। এবার চলো।
মার্কেট শেষ করে সবাই বাহিরে আসার সময় রিমি খেয়াল করছে ইমন নিজের হাত পিছনে লুকিয়ে রেখে হাঁটছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে খেয়াল করছে ইমন পেছনে কিছু একটা লুকিয়ে রেখেছে। রিমি ইমনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-ভাই তোর হাতে কি? রিমির কথা শোনে সবাই দাঁড়িয়ে যায়। ইমন এদিকওদিক তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে,
-কই কিছু নাতো।
-তাহলে হাতগুলো পেছনে লুকিয়ে রেখেছিস কেন? ইমন সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। রিমি চোখের চাহনি শক্ত করে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
-তাহলে হাতগুলো সামনে আন বলছি। ইমন অসহায় মুখ করে তাকিয়ে থাকে। রিমি জোর করে ইমনের হাত টেনে সামনে আনে। ইমনের হাতে একটা শপিং ব্যাগ। ব্যাগটা দেখে ইমনের মা বলে,
-এটা কি? তুই কি কিনেছিস? আর এভাবে লুকিয়েই রাখছিস কেন? ইমন তাড়াহুড়া করে বলে,
-কিছু নাই এতে। এমনি। রিমি বলে,
-কিছু নাই কি? দেখি কি কিনেছিস। রিমি ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে দেখে ব্যাগের ভেতরে একটা ব্লাক কালার শাড়ি। ইমন তাড়াতাড়ি অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। রিমি একপলক অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
-এটা কখন কিনলি? কার জন্য কিনলি? আর এভাবে লুকিয়ে রাখছিলি কেন? রিমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে শাড়িটা অনুর জন্য কিনেছে। তবে ইমনের মুখ থেকে শোনার জন্য প্রশ্ন করেছে। ইমন কিছু না বলে মাথা নিচু করে এক হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
-আসলে শাড়িটা পছন্দ হয়েছিল,,, ইমনকে এভাবে দেখে রিমি হাসি দিয়ে বলে,
-থাক ভাই। তোকে আর এতো লজ্জা পেতে হবেনা। আর ব্যাগটা এভাবে লুকিয়ে না রেখে যার জন্য কিনেছিস তাকে দিয়ে দে। ইমন আস্তে করে বলে,
-পরে দিব। আম্মার সামনে আমার প্রেস্টিজ পাঞ্চার করিস না। ইমন তাড়াতাড়ি রিমির হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নেয়। রিমি নাছোড়বান্দা কণ্ঠে বলে,
-এসব আমি বুঝি না। তুই যেহেতু এখন কিনেছিস তো সবার সামনেই দিবি। যা। ইমন মুখ কাঁচুমাচু করে ফেলে। দূর থেকে প্রিতি বলে,
-দিয়ে দিন ভাইয়া। সময়টা খারাপ না। বেচারা পালানোর উপায় না পেয়ে সবার সামনেই অনুকে শাড়িটা দেয়। ইমন অনুর সামনে গিয়ে থুতলিয়ে বলে,
-এই শাড়িটা তোমার। ইমন শাড়িটা অনুর হাতে দিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে গাড়ির কাছে চলে যায়। অনু শাড়ি হাতে অবাক নয়নে ইমনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ইমনের এমন কাণ্ডে রিমি প্রিতি সহ তার মা হেসে দেয়।
পানিতে নেমে মেঘ অবাকের গলায় শক্ত করে ধরে রাখে। অবাক বলে,
-আরে এভাবে গলায় ঝুলে থাকলে সাঁতার শিখবে কিভাবে? আমাকে তোমার ধরে রাখতে হবে না। তুমি হাত পা নাড়াচাড়া করো। আমি তোমাকে ধরে রাখছি। অবাকের কথা শোনে মেঘ অবাককে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
-আমি ছাড়বো না। ছাড়লেই পানিতে ডুবে যাব। অবাক নিজের গলা থেকে মেঘের হাত ছাড়াতে নিলে মেঘ ছাড়ে না। অবাক বলে,
-আরে মরে যাবতো। আরেকটু হালকা করে ধরো।
-আপনি আমাকে পানিতে ফেলে দিবেন।
-ফেলবো না। আজব তো। আমি তোমাকে ধরে রাখবো। প্রমিজ। অবাকের শেষ কথায় মেঘ স্বস্তি পায়। সে অবাকের গলা ছাড়ে। অবাক মেঘের পেট বরাবর আঁকড়ে ধরে।
মেঘ জানে অবাক তাকে ছাড়বে না। তবুও তার ভয় লাগছে। তাই এক হাত দিয়ে অবাকের হাত চেপে ধরে। আরেক হাত পানিতে নাড়াচাড়া করে। মেঘের কাণ্ড দেখে অবাক বলে,
-এভাবে এজীবনে তুমি সাঁতার শিখতে পারবে না। মেঘ এবার অবাকের বুকের সাথে মিশে অবাকের চোখে চোখ রেখে বলে,
-শিখতেও চাইনা। কখনও আপনার সাথে পানিতে নামার সৌভাগ্য হলে আমি আপনাকে এভাবেই জড়িয়ে থাকবো। সাঁতার জানলে তো আমার এমন সৌভাগ্য হতো না। আপনার এতোটা কাছে থাকতে পারতাম না। অবাক মেঘের চোখের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে। মেঘ অবাকের ভেজা ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলে,
-আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি অবাক বাবু। হয়তো অনু আপুর মতো আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না। কিন্তু উনার থেকে কমও ভালোবাসি না। আমি আপনার সাথে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। আমাকে আপনার থেকে আলাদা করে দিবেন না প্লীজ। আমাকে আপনার করে নিন। মেঘ একেবারে অবাকের বুকে বিলীন হয়ে যায়। শক্ত করে অবাকের বুক জড়িয়ে ধরে অবাকের বুকে মাথা রাখে।
দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হয়ে এলো। অবাক মেঘের চলছে বাসায় ফিরার তোরজোড়। মেঘের আনন্দ লাগছে অনেকদিন পর বাসায় আসবে। আম্মাকে কতদিন দেখেনা সে। কতদিন মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত সে। আবার কষ্টও লাগছে। এতো সুন্দর মুহূর্ত বাসায় গেলে পাওয়া যাবে না। ঘুরতে আসা এই সুন্দর মুহূর্তটা সারা জীবন মনে রাখার মতো। এখানে ঘুরতে না আসলে হয়তো এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত উপহার পেত না। অবাক বাবুর এতোটা কাছেও যাওয়া হতো না। মেঘ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সুন্দর মুহূর্ত গুলো কল্পনা করতে থাকে। অবাক ব্যাগ গুছিয়ে ব্যালকনিতে এসে দেখে মেঘ আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক বলে,
-হ্যালো ম্যাডাম। আপনি যদি এক্ষণি রেডি না হোন আমরা শিপ মিস করবো। পরদিন বিকেল ছাড়া আর শিপ পাওয়া যাবে না। এবার আপনি যদি দয়া করে রেডি হয়ে নিন তাহলে বড্ড উপকার হয়। অবাকের কথা শোনে মেঘ প্রায় লাফিয়ে উঠে। উতলা হয়ে বলে,,,
-যাচ্ছি যাচ্ছি। আমরা আজকেই বাসায় যাবো। মেঘ রুমে প্রবেশ করে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। ৫মিনিটের মধ্যেই সে রেডি হয়ে বের হয়ে আসে। অবাক মৃদু হেসে বলে,
-বাহ! এতো তাড়াতাড়ি শেষ?
-হুম। চলুন এবার আমরা বের হই। অবাক মেঘ দুজনেই হালকা নাস্তা করে নেয়। অবাক মেঘের জন্য কিছু খাবার প্যাক করে নেয় সাথে। দেখা গেলো শিপে উঠে মেয়েটার খিদে লেগে গেলো। তখন কতো কথাই না শুনাবে তাকে। সাকিল আর প্রমি আসে অবাক মেঘের সাথে দেখা করতে। মেঘ আবেগ আপ্লুত হয়ে প্রমিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। প্রমি মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিয়ে বলে,
-আরে পাগলি মেয়ে। এভাবে কাঁদছো কেন? কান্না থামাও বলছি।
-আপু আমি তোমাদের খুব মিস করবো। তুমি ঢাকায় এসে আমাদের বাসায় কিন্তু আসবে।
-অবশ্যই আসবো। এবার কান্না থামাও। আর সাবধানে বাসায় যাও। বাসায় পৌঁছে আমাদের কল দিও।
-আচ্ছা। অবাক সাকিলের সাথে কৌশল বিনিময় করে বিদায় নেয়।
ভোর বেলা অবাক আর মেঘ বাসায় পৌঁছায়। লং জার্নিতে গাড়িতেই মেঘ ঘুমিয়ে পড়ে। সারা রাস্তায় সে অবাকের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। অবাক একবারো মেঘকে জাগায় নি। তবে সারাটা রাস্তা সে মেঘের মুখের দিকে চেয়ে থেকেছে। ঘুমন্ত মেঘ যেন একটা ঘুমপরী। এই কয়দিনে অবাকের হৃদয়ের একটা বড় অংশ মেঘ দখল করে নিয়েছে। অবাক নিজের ভেতরে মেঘের উপস্থিতি বুঝতে পারে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনা। সেই প্রকাশ না করাটা ভয় নাকি অন্যকিছু অবাকের জানা নেই। বাসার সামনে এসে গাড়ি থামে। অবাক ধীর কণ্ঠে মেঘকে ডাকে,
– মেঘ উঠো। আমরা চলে এসেছি। রুমে গিয়ে ঘুমাবে। মেঘ নড়েচড়ে দুহাত দিয়ে অবাকের বুক আঁকড়ে ধরে আবার ঘুমায়। অবাক মেঘের কাণ্ড দেখে কিছুক্ষণ মুচকি হাসে। তারপর আবার ডাকে। মেঘের মাথা নিজের বুক থেকে তুলে আবার বলে,
– চলে এসেছি তো। এখন উঠো। রুমে গিয়ে আরাম করে ঘুমাও। মেঘ ঘুমন্ত অবস্থায় শব্দ করে,
– উঁহু। ডিস্টার্ব করবেন না। অবাক জোর করে মেঘকে নিজের বুক থেকে সরাতে গেলে মেঘ রেগে যায়। সে ঘুমন্ত অবস্থায় অবাকের বুকে কামড় বসিয়ে দেয়। অবাক আর্তনাদ করে উঠে,
– ইশ! কি করছো? গাড়িতে কয়েকমিনিট নিরবতা চলে। এভাবে তো আর গাড়িতে বসে থাকা যায় না। আর মেঘের ঘুমও ভাঙ্গবে না। অবাক মনে মনে বলে, ‘ আল্লাহ মেয়ে মানুষগুলো এমন ঘুম কাতুরে হয় কেন?’ অবাক বাধ্য হয়ে মেঘকে পাঁজাকোলে করে বাসায় নিয়ে শুইয়ে দেয়। ফজরের আযান তখন হয়ে গেছে। বিলকিস বেগম নামাজের জন্য উঠেছেন। অবাক মেঘকে রুমে রেখে মাকে একনজর দেখার জন্য মায়ের রুমে যায়। গিয়ে দেখে বিলকিস বেগম বসে আছেন। অবাক গিয়ে মায়ের পাশে বসে। এই ভোরবেলা ছেলেকে দেখে বিলকিস বেগমের মন শীতল হয়ে যায়। অবাক জিজ্ঞেস করে,
– আম্মা, তোমার শরীর কেমন আছে? বিলকিস বেগম মৃদু হেসে অবাকের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
– বাসায় এসেই আমাকে নিয়ে পড়লি কেন? আমি আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। মেঘ কোথায়?
– ও ঘুমাচ্ছে। সারা রাস্তা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আসছে। এখনও তাকে ঘুম ছাড়ে না। বিলকিস বেগম হাসলেন,
– ছোট মানুষ। ঘুমাক। খাবে ঘুমাবে। এই তো কাজ। ওর শরীর ভালো আছে?
– ভালো আছে। তুমি টেনশন করো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তুই এখন যা। ফ্রেশ হয়ে ঘুমা। পরে নাহয় তোদের গল্প শুনবো।
– আচ্ছা আম্মা। তুমি নামাজ পড়। অবাক রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেয়। এতো লং জার্নিতেও সারা রাস্তায় তার দুটো চোখ একবারের জন্যও এক হয়নি। যার ফলে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে না দিতেই অবাক ঘুমে তলিয়ে যায়।
অনু ফজরের নামাজ পড়ে বরাবরের মতো বাগানে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ তার চোখ পড়ে মেইন গেইটে। গেইটের সামনে ইমন ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। এতো সকাল বেলা ইমন কোথায় থেকে আসলো? সেকি সত্যি দেখছে নাকি ভুল? অনু এগিয়ে আসে। ইমন মিষ্টি হেসে বলে,
– সুপ্রভাত মহারানী। অনু চোখ কুঁচকে ভ্রু নাচায়। ইমন হাতের ফুলটা অনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– এই গোলাপটা আপনার জন্যই ফুটেছে। এখন আপনি এটা গ্রহণ করলে ধন্য হবো। অনু ইমনের হাত থেকে ফুলটা নিতে নিতে বলে,
– এই সকাল বেলা আপনি এখানে?
– ইচ্ছে করে আসিনি। জগিং করতে করতে কখন এতদূর চলে এলাম নিজেও জানি না।
– ওহহ। তা এতো সকাল সকাল বুঝি জগিং এ বের হোন? ইমন কথা বলে না। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই অনেক সকাল রয়ে গেছে। ইমন মাথা নিচু করে মাথা চুলকায়। ইমনকে দেখে অনুর হাসি পাচ্ছে। অনু খুব ভালো করেই জানে ইমন ইচ্ছে করেই এসেছে। জগিং তো বাহানা। অনু অন্যদিকে ফিরে বলে,
– তো যাওয়ার সময় কি জগিং করতে করতেই যাবেন? নাকি গাড়ি ভাড়া নিয়ে এসেছেন? ইমন তাড়াতাড়ি বলে,
– না গাড়ি ভাড়া সাথেই আছে। অনু শব্দ করে হেসে দেয়। ইমন কিছুক্ষণ অনুর দিকে চেয়ে থেকে বলে,
– আসলে জগিং করতে করতে অনেকদূর চলে যাই। তখন গাড়ি ছাড়া বাসায় ফিরতে পারিনা। অনুর চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠে। তার খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসলে ইমন বোকা হয়ে যাবে। অনু নিজের ঠোঁট কামড়ে হাসি থামায়। অনু বলে,
– আচ্ছা ভেতরে চলুন।
– না এখন ভেতরে যাবো না। অন্য একসময় আসবো।
– ওকে। আপনার ইচ্ছা। ইমন চলে আসে। তার ইচ্ছে ছিল কিছুক্ষণ অনুর সাথে গল্প করবে। কিন্তু মনের কথাটা অনুর কাছে প্রকাশ করতে পারলো না। তবে সকাল বেলায় অনুকে দেখতে পেরেছে এটাই অনেক। এখন শুধু অপেক্ষা। কবে ঘুম ভাঙ্গতেই এই মেয়ের মুখটা চোখের সামনে দেখতে পাবে তার। অপেক্ষার সময় যে আটকে থাকে। যেতেই চায়না।
মেঘের ঘুম ভাঙ্গে দুপুর ১২টায়। চোখ মেলে দেখে অবাক পাশে শুয়ে আছে। অনেক ঘুমানোর কারণে তার মাথা এখন হ্যাং হয়ে আছে। মেঘ অবাককে ডেকে তুলে। অবাক বলে,
-কি হলো ডাকছো কেন?
-আমরা যাবো না?
-কোথায় যাবে?
-বাসায়
-তাহলে এখন কোথায় আছো? এটা কি বাসা মনে হচ্ছে না? মেঘ চোখ কচলে বাসাটা ভালো করে দেখে বলে,
-ওমা কখন চলে আসলাম? আমাকে ডাকলেন না কেন? অবাক জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-এবার ডেকেছিলাম বলেই আমর বুকে কামড় বসিয়ে দিয়েছো। আবার ডাকলে কি করতে আল্লাহ জানে। মেঘ চোখ বড় বড় করে বলে,
-কে কামড় দিলো আপনার বুকে? অবাক উঠে বসে টিশার্ট টেনে কামড়ের দাঁগটা দেখিয়ে বলে,
-এই দেখ। আমিই আমাকে কামড় দিয়েছি। কথাটা শেষ করেই অবাক আবার শুয়ে পড়ে। মেঘ জিজ্ঞেস করে,
-ব্যথা লাগছে না আপনার?
-নাহ! খুব আরাম ফিল করছি। এবার আমাকে ঘুমাতে দাও। নাহলে আমিও কিছু একটা করে ফেলবো। অবাকের এবারের কথাটা শুনে মেঘের চোখ মার্বেলের মতো বড় হয়ে যায়।
চলবে—