“#অদ্ভুত__মুগ্ধতা ”
পর্ব ১৮
মিশু মনি
.
মর্ম জিজ্ঞেস করলো, গায়ে হলুদে তুমি কি শাড়ি পড়বে মিশু?

মিশু চোখ তুলে তাকালো।ওর কান্না পাচ্ছে ভীষণ।মর্ম’র সামনে থাকার মোটেও ইচ্ছে করছে না।ও কিছু না বলে এক ছুটে বাইরে বেড়িয়ে আসলো।তারপর রাস্তায় এসে সিএনজি তে উঠে পড়লো।
মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ওর।খুব এলোমেলো লাগছে।নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার ইচ্ছেও হচ্ছেনা।আর কি বলেই বা সান্ত্বনা দেবে? যদি একজনের সাথে ও কম মিশত,তাহলে তাকে আঘাত করতে কষ্ট হতোনা।কিন্তু দুজনের সাথেই সমানভাবে মিশেছে ও।দুজনেই ওকে যেমন অনেক গুরুত্ব দিতো, দুজনকেই মিশুও সেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে।সেটাই হয়ত ভুল ছিলো।ও যেভাবে নিঃসংকোচে মিশেছে দুজনের সাথে,সেটা উচিত হয়নি।যেকোনো একজনের সাথে থাকলে আজ এই দিনটা দেখতে হতোনা।কিন্তু মিশুর কি এতে কোনো দোষ ছিলো? ও সহজভাবেই চলাফেরা করেছে ওদের সাথে,কে জানে এমন টা হয়ে যাবে!

কাজী বাড়িতে ঢুকেই ও সোজা মৈত্রীর রুমে চলে আসল।মৈত্রী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।মিশুকে ঘরে ঢুকতে দেখে ও দ্রুত ঘরে প্রবেশ করলো।মিশুকে দেখে মনেহচ্ছে যেন অগ্নিমূর্তি! ভয়ংকর এই দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে গেলো মৈত্রী।জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে মিশু?
মিশু এগিয়ে এসে মৈত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,আমায় ভালোবাসেন আপনি?
মৈত্রী অবাক হলেও কিছু বললো না।নিঃশব্দে হাসলো।এই হাসির অর্থ কি হতে পারে মিশুর বুঝতে বাকি নেই।তবুও জিজ্ঞেস করলো, কতটা ভালোবাসেন?
– যতটা ভালোবাসলে নিজের বলতে যা কিছু আছে,সব তোমাকে উৎসর্গ করা যায়।
– কবিগিরি ছাড়ুন।সোজাসুজি বলুন কতটা ভালোবাসেন?
– ভালবাসা কি পরিমাপ করা যায় মিশু?
– হ্যা যায়।এক ধরণের ভালোবাসায় মনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়।আরেক ধরণের ভালবাসায় নিয়ন্ত্রণ শক্তি থাকেনা।
মৈত্রী বললো,যেহেতু ব্যাপার টা বিয়ে অব্দি পৌছেছে কাজেই তোমার বোঝা উচিৎ ফিরে আসা যাবে কি যাবেনা? আমি হয়ত কখনোই কিছু মুখ ফুটে বলিনা,কিন্তু তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে হলে নিশ্চয়ই এই পার্থক্য টা বুঝবে।তোমার জায়গাটা কোথায় সেটা আর মুখ ফুটে বলতে হবেনা আশাকরি।
মিশু চোখ রাঙিয়ে বললো,এটা আগে বলা যেতো না? আমাকে বললে কি আপনাকে খুন করে ফেলতাম নাকি?
মৈত্রী হেসে বললো,আমি একটু এমন ই জানোই তো।আর তোমাকে বললে যদি কষ্ট পাও তাই..
– সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কোথায়?
– কে?
– কার নাম বললাম চিনলেন না? আপনার বাবা কোথায়?
– ছাদে শুকাতে দিয়ে এসেছি।

মিশু আর এক মুহুর্তও দাঁড়াল না।সোজা ঘর থেক বেড়িয়ে ছাদে চলে গেলো। মৈত্রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আর মিটমিট করে হাসতে লাগলো।মেয়েটা দেখছি দারুণ রেগে গেছে! ছাদে শুকাতে দিয়েছি কথাটা শুনেও কিছু বললো না।নিশ্চয়ই রাগের চোটে বুঝতে পারেনি কথাটা।ভেবেই হাসলো ও।


মিশু ছাদে এসে দেখল সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মনোযোগ দিয়ে একটা মেনু তৈরী করছেন। মিশুকে দেখে লিখা বন্ধ করে রেখে বললেন, বস।আলাপ করি,দ্যাখ তো ঠিক আছে কিনা?
মিশু রেগে বলল,আপনি না আমার বাবা?
– আমি কখন তোর বাবা হলাম? তোর মায়ের সাথে আমার কোনোকালেই কোনো সম্পর্ক ছিলোনা।
মিশু আরো রেগে বলল,রাত্রে আপনি না বললেন তুই আমার মেয়ে?
– হ্যা,তুই আমার মেয়ে এটা ঠিক আছে।জন্ম না দিলেও একটা মেয়েকে মেয়ে বানানো যায়।কিন্তু জন্ম না দিলে বাবা হওয়া যায়না।
– ইয়ার্কি হচ্ছে?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হেসে বললেন, এত রেগেছিস কেন? বিয়ের কথা শুনে?
– হ্যা।
– বিয়েতে তুই রাজিনা?
– রাজি কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।
– কোথায়?
– আমি আপনার দুই ছেলেকেই বিয়ে করতে চাই।

সাফায়েত উল্লাহ সাহেব এমন ভঙ্গীতে হাসলেন যেন এটাই স্বাভাবিক।মিশু যে এমন কিছুই বলবে,তার জন্য উনি প্রস্তুত ছিলেন।খুব মজা লাগছে ওনার।দাত বের করে শব্দ করে হাসতে লাগলেন।
মিশু বলল,আমি ফাজলামি করছি না গো।আমি সিরিয়াস। প্লিজ কিছু বলুন।
– কি হয়েছে বলবি তো? দুজনকে বিয়ে করবি কেন?
মিশু একটু চুপ থেকে বলল,ওরা দুজনই আমাকে ভালোবাসে।দুজনই আমাকে চায়।আমি কাকে চাই জানিনা কিন্তু কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা।তাই দুটোকেই বিয়ে করে নিবো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হেসে মিশুকে ডেকে নিয়ে পাশে বসালেন। তারপর নরম গলায় বললেন, মাথা ঠাণ্ডা কর পাগলী।
– মাথা ঠাণ্ডা হবেনা,ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেও না।আপনি এখন বলুন আমার কি করা উচিৎ?
– বিয়ে করা উচিৎ, অবশ্যই একজন কে।
– কাকে করবো? দুই দুইটা ছেলেকেই তো আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছেন।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হেসে বললেন, আমি লাগিয়ে দিয়েছি?
– তাছাড়া কি? এত মজা পাচ্ছেন কেন? আমি কি মজার কথা বলেছি নাকি?

উনি কিছুক্ষণ হাসলেন।মিশু একা একাই বকবক করে চলেছে।যেন এর চেয়ে বড় সমস্যা দুনিয়ায় আর একটি ও নেই।খুবই ভয়ংকর বিপদ! একজন কেও কষ্ট দেয়ার ইচ্ছে হচ্ছেনা।কিন্তু দুজনকে তো আর বিয়ে করা সম্ভব না।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন,মিশু মা শোন।একটা জিনিস বুঝাই তোকে।মনেকর,আমার মেয়ে তানিনকে চল্লিশ জন ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।ও কাউকে কষ্ট দিতে চায়না।এখন ওর পক্ষে কি চল্লিশ জনের সাথে সম্পর্ক গড়া সম্ভব? ও এদের মধ্যে কাকে বিয়ে করবে?

মিশু তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো,যে ছেলেটা ওকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসবে,তাকেই।
– গুড।তাহলে তোর কি করা উচিৎ?
– আমাকে তো দুজনই অনেক ভালোবাসে।কে বেশি সেটা বুঝবো কিভাবে?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হেসে বললেন,তানিন আরো একটা কাজ করতে পারে বলতো সেটা কি?
মিশু একটু ভেবে বলল,তানিন আপু যাকে ভালোবাসবে তাকেই করবে।
– বাহ! বুদ্ধিমতী মেয়ে।এখন ভাব কি করবি? ইন ফ্যাক্ট তোর কি করা উচিৎ?
মিশু একটু চিন্তিত গলায় বললো,আমার তো সমস্যাটা এখানেই।আমি যে ওদের দুজনকেই ভালবাসি।
– দুজন কেই?
– হ্যা।
– কাকে কম? কাকে বেশি?
– দুজনকেই বেশি বেশি।
– এটা কোন গ্রহের ভালোবাসার ধরণ বিচ্ছুমেয়ে? মানুষ একসাথে দুজনকে ভালবাসতে পারেনা।

মিশু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো।তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল,আমি বুঝতে পারছি না।আমার মনেহয় আমি দুজনকেই ভালোবাসি।আমি এসব না ভেবেই ওদের সাথে বন্ধুর মত মিশেছি।ভাবিনি ব্যাপার টা এরকম হবে? এখন আমার কি করা উচিৎ আপনি ই বলুন?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব একটু ভেবে বললেন,তোর হাতে দুইটা অপশন।প্রথমটা হচ্ছে,এদের মধ্যে একজনকে বেছে নিয়ে বিয়ে করা।আর দ্বিতীয় টা হচ্ছে,এদের কাউকেই বিয়ে করার প্রয়োজন নেই।
মিশু করুণ ভাবে তাকালো ওনার দিকে।তারপর বললো,আমি যে আপনাদের সবাইকেই অনেক ভালবাসি।আপনাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছেই করবে না।
– তাহলে প্রথম অপশন টা বেছে নে।

মিশু চুপ করে রইলো।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন,তুই কিছুদিন সময় নে।তারপর বুঝতে চেষ্টা কর তুই আসলেই কাকে চাস? আর এটাও বুঝতে চেষ্টা করবি,কে তোর সবচেয়ে বেশি যত্ন নেয়।মিশু,তুই একজন ফোভিয়ার পেশেন্ট,তোর এমন একজন কে দরকার যে সবসময় তোর যত্ন নেবে,তোকে বেশি বেশি সময় দিতে পারবে।তুই কিছুদিন সময় নিয়ে দ্যাখ কার মধ্যে এই জিনিস টা আছে? এরপর নিজেই বুঝতে পারবি,কাকে তোর বিয়ে করা উচিৎ।সবাই যোগ্য হলেই তো আর সবাইকে বিয়ে করা সম্ভব না,তোর যে জিনিস টা বেশি দরকার তোকে সেটাই করতে হবে।আমার বিশ্বাস, খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবেনা।উত্তর পেয়ে যাবি।

মিশু শান্ত হয়ে শুনলো কথাগুলি।ওনার কথার যথার্থতা আছে।যা বলেছেন, একদম ঠিক বলেছেন।তাহলে কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখা যাক,কতদূর যায় ব্যাপার টা?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, তুই শক্ত থাক।একজনের জন্যও তোর দূর্বল হওয়া চলবে না।আর কোনোভাবেই ওদেরকে ও দূর্বল করতে পারবি না।নিজের জায়গায় স্থির থাক,দ্যাখ ওরা কে তোর জন্য কতটা ঢেলে দিতে পারে?

এতক্ষণে মিশুর হাসি ফুটে উঠল।এবার সত্যিই ওর কাছেও মজার লাগছে ব্যাপারটা।এবার একটু মজাই হয়ে গেলো।এখন একজন বাদ পড়বে, একজন থাকবে।কিন্তু দুজনের যোগ্যতাই সমান।তাহলে কাকে বেছে নেয়া হবে?
খিলখিল করে হাসলো মিশু।সাফায়েত উল্লাহ সাহেবও হেসে উঠলেন। এই মেয়েটা একদম পাগলী স্বভাবের।একসাথে নাকি দুভাই কেই বিয়ে করবে! আজব!
এরপর মিশুর চিন্তা অনেকটাই কমে গেছে।ও সাফায়েত উল্লাহ সাহবের কাজে সাহায্য করলো।তারপর নিচতলায় নেমে আসল।


বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন এসে গেছেন।লোকে গিজগিজ করছে বাড়িটা যেন কোনো মেলা বসেছে।কিন্তু মেলায় কি বিক্রি হচ্ছে? এত বড় একটা মেলা অথচ কিছু বিক্রি হচ্ছে না? ভাবতেই মিশুর মাথায় একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি চলে আসলো।ও দ্রুত বুদ্ধি করে একজন কাজের লোককে সাথে নিয়ে বাজারে গেলো।বাজার থেকে চকোলেট,পান খিলি,সিগারেট,চাটনি,চিপস,কিছু তেলেভাজা খাবার,জুস,টাইগার এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদি ধরণের অনেক খাবার জিনিস কিনে আনলো।তারপর সিঁড়ির নীচে একদিকে একটা জায়গা বেছে নিয়ে রীতিমত দোকান সাজিয়ে ফেললো।একটা টেবিল,একটা চেয়ার আর একটা আরএফএল র‍্যাক দিয়ে দোকান বানালো সুন্দর করে।কমিউনিটি সেন্টারের দুজন কর্মচারীকে বলে কিছু পানীয়ের ব্যবস্থাও করে ফেলা হলো।সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের সাহায্যে হালকা বিয়ার ও নিয়ে আসা হলো দোকানে।ফুল ও রঙিন ওড়না দিয়ে বেশ পরিপাটি করে সাজালো দোকান টা।বিয়েবাড়িতে আসা অতিথি’রা হা করে দেখছে মিশুর দোকান।

বুদ্ধিটা বেশ ভালোই ছিল বলতে হবে।কারণ এখানে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির চেয়ে বাচ্চাকাচ্চার সংখ্যাই বেশি।বাচ্চারা দোকান দেখেই খাওয়ার জন্য বায়না করছে।মায়েরাও বাধ্য হচ্ছেন কিনে দিতে।নয়ত বাচ্চার কান্না থামছে না।দু ঘন্টার মধ্যেই মিশুর দুশো টাকা বিক্রি হয়ে গেলো! মৈত্রী শুধু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল ওর কান্ড।কিছুক্ষণ আগেই ও বেড়িয়ে হাসপাতালে চলে গেছে।

বড় ফ্লাক্সে চা বানিয়ে রাখা হয়েছে দোকানে।সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে চা।মহিলা পুরুষ সব ধরণের লোকেরাই চা খাচ্ছে মিশুর দোকানে।চা বানাতে খরচ তেমন হয়নি,কিন্তু প্রতিকাপ চা বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়।দ্বিগুণ লাভ বলতে হবে।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হাসছেন।বেশ মজা লাগছে ব্যাপার টা।এই মেয়েকে দিয়েই বিজনেস সামলানো হবে।

মৈত্রীর বড় মামা চা খেতে খেতে মিশুকে বলল,আচ্ছা তোমার আম্মু তোমাকে মিশমিশ নামে ডাকে কেন?
– আম্মুর ভাললাগে বলে।আপনার ভালোলাগলে আপনি ও ডাকতে পারেন।
– আমি তোমাকে মিশা সওদাগর নামে ডাকতে পারি?
মিশু ভ্রু কুঁচকে তাকালো।এই বড় মামার বয়স বাবার বয়সের সমান।অথচ এরকম ঠাট্টা করছেন! তাও আবার মিশা সওদাগর? ও হেসে বলল,ইচ্ছে হলে ডাকবেন।কারো ইচ্ছায় বাধা দিতে আমার ভাললাগেনা।আচ্ছা আপনার মাথায় টাক কেন?
বড় মামা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন,আমাদের বংশগত ব্যাপার স্যাপার।বাবার ছিল,আমারও আছে।
– ও আচ্ছা।বলুন তো দাড়িতে টাক হয়না কেন?
এমন প্রশ্ন কখনোই শোনেন নি উনি।রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেলো।কে জানে দাড়িতে টাক হয়না কেন? এরকম প্রশ্ন কখনো ওনার মাথাতেই আসেনি আর উনি কোনোদিনো শোনেন ও নি।দারুণ আজগুবি প্রশ্ন তো!
উনি চিন্তিত মুখে বললেন,জানিনা।কেন হয়না?

মিশু বললো, আমিও জানিনা।তবে আই থিংক দাড়িতেও টাক হয়।কিছুকিছু লোকের দাড়িগুলো দেখবেন কোথাও আছে,কোথাও নাই।কারো কারো পুরো গালে নাই,শুধু থুতনিতে আছে।এধরণের দাড়িগুলোকে বলা হয় ছাগলী দাড়ি।যেমন আপনার মাথায় ছাগলী চুল।

বড় মামা হা করে চেয়ে আছেন মিশুর দিকে।নাহ,এই মেয়ের সাথে কথায় পারা যাবে না।একেবারে মিশা সওদাগর টাইপের মেয়ে।উনি হেসে চায়ের বিল পরিশোধ করে দিলেন।
এমন সময় দরজায় দেখা গেলো মর্মকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে আনা হচ্ছে।ওকে হাসপাতাল থেকে ছাড়তেই চাইছিলো না।কিন্তু বাসায় গায়ে হলুদ হবে,সবাই অনেক আনন্দ করবে,মিশুও সেখানে থাকবে।আর ও একা হাসপাতালে পড়ে থাকবে কেন? তাই জেদ করেই বাসায় আসতে চাইছিলো।মৈত্রী ওকে নিয়ে এসেছে সাথে করে।বাসায় কেউই জানত না ওর এক্সিডেন্ট এর কথা।সবাই ওকে হুইল চেয়ারে দেখে একদম থ হয়ে গেছে!


মৈত্রী সবাইকে বুঝিয়ে বললো ব্যাপার টা।সবাই বুঝলো ঠিকই কিন্তু কেমন যেন বিষাদ চলে এসেছে সবার মধ্যে।মর্ম অনেক বুঝিয়ে বলার পরও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগলো সবারই।মা মর্মকে ধরে খুব কান্নাকাটি করলেন।

কিছুক্ষণ পরেই খুজিন্তার বাবা মা এসে পৌছলেন।ওনারা খুজিন্তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে এসেছেন।কোনো খোজ খবর না দিয়েই হঠাৎ এসে পড়েছেন ওনারা।খুজিন্তাও বেশ অবাক হয়ে গেছে।ওর বাবাও ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফেলেছেন।ওনারা চান কাজী পরিবার তাদের সকল আত্মীয় স্বজন সহ তাদের বাসায় বরযাত্রী হয়ে গিয়ে বিয়ে পড়িয়ে খুজিন্তাকে নিয়ে বাসায় ফিরবে।এতে করে সবার সাথে পরিচয় ও হয়ে যাবে,আর বিয়েটাও বিয়ের মতই হবে।এই প্রস্তাবে সাফায়েত উল্লাহ সাহেব খুবই খুশি হলেন।উনিও এরকম টাই আশা করেছিলেন।মাত্রা বরবেশে গিয়ে সম্মানের সাথে বউ নিয়ে আসবে।সাথে বরযাত্রী হয়ে সব আত্মীয় স্বজন ও যাবে।ভাবতেই ভালো লাগছে!

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে ওনারা খুজিন্তাকে নিয়ে চলে গেলেন।মিশু দুভাইয়ের মধ্যে কারো সাথেই কোনো কথা বলেনি।সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের সাথে গল্প করে নিজের রুমে চলে আসলো।এমন সময় হঠাৎ দেয়ালে কার যেন ছায়া পড়লো! মিশু একবার সেদিকে তাকিয়েই ছায়ার মানুষ টির দিকে তাকালো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here