#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
part:05+6
.
– আপনি জানলেন কিভাবে আমি যে শাড়ি পরেছি?
– আমি জানলাম কিভাবে সেটা তোমার না জানলেও চলবে।আগে বলো তুমি কেনো আমাকে জানাও নি?খুব রাগ করেছি।এখন রাগ ভাঙ্গানোর দায়িত্ব তোমার।
– বলেন না?
– কি বলবো?
– ওইতো আপনি জানলেন কিভাবে?
– আগে রাগ ভাঙ্গাও।দেন বলবো।
.
আমি এখন কিভাবে উনার রাগ ভাঙ্গাবো।স্পেশাল কারোর রাগ ভাঙ্গানোর মতো এতো বড় দায়িত্ব এর আগে কখনোই পাই নি।উনি সামনে থাকলে তাও একটা কথা ছিলো।ফোনের মাধ্যমে এতো দূর থেকে রাগ ভাঙ্গাবো কিভাবে?অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর বললাম,
– আপনি কি সত্যি রাগ করেছেন?
– আমি কখনো মিথ্যা কিছু করি না।যা করি সত্যি সত্যি করি।আচ্ছা এখন রাখি।ফ্লাইটের ভেতর এভাবে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না।
উনার ফোন রাখার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো।নিশ্চয় আমার উপর রেগে ফোন রাখার কথা বলছেন।।ফোনটা না কেটে চুপচাপ কানের কাছে ধরে রাখলাম।উনি বললেন,
– কি হলো?কাটছো না কেনো?
আমি কান্না কান্না স্বরে বললাম,
– আপনি রাগ করে ফোন কাটতে বলেছেন,বুঝতে পেরেছি আমি।
– এ্যাই পাগলি,আমি একটুও রাগ করি নি।ফ্লাইটে সত্যি এভাবে কথা বলতে হয় না তাই রাখতে বললাম।
উনি নরম স্বরে কথাগুলো বললেন।
আমি কিছু বলতে যাবো তখনি উনি আবার বললেন,
– আর শোনো আমি যেদিন বাংলাদেশে ফিরবো সেদিন তুমি আমার দেওয়া যেকোনো একটা শাড়ি পরে আমার সামনে আসবা।মনে থাকবে?তাহলে আমার রাগটা কমলেও কমতে পারে।
.
উনার কথা শুনে তো আমি পুরো থ্ ।বলছেন কি উনি!!
কিন্তু মনে মনে একটু খুশিই হলাম কারন আমাকে কষ্ট করে রাগ ভাঙ্গাতে হলো না।উনি নিজেই উনার রাগ ভাঙ্গানোর টেকনিক শিখিয়ে দিলো।
.
– কি হলো?চুপ কেনো?পরবা না?
– কে বলেছে পরবো না।অবশ্যই পরবো।আপনি যেদিন আসবেন সেদিন আমি এই শাড়িটাই আবার পরবো।
– হুম,শুনে খুশি হলাম।
উনার কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম।
.
– এখন তো ফোনটা রাখ।
উনি হেসে কথাটা বললো।উনার হাসির কারনটা আমি ধরতে পারলাম না।আমি বললাম,
– আচ্ছা বাই!ভালো থাকবেন।
– হুম!
আমি ফোনটা কেটে ফোনটা বুকের মধ্যে নিয়ে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম আর নিজে নিজে হাসলাম।
.
রাতে সুমনা আমার আর নাফিসার মাঝখানে ঢুকে শুয়ে পরলো।নাফিসা শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলো।আর আমার চোখে মাত্রই ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে।ঠিক সেই মুহূর্তে এইরকম ডিস্টার্ব নিতে পারি নি।লাফিয়ে উঠে সুমনাকে বললাম,
-সমস্যাটা কি?এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেডে ওঠার মানে কি?দেখতেই পাচ্ছিস সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে একজন মানুষ ঘুমাচ্ছে।এভাবে ঘুমটা না ভাঙ্গালে চলতো না?
– সরি আপু।আমি আস্তে আস্তেই উঠছিলাম কিন্তু বেডটা বেশি তুলতুলে।
আমি ধমক দিতে যাবো ওমনি নাফিসা বললো,
– সুরভী আপু কি করে?তোকে বেডে জায়গা দেয়নি?
– আপু ঘুমিয়ে পরেছে।তোমাদের সাথে গল্প করার জন্য এখানে শুতে এসেছি।
ওর কথা শুনে আমার রাগ চরম মাত্রাই উপরে উঠলো।সুমনার মাথায় একটা গাড্ডি মেরে বললাম,
– সারাদিন গল্প করেও স্বাদ মিটে নি?এখন আসছিস আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করতে।যা ভাগ!
– আচ্ছা যাও গল্প করবো না,চুপচাপ ঘুমাবো।হ্যাপি?
আমি চোখ রাঙিয়ে আঙ্গুল দেখিয়ে বললাম,
– রাতে টয়লেট আসলে ডিস্টার্ব করবি নাতো?
– নাহ্।
– ওকে তাহলে শুতে পারিস।
.
আমাদের কাজিনদের মধ্যে সবচেয়ে ভীতু এই সুমনা।ক্লাস ফাইভে পড়ে।একা একা গোসল করতে পারে না।ভয় পায়।ওয়াশরুমের দরজা অর্ধেক খোলা রেখে গোসল করে।গোসল করার সময় কিছুক্ষণ পর পর চিল্লিয়ে বলবে”কেউ আইসো না কিন্তু ওয়াশরুমে সুমনা আছে”।আর রাতে ওর ভয়ের পরিমাণ তীব্র আকারে রূপ নেয়।রাতে সুরভী ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠলে জানালার দিকে একবার তাকিয়ে পেছন পেছন সুমনাও উঠবে।সুরভীর পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে রাতে ঘুমাবে।আবার যদি মাঝরাতে নেচারাল চাপ লাগে সুরভীকে ডাকবে,সুরভী উঠতে না চাইলে ওইভাবেই সকাল পর্যন্ত থেকে পেট ডাম বানাবে।
.
সকাল সাড়ে নয়টায় ঘুম থেকে উঠে দেখলাম সুমনা নাফিসা কেউ নেই পাশে।সবাই নিশ্চয় মেহেন্দির প্লান করছে আমাকে রেখে।আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফার্স্ট করে সোজা দাদুর বাসায় গেলাম।সবাইকে সেখানেই পেলাম।
.
দুপুর দুটো পর্যন্ত আমরা অনেক আড্ডা দিলাম।সন্ধ্যের মধ্যেই মেহেদী দেওয়া শেষ করতে হবে এটা ছোট চাচিআম্মু এসে জানিয়ে দিয়ে গেলো কারন অনেক কাজ নাকি এখনও বাকি সেগুলো আমাদেরই করতে হবে।
.
বিকেলের দিকে পার্লার থেকে আপুরা আসলো।রিফাপুকে পুরো ইউনিক একটা মেহেন্দী ডিজাইন দিলো।
সন্ধ্যের আগেই আমাদের মেহেন্দি দেওয়া কমপ্লিট হলো।রাতে গান বাজনাসহ সবাই অনেক মজা করলাম।
.
আপুর বিয়ের জন্য একটা রিসোর্ট বুক করা ছিলো আগে থেকেই।বিয়ের দিন পার্লার থেকে আপুকে সরাসরি সেখানে নিয়ে গেলো।আমরা পার্লার থেকে গাড়ীতে করে সময়মতো রিসোর্টে পৌছালাম।ভাইয়ার গেইট ধরা থেকে শুরু করে সব ধরনের অত্যাচারের সম্মুখীন করেছি।শালা শালীদের অত্যাচার কাকে বলে সেটা ভালামতো বুঝিয়ে দিয়েছি।
.
রাতে আপুকে বিদায় দেওয়ার সময় সবার সাথে সাথে আপুর ন্যাকা কান্নাও কাদতে দেখলাম।আপুর তখন কান্নার মুড একদমই ছিলো না ।আমরা আপুকে দেখেই বুঝতে পেরেছি।বড়রা কান্না করছে সেখানে আপুকে না কাদলে কেমন দেখায় তাই আপুও কান্না করলো।
.
রাত সাড়ে বারোটার দিকে সবাই বাসায় আসলাম।ফ্রেশ হয়ে ফোনটা নিয়ে বিছানায় বসে আজ আমার যতগুলো পিক তোলা হয়েছিলো সবগুলো পিক উনাকে সেন্ড করলাম।এই দুইদিনে উনার সাথে টুকটাক কথা হয়েছে। ফোনটা বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পরলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেক আশা নিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম।ফোন ওপেন করতেই মুখে মিষ্টি একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো।ত্রিশটার মতো ম্যাসেজ।দশটা মিসডকল।ম্যাসেজ ওপেন করতেই আমার চোখ কপালে উঠলো।কাল রাতের দেওয়া আমার প্রত্যেকটা পিকের নিচে এক একটা করে ম্যাসেজ লিখে সেই পিকগুলো উল্টো আমাকে সেন্ড করেছে।ম্যাসেজগুলো অনেক স্পর্শকাতর ছিলো!
.
আমি উনাকে কল দিলাম।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো।আমি সালাম দিয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কেমন আছেন?
– অফিসে এসে ঝিমোচ্ছি।বুঝে নাও কেমন আছি।
– ঝিমোচ্ছেন মানে?রাতে ঘুমান নি?
– তুমি ঘুমোতে দিলা কই?সারারাত জ্বালিয়ে খেয়েছো আমাকে।
আমি অসহায়ভাবে বললাম,
– আমি কখন আপনাকে জ্বালালাম।কিসব উল্টো পাল্টা বলছেন।ঠিক আছেন তো আপনি?
– দেশে ফেরার পর আব্বুকে বলে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।এভাবে প্রতিদিন পিক দেখে কাটাতে পারবো না।আজ সারারাত তোমার সবগুলো পিক যে কতবার দেখেছি তার হিসাব নেই আমার কাছে।শুধু জেনে রাখো রাতে আমি এক ফোটাও ঘুমাই নি।
উনার কথা শুনে আমার বুকের ভেতর কেপেঁ উঠলো।এসব কি বলছেন!এই কারনেই উনি এখন ঝিমোচ্ছেন।নিজের উপরই রাগ হলো।কেনো শুধু শুধু রাতে পিকগুলো দিতে গেলাম।সকালে দিলেই তো পারতাম।
.
উনি হঠাৎ বলে উঠলেন,
– ওহ্!একটা কথা তোমাকে বলতে ভুলে গেছি।আমরা কিন্তু দুদিন আগেই দেশে ফিরছি।
উনার কথাটা শুনে আমার চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।আমি জোরে বলে উঠলাম,
– সত্যি!
– হুম।এতো আগে কেনো আসছি জিঙ্গেস করবে না?
আমি বললাম,
– কেনো?
– দশ তারিখে আপুর ডেলিভারীর ডেট।সেই হিসেবে এগারো তারিখের ফ্লাইটে না এসে নয় তারিখের ফ্লাইটেই রওনা দিবো।
– আপুর বিয়েই তো হয়েছে শুনলাম একবছর আগে।এতো তাড়াতাড়ি বেবি নিলো যে?
আমার কথা শুনে ওপাশ থেকে উনি হাসছে।হাসির কি বললাম আমি!
আমি জিঙ্গেস করলাম,
– হাসছেন কেনো?
– এমনি।
– মোটেও এমনি এমনি হাসছেন না।আমার কথা শুনেই আপনি হাসছেন।কিন্তু আমি তো হাসির মত কোনো কথা বলি নি।আপনি এখনো হাসতেছেন।
– তুমি আমাদের বিয়ের কতবছর পর বেবি নিতে চাও?
হঠাৎ উনার এরকম প্রশ্ন শুনে গাঁ শিউরে উঠলো।
আমি লজ্জামাখা মুখে কাপাঁ কাপাঁ গলায় আস্তে করে বললাম,
– এটা আবার কেমন প্রশ্ন?আগে বিয়ে হোক তারপর দেখা যাবে।
– এ্যাই লজ্জা পাচ্ছো কেনো?এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?আমিই তো।
– কে বলেছে লজ্জা পাচ্ছি? আর টপিক চেন্ঞ্জ করেন।এইসব বিষয় নিয়ে পরে কথা বলবো।
– নাহ,হবে না।আমি এখনই বলবো।
– প্লিজ!
– নো প্লিজ।তোমার যদি বেবিদের নিয়ে কথা বলতে লজ্জা লাগে তাহলে বইলো না।শুধু শোনো।
আমি লজ্জায় না পারছি ফোনটা কাটতে আর না পারছি ধরে রাখতে।
উনি আবার বললেন,
– শোনো,আমার খুব ইচ্ছা আমাদের ফার্স্ট মিষ্টি দুইটা টুইন্স বেবি হবে।যদি একসাথে দুইটা নাহয় প্রথম বেবি হওয়ার একবছর পর আরেকটা নিবো।আর…
– ইয়াশ কেমন আছে?
আমি উনার কথাগুলো আর নিতে পারছিলাম না।তাই কথা ঘুরানোর জন্য ইয়াশের কথা জিঙ্গেস করলাম।
হঠাৎ আমার এরকম প্রশ্নে উনি হয়তোবা অবাক হয়েছেন।উনি বললেন,
– মাই ডিয়ার টিয়াপাখি,প্লিজ বি নরমাল।সামান্য ফেমিলি প্লানিং নিয়ে কথা বলার সময়ই যদি এতো লজ্জা পাও ফিউচারে তো প্লানিং ফুলফিল করারও সুযোগ পাবো না তোমার এই লজ্জার কারনে।
.
ইস্!এভাবে আমাকে লজ্জায় না ফেললেই কি চলছিলো না উনার!উনার এসব কথা শুনে লজ্জায় কুকঁড়ে যাচ্ছি আমি।কিসব বলছেন লাগামহীন ভাবে।
আমি বললাম,
– উফ্!এইসব কথা অন্য কোনোদিন বলা যায় না?
– হায়রে!লজ্জায় আমার বউটা দেখছি মরেই যাচ্ছে।এইজন্মে মনে হয়না আমি বাবা হতে পারবো।
উনার কথাটা শুনে আমার বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠলো।
আমি বললাম,
– ছিঃ!আল্লাহ না করুক!কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন!
– আরে!এই পাগলি ভয় পাওয়ার কি হলো।আমি ওভাবে কথাটা বলি নি।
– যেভাবেই বলেন না কেনো এইসব আর কখনো বলবেন না।
– বাব্বাহ্!বউ দেখি খুব…
– শুনুন।
আমি আর উনাকে কথা বাড়াতে দিলাম না।উনি আবার ওইসব কথা উঠাতে পারে তাই কথা ঘুরিয়ে বললাম,
– ইয়াশ কেমন আছে।ওইদিন ওভাবে নিয়ে যাওয়ার পর কান্নাকাটি করে নি?
– আবার?
– কি আবার?
– কথা ঘুরাচ্ছো কেনো?
– আমি মোটেও কথা ঘুরাচ্ছি না।অনেক্ষণ ধরেই কথাটা বলতে চাচ্ছিলাম তাই আস্ক করলাম।ওইদিন ওভাবে নিয়ে যাওয়াতে কিছু বলে নি ও?
– পরের দিন আম্মু ফোন দিয়েছিলো বললো ও নাকি রাতে অনেক কান্নাকাটি করছে।কেনো ঘুমের মধ্যে আমি ওকে বাসায় নিয়ে গেলাম তার জন্য আমার প্রিয় একটা শোপিচ ভেঙ্গেছে।তোমার কাছে যাওয়ার জন্যও কান্না করছে ।আম্মু কোনোরকমে বুঝিয়েছে যে তুমি চিটাগাং চলে গেছো।
– ইশ্ ওইদিন ওভাবে না নিলেও পারতেন।
– তোমার যদি বেশি খারাপ লাগে তুমি পারমানেন্টলি ইয়াশের কাছে চলে আসতে পারো।তাহলে একদিকে ইয়াশের জ্বালাতন থেকে আম্মু মুক্তি পাবে অন্যদিকে তুমি আর ইয়াশও ভালো থাকবে।কি,ঠিক বলেছি না?
– অলওয়েজ ফানি মুডে থাকেন আপনি,তাই না?ইয়াশের জন্য আমার সত্যিই খারাপ লাগছে।
– তার জন্যই তো বললাম বিয়ে করে চলে আসো আমার কাছে।
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_chowdhury
Part: 06
.
.
কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছিলাম সাত দিনের।কিন্তু ছুটি কাটিয়েছি নয়দিনের।আমার কপালে যে শনি আছে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
.
চিটাগং আসার পর এক মুহূর্তের জন্যও আব্বু রেস্ট নিতে দেই নি।একটার দিকে চিটাগাং পৌছালাম।ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিয়ে উঠতে উঠতেই চারটা বেজে গেলো।পাচঁটায় আমার ইকোনোমিক্স কোচিং ছিলো।একটা দিন না গেলে কি এমন ক্ষতি হতো।আব্বু জোর করে কোচিং এ পাঠালো।কোচিং থেকে বাসায় এসেও শান্তি পেলাম না।আম্মু বললো সাতটার দিকে তোর ইংলিশ স্যার আসবে।কথাটা শুনেই আমি তো আম্মুর সাথে পুরো ঝগড়া লাগিয়ে দিলাম।পেয়েছে কি এরা!আমি কি মানুষ না!কিন্তু ঝগড়া বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।আম্মু জানালো আব্বু নাকি স্যারকে ফোন করে আসতে বলেছে।
.
ইফাজ আর আংকেল আজ সকালে দেশে আসছে।আমি আগামিকাল চিটাগাং আসতে চেয়েছিলাম।তাহলে আজ উনার সাথে দেখা করতে পারতাম। উনি যেদিন দেশে ফিরবে সেদিন আমার শাড়ী পরে উনার সাথে দেখা করার কথা ছিলো।কথাটা রাখতে পারি নি।আব্বুকে ইফাজের সাথে দেখা করার ব্যাপারটা সিক্রেট রেখে অন্য সবভাবে বুঝিয়েও কাজ হয়নি।আব্বুর একটাই কথা”অনেকদিন আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটিয়েছো।এখন পড়াশোনায় মন দাও।”
.
উনি এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ীতে উঠেই সরাসরি আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলেছিলো।কিন্তু আমি যখন জানালাম আমি গাড়ীতে চিটাগাং চলে যাচ্ছি।তখন উনি শুধু বলেছিলো”এভাবে আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছো তো,করাও।সময় আমারও আসবে।সব শোধ করে নিবো।তখন তোমার কোনো মানা শুনবো না।”উনার এই কথাটা শোনার পর উনার সাথে দেখা করার ইচ্ছাটাও ভয়ে চলে গেছে।কারন উনি কি কি করার ক্ষমতা রাখে সেটা এই কয়েকদিনে উনার কথার মাধ্যমেই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
.
আমি আর নাফিসা ইংলিশ স্যারের অপেক্ষায় আছি আর বসে বসে গল্প করছি।সাতটা বাজার আরো এগারো মিনিট বাকি।সেই মুহূর্তে উনার ফোন আসলো।পাশ থেকে নাফিসা বললো,
– কে রে?
– উনি।
নাফিসা ঢং করে বললো,
– ও আচ্ছা।
তারপর বললো,
– দেখি দে তো আমি কথা বলব।
– একদম না।
আমি মাত্রই উঠে বেলকনিতে যাবো সেই মুহূর্তে ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।
.
রিসিভ করে গলার স্বর কিছুটা আমার মতো করে বললো,
– হ্যালো।
ওর কান্ড দেখে আমি হাসছি কারন আমি ফোন রিসিভ করেই ফার্স্টে সালাম দেই যেটা ও করে নি।
.
ওপাশ থেকে উনি কি বললো শুনতে পেলাম না।
নাফিসা বললো,
– স্যরি,আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছো?
ওর সালাম দেওয়া শুনে আমি হাসলাম।ইফাজ তারমানে ধরতে পেরেছে সালামের ব্যাপারটা।কিন্তু নাফিসার বলা”কেমন আছো”শুনে আমার তো মাথায় হাত।আমি সবসময় উনাকে আপনি বলে সম্বোধন করি।
.
ইফাজ কি বুঝতে পারছে না এটা যে আমি না?আমি নাফিসাকে ফোনের ভলিউমটা বাড়াতে বললাম।ও তাই করলো।
.
– ভালো আছি।তুমি কেমন আছো জানু?
হায় হায়!উনি কি টের পেয়েই মজা করে জানু বললো নাকি সত্যি সত্যি!নাফিসা আমার দিকে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।আমি নাফিসার হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও এমনভাবে ফোনটা ধরে রেখেছে যে আমার ফোন ভাঙবে কিন্তু ও ছাড়বে না।বাধ্য হয়ে চুপচাপ তাদের প্রেমের আলাপন শুনলাম।
.
নাফিসা বললো,
– এইতো জান ভালো।
ছিঃ আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।নাফিসাও জান বললো।
ইফাজ বললো,
– তো কি করো সোনা?আজ না আমাদের ডেটে যাওয়ার কথা ছিলো।তুমি কথা দিয়ে কিন্তু কথা রাখলে না।আমি কত কষ্ট করে হোটেলের রুমটা ম্যানেজ করলাম।কত্ত এক্সাইটেড ছিলাম,জানো তুমি?
.
ওহ্ মাই গড!!!উনি এসব কি বলছেন!উনার কথা শুনে আমার মাথাটা পুরো হ্যাং হয়ে গেলো।নাফিসা উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি লজ্জায় কি করবো না করবো ভেবে পাচ্ছি না।
.
নাফিসা ফোনটা কানের কাছ থেকে একটু দূরে নিয়ে আমাকে বললো,
– আপু,উনি এসব কি বলছেন!সিরিয়াসলি?
– নো নো।ছিঃ বিয়ের আগে এইসব।নাউযুবিল্লাহ্।
.
নাফিসা ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললো,
– এখন স্যার আসবে।পরে কথা হবে।এখন বাই।
– ওকে শালি বাই।এখন দয়া করে ফোনটা তোমার বোনকে দাও।
উনার কথা শুনে নাফিসা জিহ্বায় কামড় দিয়ে ফোনটা আমার দিকে ছুড়েঁ ফেললো।আর একটুর জন্য আমার ফোনটা ফ্লোরে পড়ে নি।কোনোরকমে ধরে ফেলেছি।
.
আমি আমার রুমে এসে কানের কাছে ফোনটা নিয়ে চুপচাপ বসে আছি।উনিও দেখি কোনো কথা বলছেন না।
.
আমি বললাম,
– কি হলো?চুপ কেনো?
– তুমি চুপ তাই আমিও চুপ।
– তখন নাফিসাকে ওইসব কেনো বললেন?
– কোনসব?
– ওইতো হোটেল,রুম বুক,ডেট।
– ঠিকই তো বলেছি তোমার সাথে তো সত্যিই আজ ডেটে যাওয়ার কথা ছিলো।
– কিহ্!এরকম কোনো কথা ছিলো না।
– সত্যিই কি ছিলো না?
– হুম।হয়তোবা অন্য কারোর সাথে ছিলো আমার সাথে না।
– থাপ্পড় দিবো একটা!কিসব বলছো!
– আপনি বললেন তাই আমিও বললাম।
– আমি তোমাকে নিয়ে বলেছি, তুমিও আমাকে নিয়ে বলতে।এরকম কথা সেকেন্ড টাইম যেনো না শুনি।
– আচ্ছা, ঠিক আছে।আর শুনুন…
– কি?
– আপুর এখন কি অবস্থা।
– এইতো এখন মোটামোটি ভালোই আছে।আমি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা হসপিটালে চলে এসেছি।আপুকে দেখলাম শুয়ে শুয়ে দোয়া দরুদ পড়ছে।
– ওহ্…
– আমার কি মনে হয় জানো?
– কি?
– আমার মনে হচ্ছে আপুর টুইন্স বেবি হবে।
– মানে?হঠাৎ আপনার এরকম মনে হচ্ছে কেনো?
– আপুর পেট দেখে কেনো জানি মনে হচ্ছে।ভিতরে নিশ্চয় দুটো গুঁতোগুঁতি করছে।
– আমার জানামতে ছেলেবাবু পেটে থাকলে নাকি পেট বড় বড় লাগে।একটা বইয়ে পড়েছি।
– বাব্বাহ্!এইসব বইও তুমি পড়।এত্ত ফার্স্ট? আমার জন্য ভালোই হলো।আমার বেবিদের…..
– উফ্!এটা ওসব বই ছিলো না।একটা ইসলামিক বই ছিলো।এখন রাখছি স্যার এসেছে।
আমি কোনোরকমে স্যারের নাম বলে ফোনটা রাখার চেষ্টা করলাম।কারন এখন উনি আবার উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করতে পারেন,সেই ভয়ে।তখন উনার কথা শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
.
হঠাৎ উনি বললেন,
– তোমাকে একবার কাছে পাই,তারপর দেখি তুমি লজ্জা কই রাখো!তোমার সামনে তোমার লজ্জাকে আমি মেরে ফেলবো।ফোনের মধ্যে তো কিছুই করতে পারবো না।রাতে কিন্তু ফোন দিবো।ফোন আশেপাশেই রেখো।
– আচ্ছা,বাই।
– হুম,টেক কেয়ার!
.
.
– কি হলো?কাটছো না কেনো?
– হুম!কাটছি!
সাথে সাথেই ফোনটা কেটে দিলাম।ভালোই লাগছিলো দুজনের নিরবতা!
.
বেডের উপর ফোনটা রেখে নাফিসার কাছে গেলাম।ও বসে বসে টিভি দেখছিলো।এখনও স্যার আসে নি।আমি কিছুটা অবাক হলাম।স্যার তো অলওয়েজ রাইট টাইমে আসে।
.
আমি নাফিসাকে বললাম,
– কি রে টিভি দেখছিস যে?
– স্যার আজ আসবে না।
– সিরিয়াসলি!
– ইয়েস!
.
আমি তো মহাখুশি।কেনো যেনো আজ প্রাইভেট পড়ার মুড একদম ছিলো না।আগে যখন ক্লাস সেভেন এইটে পড়তাম তখন অলওয়েজ এই দোয়াটাই করতাম”আল্লাহ আজ যেনো স্যার না আসে।”
.
রাত সাড়ে দশটার দিকে ইফাজ ভিডিও কল করলো।আমি রিসিভ করতেই আমার চোখ উজ্জল হয়ে উঠলো।ইফাজের কোলে একটা বেবি।ইফাজের এক হাতে বেবি অন্যহাতে ফোন।
.
ইফাজের ঠোঁটে হাসি। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটো উপরে উঠিয়ে বললো,
– ছেলে হয়েছে।তোমার গেস ঠিক ছিলো।
আমি”আলহামদুলিল্লাহ্”বলে ফোনের স্ক্রিনের উপর দিয়েই বাবুর গালে টাচ্ করে চুমো খেলাম।
.
আমার কান্ড দেখে উনি বললো,
– এভাবে হবে না।কাছে এসে আদর করতে হবে।
– ঢাকা আসি তারপর।এখন এভাবেই আদর করবো।
– আমি চিটাগাং গিয়ে যদি তোমাকে নিয়ে আসি তোমার কি কোনো প্রবলেম হবে?
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
– মানে?
– শুনো নি?
– হুম,বাট এটা কখনো পসিবল না।আব্বু কখনোই মানবে না।
– আংকেলের কথা বাদ দাও।আংকেলকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।তোমার মতামত জানতে চেয়েছি।
– আমি তো এক পায়ে দাড়িয়ে।…বলেই হাসলাম।
আবার বললাম,
– যদি আব্বুকে রাজি করাতে পারেন তাহলে আমার আর কোনো কথা নেই।
উনি অসম্ভব খুশি হয়ে বললেন,
– সত্যি!
– হুম,তিন সত্যি।
– ওকে।রেডি থেকো।আমি কালই আসছি।
আমি মুচকি হাসলাম।কিন্তু মনের ভেতর কেনো যেনো ধুকধুক করছে।
.
আম্মু আর নাফিসাকেও বাবুকে দেখালাম।উনি আম্মুর সাথেও কিছুক্ষণ কথা বললেন।আম্মুকে এটাও জানালো কাল যে আমাকে নিতে আসছে।আম্মু তো খুব খুশি।আজ রাতে আম্মুর ঘুম আসবে কিনা সন্দেহ।প্রথম মেয়ে জামাই আসবে বলে কথা।
.
.
(চলবে)