অপরাজিতা- ৬

প্রচন্ড জোরে ধাক্কা পড়ছে দরজায়। ধড়াম ধড়াম শব্দে কেঁপে উঠল চারপাশ। শেষরাত্রির নিস্তব্ধতা
টুকরো টুকরো হয়ে গেছে মুহুর্তে।
দরজার ওপাশে আতঙ্কিত কন্ঠে শাশুড়ি ডাকছে।

: নুপুর দরজা খোল, এ্যাই নুপুর কি হলো ?

শাশুড়ি চেঁচালেও নুপুরের কানে তা পৌছঁল না। কারন অচেতন হয়ে নুপুর পড়ে আছে বিছানায়।সারা বিছানায় ফুল ছড়ানো।
রিফাতের গোঙানো থেমেছে।
নুপুরকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে সে ভয় পেলো।
ফ্যাকাশে মুখ আর বিবর্ন চেহারা নিয়ে
সে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। হুড়মুড় করে শাশুড়ি আর শারমিন ঢুকল।
বিছানায় নুপুরকে পড়ে থাকতে দেখে শাশুড়ির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে ভয় পেয়ে ছুটে আসে।

: নুপুর, এ্যাই মেয়ে।
প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিলেও নুপুর নড়াচড়া করল না।
এমনিতে রিফাতের চিৎকারে তার ঘুম ভেঙেছে।
তার উপর নুপুরকে এই অবস্থায় দেখে সাংঘাতিক ঘাবড়ে গেছে।
রিফাত ছেলেটা তাকে কতই না যন্ত্রনা দেবে আর।

: শারমিন কি হলো মেয়েটার। এমন করে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কি করি বলো তো।
শারমিনও ভয় পেয়েছে। সে ঢোক গিলে কোন রকমে দু চারটা কথা বলে সরে পড়ে।

ফারজানা ভয়ানক চটে যায় শারমিনের মতিগতি দেখে। মেয়েটা বড্ড চতুর। কেবল সুবিধা নিতে সামনে এসে হাজির।

: তুমি যাচ্ছো কোথায় শারমিন। পানি আনো ওর মাথায় ঢালো।
পরের মেয়ে এনেছি। কিছু হলে কৈফিয়ত দিতে হবে।

: ভাবী কি করমু কন। আমার ভয় করতাছে।
দেহেন তো রিফাত কেমন করছে।
শাশুড়ি ফারজানা রিফাতের অবস্থাটা দেখে দাঁত কিড়মিড় করে উঠে।
মনে মনে বল জীবনটাই আমার শেষ। কোনদিকে যে যাই।

: রিফাত শোনো, এদিকে আসো।

রিফাত সোফায় আধশোয়া ছিল। মায়ের কথায় উঠে এল।

: কি হয়েছিল তোমার ওভাবে চিৎকার করছিলে
যে?

: আম্মু ওই যে পোকা। ফুলের মধ্যে বসেছিল।

: হুম, তাতে কি হয়েছে?

: আমি ভয় পাই।

ফারজানার ভ্রু কুচকে যায়। তার ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়ে ফেলতে।
শারমিন ড্যাবড্যাব চোখে তাকাচ্ছে তার দিকে।
আবার মুখ লুকিয়ে হাসে।
ফারজানা দেখেও না দেখার ভান করে।

নুপুরের মাথায় পানি ঢালা হয়েছে। পুরো এক বালতি পানি। পানির তোড়ে বিছানাপত্র ভিজে একসার। তার শাশুড়ি উদগ্রীব হয়ে ঝুঁকে আছে। প্রচুর টেনশান হচ্ছে তার।
অনেকটা সময় পর নুপুরের জ্ঞান ফিরল।
সে উঠে বসতেই শাশুড়ি টাওয়াল দিয়ে চুলগুলো মুছে দেয়।

: নুপুর কি হয়েছে তোমার।,ওভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছো, আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।

নুপুর ভীষন দুর্বল বোধ করছে।এতটা চাপ মনের উপর। কিছুতেই নিতে পারছে না সে।
হঠাৎ করে তার মনে হল এক রাতে তার জীবনটা কেমন বদলে গেছে।
রিফাত ভয়ে নুপুরের দিকে তাকাচ্ছে।
নুপুর কয়েক সেকেন্ড দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
মন খারাপ হল খুব। এই লোকটার সাথে অনিশ্চিত একটা জীবনে জড়িয়ে গেছে সে।

নুপুর চুপ করে আছে।
শাশুড়ি তাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে।
: মা।,তুমি একটু স্থির হও। রিফাত খুব ভালো ছেলে আর একটু ভীতু টাইপের।
তুমি কেবল বুঝে চলবে মা ওর সাথে।

শাশুড়ি অসহায় ভাবে এটুকু বলতেই নুপুর তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে সবাইকে এক এক করে দেখে।
তার আচরনে শাশুড়ি একটু হতভম্ব হয়ে পড়ে।

: মা, আপনার ছেলে কি অসুস্থ?

: মানে?

শাশুড়ি চটে গেছে। এত ছোট মেয়ে কিন্ত বুদ্ধি জ্ঞান তুখোড়। এটাই চিন্তার কথা।

: আপনি বিশ্বাস করুন এমন করে গোঙানোর শব্দ একটা সুস্থ মানুষ করতে পারে না।

শাশুড়ির মুখ কালো হয়ে গেছে। সে কি বলবে বুঝল না।
তার বিবর্ণ মুখে হাসি এলেও কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে।

: ওহ! নুপুর ও ফুলের পোকা দেখে ভয় পেয়েছে।
আসলে কি জানো তেলাপোকার কারনে ওর এমন ভীতি সেই ছোটবেলা থেকে। তাই যেকোন পোকা মাকড় দেখলে,,

নুপুর হাসল। বিষণ্ণ হাসি। খুব সহজে তাকে ব্যাখ্যা দেয়া গেলো। যেন সে একটা বাচ্চা মেয়ে যা বলবে তাই বিশ্বাস করবে।

: তেলাপোকায় আমারও ভয় হয়। কিন্ত তাই বলে এমন চিৎকার আর গোঙানো সেটা আমায় খুব শকড করেছে। এমন ঘটনা আমি কখনও শুনিনি।
তাছাড়া আপনার ছেলে সারারাত একটা কথাও বলেনি আমার সাথে।
এটা কি স্বাভাবিক?

প্রশ্নটা তীরের মত বিধেছে। তবে যৌক্তিক প্রশ্ন।

:, রিফাত বেশ লাজুক আর সহজ সরল। ও তোমার সাথে ফ্রি হতে পারছে না তাই হয়তো কথা বলেনি।

নুপুর তর্ক করল না। সে বুঝে গেছে এখানে কথা বলে লাভ নেই। তার চেয়ে চুপ থাকা ভালো।

শাশুড়ি নুপুরকে যত্ন করে টেনে নিলেন নিজের কাছে।
মেয়েটা শকড হয়েছে। এটা কাটাতে হবে।

: তুমি এমনিতে নানা টেনশানে আছো তাই রিফাতের বিষয়টা তোমাকে বেশী ভাবাচ্ছে। নতুন জায়গা নতুন সম্পর্ক এগুলো যে কাউকে একটু দ্বিধায় ফেলে।
তুমি এসব ভেবো না।

: জ্বি।

শাশুড়ি বেশ স্বস্তি পাচ্ছে। মেয়েটা বুঝেছে তাহলে।

: নুপুর তুমি আগে ফ্রেশ হও। দারুন করে সাজো।
নিজের মত গুছিয়ে।নিচে আসো।
আমরা একসাথে নাশতা করব।

শাশুড়ি বের হতে হতে ছেলেকে তাগিদ দেয়।

: রিফাত তুমিও আসো।

দোতলায় ডাইনিং। বিশাল বড় খাবার টেবিল। নেমে আসতে আসতে লোভনীয় খাবারের ঘ্রান পাচ্ছে। টেবিল ভর্তি লোকজন। এত এত মানুষজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কাল রাতে। সবাইকে এক নজর দেখার কারনে এখন কাউকে তেমন আলাদা করে চিনতে পারছে না। এতগুলো উৎসুক চোখের সামনে কেমন বিব্রত লাগছে তার। বউ হলেই এমন হয় হয়তো। সবাই কি দেখে ওমন করে একটা মেয়ের মাঝে। খারাপ ভালো সব থাকে একটা মানুষের মাঝে। কিন্ত চট করে ভালোর চেয়ে খারাপটা সবার নজরে আগে পড়ে যায়। ওরা কে কি ভাবছে সেটা এই মুহুর্তে বোঝা যাচ্ছে না। তবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। চাপা হাসি ফিসফিস কথা সবই চলছে।

নুপুর শাড়ি পড়েছে। লাল হাফসিল্কের একটা শাড়ি। যদিও ওর মন খুব খারাপ। কিন্ত এতকিছু কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না। সে হাসিমুখে টেবিলে এসে বসল।
নুপুরকে দেখে বর্ষা মেয়েটা চেচিয়ে উঠে।

: ভাবী, ইশ! তুমি এত সুন্দর।
নুপুর লজ্জায় আড়ষ্ট হয়।
লাল শাড়িতে নুপুরকে সত্যি অসাধারন লাগছে। শাশুড়ি মুচকি হেসে নুপুরের পাশে বসল।

: আমার একমাত্র ছেলের বউ। এমন না হলে হবে?

এমন সময় পচিশ ছাব্বিশ বয়সের একটা মেয়ে শাশুড়ির পাশের চেয়ারটা দখল করে বসল।
প্রচুর সাজ করা। গাঢ় মেকাপ। কড়া লিপস্টিকে এই সকাল সকাল কেমন উদ্ভট দেখাচ্ছে।

: মা তুমি ভাইয়ার বউ পেয়ে আমাকেই ভুলে গেছো,পাশের চেয়ারটা আমার ছিল ভুলে যেও না?
শাশুড়ি মেয়েকে আদর করল।

: তৃনা তুই আর নুপুর আমার দুই মেয়ে আজ থেকে।

নুপুর এই প্রথম তৃনা মেয়েটার চোখের দিকে তাকালো।
কেমন বোকা বোকা ভাবভঙ্গি। বয়সের সঙ্গে ঠিক মানানসই না।

নুপুর আস্তে করে তৃনার পাশের চেয়ারটায় এসে বসল।

: তৃনা ভয় পেয়ো না। তোমার জায়গা কখনও আমি দখল করব না। এটা নিশ্চিত থাকো।

তৃনা খুব উচ্ছসিত হয়ে বকবক করছে।

খাবার সার্ভ করা হয়েছে। পরোটা, গোশত ভুনা, খিচুড়ি মিষ্টি পায়েশ আর সাদা রুটি। সবার পাতে খাবার দেয়া হয়েছে।
শারমিনের ব্যস্ততা সীমাহীন। এতটুকু ফুরসত নাই। নুপুরের প্রচুর ক্ষিধে পেয়েছিল কিন্ত সে খেতে পারল না। একটা পরোটা ছিড়ে খেতে খেতে আনমনা হয়ে যাচ্ছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। জীবনের বাকগুলো কত অদ্ভুত। একেবারে পাতা উল্টে যায়। কারোর ক্ষেত্রে সীমাহীন পাওয়ার কারোরটা একেবারে বিপরীত।

রিফাত খেতে বসেছে নুপুরের উল্টো দিকে।
ফ্রেশ হবার পরও তার চেহারা ভালো লাগছে না। একটা ট্রাউজার পড়েছে। সাথে টিশার্ট। মলিন বেশভুষা।
নুপুরের ভালো লাগল না এটা।
লোকটা গপগপ খাবার খাচ্ছে কিন্ত কারোর সাথে কথা বলছে না।
এবং অন্যান্য কেউই তার সাথে খুব একটা গল্প করছে না। কেমন আলাদা আলাদা।
রিফাত খাওয়া শেষে উঠে চলে গেলো।
নুপুর ভাবল রিফাত তাকে ডাকবে। কিন্ত ডাকেনি।

খাবার খাওয়া শেষ হয়। সবাই সোফাতে গা এলিয়ে বসল। চা দিয়েছে ড্রইংরুমে।
সকাল সাতটায় ধোঁয়া উঠা চায়ের ঘ্রানে সবাই চনমনে।
নুপুর এদিক সেদিক রিফাতকে খুজঁল। লোকটা একবারও তাকে নাম ধরে।ডাকেনি। তার পাশেও বসেনি। মনে হয় অনেক দুরের মানুষ।
সবচেয়ে বড় কথা রিফাত স্বাভাবিক আচরন করছে না।

শাশুড়ি চায়ের মগ হাতে সোফায় বসেছে। খুব সম্ভবত মিটিং হবে।
নুপুর চা খেলো না। কিন্ত কফির ঘ্রান পাচ্ছে সে। যদিও তার খেতে ইচ্ছে করছে কিন্ত বলল না। এই বাড়ি তার আপন হলেও সেটা ভাবতে পারছে না সে। সম্ভব হচ্ছে না।
নুপুরের মনে হল সে বাইরের একটা মানুষ। অনেক দুর থেকে বেড়াতে এসেছে । অনেকটা মেহমানের মত। যেন একটু পরেই চলে যাবে।
যাবার কথা মাথায় আসতেই তার মন চঞ্চল হয়ে উঠে।
মা বাবা তিশা চাচী রাইমা সবার মুখগুলো ভেসে উঠল।
একটা দিনের মধ্যে এতদিনের প্রিয় মুখগুলো কেমন পর পর লাগছে।

আচ্ছা নুপুর কি বলবে যে সে বাবার বাড়িতে যাবে। নাকি চুপচাপ থেকে পরে বলবে।
আগে মিটিং হোক। কি কি বিষয়ে কথা হবে সেটা বুঝুক তারপর বলবে।

মিটিং এ নুপুর রিফাতের রিসিপশান নিয়ে কথা হয়।
কেউ বলছে এক সপ্তাহ পর করতে। কেউ বলছে দুদিন পর। শাশুড়ি ভয়ানক রেগে গিয়ে মিটিং শেষ করে দেয়।
সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকল।
রুমে এসে নুপুর শাড়ি পাল্টে থ্রিপিস পড়ল । সে একটু অস্থির। আচ্ছা একটু বের হলে কি এই অস্থিরতা কমবে?
কিন্ত বাইরে কোথায় যাবে। কল্যানপুরে যাওয়া সম্ভব না। বিশেষ করে ওরা যেতে দেবে না। এটা শাশুড়িকে দেখে বোঝা শেষ।
তাহলে কি করবে।

ব্যালকনিতে এসে দাড়াল নুপুর। কি সুন্দর সকাল। দিনের শুরু। যদিও গাড়ি হর্নের কারনে শহরের রূপ চিরকাল বিচ্ছিরি লাগে।
হঠাৎ খেয়াল করল।রিফাত মোবাইল হাতে গেমস খেলছে।
এটা দেখা মাত্র নুপুরের রাগ হল চরমে।
সে গটগট করে রিফাতের কাছে এসে ডাকল।

: আপনি কি খেলছেন?

সে মুখ নয় তুলে বলল
: গেইম খেলি।

নুপুর তাজ্জব হয়ে যায়। এটা কেমন ধরনের আচরন। সে তার বিয়ে করা বউ অথচ একবারও তার সাথে দুটো কথা বলল না।
খারাপ ভালো জানার চেষ্টা করল না।
এতটা নিষ্প্রভ আচরনের রহস্য কি। লজ্জা জড়তা নাকি সংকোচ।

: আপনার বয়সী একটা লোক গেইম খেলে?

কোন উত্তর এলো না।।
নুপুর বিরক্তি নিয়ে চলে আসতে আসতে চট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কোথাও যাবে। তার দমবন্ধ লাগছে। একটা বন্য জন্তর মত আটকে থাকা নিজেকে একটু শ্বাস নেবার জন্য হলেও বাইরে যাবে।
কিন্ত কোথায় যাবে।
হঠাৎ তার মনে হল আরে আমার ভার্সিটি তো এই উত্তরায়। একবারও তো মনে হয়নি। উফ! এক্ষুনি যাবে সে। কিন্ত শাশুড়ি যদি না যেতে দেয়। না মনে মনে নুপুর কঠিন ডিসিশান নিল। যেভাবে হোক সে ক্যাম্পাসে যাবেই। ইশ! খুব ভালো হবে।
নুপুর খুশীতে চঞ্চল হয়ে উঠে।
সে খুব দ্রুত রেডী হয়ে পার্সটা হাতে নিলো।
ব্যালকনিতে উঁকি দিয়ে দেখে রিফাত একমনে গেইম খেলছে।

শাশুড়ির রুমে এসে নক করতেই দেখে শাশুড়ি কার সাথে যেন নিচু গলায় কথা বলছে।

: মা আসব?

নুপুরের আওয়াজ পেয়ে শাশুড়ি চমকে যায়।

: কি আশ্চর্য তোমার বাড়িতে তোমাকেই পারমিশন নিতে হবে?

: মা আমি একটু ক্যাম্পাসে যাবো।
শাশুড়ি নুপুরকে বোঝার চেষ্টা করল। মেয়েটা খুব চালাক। বিয়ের পরদিন সে একা কোথাও যাবার বায়না করছে এর মানে কি। নাকি অন্য কোন প্ল্যান আটছে।
নাহ এত সহজে ছেড়ে দেয়া যাবে না।

শাশুড়ি হাসি হাসি মুখে নুপুরের হাতে হাত রাখে। স্পর্শে আন্তরিকতা নেই। কেমন কৃত্রিম।

: খুব দরকার?

: জ্বি।

: যাও, তবে রিফাতকে সাথে নাও। আর গাড়ি নিয়ে যাও।

: গাড়ি লাগবে না মা। রিকশা নিয়ে যাবো। এখান থেকে খুব কাছে। সেক্টর এগারোতে।

: ঠিক আছে যাও।

শাশুড়ির মন খচখচ করলেও সে নুপুরকে ছাড়তে বাধ্য হল। মেয়েটা এমনিতে শকড হয়ে আছে। তার উপর যদি না করা হত এতে মনের উপর চাপ বেড়ে একটা অঘটন ঘটে গেলে তখন দুই দিকে ঝামেলা হয়ে যাবে।

সুন্দর সকাল। রৌদ্রোজ্জল দিন। মন ভালো হবার দিন।রিকশায় চড়লে এমনিতে ভালো লাগে।
পাশাপাশি বসলেও নুপুর একটু সরে বসেছে।
রিফাতের সান্নিধ্য ওর পছন্দ হচ্ছে না।
মুখে কুলুপ এটে বসা মানুষগুলোকে ভালো লাগার কোন কারন থাকে না।
এরা অসহ্যকর। নুপুর একবার দেখে মুখ ঘুরিয়ে রাখল।

ক্যাম্পাসে এসে রিকশা থামিয়ে নুপুর নেমে যায়।

: আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি এই যাবো আর আসব।

: ঠিক আছে।

প্রায় বিশ মিনিট পার হয়। নুপুর এল না।রিকশাওয়ালা ক্ষেপে গিয়ে ভাড়া চাইল।

: মামা আর একটু দাঁড়ান।

এমন সময় রিফাতের ফোন বেজে উঠে।
রিসিভ করতেই ওপাশে তার মায়ের গলা শুনতে পায়।

: রিফাত কোথায় তোরা?

: মা নুপুরের ক্যাম্পাসে।
: ঠিক আছে, তুই সাথে থাক।
আর শোন নুপুরকে একা কোথাও যেতে দিবি না।

ফোনটা দে তো নুপুরকে।

: মা নুপুর এখানে নেই।
: কোথায় গেছে?

: জানি না, আমাকে বলল একটু দাঁড়ান আমি আসছি।
অনেকক্ষন হয়ে গেছে ও তো আসছে না।

: কতক্ষন হয়েছে?

: আধঘণ্টার মত।

ফারজানা চিন্তায় পড়ে যায়। নুপুর কি রিফাতকে ফেলে চলে গেছে? কাল রাতে যা হয়েছে এরপর মেয়েটাকে বোধহয় আটকে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।
যদি এমন হয়েই যায় তবে মান সন্মান আর রইল না।
ফারজানার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। প্রেসার বোধহয় কমেই যাচ্ছে। এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেতে হবে।

…….. তামান্না হাসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here