#অপেক্ষা
#পার্ট_০৫
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
মাস খানেক সময় কেটে গেছে।ভার্সিটির সবার সাথে একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছে আমার।হাস্যোজ্জ্বল চেহারা আর মিশুকতা স্বভাব দিয়ে ধীরে ধীরে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছি আমি।বড় ভাই আপুরা বেশ স্নেহ করেন আমাকে।শুধু দিপা আপুই আমাকে এড়িয়ে চলেন।যদিও উনি ব্যাপারটা বুঝতে দেন না কিন্তু আমার নজর এড়ায় না।বাসা ছেড়ে আমি এখন হলে এসে উঠেছি।রাফিয়া আপু আর আমি একই হলে থাকি।এমনকি আমাদের রুম ও পাশাপাশি।রাফিয়া আপুর সাথে এখন আমার গলায় গলায় ভাব। যেকোন বিপদে সবার আগেই আমি রাফিয়া আপুর দারস্থ হই।এই তো সেদিন এর কথা রাতে রুমে বসে পরছিলাম। ঘড়িতে তখন প্রায় ১১ঃ৩০ টা বাজে।হঠাত করে কে যেন দরজায় নক করল।মনের ভুল ভেবে যখনি আবার পড়ায় মনযোগ দিব তখনি ভারী পুরুষালী কন্ঠে কেউ একজন ডেকে উঠল
-কায়া দরজা খোল!
কন্ঠটা শুনেই যেন কেপে উঠলাম আমি।রক্ত শীতল করা আওয়াজ।মুহুর্তের মধ্যেই যেন নিজের জায়গায় জমে গেলাম।রুম মেট আজ গ্রামের বাসায় গিয়েছে।একা ঘরে আছি তাই হয়তো মনের মধ্যে নানা রকম উদ্ভট চিন্তাভাবনা আসছে।মাথা ঝেড়ে আবার পরতে বসলাম।মিনিট পাচেক এর ব্যবধান আবার শোনা গেল সেই ভয়ংকর আওয়াজ। এবার যেন শিউরে উঠলাম আমি।না এভাবে আর থাকা যাবে না।আমি টর্চলাইট,মোবাইল আর বইটা হাতে উঠে দাড়ালাম।একপা দুপা করে পা টিপে টিপে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালাম।আয়াতুল কুরসী পরে বুকে ফু দিয়ে দরজার নবে হাত দিলাম৷ দরজাখানা হালকা ফাক করে হালকা উকি দিলাম। নাহ কেউ নেই। রুম থেকে বের হয়ে তালা লাগিয়ে রাফিয়া আপুর দরজায় নক করলাম।
-আপু ও আপু দরজা খোল।আপু জলদি খোল।
রাফিয়া আপু দরজা খোলা মাত্রই আমি হুড়মুড় করে উনার রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম।আপু অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল
-কিরে তুই এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?এত রাতে কি হল তোর?
-বলছি আপু। আগে একগ্লাস পানি খাব।
আমি গিয়ে আপুর বিছানার উপরে বসলাম। আপু আমাকে একগ্লাস পানি এনে দিলেন।আমি এক চুমুকেই পুরো গ্লাস পানি শেষ করে ধাতস্ত হওয়ার চেস্টা করছি।
-এখন বল কি হয়েছে! তোর এই অবস্থা কেন?
আমি আপুকে সব খুলে বললাম। আমার কথা শুনে আপুকে বেশ চিন্তিত মনে হল।আপু কপালে চিন্তার ভাজ ফুটিয়ে বললেন
-এত রাতে তো গার্লস হোস্টেলে কেউ আসার কথা না। কে আসবে?
আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-আপু ভুত নয়তো!
আপু হালকা হেসে বললেন
-ভুতের চেয়ে মানুষ বেশি ভয়ংকর।
আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম
-মানে?
আপু কথা ঘুরিয়ে বললেন
-কিছু না। অন্য কোন দিন বলব। তুই যা ঘুমিয়ে পর৷ রাত অনেক হয়েছে।
রাফিয়া আপু কিছু একটা বলতে গিয়েও চেপে গেলেন।হয়তো কোন অজানা তথ্য,হয়তো বা কোন অজানা রহস্য৷
.
.
ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি ক্যান্টিনে বসে।হঠাত টুংটাং শব্দে ফোনের নোটিফিকেশন জানান দিয়ে ঊঠল।ফোনটা অন করতেই দেখি স্বপ্নের বালক জসীম নামের একটা আইডি থেকে রিকুয়েষ্ট এসেছে।ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট এ ছোট একখানা বার্তা
-Helo mis.Apnar sathe ektu kotha balta pari?
আমি রিপ্লাই দিলাম
-জ্বি বলুন।
সাথে সাথেই ম্যাসেজ সীন করল সে।
ভালো মন্দ কিছু আলাপ করেই জিজ্ঞেস করে বসল
-Baiya kamon achey?
-কোন ভাইয়া?আমার কোন ভাই নাই।
-Are oi bhaiya na. Aponar bf mane boy friend kimon achey?
-সরি ভাইয়া আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নাই।
-Seta to good nius.tai bole chobaike bhaiya bolba?eta to thik na.
-আপনার কি প্রয়োজনীয় কিছু বলার আছে?
-Ha achey tw.Ta sundori ki koro tumi?
সময়ের সাথে ম্যাসেজের বিরক্তির পরিমান বাড়ছে।আমি ম্যাসেজ আনসীন করে তার প্রোফাইল ঘুরতে গেলাম।ছেলে রাজনীতির সাথে যুক্ত।ফ্যান ফলোয়ার বেশ অনেক।অযথা এরকম ছেলের মুখ না লাগাই ভালো।
আমি ডাটা অফ করে ফোন পকেটে গুজে রাখলাম।
সন্ধ্যায় ক্লাস শেষ করে হলে ফিরে আসলাম।ডাটা অন করতেই দেখি সেই আইডি থেকে বেশ কয়েকখানা ম্যাসেজ।
-Ki bapar? Riply deo na kan?
-koi tumj babu?
-babu ki koro?
-ei meye eto vab ken tomar?
-nijeke ki mone koro hu?
-tomar moto hajarta amar pichne ghure ar ami tomake time dicchi to vab dakhao?
-ai babu koi tumi?
-miss korchi tomake.
আরও ২০/২৫ খানা ম্যাসেজ। আমি ছোট্ট করে একটা রিপ্লাই দিলাম
-কি চাই আপনার?
-Tumake
– মানে?
-Tumar sathe prem korte chai.
-সরি আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি।
-Kortei paro.Tobe biye amakei korte hobe.
-আপনি কি আমাকে থ্রেড দিচ্ছেন?
-Tumi ja vabo janemon.
আমি ম্যাসেজ সীন করে রাখে দিলাম। এরকম শ খানেক অনলাইন প্রোপোজাল প্রতিনিয়ত আসে মেয়েদের ইনবক্সে।এসব নিয়ে অযথা মাথা ঘামানোর কোন দরকার নাই।আমি ফোন রেখে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
.
.
সপ্তাহ খানেক ক্লাস আর এসাইনমেন্ট নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম।অনলাইনে এক্টিভ হওয়ার টাইম পাইনি।সপ্তাহ খানেক পর আইডিতে ঢুকেই যেন চক্ষু চরক গাছ।শখানেক ম্যাসেজ আর ট্যাগে আইডি ভর্তি।১০/১২ খানা অজানা আইডি থেকে ম্যাসেজ এসেছে
-ভাবী কেমন আছেন?
– Are vabi apni naki bhaiyar upor rag kore achen?
-vabi vaiyar upor rag kore thakiyen na.
– vabi go apni eto sundor ken?
-আপনি অনেক লাকি ভাবী ভাইয়ের মত মানুষ আপনাকে পছন্দ করেছে।
আরও কত কি!সব দেখতে দেখতে আমার মাথা চরকির মত গোলগোল ঘুরতে লাগল।এমন সময় দরজায় কেউ একজন নক করলেন।দরজা খুলেই অবাক হলাম আমি।রাফিয়া আপু দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।রাগে ফুসছেন উনি।আমি কিছু বলার আগেই আপু বলে উঠলেন
-কায়া তোর কি মাথাটাথা ঠিক আছে?কি শুরু করেছিস তুই?
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– কি বলছ আপু?আমি আবার কি করলাম?
আপু ফোনটা আমার হাতে ধরে দিয়ে বললেন
– দেখ কি করেছিস তুই?
ফোন হাতে দেখি আমার প্রোফাইল বের করা। সেখানে সেই স্বপ্নের বালক জসীমের ৪/৫ খানা ট্যাগ পোস্ট ভাসছে।
-প্রেম করবি ভালো কথা।কিন্তু গোটা দুনিয়াকে জানোনোর কি দরকার!তুই জানিস তোর এই টাইপ কাজ গুলোর জন্যে ভার্সিটিতে তোকে কত কিছু ফেস করতে হইতে পারে!
-দাড়াও দেখাচ্ছি।
বলেই আমি নিজের ফোনটা আপুর হাতে ধরিয়ে দিলাম।
আপু শুরু থেকেই সব ম্যাসেজ পরতে লাগলেন।লাস্ট ম্যাসেজটা পড়ে আপু থমকে গেলেন।
-Vab barche khub na tor?khara aitachi Dhakay.tore tuila niya jaye biya korum.wait.
আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আপু।
-মানে কি এসবের!ঐ ছেলে তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে চায়!
-আরে ছাড়ো তো আপু৷ এসব ভুয়া কথা কত শুনেছি।কিছুই হবে না।
-কিছু হবে না বলে গা ছেড়ে দেওয়ার মত বিষয় না এটা কায়া।অলরেডি ১০/১২জন ছেলেপুলেকে লাগিয়ে দিয়েছে তোর উপরে নজর দারি করার জন্যে তোর খোজ রাখার জন্যে।আর তুই বলছিস এসব কিছুই না!
যে এক ভুল আমি করেছি সে ভুল আমি তোকে করতে দিব না।
কথাটা বলেই উঠে চলে যাচ্ছিল রাফিয়া আপু।আমি পেছন থেকে আপুর হাত টেনে ধরলাম।
-কিসের ভুল আপু?
-কিছু না।
– প্লিজ আপু বলেন।সেদিন রাতেও আপনি কিছু একটা বলতে গিয়ে চেপে গিয়েছিলেন।আজকে আপনাকে বলতেই হবে আপু।এটা আমার সেফটির প্রশ্ন।
-কায়া….
-আপু প্লিজ…
– শোন তাহলে..।
আজ থেকে বছর দুয়েক আগের কথা।রেওয়াজ আর আমি অনেক ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম।হাসি খুনশুটি সব কিছু মিলে বেশ জমে উঠেছিল আমাদের সম্পর্কটা।আমাদের ফ্রেন্ডশিপ দেখে অনেকেই ভাবতো হয়তো আমরা কাপল। আমার মনেও রেওয়াজের জন্যে হালকা পাতলা অনুভূতি জন্মেছিল।কিন্তু রেওয়াজ ছিল নিজের জায়গায় অটল।ও সবসময় আমাকে নিজের বোনের স্থান দিয়েছে।ও মেয়েদেরকে যথেষ্ট সম্মান করে।সব কিছুই ঠিক ভাবে চলছিল।কিন্তু ভাগ্য সব সময় সহায় হয় না।আমার উপর নজর পড়ল ভার্সিটির পলিটিক্যাল লিডার রাজীবের।তার আগ বাড়িয়ে কথা বলা,তার সবকিছুই যেন ভালোলাগতে শুরু করল।ভালোলাগা থেকে ধীরে ধীরে প্রনয় তার পর ঘনিষ্ঠতা।রেওয়াজ জানতো সব। শুরু থেকেই ও আমার আর রাজীবের সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিল। ও বলত রাজীব নাকি মেয়েবাজ।আমিই ওর জীবনের প্রথম মেয়ে নই। আমার আগেও অনেকের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।কিন্তু আমি রেওয়াজের কথাগুলো হেসে উড়িয়ে দিয়েছি।আমি ভেবেছিলাম হয়তো রেওয়াজ আমাকে জেলাস ফিল করছে। আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।তাই আমিও ওকে জ্বালানোর জন্যে আরও তোড়জোড় করে রাজীবের সাথে প্রেমে মগ্ন হয়ে গেলাম।ভেবেছিলাম হয়তো সব কিছু আমার ইচ্ছামতই চলছিল।কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম আমি এই খেলার মোহরা ছিলাম মাত্র।আমাকে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠের পুতুলের মত।…..
চলবে
{দেরী করার জন্যে দুঃখিত।বাসার মেইন সুইচবোর্ড পুরে গেছে হঠাত করে।কারেন্ট নাই প্রায় ৪০+ ঘন্টা।ফোনে চার্জ ছিল।আল্লাহর রহমতে এখন সব কিছু প্রায় স্বাভাবিক। নেক্সট পার্ট ইন শা আল্লাহ কালকে পাবেন}