#অপেক্ষা
#পার্ট_০৬
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-জানু আজকে আমার বার্থডে বাসায় ছোটখাটো একটা পার্টি আছে। সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো।আমি তোমাকে নিয়ে আসব।
-কিন্তু তোমার বার্থডে তো ৪ সেপ্টেম্বর। আজকে তো ৩০ এ জুলাই।
-আরে জানু ওটা তো সার্টিফিকেট এর বার্থডে।আসল বার্থডে আজকে। ৩০ শে মে।আজকে আমি সারারাত তোমার সাথে কাটাব।গল্প করব অনেক মজা হবে।
-রাজীব তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?রাত ৯ টার পর হলে ঢুকতে দিবে না।তখন কি হবে!
– কি আবার হবে আমার বাসায় থাকবে।আমার বাসায় আমার আব্বু আম্মু সবাই আছে। উনারা তোমাকে পেয়ে অনেক খুশি হবেন।পার্টি শেষ করে আমি তোমাকে হলে পৌছিয়ে দিব।রাজীব কে মানা করবে এত বড় কলিজা কার আছে!তুমি চিন্তা করোনা তো ডার্লিং আমি ঠিকি ব্যবস্থা করে দেব।তুমি শুধু সুন্দর করে সেজেগুজে রেডি হয়ে থেক।কেমন?বাই।
কথা শেষ করেই খুট করে কলটা কেটে দিল রাজীব।আমি আর যাই বলিনা কেন ও আর কোন কথাই শুনবে না আমি জানি।রাজীবের পাওয়ার সম্পর্কেও আমি ভালোভাবে জানি।ক্যাম্পাসের অনেক ক্ষমতাশীল পলিটিক্যাল লিডার সে।তাই আমিও কথা না বাড়িয়ে সাজগোজ করে বসে রইলাম।
বিকেলে রাজীবের কল এল।
-ডার্লিং আমার ছেলেদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছি।তুমি ওদের সাথে চলে আসো।
-ওদের সাথে কেন? তুমি কেন নিতে আসলে না!
-আরে জানু বোঝ না?তুমি ফার্স্ট টাইম আমার বাসায় আসছ। প্রিপারেশনের একটা ব্যাপার আছে না?তুমি চলে আসো। বাকি কথা পরে হবে।
আমি রাজীবের পাঠানো ছেলেদের সাথে ওর বাসায় গিয়ে পৌছালাম।ওরা আমাকে দরজা পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।বাসাটা অনেক বড় আর সুন্দর করে সাজানো।কিন্তু পুরো বাসাটাই ফাকা।কোথাও কেউ নি।আমি এক পা দু পা করে আগাতেই রাজীব নেমে এল সিড়ি বেয়ে।
-ওয়েলকাম ডার্লিং।আমি তোমারই অপেক্ষা করছিলাম।
-রাজীব আজকে না তোমার বাসায় পার্টি?
-হ্যা পার্টিই তো।
-আর সবাই কোথায় তাহলে?
-আসলে রাফিয়া এটা আমাদের ফ্যামিলি পার্টি ছিল।ফ্রেন্ডসরা কেউ ছিল না।শুধু রিলেটিভরা ছিলেন।কিন্তু হঠাত করে খবর এল যে বাবার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড কার এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন।উনি বাবার অনেক ভালো বন্ধু ছিলেন।হঠাত করে এরকম একটা নিউজ শুনে বাবা ভেঙে পরেন।এমন সময় শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভেবে পার্টি করাটা উচিত হবে বলে আমি মনে করিনা।তাই সব গেস্টদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি আর বাবা -মা গিয়েছেন সেই আংকেলের বাসায়।
আমি অবাক হয়ে নির্বোধের মত রাজীবের প্রতিটা কথাই শুনলাম কোন বিরোধিতা ছাড়াই।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে রাজীব হেসে বলে
উঠল
-ভাবছ এত কিছুর পর তোমাকে কেন ডেকেছি তাই তো!
আমি উপরে নিচে মাথা নাড়ালাম।
-ওকে চল।
রাজীব আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।ছাদে গিয়ে আমি সত্যিই অবাক হলাম।পুরো ছাদ সুন্দর করে সাজানো।চারদিকে বেলুন ভাসছে আর ছোট ছোট নীল সাদা বাতি জ্বলছে।এক কোনে দেওয়ালে বড় করে লেখা টানানো আছে
-Happu Birthday Rajib.
ছাদের ঠিক মাঝামাঝি বরাবর একটা ছোট টেবিলে কেক রাখা।
-এবার তো বিশ্বাস হল যে বাসায় পার্টি ছিল।আসলে জানু আমি আজকের দিনটা মাটি করতে চাচ্ছিলাম না।তাই তোমাকে এখানে নিয়ে আসলাম।তুমি আমার সাথে থাকলে প্রতিটা মুহুর্তই স্পেশাল লাগে।
রাজীবের কথায় আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নোয়ালাম।
রাজীব আমার হাত ধরে বলল
-চল কেট কাটব।
.
.
রাজীব কেক কাটছে আর আমি বার্থডে সং গাইছি। আমি একটা কেকের টুকরো তুলে ওর মুখের সামনে ধরলাম।রাজীব এক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।ও আমার হাত থেকে কেক টা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিল।বাম হাতে আমার ডান হাতটা নিয়ে আংগুল গুলো চাটতে লাগল।রাজীব এখনো নেশাগ্রস্তের মত এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাতে লেগে থাকা ক্রিমগুলো খাচ্ছে।হঠাত করে ও আমাকে টান মেরে নিজের বাহুডোরে বন্দী করে নিল। আমার ঘাড়ের ওপর ওর গরম নিশ্বাস আমার বুকে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছিল।
রাজীব ধীর কন্ঠে আমার কানে বলল
-ডার্লিং আজকে যদি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই খুব কি ক্ষতি হবে?
আমি অনেকটা ঘোরের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাজীবের কথাগুলো শুনছিলাম।
-কিন্তু রাজীব…..
-প্লিজ ডার্লিং না করো না।Its my birthday. আমাকে বার্থডে গিফট দেবে না?
রাজীবের কোন কথার জবাব আর তখন আমি দিতে পারিনি।আমি নিজেও খুব করে চেয়েছিলাম রাজীব আমাকে নিজের করে নিক।আমার সেই আশা পূরন হচ্ছে।আমি আর রাজীবকে কোন বাধা দেই নি।রাজীব সেদিন আমাকে নিজের করে নিয়েছিল।
এতটুকু বলেই থামল রাফিয়া আপু।আমার চোখে চোখ মেলাচ্ছেন না তিনি।তার দৃষ্টি এখন আমার টেবিলের উপর রাখা ফুলদানীতে সাজানো কৃত্রিম ফুলগুলোর উপর।
.
.
-সেই থেকে শুরু। এর পরে অনেকবারই রাজীব আমাকে ডেকেছে।কখনো জোর করে কখনো বা স্বেচ্ছায়্ আমি তার কাছে গিয়েছি।কিন্তু আমি জানতাম না ওকে বিশ্বাস করার এত বড় শাস্তি আমাকে পেতে হবে।মাস তিনেক পর জানতে পারলাম আমি এখন আর এই দুনিয়ায় একা নই। আমার মধ্যে বেড়ে উঠছে আরেকটা অজানা প্রানের অস্তিত্ব।খবরটা শুনে আমার যেন খুশির সীমা ছিল না। হালকা শঙ্কাও কাজ করছিল আমার মধ্যে। কিন্তু রাজীব আমাকে ঠিকি মেনে নেবে।
ঠিক যতটা আশা নিয়ে আমি রাজীবের দারস্থ হয়েছিলাম আমাকে তার দ্বিগুন অবাক করে রাজীব বলল
– কনসিভ করেছ ভালো কথা।এবোরশন করে নেও।
-রাজীব তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে!আমার প্রেগন্যান্সিতে কমপ্লিকেশন আছে।এবোরশন করতে চাইলে আমার ক্ষতি হবে এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।তাছাড়া রাজীব এটা তোমার আর আমার ভালোবাসার চিহ্ন।আমি কীভাবে একে শেষ করে দেব?আমাদের পাপের শাস্তি কেন এই মাসুম বাচ্চা পাবে!আমি তো তোমাকে বলছিনা এখন বিয়ে করতে। শুধু কোর্ট ম্যারেজ করে রেখে দিলেই তো হয়।আমি শুধু তোমার কাছে আমার সন্তানের বৈধতা চাই।
তুমি যদি তা করতে না পার তাহলে আমি অন্য কোন উপায় অবলম্বন করতে বাধ্য হব।
আমার কথা শুনে রাজীব বেশ ঘাবড়ে যায়।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
-আরে আরে ডার্লিং রাগ কর কেন?আমি তো জাস্ট এম্নিই বললাম। তুমি যা বলবে তাই হবে।আমাকে কয়েকটা দিন সময় দেও আমি সব ঠিক করে দেব। ওকে?
এই টুকু বলেই আমাকে সেদিন বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল রাজীব।ওর কথার মর্মার্থ আমি বুঝতে পেরেছিলাম ৪ সেপ্টেম্বর এর রাতে।
সেদিন ছিল রাজীবের প্রকৃত জন্মদিন।ভর সন্ধ্যায় যখন পাখিরা নীড়ে ফিরতে ব্যস্ত তখনি ফোনটা বেজে উঠল।রাজীবের ফোন।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে রাজীব বলে উঠল
– ডার্লিং রেডি হয়ে ভার্সিটির সামনে পুকুর পারে আসো। আমরা আজকেই কোর্ট ম্যারেজ করব।
খুশিতে নাচতে নাচতে হল থেকে বেরিয়ে গেলাম তাড়াহুড়ো করে। পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখি রাজীব পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।আমি কাছে যেতেই সে কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিল।রাজীব সেখানে দাড়িয়েই আমাকে অযাচিতভাবেই স্পর্শ করতে লাগল।ওর প্রতিটা স্পর্শেই ছিল নোংরামি আর কামভাব।আমি নিজেকে ওর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম
-রাজীব আমি প্রেগন্যান্ট। এখন এসব ঠিক না।
-Oh Come on Darling. Its my birthday.
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-মানে?
আমার কথা শুনে রাজীব হাসতে লাগল। পেটে হাত দিয়ে হাসছে ও।হাসি থামিয়ে বলল
-তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে এখানে বিয়ে করার জন্যে ডেকেছি?
রাতে কোন রেজিস্ট্রার তোমার বিয়ে করানোর জন্যে বসে আছে?
অবশ্য তোমার কোন দোশ নেই জানু।আমি তোমাকে একটু খানি মিথ্যা কথা বলেছি।আসলে সেদিন আমার জন্মদিন ছিল না।আমার জন্মদিন আজকে।প্রথম দিন দেখেই ফ্রেন্ডদের সাথে বাজী ধরেছিলাম যে তোমাকে আমার বেড পার্টনার করব।সব কিছুই ছিল সেই বাজীরই প্লান।মাঝ থেকে তোমার বোকামি আর অতিরিক্ত ভালোবাসার জ্বালায় এই বোঝা ঘাড়ে এসে চাপল।
মুহুর্তেই রাজিব চোখ মুখ কঠিন করে বলল
-তোমার কি মনে হয় যে তুমি এসে বলবে তুমি আমার বাচ্চার মা হয়েছ আর আমিও এটা মেনে নেব?প্রমান কি এটা আমার বাচ্চা?
রাজীবের কথা শুনে আমার যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।কথা যেন গলায় এসেও দলা পাকিয়ে ফিরে যাচ্ছে।কোন রকমে বলে উঠলাম
-এসব কি বলছ তুমি রাজীব?আমি তো শুধু তোমার সাথেই….
-মানি না। যে মেয়ে বয়ফ্রেন্ডকে বার্থডে গিফট হিসেবে ভার্জিনিটি দিতে পারে সে মেয়ে সব কিছুই করতে পারে।বাংলা সিনেমা আমিও অনেক দেখেছি জানু।এখন তুমি বলবে তুমি সবাইকে বলে দিবে আমার নামে বদনাম ছড়িয়ে দিবে ব্লা ব্লা ব্লা।তাই তার আগেই তোমাকে একটা জিনিস দেখাই।
রাজীব পকেট থেকে ফোন বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল।এটা দেখার জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।রাজীব আমাদের প্রতিটা একাকীত্ব মুহুর্তের ভিডিও ধারন করে রেখেছে।
আমি তড়িঘড়ি করে সব কিছু ডিলিট করতে লাগলাম।আমার কান্ড দেখে রাজীব হেসে বলল
– কত জায়গা থেকে ডিলিট করবা জানু?আমার আরও দুইটা ফোনে এই ভিডিও এর কপি আছে।দুইটা পেনড্রাইভ আর আমার ল্যাপটপ তো আছেই।তোমার একটা ভুল স্টেপ তোমাকে রাতারাতি ফেমাস করে দিবে জানু।

আমি ধপ করে মাটিতে বসে পড়লাম।রাজীব আমার সামনে হাটু বাকিয়ে বসে বলল
-অযথা নাটক করে আমার সময় নষ্ট করোনা তো।।আজকে আমার বার্থডে। মুড ভালো আছে।আসো রাতটাকে আরও রঙ্গিন করি।
বলেই রাজীব আমার হাত ধরে টানতে লাগল।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছি।এই পুকুর নির্জন পুকুর পাড়ে কেউ আসবে না এই ভর সন্ধ্যায়।চেচিয়েও লাভ নেই।দিপা তখন আসছিল তার টিউশন শেষ করে। আমার চেচামেচি শুনে ছুটে এল আমার কাছে।ও রাজীবের হাত থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করতে লাগল।কিন্তু রাজীবের শক্তির সাথে পেরে উঠল না।রাজীব এক ধাক্কা দিয়ে ওকে পুকুর পাড়ে ফেলে দিল। আমাকে টেনে নিয়ে গেল পাশের জংগলে। সেখানে গিয়ে হামলে পড়ল আমার উপরে।নির্মম পাশবিক অত্যাচার চালাতে লাগল আমার উপর।ব্যাথায় কষ্টে আমার তখন শেষ নিশ্বাস গনার উপক্রম। স্বার্থোদ্ধার করেই ও আমাকে ছেচড়িয়ে নিয়ে গেল পুকুর পাড়ে।রাজীবের ইচ্ছা ছিল আমাকে মেরে ফেলার।কিন্তু তার আগেই দিপা গিয়ে রেওয়াজকে ডেকে আনে।রেওয়াজকে দেখে রাজীব আমাকে সেখানে একা রেখে পালিয়ে যায়।চোখ বুজবার আগে শুধু এতটুকু বোধ পেয়েছিলাম যে রেওয়াজ আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছে।……
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here