#The_murderous_mafia
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ১৫
আমরা চাচা লোকটার কাছে গিয়ে বললাম, তোর মেমোরি হয়তো লস হয়েছে,ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু লোকটা বিশ্বাস করতে পারছিল না আমাদের।
আমরা কি করব বুঝতে পারছিলাম না।তখন চাচা লোকটাকে বললাম….
–চাচা এটা আমাদের বন্ধু। মনে হয় সৃতি নষ্ট হয়ে গেছে। হয়তো ভালো চিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে যাবে।
চাচাঃকিন্তু….(আর কিছু বলতে দিলাম না)
–না চাচা কোনো কিন্তু না।আমাদের নিতেই হবে।
আমরা লোকটাকে অনেক করে বুঝালাম কিন্তু কোনো ভাবে তোকে ছাড়তে রাজি নয়।শেষে আপুকে জানালাম এই বিষয় টা।জানিস আপু তোর জন্য কত কান্না করছে…?
আমিঃজানি আপু কত কান্না করতে পারে তারপর কি হয়েছিল বল?
মাহমুদঃআপু সেখানে চলে যায় আমরা লোকটার বাসায় অপেক্ষা করি আপু যাওয়ার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর আপু সেখানে যায়।আপুতো পাগল প্রায় শুধু একটা একটা কথায় বলছে আমার ভাই কই।আপুকে আমরা শান্ত করতে চেয়েও পারি নি।আপুকে তোর কাছে নিয়ে গেলাম।আপু তোকে দেখেই কেঁদে ওঠল আর তোকে জড়িয়ে ধরল। তুই তখন তেমন কিছু বলতে পারিস নি শুধু বলেছিলি “আ…আ…আপু”
তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিস। আমরা চাচাকে এবার বুঝাতে পেরেছি যে তুই আমাদের বন্ধু। চাচা এখন আপুর হাতে তোকে দিতে চাই।কিন্তু চাচা শর্ত দেয় তোকে সবার চোখে চোখে রাখতে।যদি আবার এমন কিছু হয় সে ভয়ে।চাচার আপন কোনো ছেলে ছিল না।তবে একটা মেয়ে ছিল।তাঁকে আমরা দেখি নি।তারপর চাচাকে কিছু টাকা দিতে চাইলে চাচা নেয় না।শুধু বলে তোর খেয়াল রাখতে।তারপর চাচার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা তোকে হসপিটালে নিয়ে আসলাম।
অনেক চিকিৎসার পরে তুই মোটামুটি সুস্থ হয়েছিস।কিন্তু সৃতি শক্তি…… (তারপর থেমে গেল)
আমিঃতারপর কি আমার মেমোরি লস হয়ে গেছে?
রাশেদঃহ্যাঁ, ডাক্তার জানাল তোর মেমোরি লস হয়ে গেছে তবে এটা অদ্ভুত ভাবে লস হয়েছে।কিছু মনে থাকবে কিছু থাকবে না।যেমন একদম আগে কি হয়েছিল সেসব তোর মনে আছে তারপর কি হয়েছিল তা মনে নেই।কিন্তু এখনের সব মনে আছে।ডাক্তার বলল যদি এমন আবার কোনো আঘ পাস তাহলে হয়তো মেমোরি ফিরে আসতে পারে।আবার তার উল্টোও হতে পারে। তবে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
তোর খেয়াল রাখতেই আপু এখনো বিয়ে করে নি।
আমিঃআপু আমার জন্য এত কিছু করল।
রাশেদঃহ্যাঁ আপু তোর জন্য জীবনটাও দিতে পারে।
আমিঃতারপর কি হয়েছিল?
মাহমুদঃতারপর আর কি,আপু সারাক্ষণ তোর পাশে ছায়ার মতো ছিল।তুই আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠিস।একদিন জানতে পারলাম তুই নাকি বাসা থেকে কোথায় চলে গেছিস।অনেক দিন খুজেও পাই নি।কিন্তু হঠাৎ আবার বাসায় চলে আসিস।পরে জানলাম তুই কোনো একটা টিম গঠন করেছিস।তোর আশে পাশে থেকে বুঝতে পারলাম। নতুন গঠিত টিম হলেও এই টিম অনেক শক্তিশালী।মাফিয়া টিম ছিল এটা।
এই টিম গঠনের পর কেউ আর অন্যায় করতে পারে নি।ধর্ষণ, চাঁদা আদায় এসব বন্ধ হয়ে গেছিল।কিন্তু টিমটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়।তারপর কি হয়েছিল তা তুই জানিস।
ওদের দুই জনের বলা কথা গুলো আমি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। তাহলে এই ছিল আমার অতীত। আমি কি ছিলাম আর কি হলাম আজ?
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি।
রাশেদঃচিন্তা করিস না।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।শুরু সময়ের অপেক্ষা।
আমিঃহুম আমি বাসায় যাচ্ছি।
এই বলে রাশেদ থেকে গুলিটা নিয়ে বের হতে যাব তখন মাহমুদ দাঁড় করিয়ে বলে আমাকে দিয়ে আসতে।আমিও না করি নি।কারণ এখন আমার মাথা ব্যাথা করতেছে তা আমি খুব ভালো বুঝতে পারছি।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল বের করে দেখি আপু ফোন দিছে।আপু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলল। আমি”আসছি” বলে কেটে দিলাম।
মাহমুদ কে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।আমি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলাম।আপু আমার দিকে থাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলার আগে আমি রুমে চলে গেলাম।আপু মাহমুদ কে দেখে আমার কি হয়েছে জানতে চাইল।কিন্তু মাহমুদ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
আপুঃকি হয়েছে ওর বল না?
মাহমুদঃআসলে আপু ওর অতীতের সব কিছু আজ জেনে গেল।
আপুঃকিহহহহ (ভয়ে মুখে হাত দিয়ে দিল)
মাহমুদঃআমরা বলতে চাই নি কিন্তু সে জোর করল।তাই বলতে বাধ্য হলাম।
আপুঃযদি এখন উল্টা-পাল্টা কিছু করে তখন কি করব?
মাহমুদঃআশা করি তেমন কিছু করবে না।কারণ ও জানতো যে সে আন্ডার কভার এজেন্ট।
আপুঃকিহ ও এটাও কেমনে জানতো?
মাহমুদঃজানি না। আমার মনে হয় হয়তো তার সৃতি ফিরে আসতে চলেছে নয়তো আমাদের কথা শুনে ফেলেছে।কাল বলার সময় হয়তো শুনবে।
আপুঃযদি সৃতি ফিরে আসে তাহলে তো ভালোই আর যদি অন্য কিছু হয় তো…
মাহমুদঃচিন্তা করবেন না তো তেমন কিছু হবে না।
আপুঃতাই যেন হয়।
মাহমুদঃঠিক আছে আমি আসছি।
এই বলে মাহমুদ চলে গেল আপু ঠাঁই রইল।মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
আপু আমার রুমে এলো আমি দাড়িয়ে আয়নার দিকে চেয়ে অনেক কিছু ভাবলাম।একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।আপুকে বললাম….
আমিঃআপু আমি এক জায়গায় যাব কাল তুমিও যাবে আমার সাথে।
আপুঃকোথায় যাবি?
আমিঃযাব তো এক জায়গায় আগে বল তুমি আমার সাথে যাবে কি না?
আপুঃওকে যাব কিন্তু কোথায় যাবি তা তো বল?
আমিঃআমি নদীতে পড়ে যাওয়ায় পর যে লোকটা আমাকে পেয়েছিল আর সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেছিল তার বাসায় যাব।
আপুঃসে তো অনেক সময়ের ব্যাপার।আচ্ছা যাব সমস্যা নেই।
আমিঃহুম কাল সকালে আমরা রওনা দিব সেখানে।
আপুঃওকে।আর হ্যাঁ এখন আর কোনো চিন্তা করিস না।খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
আমিঃনা খেতে ইচ্ছে করছে না।এমনি ঘুমিয়ে যায়।
আপু আর জোর করে নি।কারণ আমার মনের অবস্থা আর কেউ না বুঝলেও আপু ঠিকই বুঝতে পারে।তারপর আপু চলে গেল আমি ল্যাপটপ নিয়ে গ্রামটা সমন্ধে জানতে যাব কিন্তু আমার গ্রাম বা নদীর নামটা জানা নেই তাই রাশেদকে ফোন দিলাম।সে নাম বলে দিল আমি ল্যাপটপে গ্রামটা সমন্ধে ধারনা নিলাম।যদি কোনো বিপদ থাকে সেটা আগে মাথায় রাখতে হবে।
তারপর ঘুমিয়ে গেলাম।মাহমুদ আর রাশেদ কে বলে দিলাম সকালে যেতে হবে আমার সাথে।কিন্তু মাহমুদের নাকি অন্য কাজ আছে তাই রাশেদকে সাথে নিয়ে গেলাম।
সকালে আমরা সেই গ্রামে পৌঁছে গেলাম।কিন্তু রাস্তা গুলো নাকি আগের মতো নেই।গ্রামটাও পাল্টে গেছে।ঐ বাড়িটা খুঁজেও পেলাম না।এলাকার লোকদের জিজ্ঞেস করলাম ঐ চাচারা কোথায় এখানেই ওদের বাড়ি ছিল।কিন্তু তারা বলল ঐ চাচা পরিবার সহ ঢাকায় চলে গেছে।
তাদের ঠিকানা খুঁজলে প্রতিবেশী জানাই দেওয়ার মতো ঠিকানা নেই শুধু ফোন নাম্বার আছে।আমরা ফোন নাম্বার টা নিলাম।ফোন দিয়ে জানতে পারলাম উনারা ঢাকায় উত্তরাতে আছে।ফোনে উনাদের বাসার এড্রেস নিয়ে নিলাম।তারপর আমরা আবারো বাসায় চলে এলাম।পর দিন আমরা ঢাকায় চলে গেলাম।উনার সাথে দেখা না করলে আমার শান্তি নেই।
উনার বলা ঠিকানায় চলে গেলাম বাইরে দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। চিন্তা করলাম উনারা এখানে কেন?নাকি পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় এখানে চলে আসছে কাজ করতে।আবার তার উল্টোও হতে পারে।দেখি ভেতরে গিয়ে।দারোয়ান এসে পথ আটকিয়ে বলল কাকে চাই?আমরা উনার নাম জানতাম না তাই ফোন দিয়ে উনাকে বললাম “আমরা এসে গেছি আপনার দেওয়া ঠিকানায় আমরা বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।আমার কথা শুনে লোকটা তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলো।আমি তাঁকে দেখে একটু অবাক হলাম।এখানে এসে বেশ ভালোই উন্নত হয়েছে উনারা তা পোশাকে বলে দিচ্ছে। আমি গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।আমার সৃতি চলে গেলেও আমি লোকটাকে ঠিক চিনতে পারছি।উনি আমাকে দেখে বেশ খুশি হল।তারপর আমাদের ভেতরে নিয়ে গেল।
বাসায় তেমন কেউ নেই চাচা একা আর একটা কাজের মেয়ে আছে।
আমিঃচাচা এই বাসাটা কি আপনার? (বলতে না চাইলেও মন মানছে না তাই বলে দিলাম কথাটা)
চাচাঃহ্যাঁ বাবা এটা আমাদের। উপর তলা ভাড়া দিয়ে দিছি।আমরা এখানে থাকি।
আমিঃবেশ ভালো।তা চাচা বাসায় আর কাউকে দেখছি না যে?
চাচাঃআমার মেয়ে এখনো অফিস থেকে আসি নি।
আমিঃচাচিকে দেখছি না যে?
দেখলাম চাচার মন খারাপ হয়ে গেছে। তারমানে হয়তো চাচি নেই মারা গেছে।আমি বুঝতে পেরে চাচাকে সান্ত্বনা দিলাম।কাজের মেয়েটা এসে আমাদের নাস্তা দিল।চাচাকে দেখে আমার কি পরিমাণ যে ভালো লাগছে বুঝাতে পরব না।আমি আপুর কাছ থেকে উঠে চাচার কাছে গিয়ে বসলাম।
আমিঃআচ্ছা চাচা আপনারা এখানে কখন চলে আসছেন?
চাচাঃআমরা তো অনেক আগে চলে আসছি।তুমি যখন আমাদের বাসা থেকে চলে গেছিলে তার কয়েক মাস পরে আমরা এখানে চলে আসছি।
আমিঃতা চাচা আপনার পরিবারে তো আপনি আর আপনার মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।
চাচাঃনেই আর কেউ।
আমিঃতো আপনাদের পারিবারিক খরচ কে চালাই?
চাচাঃঐ যে বললাম আমার মেয়ে চাকরি করে।পুলিশ অফিসার আমার মেয়ে।
আমিঃতাহলে তো চাচা খুব ভালোই আছেন।
চাচাঃহ্যাঁ বাবা।
চাচাঃকি হলো তোমার কিছু খাচ্ছো না কেন?(সবার দিকে চেয়ে)
রাশেদঃনা চাচা আর খাব না।আপনার শরীর ভালো আছে তো?
চাচাঃহ্যাঁ ভালো।
চাচা আপুর দিকে তাকিয়ে বলল”তা মা তুমি কেমন আছ”
আপুঃহুম আমি তো ভালো আছি।(মিষ্টি হাসি দিয়ে)
সবাই মিলে বেশ কথা বললাম।আমরা যেতে প্রায় এগারো টা বেজে গেছিল তাই চাচা দুপুরে না খেয়ে আসতে দিল না।আমরা চারপাশটা দেখছি ঢাকায় এই পরিবেশ আমার কাছে একদম ভালো লাগে না।সারাক্ষণ গাড়ির আওয়াজ।
হঠাৎ কেউ কলিং বেল চাপ দিল।কাজের মেয়েটা রান্না করছিল সাথে আপুও গেল রান্নাটা করতে।সব কাজের কাজী বলে কথা। চাচা দরজা খুলতে যাবে তখনই আমি চাচাকে বসিয়ে দিয়ে বললাম আমি যাচ্ছি আপনি বসেন।
চাচা বসে পড়ল আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম….
—আ….আ…..আ……আপনি?
আমিঃহ্যাঁ আমি কিন্তু তুমি এখানে কেন?
—আমার বাসায় আমি থাকব না তো কি আপনি থাকবেন?
আমিঃতার মানে এটা আপনার বাসা?
—হ্যাঁ আমার বাসা।কিন্তু আপনি এখানে কেন,বাবা কোথায়?(কথাটি বলে চোখ গুলো বড় বড় করে ফেললো,আমার বুঝতে বাকি নেই ভয় পেয়ে গেল)
আমিঃআরে চাচা ভেতরে আছে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ভেতরে এসো।
দরজা থেকে সরে দাঁড়াতে মেয়েটা ভেতরে চলে এলো।ওটা আর কেউ নয় অহনা-ই যে আমার ভিডিও করেছিল ভারতীয়দের পাঠানো টেরোরিস্ট দের শুট করার সময়।
অহনা ভেতরে গিয়ে….
অহনাঃবাবা তুমি ঠিক আছ তো,তোমার কিছু করে নি তো?
—কি আবোল-তাবোল বকছিস কে আমার কি করবে?
অহনাঃঐ ঐ লোকটা? (আমার দিকে ইশারা করে)
–আরে কি বলিস ওরা আমাদের মেহমান।
অহনার চিৎকার শুনে আপু, রাশেদ আর কাজের মেয়েটা চলে এলো।
অহনাঃওরা মানে ওরা আরো কেউ আসছে?আর মেহমান হতে যাবে কেন ওরা খুব খারাপ লোক বাবা।
–তুই শান্ত হয়ে বস আমি সব বলছি।
অহনা বসতে গিয়ে সবাইকে দেখে আরো ভয় পেয়ে যায়।আপু আর রাশেদ বুঝতে পারল অহনা আমাকে হয়তো আগে কখনো দেখেছে অন্য কোনো রুপে।আপু গিয়ে অহনার পাশে বসল।
সাথে সাথে অহনা নিজের কোমর থেকে গুলি বের করে আপুর মাথায় ধরল।
অহনাঃএক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান নয়তো সবার মাথার খুলি উড়ে যাবে।
আপুকে গান পয়েন্টে দেখে আমার মাথায় ব্যাথা শুরু হয়ে গেল।মাথার রক্ত নালি ছিড়ে যাওয়ার মতো ব্যাথা করছে।
#To_be_continue……
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।