#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ২
সুরমা

পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। দূর থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে। আযানের মধুর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় অনুর। চোখ মেলেই হাত দিয়ে মোবাইলটা খুঁজার চেষ্টা করে।

বালিশের নিচে সব সময় মোবাইলটা থাকে । আজ পাচ্ছে না সেখানে। অনু মাথা তুলে দেখে মোবাইলটা নিচে পড়ে আছে। রাতে চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে আসছিল। ব্যালকনি থেকে কখন কিভাবে এসে শুয়েছে মনে করতে পারছে না।

অবাকের মুধুর কণ্ঠ শোনতে শোনতে তাঁর চোখে ঘুম জড়ো হয় প্রত্যেকদিন। অনু নিচ থেকে মোবাইলটা নিয়ে অবাককে কল করে। একবার কল হয়ে ফিরে আসে। দ্বিতীয় বার রিসিভ করে। অনু বলার আগেই অবাক ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,,,,,

– প্রাণবতী,
– হুম। শুভ সকাল ।
– শুভ সকাল।
– ওঠে পড়ো। আযান হয়েছে দশ মিনিট আগে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ো।
– হুম।

– হুম কি? আমি এখন কলটা কেটে দিবো। উঠে বসো
– আমি আর দশ মিনিট ঘুমাই। তুমি কলটা কেটো না।
– দশ মিনিট ঘুমাই বললে উঠে দেখবে সূর্য লাল হয়ে গেছে। তখন নামাজ পড়তে পারবে না। উঠো বলছি।

অবাক চোখ বন্ধ করেই উঠে বসে।
– সকাল বেলায় ঘুমটা খুব মজা লাগে।
– হুম। তখন শয়তানে ঘুম পাড়ায় তো তাই। অবাক মৃদু হেসে বলে,,,,

– হুম। কেউ ঘুম পাড়িয়ে দিলে মজাই লাগে বেশি। বিয়ের পর প্রতিদিন তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে কেমন?

– আচ্ছা দিবো এখন যাও। ওজু করে আসো ।
– আচ্ছা। তুমিও যাও। অনু কলটা কেটে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ আদায় করে। অবাক বসে থেকেও কিছুক্ষণ জিমায়। তারপর সেও উঠে ওজু করে আসে।

অবাক নামাজ শেষ করে যায় তাঁর মায়ের রুমে। মা কোরআন তিলাওয়াত করছেন। অবাক গিয়ে বসে মায়ের পাশে। মা যতক্ষণ তিলাওয়াত করে সে ততক্ষণ মায়ের মধুর কণ্ঠে তিলাওয়াত শোনে।

বিলকিস বেগম তিলাওয়াত শেষ করে দেখেন অবাক পাশে বসে আছে । গায়ে পাতলা টিশার্ট । কালো টাওজার। চুল গুলোও ছিড়ুনি করে নি। তবুও এই সকাল বেলায় অপূর্ব লাগছে ছেলেকে। তিঁনি মৃদু হেসে বলেন,,,

– আমার পাশে প্রত্যেকদিন বসে না থেকে নিজেও তো তিলাওয়াত করতে পারিস।
– আমি তিলাওয়াত করলে যে তোমার মধুর কণ্ঠের তিলাওয়াত মিস করবো আম্মা। বিলকিস বেগম অবাকের দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
তারপর বললেন,,,,,

– আজ ব্রেকফাস্টে কি খাবি?
– যা তৈরি করবা তাই। অবাক উঠে দাঁড়ায়। বিলকিস বেগম বলেন,,,,
– এখন কোথায় যাবি?

– হাঁটতে যাবো। সকালের পরিবেশটা খুব সুন্দর আম্মা। বাতাস স্নিগ্ধ। চারপাশ সতেজ। পাখিরা কি সুন্দর কণ্ঠে কিচিরমিচির করে । আমি যাবো সেখানে। প্রকৃতির কাছে।

আম্মা, প্রকৃতিকে আমার কাছে তোমার মতই আপন মনে হয়। বিলকিস বেগম এগিয়ে এসে বললেন,,,,,

– আমারও সকাল বেলায় প্রকৃতি দেখে হাঁটতে ভালো লাগে। কিন্তু এখন শরীরে কোলায় না।
– তুমি হাঁটবে আম্মা? চলো আজ মা ছেলে কাছাকাছি হাঁটি। বিলকিস বেগম ছেলেকে না করতে পারলেন না। তিনি বললেন,,,

– আচ্ছা তাহলে চল। আজ নিজেদের বাগানেই হাঁটি। অনেকদিন বাসার বাহিরে যাই না।

অবাক বিলকিস বেগমকে নিয়ে বাগানে আধঘণ্টার মতো হাঁটাচড়া করে। এইটুকু হেঁটেই বিলকিস বেগম ক্লান্ত হয়ে যান। তিনি বাগানে থাকা সিমেন্টের বেঞ্চে বসে পড়েন। অবাক বলে,,,,

-আম্মা কষ্ট লাগছে? বিলকিস বেগম এক নাগাড়ে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,,,,

-এখন কি আগের মতো সুস্থ আছি? বয়স হয়েছে। আমার বয়সী মানুষ তো বেশির ভাগেই মরে গেছে। এখন আর গায়ে কষ্ট সহ্য হয়না।

-হেঁটে হেঁটে বাসায় যেতে পারবা আম্মা?
-যেতে পারবো। আগে একটু জিরিয়ে নেই। দমটা ওঠানামা করতেছে। অবাক মায়ের পাশে বসে বলে,,,,
-বুকে হাত বুলিয়ে দিবো আম্মা?
-না না। ঠিক হয়ে যাবে এম্নি। কিছুক্ষণ বসি। অবাক নিজের টাওজারের পকেট থেকে একটা মিনি পানির বোতল বের করে মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,

-নেও। পানি খাও। তাহলে তাড়াতাড়ি আরাম ফিল করবা। বিলকিস বেগম ঘেমে একাকার।শরীরের কাপড়ও ভিঁজে টুইটুম্বুর। এই মুহূর্তে পানিটা সত্যি খুব উপকারী। তিনি ছেলের হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে পানি খান। পাঁচ মিনিট পরেই শরীর চেতন অবস্থায় ফিরে আসে।

অবাক বাসায় এসে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অফিস চলে যায়। সকালের পর আর অনুর সাথে কথা হয়নি। অবাক অফিস যাওয়ার সময় অনুকে ছোট একটা এসএমএস করে দেয়।

‘অনু, আজ অফিস যেতে লেইট হয়ে গেছে। একটু বিজি ছিলাম তাই তোমাকে আর কল করা হয়নি। দেখাও করতে পারলাম না। তিনটার দিকে রেডি হয়ে থেকো। আমি তোমাকে নিতে আসবো। বিকালে দুজন ঘুরবো।’

অনু মেসেজটা দেখেছে এগারোটার দিকে। একটা দিন অবাকের সাথে কাটবে ভেবে অনু খুশিতে আত্মহারা। আজ সে শাড়ি পরবে। অবাক শাড়ি খুব পছন্দ করে।

মেয়েরা শাড়ি চুড়ি পছন্দ করে। কিন্তু সেও প্রচণ্ড শাড়ি পাগল। অনু আলমারি খুলে নিজের শাড়ি গুলো উল্টেপাল্টে দেখে। একটাও মন মতো হচ্ছে না। সব গুলো সে আগে পরেছে। এখন আবার পরতে মন চাইছে না।

অনু কিছুক্ষণ থ মেরে বিছানায় বসে থাকে। হঠাৎ ভাবির কথা মাথায় আসতেই তাঁর মুখ খুশিতে ভরে উঠে। অনু নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখে ড্রয়িংরুমে তাঁর মা, ভাবি বোন বসে আছে।

একটা ছেলেও বসে আসে। তবে ছেলেটার পিঠ দেখা যাচ্ছে শুধু। অনু ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। রিমি অনুকে দেখে বলে,,,,,,

-অনু আমরা তোমার কথাই বলছিলাম। আমার ভাই ইমন এসেছে। কয়েকদিন হলো দেশে আসছে। ইমন তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল। অনু গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে ইমনকে সালাম দেয়,,,,,,

-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া
-ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো অনু।
-জ্বি ভাইয়া আমি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?

-আমিও আলহামদুলিল্লাহ। তা তোমার পড়াশোনা কতদূর?
-এবছর মাস্টার্স দিবো।
-বাহ! তুমি তো বেশ বড় হয়ে গেছো। তোমাকে সেই কবে দেখেছিলাম। তখন ইন্টারে পড়তে। অনু মুচকি হেসে মাথা নিচু করে। কাজল রেখা বলেন,,,,

-তোমরা কথা বলো। আর বউমা তুমি ছেলেটার খাবারের ব্যবস্থা করো। আমি আসি। কাজল রেখা উঠে চলে যান। রিমি বলে,,,,

-ভাই, তুই বস। আমি তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসি। রিমিও রান্না ঘরে চলে যায়। প্রিতিও নিজের ঘরে চলে যায়। অনু চলে যেতে নিলে ইমন বলে,,,,

-অনুপমা। ইমনের ডাক শোনে অনু থমকে দাঁড়ায়। তাঁর বুকের ভেতরে টিপটিপ শব্দ শুরু হয়। হাত পা কাঁপছে। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। ইমন উঠে গিয়ে দাঁড়ায় অনুর পাশে। অনু দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। ইমন অনুর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,

-তুমি আগের থেকেও বেশি সুন্দর হয়ে গেছো অনু। কথাটা ধক করে লাগে অনুর বুকে। অনু ছলছল চোখে তাকায় ইমনের দিকে। রিমান একটা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

-তোমার উপমা তুমি নিজেই অনু। তোমাকে বর্ণনা করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। তবে আজ আবার তোমাকে দেখে আমার কেন জানি কষ্ট লাগছে। খুব কষ্ট লাগছে।

অনু পড়ে বিড়ম্বনায়। সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। আবার হুট করে চলেও যেতে পারছে না। অনু কাঁপা গলায় বলে,,,,,
-আমি এখন আসি। অনু বাতাসের গতির মতো চলে যায়। ইমন থাকিয়ে থাকে অনুর যাওয়ার দিকে।

অনু সোজা নিজের রুমে চলে আসে। তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। এই লোকটা আবার কেন এসেছে? আবার নতুন করে কি চায় এই লোক। অনুর কান্না পাচ্ছে। আর চোখ জলে ভরে উঠে।

প্রিতি অনুকে দেখে বলে,,,,,,
-আপু, ইমন ভাইয়া আগের থেকে অনেক বেশি হেন্ডসাম হয়ে গেছে। তাই না? অনু প্রিতির দিকে তাকায় চোখ বড় বড় করে। প্রিতি মুখ বাকিয়ে বলে,,,,,
-আমি ভুলেই গেছিলাম তোর চোখ নেই। তুই শুধু অবাক ভাইয়াকেই দেখিস। তবে ইমন ভাইয়া অবাক ভাইয়ার থেকে বেশি স্মার্ট না। তবে সেও সুন্দর। শ্যামলা এই মানুষটাকে আমার বেশ ভালো লাগে।

অনু প্রিতির পাশে বসে বলে,,,,
-ইমনকে তোর পছন্দ? প্রিতি হাত থেকে মোবাইলটা বিছানায় রেখে বলে,,,,

-এখন বলবি না তুই ইমনের সাথে প্রেম কর। তাহলে আমি তোর গলা টিপে দিবো। অনু প্রিতির কথা শোনে হেসে বলে,,,,,

-তার মানে তোর প্রেম করতে মন চাইছে তাই তো? আমি কিছু বলি নি। তুই নিজেই বললি। প্রিতি মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে,,,,,

-আজকে একটা জামাই নেই বলে সবাই আমার উপর যেমন খুশি তেমন অত্যাচার করে। অনু হাসছে। শব্দ করে প্রাণ খুলে হাসছে। তাঁর বেশ মজা লাগছে প্রিতির কথাটা।

প্রিতি কিছুক্ষণ অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,
-আপু, তোর হাসিটা খুব সুন্দর। অন্য কোনো মেয়েকে তোর মতো এতো সুন্দর করে হাসতে দেখিনি কখনও। আই লাভ ইউ আপু। আমি তোকে খুব ভালোবাসি। অনুও প্রিতির হাত চেপে ধরে বলে,,,,
-আমিও আমার এই বোনটাকে ভীষণ ভালোবাসি। অনু নিজের মাথা প্রিতির মাথার সাথে ঠেকায়। দুবোন দুজনকে জড়িয়ে রাখে কিছুক্ষণ। তারপর অনু বলে,,,,

-আজকে অবাকের সাথে ঘুরতে বের হবো। যাবি? প্রিতি অনুকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,,
-আমি? আমি তোগো দুজনের সাথে গিয়ে কি করবো? কাবাব মে হাড্ডি??? অনু মুখে হাসি এনে বলে,,,,

-কাবাব মে হাড্ডি হবি কেন? আমাদের সাথে ঘুরবি।
-না বাবা। কাপলদের সাথে আমার মতো সিঙ্গেলের গিয়ে লাভ নেই। তোর ঘুর। আমার যখন একটা বয়ফ্রেন্ড হবে তখন আমিও ঘুরবো। তখন তোকে যেতে বলবো না। আমি আবার তোর মতো দয়ালু না।

অনু নিজের রুমে পাইচারী করছে। না পারছে কিছু বলতে না পারছে রিমির থেকে একটা শাড়ি আনতে। রিমান এখনও যায় নি। আর অনুর রিমানের সামনে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাও নাই। প্রিতি মোবাইল টিপছে। ফাঁকে ফাঁকে অনুকেও দেখছে।

অনুর এমন অস্থিরতা দেখে প্রিতি বলে,,,,
-আপু তুই এতো টেনশন করছিস কেন? অনু প্রিতির দিকে না তাকিয়েই বলে,,,,,,

-তিনটা বেজে যাবে। আমি এখনও রেডি হইনি।
-তো তোকে কি কেউ না করেছে?
-দূর। আমার শাড়ি লাগবে। আমি অবাকের সাথে শাড়ি পরে ঘুরতে যাবো।
-তো, যা। শাড়ি পরে ফেল তাহলেই তো হয়।

-ভাবীর থেকে শাড়ি আনতে চেয়েছিলাম।
-নিয়ে আয় গিয়ে। ঝামেলা ফিনিশ।
-রিমান ভাইয়া যে ভাবীর রুমে। প্রিতি এবার চোখ বড় বড় করে মুখ বাকিয়ে বলে,,,,,

-উনি ভাবীর রুমে তো কি হইছে??
-তুই একটা আবাল। আমি উনার সামনে যাবো না। মানে যেতে চাইছি না।
-আপু, তুই এতো লজ্জাবতী কেন? সবাইকে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

-আমি কাউকে লজ্জা পাচ্ছি না। আমি মোটেও লজ্জাবতী না। যেতে চাইছি না এম্নি।
-ঠিক আছে। তাহলে তুই লজ্জাবতীর বিপরীত। বিপরীত শব্দটা কি হবে বলতো??? এখন কিছুতেই মাথায় আসছে না। প্রিতি কিছুক্ষণ থুতনিতে হাত রেখে চিন্তা করে। তারপর করুণ সরে বলে,,,,

-ভুলে গেছিরে আপু। যখন মনে হবে তখন বলবো।
-তোর পণ্ডিত গিরি রেখে আমাকে আইডিয়া দে। আমি কি করবো? আমার শাড়ি গুলো পুরনো। প্রিতি চোখ নাচিয়ে বলে,,,,,,,

-অবাক ভাইয়াও কিন্তু পুরোনো। প্রিতির কথা শোনে অনুর চোয়াল শক্ত হয়। সে চোখ রাঙিয়ে বলে,,,,
-কি বললি???

– অবাক ভাইয়াকে যদি ভালোবেসে এতো ভালো লাগতে পারে তাহলে একটা শাড়ির উপর একটু ভালোবাসা দেখা। দেখবি শাড়িটা অপরূপ সুন্দর লাগবে। আর তুই শাড়ি নিয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছিস কেন? তুই নিজে এতো সুন্দর। যা পরবি তাতেই তোকে রূপবতী লাগবে। অনু ভ্রু কোঁচকায়। প্রিতি আবার বলে,,,,,

– ওয়েট আপুমনি। আমি একটা শাড়ি সিলেক্ট করে দেই। প্রিতি আলমারি খুলে সবগুলো শাড়ি বের করে। তারপর বিছানায় বসে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,,,,,,

– আপু তুই ব্লাক শাড়ি পর। তুই এমনিতে যে সুন্দর। সাথে ব্লাক শাড়ি ম্যাচিং ওর্নামেনস। তোকে মাশআল্লাহ অপ্সরার মতো লাগবে।

– ব্লাকটা আরো কয়েকবার পরছি।
– তাহলে পার্পেল কালারটা পর। অনু কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,,,,,
– আচ্ছা ঠিক আছে।

অবাক ঠিক তিনটায় অনুর বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। অবাক এসে দেখে অনু বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে। অনুকে দেখে সে রীতিমত চমকায়। পার্পেল কালারে অনুকে অপরূপ লাগছে।

সাথে ম্যাচিং করা অর্নামেনস। চোখে কাজল। ঠোঁটে হালকা পার্পেল কালার লিপস্টিক। অবাক গাড়িতে হেলান দিয়ে অনুর দিকে চেয়ে থাকে। অবাকের এমন চাহনিতে অনু লজ্জায় কোঁকড়ে যায়। সে মাথা নিচু করে মিটমিট হাসতে থাকে। অবাক চোখ ছোট ছোট করে বলে,,,,,,

– এতো সুন্দর করে সাজো কেন? আমার তো হার্ট ব্লক হওয়ার উপক্রম হয় তখন। অবাকের কথা শোনে অনু মাথা তুলে তাকিয়ে অপরাধী কণ্ঠে বলে,,,,,

– তাহলে তুমি দশমিনিট অপেক্ষা করো আমি চেঞ্জ করে আসি। অনু গেইটের ভিতরে ঢুকতে যাবে অবাক অনুর হাত ধরে বলে,,,,,,,

– তোমাকে দেখতে দেখতে মরণ হলেও আমার সে মরণ সার্থক হবে। অনুর চোখ সাথে সাথে জলে ভরে উঠে। অবাক অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

– কি হয়েছে অনু? এভাবে চোখ জলে ভরলো কেন? এনি প্রবলেম??? অনু মাথা নিচু করে। সাথে সাথে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। সে শাড়ির আঁচল মুচড়াতে মুচড়াতে বলে,,,,,,

– আমি মরার আগে যেন তোমার মরণ না হয়। আমি সহ্য করতে পারবো না। অবাক এবার স্পষ্ট অনুর কান্নার কারণ বুঝতে পারছে। সে অনুর থুতনি ধরে মুখ উপরে তুলে বলে,,,,,,

– আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আমাদের যাত্রা যেন সমান সমান হয়। অবাক আলতো করে অনুর চোখ মুচে দেয়। অনুর চোখ প্রেমময় হয়ে উঠে। ভালোবাসায় ভরপুর হয় হৃদয়।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। অনু তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে। আর অবাক তাকিয়ে আছে অনুর দিকে। অনুকে আজ পুতুলের মতো লাগছে। সাজানো গুছানো মায়াবী পুতুল। যাকে হাজার জনম দেখলেও দেখার তৃষ্ণা মিটবে না। অবাক সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

-অনু। অবাকের ডাক শোনে অনু অবাকের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,,,,,
-বলো। অবাক মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
-কিছু না। অবাকের কথায় অনুও হাসে।

কিছুক্ষণ যাওয়ার পর গাড়ি থামে নির্জন জায়গায়। গতি সামলাতে না পেরে অনু হালকা সামনের দিকে ঝুকে পড়ে। অবাক অনুর সিটবেল্ট খুলে দিয়ে বলে,,,

-নামো। অনু নামে। অবাকও নামে। অনু সামনে তাকিয়ে দেখে সবুজ একটা মাঠ। মাঠ পেরিয়েই নদী। নদীটা অনেক বড়। কোথায় থেকে শুরু কোথায় শেষ তার চিহ্ন বুঝা কঠিন। অনু অবাকের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,,,

-ওয়াও! এতো সুন্দর জায়গা? অনু দু হাত দুদিকে মেলে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
-আহ! কি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। কি স্নিগ্ধ আবহাওয়া। অবাক আমি কি সত্যি দেখছি নাকি কল্পনা? অবাক প্যান্টের পকেটে হাত গুজে গাড়িতে হেলান দিয়ে বলে,,,,,,,

-ঢাকা বাহিরে এর চেয়ে বেশি মুগ্ধকর পরিবেশ আছে। তোমাকে কতোবার বলেছি চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি। অনু হাত গুটিয়ে উল্লাসী কণ্ঠে বলে,,,,,

-বিয়ের পর যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে যাবো। অবাক কিছুটা অভিমান নিয়ে বলে,,,,
-বিয়ের আগে গেলে সমস্যা কি??? আমাকে বিশ্বাস হয়না???

অনু তাকায় অবাকের দিকে। অবাকের মুখ লাল হয়ে আছে। অনু একটু এগিয়ে এসে অবাকের হাত ধরে বলে,,,,
-তোমার উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কিন্তু আমার নিজের ফ্যামিলি আছে। আমার ফ্যামিলির সবাই জানে আমাদের রিলেশনের কথা। আমার ফ্যামিলির সবাই তোমাকে ভালোবাসে অবাক। কিন্তু আম্মু পছন্দ করেনা ঘনিষ্ঠতা।

আম্মু বলে, বেশি ঘনিষ্ঠতায় রিলেশন পবিত্র থাকে না। তখন রিলেশন গুলোর মোড় চেঞ্জ হয়ে যায়। তুমি আমার উপর রাগ করো না প্লীজ। শেষের দিকে অনুর কণ্ঠ ধরে যায়। অবাক বিচলিত হয়। সে তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাঁড়ায়। অনুর গালে হাত রেখে বলে,,,,,,

-সরি অনু। আসলে আমরই ভুল। সব কিছুর লিমিট থাকা উচিত। তোমার উপর আমার কোনো অনুযোগ, অভিযোগ কিছুই নেই। আমি আমার বউকে নিয়েই ঘুরবো। অবাক মৃদু হেসে বলে,,,,,

-অনু মুচকি হেসে দুহাত দিয়ে অবাকের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
-আই রিয়ালি লাভ ইউ অবাক সাহেব। অবাক অনুর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলে,,,,,,

-ওয়েট। অবাক গাড়ির দরজা খুলে কতগুলো ফুল বের করে। অনু উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। অবাক এসে অনুর সামনে হাটু গেড়ে বসে ফুল গুলো অনুর সামনে তুলে ধরে বলে,,,,,,

-অনু, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারবো না। শুধু এতটুকু জানি, আমার নিশ্বাস তুমি। আমার ভালো থাকার হাতিয়ার তুমি। আমার স্বপ্ন তুমি। আমার ভোরের আলো তুমি। আমি স্বপ্ন দেখি।

আমার অনুকে পুতুলের মতো সাজিয়ে আমার ঘরে তুলবো। প্রতিদিন একসাথে ফজরের নামাজ পড়ে দুজনে হাতে হাত রেখে বাগানে প্রভাতফেরি করবো। সন্ধ্যায় দুজনে কফি হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাবো আর গল্প করবো ।

অনু, তুমি হীনা কখনও নিজেকে কল্পনা করিনি। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে তুমি। আমার প্রশ্বাসে তুমি। তুমি তোমার রাঙা মনে আমাকে একসেপ্ট করো প্রিয়তমা। তোমার পুতুল ঘরে আমাকে পুতুলরাজ হিসাবে গ্রহণ করো।

অবাক তাকে নতুন করে এভাবে কাছে টানবে অনু বুঝতে পারে নি। এম্নিতেও অবাককে ফেরানোর সাধ্য তাঁর কখনই ছিল না। এখনতো আরো নেই। অনু অবাকের হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে বলে,,,,,,,

-তোমাকে সেই কবেই আমার পুতুল রাজ্যের রাজা বানিয়ে রেখেছি। নতুন করে কি দিবো? অবাক উঠে দাঁড়ায়। অনুকে কাছে টেনে নিয়ে বলে,,,,,,

-তোমার পরীক্ষাটা শেষ হলেই আমি তোমাকে আমার ঘরে তুলবো অনু। তোমাকে দূরে রেখে আমি ভালো থাকতে পারিনা। অনু অবাকের বুকে মাথা রেখে বলে,,,,,,,
-আমিও।

বাতাসে বাতাসে দুলছে নৌকা। অবাক আর অনু নৌকায় বসে আছে মুখোমুখি। অনু নৌকা থেকে পানি ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। অবাক অনুর বা হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। অবাক দেখছে অনু বেশ উৎফুল্ল হয়ে আছে।

অনুকে এভাবে দেখে অবাকেরও ভালো লাগছে। অনু বলছে,,,,,,,
-আচ্ছা এতো সুন্দর একটা জায়গায় লোকজন এতো কম কেন?

-এটা ঢাকা থেকে বেশ খানিকদূর। অনেকে জানেই না। অনু উৎসুখ চোখে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,

-তুমি জানলে কিভাবে অবাক সাহেব??? অবাক অনুর এমন ভ্রু নাচানো দেখে রহস্যময়ী হাসি দেয়। অনু নদী থেকে একটু পানি নিয়ে অবাকের মুখে ছিটিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,
-ফাজিল।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here