#অদ্ভুত__মুগ্ধতা
৪র্থ পর্ব
©মিশু মনি
.
মিশুর সাথে পরিচিত হয়ে সবারই খুব ভালো লাগলো। এমনকি হিমুর ও খুব ভালো লেগেছে মিশুকে।
সবাই মিলে যত্ন করে নাস্তা খাওয়ালো ওকে।নতুন বউ এখনো রুম থেকে বের হয়নি।হয়ত লজ্জা বা সংকোচ কাজ করছে।নাস্তা খাওয়া শেষ করে মিশু নিজেই খুজিন্তার সাথে দেখা করতে গেলো।
দরজার বাইরে থেকে বলল,আসতে পারি?
খুজিন্তা মাত্রার সাথে গল্প করছিল।মিশুর কন্ঠ শুনে চমকে উঠল। মাত্রাও উঠে দাঁড়াল। এমন কন্ঠ তো এ বাড়িতে কারো নেই!
মাত্রা দরজায় এসে কয়েক পলক মিশুর দিকে চেয়ে থেকে বলল,আপনি কে?
মিশু হেসে বলল,আমি নতুন বউয়ের সাথে আলাপ করতে এসেছি।
– আসুন আসুন।
মিশু ঘরে ঢুকে খুজিন্তার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী।আনকমন চেহারা! কিছু কিছু মেয়েদের চেহারা একইরকম থাকে প্রায়।কিন্তু এই মেয়েটা দেখতে অন্য কারো মত নয়।এর আগে এমন চেহারার মেয়ে ও দেখেনি।
খুজিন্তা হেসে বলল,আপনি?
– আমি মিশু।তোমাদের ওয়েডিং প্লানার।
– সত্যি! এর মধ্যে ওয়েডিং প্লানার ও এসে হাজির! আমি জাস্ট বিলিভ করতে পারছি না।
মিশু এসে নতুন বউয়ের হাত ধরে বলল,তোমাকে ই দেখতে এসেছিলাম। এসেই ওয়েডিং প্লানার হয়ে গেলাম।
– মানে!
– ও কিছুনা।
বলেই মিশু মিষ্টি করে হাসল।তারপর খুজিন্তাকে নিয়ে বসার ঘরে আসলো।এখানে সবাই বসে আছে।মিশু ফিসফিস করে খুজিন্তাকে সবার সাথে সহজ হতে বলল।
খুজিন্তা নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে সবাইকে এগিয়ে দিলো। মিশু এসে ওর অনেক উপকার ই হল বলতে হবে।ও লজ্জায় ঘর থেকে বের হতেই পারছিল না।
চা খেতে খেতে সবাই আড্ডা দিচ্ছিল।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন, আচ্ছা মিশু।বলোতো মহিলা দের বড় দোষ কি কি?
মিশু চট করেই উত্তর দিলো, এরা সবসময় বেশি বুঝে।প্রয়োজনের তুলনায় অল্পতেই বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে।তিল কে তাল করতে এরা ওস্তাদ।
– হা হা হা।এত জলদি এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর টা দিয়ে ফেললা।আজকের ঘটনার জন্য এই দোষ গুলো ই দায়ী কিন্তু।
মিশু ও হেসে উঠল।সত্যি তখন হিমুর বাড়াবাড়ির জন্যই একটা ঝামেলা সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল!
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা নিজেদের দোষ কখনো স্বীকার করতে চাওনা।দেখো এই মেয়েটা কত স্পষ্ট ভাষী।
– হুম।দোষ থাকলে তো স্বীকার করতাম ই।
– শোনো,তোমাদের আরেক টা দোষ হচ্ছে তোমরা নিজেদের দোষ সহজে মেনে নিতে চাওনা।
– কি বললা! ও এত বছর সংসার করে আসার পর আজ আমার দোষ বেরোচ্ছে?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হেসে বললেন, এইতো বেশি বুঝলা।
– হ্যা আমিতো বেশি ই বুঝি।বেশি না বুঝলে তো আর স্টুডেন্ট দের বুঝানো যায় না।নিজে তো আর টিচার নও বুঝবা কি।
– আহা! আমরাও অনেক টিচার দেখেছি, ওনারা অন্তত লিমিটের মধ্যে বুঝতেন।বাট তোমরা মেয়েরা লিমিটেশন ছাড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করো।
মা রেগে বললেন, আজ সবার সামনে তুমি এইভাবে বললা আমাকে! আমাকে ছোট করতেই তোমার বেশি মজা লাগে তাইনা?
– আবারো বেশি বুঝলা তিন্নি।
– হ্যা আমি বেশি বুঝি।তাহলে আমার সাথে পড়ে আছো কেন? যাও অন্য গ্রহে গিয়ে বাস করো।
– অন্য গ্রহে তো মেয়ে মানুষ নেই তিন্নি।আর মেয়ে ছাড়া পুরুষ মানুষ কি চলতে পারে বলো?
– ও এখন আবার মেয়ে মানুষ লাগবে? তাহলে পৃথিবী থেকে একটা মেয়ে ধরে নিয়ে গেলেই পারো।
– হা হা হা।মিশুর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেলো। একেবারে উদাহরণ সহ।
বলেই হাসতে লাগলেন। ওনার স্ত্রী রাগে গজগজ করতে করতে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
বাকি সবাই হেসে উঠল ওনার সাথে।
মিশু বলল,আংকেল।কি দরকার ছিল আন্টিকে রাগানোর?
– আরে আমার কি দোষ।সামান্য খোচাও ও সহ্য করতে পারেনা।তোমার কথাটা মিলে গেলো একদম।বুঝে বেশি,উত্তেজিত ও হয় বেশি বেশি।হা হা হা..
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব শব্দ করে হাসতে লাগলেন। স্ত্রীর এই ছেলেমানুষি স্বভাব টা এখনো খুব ভালো লাগে ওনার।এখন আবার ঝগড়ার মাত্রাটা বাড়িয়ে দিয়ে একগাদা চকোলেট কিনে আনতে হবে।
মৈত্রী মনে মনে হাসছে আর তাকিয়ে আছে মিশুর দিকে।এই মেয়েকে যে মানসিক রোগী বলবে সে নিজেই তো একটা মানসিক রোগী! কত ফুটফুটে একটা মেয়ে! এর কোনো অসুখ থাকতেই পারেনা।আর থাকলেও বা সমস্যা কি? অসুখ আছে বলেই হয়ত ও এমন চঞ্চল।কিছু কিছু অসুখ ও বড্ড বেশি সুখের হয়!
★
তানিন দ্রুত মেকাপ সেরে এসে ক্যামেরা রেডি করতে বলল।মেয়েটা সব কাজেই দারুণ ফাস্ট!
এরপর স্ক্রিপ্টে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েই বলল,এটা তো খুবই সোজা! ইন্টারেস্টিং!
দু একজন অবাক হয়ে তাকাল ওর দিকে।আগের নায়িকা ডায়ালগ মুখস্থ করে এসেছে।তারপর ও শুট নেয়ার সময় ঠিক মত করতে পারেনি না,দু একটা জায়গায় ভুল শব্দ উচ্চারণ করে ফেলেছে।আর তানিন চোখ বন্ধ করেই বলল,খুবই সোজা!
আগের নায়িকা ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে।আশেপাশে যারা ছিল সবাই এসে পাশে দাঁড়াল। এত কঠিন একটা পার্ট তানিনের কাছে সোজা মনে হচ্ছে,তাহলে ব্যাপার টা দেখতেই হয়।তাছাড়া তানিন আগে কখনো ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেনি।প্রথমবার কেমন কাজ করতে পারে সেটাও দেখার আগ্রহ সবার!
মর্ম এগিয়ে এসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,তাহলে যাই?
– হুম আমি রেডি।
শুট নেয়া শুরু হলো।মর্ম কে কিছুই দেখিয়ে দিতে হলোনা।তানিন নিজে থেকেই হেটে এসে কথা বলতে শুরু করলো।ক্যামেরায় ওর চেহারা টা বেশ ফুটেছে! সবার ছবি ক্যামেরায় ভালো আসেনা।কিন্তু তানিন কে সত্যিই নায়িকা লাগছে!
একটার পর একটা ডায়ালগ বলে যেতে লাগলো।হাত নাড়ানো, কথা বলার স্টাইল,গলার স্বরের ওঠানামা সবকিছু ই অসম্ভব সুন্দর হচ্ছে! মনে হচ্ছে বহু বছর ধরে এই মেয়ে অভিনয় করে আসছে! আর আবেগের বহিঃপ্রকাশ টা এতটা নিখুঁত,অভিনয় মনেই হচ্ছেনা।সবমিলিয়ে অসাধারণ!
একটা দৃশ্যের ধারণ শেষ হলো।সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তানিনের দিকে।আগের নায়িকাটি ও চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে।
দু একজন উচ্চ প্রশংসা করে ফেলল।মর্ম হাসতে হাসতে বলল,তানিন।পুরাই ফাটিয়ে দিয়েছিস।
তানিন লাজুক ভঙ্গী তে হাসল।
মর্ম বলল,লেখার সময় আমার একটু খারাপ ও লাগেনি।অথচ তোর ডায়ালগ শুনে বুকটা ফাকা ফাকা লাগছিল।
একজন লোক আগের নায়িকার দিকে তাকিয়ে বলল,একেই বলে আর্টিস্ট।অভিনয় হইতে হয় এমন। দেখলা কি পারফেক্ট পারফরমেন্স? ডায়ালগ না দিয়েও মুভমেন্ট দিয়ে অনেক কিছু বোঝানো যায়।যেটা তানিন কে দিয়ে সম্ভব।
আরো অনেকেই প্রশংসা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে আরেকটা দৃশ্যের জন্য শুট নেয়া হলো।এটাতেও চমৎকার অভিনয় করলো ও।মর্ম’র চোখে পানি এসে গেছে।ওর বোন ভালো অভিনয় করতে পারবে এটা ওর ধারনা ছিল,কিন্তু এতটা ভালো করবে সেটা ভাবেনি।শার্টের হাতায় চোখ মুছল ও।
♦
মৈত্রী মিশুকে বাসায় রেখে আসার জন্য গাড়ি বের করলো।এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠল।
কথা বলা শেষ করে ও মিশুকে বলল,আমাকে এক্ষুনি চেম্বারে যেতে হবে।তুমি কি একা যেতে পারবে?
– হ্যা খুউউব পারবো। আমি এখন বড় হয়ে গেছি না?
– কিছুক্ষণ দেরি করো না হয়।আমার কাজ শেষ হলে তোমাকে রাতে রেখে আসবো।
– উহু।আমাকে অনেক কিছু রেডি করতে হবে।ডেকোরেশনের জন্য সবকিছুর লিস্ট করতে হবে।আমি এখন ই যাবো।
– গাড়িতে যেতে পারতে।কিন্তু আমরা তো ড্রাইভার রাখিনি,নিজেরাই চালাই।
– সমস্যা নেই।আমি বাসে করে চলে যেতে পারবো।
– কিন্তু আমি নিজ দায়িত্বে তোমাকে এনেছি।একা পাঠানো টা ঠিক হবেনা।
– ভয়ের কিছু নাই। আমি যেতে পারবো।
মিশুকে খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে।তারপর ও মৈত্রী ওকে একা ছাড়তে রাজি হল না।চেম্বারে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখল।ভিতরে মৈত্রী পেশেন্ট দেখছে।মিশু বাইরের রুমে বসে টিভি দেখতে লাগলো। মৈত্রী একজন ডাক্তার সেটা ওর জানা ছিল না!
.
…
.
.
চলবে…