#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 64+65
.
.
পরের দিন সকালে রেডি হয়ে আসবো আসবো করেও দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম।আব্বুর ট্রেন রাত দশটায়।আব্বু দশটার দিকে চিটাগাং চলে যাবে।
.
ফ্লাটে ঢুকেই সারা শরীর বিষাদে ছেয়ে গেলো।আবার সেই একাকিত্ব জীবন!রুমে এসে আগে একটু রেস্ট নিলাম।উনি রুমে ঢুকেই ধপাস করে বেডে শুঁয়ে পরলেন।বেড কেঁপে উঠলো!আমি চঁমকে উঠে বললাম,
– আস্তে,এভাবে কেউ লাফায়?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– সরি,টিয়াপাখি!ভয় পেয়েছো?
– ভয় কেনো পাবো!আমি অতটাও ভীতু না!প্রেগন্যান্ট দেখে বললাম আরকি!
– বাবুরা কি জেগে গেছে?
– আজব কথাবার্তা!এখন কি ওদের জেঁগে থাকা বা ঘুমিয়ে পড়ার বয়স?
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন!আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– দেখি সড়ুন!রেস্ট করার জন্য একটু শুঁয়ে ছিলাম।কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি থাকা অবস্থায় সেটা যে অসম্ভব!
– ইশ্!কাছে থাকলে বেশি আদর পাও তো,তাই এরকম বলছো!দেখি শুঁয়ে পড়ো!একদম উঠবে না!
আমি উঠলাম না!উনাকে জড়িয়ে ধরে শুঁয়ে পরলাম।
– সেদিন কিচেনে আঁচারের বয়াম খালি দেখলাম!শেষ হয়ে গিয়েছে বলো নি কেনো?
হঠাৎ আঁচারের কথা জিজ্ঞেস করাতে আমি চমঁকে উঠে বললাম,
– খেয়াল করেছেন আপনি?
– হুম!
– লেবু ছিলো বাসায়।তাই আর বলা হয়নি।
– যেটা শেষ হয়ে যাবে সাথে সাথেই জানাবে।এভাবে চুঁপটি মেরে বসে থাকলে তো আমি কিছুই বুঝবো না।আচারের মতো সব জিনিস তো আর আমার চোখে পড়ে না।
– সরি!আর হবে না।
– তোমার সব সরি আমি কাউন্ট করে রাখছি।দেখি আমি মরার আগ পর্যন্ত তুমি কতবার আমাকে সরি বলো।
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি উনার পিঠ খাঁমচে বললাম,
– আর কখনো বলবেন মরার কথা?
– এতো আস্তে কেউ খাঁমচি দেয়!জোরে দাও।
– খারাপ মানুষ দেখেছি,আপনার মতো খারাপ আমি জীবনেও দেখি নি।ছাড়ুন!
আমি উনাকে ছেড়ে দেওয়ার ভাঁন করলাম,কিন্তু ছেড়ে দিতে মোটেও ইচ্ছে করলো না!উনি আমাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললেন,
– আর বলবো না!কিন্তু তোমাকেও প্রমিজ করতে হবে,এরকম ছোটখাটো ব্যাপারগুলো আমার কাছে একদম লুকানো চলবে না!
– সরি,প্রমিজ করলাম।আর হবে না।
– সত্যি তো?
– হুম,সত্যি!
উনি আমার কঁপালে চুঁমু দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন।আমি ভালোমতো উনার বুকের উপর শুঁয়ে শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলতে লাগলাম।সবগুলো বোতাম খোলার পর বুকের উপর শুঁয়েই শার্টের ইন খুলে দিলাম।আমার কান্ড দেখে উনি হাসছেন।আমি প্যান্টের বেল্ট একটানে খুলে ফেললাম।আমি উঠে বসে উনাকে ঘুরিয়ে উপুঁড় করে শুঁইয়ে দিলাম,দেন শার্ট খুলে পায়ের নিচে রাখলাম।উনি উপুঁড় হয়েই শুঁয়ে আছেন!আমি উনার পিঠের উপর শুঁয়ে পরলাম।উনি হাসতে হাসতে বললেন,
– প্যান্ট কেনো বাকি রাখলে?ওটাও খোলো!
– এই যে,আবার অসভ্যতামি শুরু করবেন না!
– সামান্য প্যান্টটাই তো খুলতে বললাম!তাই এই কথা শোনালে?তোমার সাথে তো সেভাবে আমার সময় কাটানোই হলো না,বাবুরা আগে…
– চুপ…একদম চুপ!উল্টোপাল্টা কথা বলে একদম অসস্তিতে ফেলবেন না,বলে দিলাম!
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!আমি উনার পেছনের চুল টানতে টানতে বললাম,
– ঘুমিয়ে পড়ুন তো!তাহলে আমিও একটু ঘুমোতে পারি!
আমার কথা শুনে উনি ঘুরে চিঁৎ হয়ে শুয়ে আমাকে বুকের মাঝে নিয়ে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
– আমি মোটেও তোমাকে ডিস্টার্ব করছি না,টিয়াপাখি!
– ….
– ঘুমিয়ে পড়লে?
– উহুঁ!
– তাহলে চুপ যে?
– ভালো লাগছে চুপ থাকতে।
– তুমি যখন পেট নিয়ে হাঁটাহাঁটি করো,আমি অবাক হয়ে শুধু তোমাকেই দেখি!এইটুকুন একটা পিচ্চি মেয়ে,সে কিনা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
আমি উনার বুকে কিল-ঘুষি মেরে বললাম,
– কথার কি ছিরি!লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেগন্যান্ট,ছিঃ!অসভ্য একটা!
উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে চুঁমু খেয়ে বললেন,
– ঠিকই তো বলেছি!লুকিয়ে লুকিয়েই তো হয়েছো!
– মোটেও না!আপনি করেছেন!
– আরে আমি তো এই লুকিয়ে প্রেগন্যান্ট বলতে সেই লুকিয়ে প্রেগন্যান্টের কথা বলিনি!
– একদম বুঝাতে আসবেন না!সব দোষ আপনার!আপনার!আপনার!
– ওকে,ওকে!সব দোষ আমার!মেনে নিচ্ছি!রিলেক্স….
আমি আবার চোখ বন্ধ করে উনার বুকে শুঁয়ে পরলাম!উনি আমার মাথায় হাজারটা চুঁমু খেয়ে বললেন,
– ইদানিং তোমাকে বেশি বাবু বাবু লাগে!আমার তো ভাবতেই অবাক লাগে যখন বাবুরা তোমাকে আম্মু বলে ডাকবে তখন তোমাকে কেমন দেখাবে!!!আমাকে বাবা বলে ডাকলে নাহয় আমাকে মানাবে,বাট তোমাকে?ইশ্,সিনগুলো আমার চোখের সামনে ভাসছে,টিয়াপাখি!একদম ওয়েট করতে পারছি না!
– করতে হবে!এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন,ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনার বাবু হয়েছে!
– সিরিয়াসলি!!!
– হুঁ….
বলেই আমি নাক ডাকা শুরু করলাম।উনাকে আর কথা বাড়াতে দিলাম।
.
রাতে কিচেনে ঢুকে আম্মুর দেওয়া খাবারগুলো গরম করে দুজনে খেয়ে হরর্ মুভি দেখা শুরু করলাম।মুভিটা মোটেও ভয়ঙ্কর ছিলো না।আমি অনেক ভীতু,তবুও মুভিটা দেখে ভয় পেলাম না।উনি পাশে ছিলেন বলেই হয়তোবা ভয় পাচ্ছিলাম না!
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে একটা চিরকুট পেলাম।হলুদ কাঁগজ ভাঁজ করে রাখা।উনাকে পাশে পেলাম না।আমি ঘুম ঘুম চোখে চিরকুট-টা খুলে কয়েকলাইনের কিছুলেখা দেখলাম।আমি পড়তে শুরু করলাম,
টিয়াপাখি♥
প্রথমেই সরি!আমি বিকেল থেকে ট্রাই করেও সামনাসামনি তোমাকে কথাটা বলতে পারছিলাম না।অনেক ট্রাই করেছি বলার,কিন্তু পারিনি!আর কোনো উপায় না পেয়ে এই চিঠিটা লিখে তোমাকে জানান দিচ্ছি।একটু পর আমার ফ্লাইট।আমি এখন হয়তোবা এয়ারপোর্টে।থাইল্যান্ড যেতে হবে।খুবই আর্জেন্ট।আব্বু চিটাগাং থেকে সরাসরি ফ্লাইটে উঠবে,ঢাকায় ব্যাক করার মতো টাইম আব্বুর নেই।আম্মু আর ইয়াশকে ঢাকার গাড়িতে তুলে দিয়েছে আব্বু।আমি জানি এইমুহূর্তে তোমার হাত কাঁপছে।হয়তোবা কান্নাও করছো।তোমাকে আমি অনেক আদর করে এসেছি।তোমাকে আমি বলতে পারিনি বা বলিনি এইকারনে তুমি জানতে পারলে আমাকে আসতে দিতে না।তোমার কান্না দেখলে আমি আর আসতে পারতাম না।আমি না আব্বুকে মানা করতে পারছিলাম আর না তোমাকে কিছু বলতে পারছিলাম।কালরাতে যখন অনিমের সাথে ছিলাম তখনই আব্বু ফোন করে খবর দিলো।আব্বু লোক পাঠিয়ে আমার যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিলো ততক্ষণে।আব্বু ফোন করে শুধু ফ্লাইটের সময়টা বলে দিয়েছে।আব্বু তোমাকে বাড়িতে রেখে আসতে বলেছিলো,কিন্তু সেটা সম্ভব না!আমি জানি টিয়াপাখি, তোমাকে না জানিয়ে এভাবে হুট করে চলে এসে অনেক বড় একটা ভুল করেছি।জানি এটার মাফ জীবনেও হবে না।তারপরও বলবো প্লিজ টিয়াপাখি,মাফ করে দাও।আমি এইঅবস্থায় তোমার কান্না সহ্য করতে পারতাম না।আমি অনেক কষ্টে নিজেকে রুম থেকে বের করেছি।কতবার যে রুম থেকে বের হয়েও বারবার ব্যাক করে তোমাকে আদর করেছি,তার হিসাব নেই।কয়েকদিনের মধ্যেই আমি চলে আসার ট্রাই করবো।চিঠিটা পড়ে একবার কল দিও টিয়াপাখি,ওয়েট করবো!আই লাভ ইউ!
চিঠিটা পড়ার সাথে সাথে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো!আমি কাঁপাকাঁপা হাতে চিঠিটা টেনেহিঁচড়ে ছিড়ে কুটিকুটি করে ফ্লোরে ফেলে দিলাম!বাঁধভেঙ্গে চোখের পানি বেরিয়ে আসছে!আমি উনার নামধরে একটা চিৎকার দিয়ে বেডসাইড টেবিলের উপরে রাখা সবকিছু ফেঁলে দিলাম!আমার আর উনার ছবির ফ্রেম নিচে পড়ে ভেঙ্গে গেলো!বেডের উপরের বালিশ চাঁদর সব ফ্লোরে ফেলে দিয়ে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম!সাথে সাথেই রুমের ভেতর শাড়ি পড়া একটা মেয়ে ঢুকলো!আমার চোখ ঝাঁপসা হয়ে আছে!দুইহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুঁছে তাকিয়ে দেখলাম মলি আপু!উনি দ্রুত আমার সামনে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– হিয়া!প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!ইফাজ তোমাকে দেখাশোনার জন্য আমাকে আর তোমার বোন নাফিসাকে পাঠিয়েছে।ও খুব টেনশনে আছে কিন্তু!বারবার আমাদের ফোন করে তোমার খোঁজখবর নিচ্ছে!ও বারবার বলেছে তুমি যেনো বেশি কান্নাকাটি না করো।প্লিজ,কান্না থামাও।ইফাজ তোমাকে বলে যেতো,বাট ও তোমার কান্না একদম সহ্য করতে পারতো না!আমাকে বলার সময়ই ও কেঁদেকেটে অস্থির!ও চলে আসবে কয়েকদিনের মধ্যেই!এভাবে কান্না করলে বেবির ক্ষতি হবে হিয়া,প্লিজ!
পাশে নাফিসা বসে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আপু!প্লিজ,এভাবে কান্না করিস না!ভাইয়া কালই আমাকে ব্যাপারটা জানিয়েছিলো।ভাইয়া তোকে অনেকবার জানাতে চেয়েছে,কিন্তু পারেনি।তুই যেতে দিতি না,কান্নাকাটি শুরু করতি।তোর কান্না উপেক্ষা করে ভাইয়া যেতে পারতো না।তোর প্রতি ভাইয়ার ভালোবাসাটা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।চিঠি লেখার বুদ্ধিটা আমি আর মলি আপু ভাইয়াকে দিয়েছি।ভাইয়া তোকে ঘুম থেকে উঠাতে যেয়েও বারবার থেমে গেছে।বাধ্য হয়ে আমাদের বুদ্ধিটা কাজে লাগিয়েছে।
আমি নাফিসাকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দুজনের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বললাম,
– স্বপ্ন মনে হচ্ছে!উনাকে তাড়াতাড়ি বের হতে বল!আমি জানি তোরা মজা নিচ্ছিস আমার সাথে!তুই এর আগেও এমনটা করেছিলি!কাউকে বিশ্বাস করিনা!উনাকে বের হতে বল!
সাথে সাথেই রুমের ভেতর অনিম ভাইয়া ঢুকলেন।সাথে ওই ডক্টর আঙ্কেলও ঢুকলেন!অনিম ভাইয়া আমার পাশে বসে বললেন,
– ইফাজ ডক্টর আঙ্কেলকে কাল রাতেই ইনফর্ম করে রেখেছিলো।উনি হসপিটাল ফেলে আর্জেন্ট ভেবে এখানে এসেছেন।দেখি বেডে উঠে বসো।
অনিম ভাইয়া মলি আপু আর নাফিসাকে ইশারায় আমাকে হাত ধরে তুলতে বললেন।আমি কাউকে আমার হাত ধরতে দিলাম না।দুজন জোর করে আমাকে টেনে তুললো।আমি নাফিসাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– উনি কি সত্যি চলে গিয়েছেন?
– হ্যা আপু!
– আমাকে একবার বলতে পারতো!আমি উনাকে কিচ্ছু বলতাম না,বিশ্বাস কর!উনাকে আমি হাসিমুখে বিদায় দিতাম!একটুও কান্নাকাটি করতাম না!শুধু শুধু উনি ভয় পেয়েছেন!
– তুমি এখন এরকম বলছো আপু!কিন্তু ভাইয়াকে বিদায় দেওয়ার সময় তুমি এখনকার মতোই চিৎকার করে করে কাঁদতে!তুমি কি মনে করো তোমাকে আমি চিনি না?ভাইয়া চেনে না?আমার মতে ভাইয়া একদম ঠিক কাজ করেছে!তুমি ঠান্ডা মাথায় নিজের দিক থেকে ভেবে দেখো!
– উনাকে আমি একটুও ক্ষমা করবো না!আমার হাতে-পায়ে ধরলেও না!আমি আমার বাবুদের উনাকে দিবো না!এইটাই উনার সর্বোচ্চ শাস্তি!এই অবস্থায় উনি আমাকে ফেলে চলে গেছেন!
অনিম ভাইয়া বললেন,
– গুড ডিসিশান!একদম বেবিদের দিবে না!সর্বোচ্চ শাস্তি,গুড!
মলি আপু উনার ফোন আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– ইফাজ কল করেছে,নাও!
আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,
– বলবো না কথা!
নাফিসা ফোনটা নিয়ে আমার কানে ধরে বললো,
– প্লিজ,আপু একবার কথা বল!
আমি কোনো কথা বললাম!উনি ফোনের অপাশ থেকে বারবার সরি বলছেন!আমি কিচ্ছু বলছি না!আমাকে চুপ থাকতে থেকে উনি বললেন “রুমে সিসি ক্যামেরা লাগানো!আমি লাইভ দেখতে পাচ্ছি তোমাকে!”
আমি চঁমকে উঠে পুরো রুমে একবার চোখ বুলালাম!উনি বললেন,
– এভাবে খুঁজলে তো পাবে না টিয়াপাখি!
– আমি জানি আপনি রুমে লুকিয়ে আছেন!প্লিজ,বের হোন না!
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 65
.
.
ভিডিও কলে কিছুক্ষণ উনার সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।উনি সত্যি সত্যিই থাইল্যান্ড চলে গেছেন।আমি কান্না আটকে রাখতে পারছি-ই না।বারবার চোখ মুছতে মুছতে চোখ পোড়াচ্ছে।ব্যাথাও করছে খুব।নাফিসা একগ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত এনে দিলো।আমি খেলাম না।ডক্টর আঙ্কেল চেকআপ করে চলে গেলেন।অনিম ভাইয়া চুপচাপ সোফায় বসে আছেন।মলি আপু চুপচাপ পাশে বসে আমাকে শান্ত্বনা দিচ্ছেন।নাফিসা নিরব হয়ে বসে আছে।তুলি ফ্লোর পরিষ্কার করছে।আমি বেড থেকে নেমে আমার আর উনার ভেঙ্গে যাওয়া ছবির ফ্রেমটা তুলে আলমারিতে রেখে ওয়াশরুমে চলে এলাম।ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কান্না করে ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে এলাম।জীবন কি এভাবেই হুট করে এলোমেলো হয়ে যায়?এতো বড় একটা কথা চেঁপে উনি দুদিন ধরে কি সুন্দর নরমাল বিহেভ করলেন।আমি একটুও টের পেলাম না!
.
আমি ডাইনিং-এ এসে প্রতিদিনের মতো ব্রেকফাস্ট করলাম।কাল এইসময় উনি পাশে ছিলেন,কিন্তু আজ নেই!আবার চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসছে।নাফিসাকে ডেকে বললাম আমার ফোনটা নিয়ে আসতে।নাফিসা ফোনটা টেবিলে রেখে চলে গেলো।আমি আন্টির নাম্বার বের করে আন্টিকে কল দিলাম।সাথে সাথেই আন্টি রিসিভ করে বললেন,
– হ্যালো…
– আসসালাম আলাইকুম,মা!
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ্!আপনি কেমন আছেন?
– ভালো।
– ইয়াশ কোথায়?
– এইতো পাশেই।কথা বলবে?
– জ্বী!
– আচ্ছা,দিচ্ছি।
.
– ভাবি….
– কেমন আছো?
– ভালো।তুমি কেমন আছো?
– ভালো না।তুমি কবে আসবে?
– বাড়ি যেয়ে ওখান থেকে সরাসরি ড্রাইভার আঙ্কেলের সাথে তোমার ওখানে যাবো।
– আচ্ছা,তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু!
– ওকে।
– মা’কে দাও।
ইয়াশ আন্টিকে ফোন দিলেন।আন্টির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।ডাইনিং টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম।উনার দুষ্টু দুষ্টু চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে।এইমুহূর্তে উনি আমার পাশে থাকলে কি করতেন?মাথায় কারোর স্পর্শ পেতেই আমি চোখ খুলে তাকালাম।মলি আপু আমার মাথায় হাত রেখে পাশে দাড়িয়ে আছেন।আমি টেবিল থেকে মাথা তুললাম না।আপু আমার পাশের চেয়ার টেনে বসে সেইম আমার মতো টেবিলে মাথা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– লাইফটাই এরকম!অলওয়েজ সারপ্রাইজ!কিছু সারপ্রাইজ আমাদের আনন্দ দেয়,কিছু সারপ্রাইজ দেয় কষ্ট!তুমি যেভাবে আজ কান্না করেছো,ইফাজ অনিমকে জড়িয়ে ধরে ঠিক সেভাবেই কান্না করেছিলো।যাওয়ার সময় বারবার বলেছিলো দেখে রাখবি কিন্তু আমার জানটাকে!ও কান্না করলে একদম কান্না করতে দিবিনা!প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে অনিম তোমার পিক তুলে ইফাজকে সেন্ড করছে!এই যে আমি তুমি এখানে এভাবে টেবিলের উপর শুঁয়ে আছি,দেখো গিয়ে এটাও সেন্ড করেছে!প্লিজ,নো কান্নাকাটি!
আপু আমার চোখের পানি মুঁছে দিয়ে বললো,
– কান্না করা একদম বারণ।এতো কান্নাকাটি করলে মাথাব্যাথা করবে।এটার এফেক্ট বাবুর উপরও পড়তে পারে।আঙ্কেল কিন্তু এইসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
আপু একনাগাড়ে এক একটা কথা বলেই যাচ্ছেন।আপুর কথাগুলো আমার কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে ঠিকই কিন্ত ব্রেইনে ঢুকছে না।কিছুক্ষণ পর নাফিসা এসে মলি আপুর চেয়ার ধরে পেছনে দাড়ালো।আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।আমি নাফিসার দৃষ্টি উপেক্ষা করে চোখ বন্ধ করলাম।আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ ওভাবেই ছিলাম।আপু আমাকে তুলে বেডরুমে নিয়ে এসে শুঁয়ে থাকতে বললেন।আমি বেডে শুঁতেই আপু একটা কম্বল দিয়ে মাথা থেকে পা অব্দি সমস্ত শরীর ঢেকে দিলেন।আপু নিশ্চয় আমাকে কান্না করার সুযোগ করে দিলেন।সবাই আমাকে এতো কেনো বুঝে?
.
বিকেলের দিকে কিচেনে ঢুকতেই দেখলাম ছয়টা ছোট ছোট আচারের বয়াম সারিবদ্ধভাবে সাজানো!দেখেই সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো!এইপর্যন্ত কয়েকবার উনার সাথে কথা বলেছি কিন্তু উনি একবারও এগুলোর কথা বলেননি!আমি সবগুলো বয়াম বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে কেঁদে দিলাম!একটা খুলে খেতে শুরু করলাম!নাফিসা দরজার পাশ থেকে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে সেটা আমার চোখের আড়াল হলো না!আমি পেটে হাত রেখে মনে মনে বললাম “তোদের খালামনি তোদের মা’য়ের বিরহের কান্না লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে রে!”
অর্ধেক আচার শেষ করে হাত ধুঁয়ে একটা বয়াম সাথে নিয়ে রুমে চলে এলাম।মলি আপু আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকার সুযোগ করে দিয়ে অনিম ভাইয়াকে নিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলেন!
আমি আলমারির দিকে পা বাড়ালাম।উনার কয়েকটা শার্ট রেখে বাকি সবগুলোই নিয়ে গেছেন।আমি নিজের হাতে উনার লাগেজ গুছিয়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হতো?আঙ্গুলের ছোঁয়া পর্যন্ত দিতে পারিনি!আমি সবগুলো শার্ট-প্যান্ট,
টি-শার্ট বের করে বেডের উপর রাখলাম।আমি কম্বলের ভেতর ঢুকে শার্ট-প্যান্টগুলো জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম।
হঠাৎ কেউ পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে কপালে চুঁমু দিলো।সাথে সাথেই বলে উঠলো “ভাবি!”
ইয়াশের দিকে তাকাতেই দেখলাম ওর চোখেমুখে আনন্দের ছাঁপ!কতদিন পর ভাবিকে দেখলো সে!ইয়াশ জুতো খুলে কম্বলের ভেতর ঢুকে শুঁয়ে পড়লো।আমি ইয়াশের চুলগুলো পেছনের দিকে ব্রাশ করতে করতে বললাম,
– ঠান্ডা কমেছে?
– হুম!
– আসতে এতো লেইট হলো কেনো?
– আম্মুর সাজুগুজু করতে করতে লেইট হয়ে গেছে।
আমার বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো।
– মা এসেছে তোমার সাথে?
– হুম।ড্রইংরুমে।
আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম।ইয়াশও উঠে বসলো।হামাগুড়ি দিয়ে পায়ের কাছ থেকে আচারের বয়াম এনে আমার সামনে ধরে বললো,
– আচার?
– হুম।খাও তুমি?
– উহুম!
– ওহ্।
ইয়াশ আচার সাইড টেবিলে রেখে দিলো।আমি বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকে চোখেমুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে বের হলাম।উনার শার্ট-প্যান্ট আলামারির ভেতর রেখে একটা শাল বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।ইয়াশকে নিয়ে ড্রইংরুমে চলে এলাম।আন্টি অনিম ভাইয়া, মলি আপু, নাফিসার সাথে বসে বসে গল্প করছিলেন।আমাকে দেখতে পেয়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ইশ্!চেহারার কি অবস্থা করেছো!এতো ভালোবাসা আমার ছেলে রাখবে কই?
আন্টি আমার থুতনী ধরে আবার বললেন,
– ও চলে আসবে!তোমার বাবা তো ওর সাথে আছেই!একদম টেনশন করো না!কিচ্ছু হবে না!
আমি ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম!আমার চোখে পানি টলমল করছে!চোখ বন্ধ করলেই টুপ করে পানি পড়বে!চোখ খোলা রাখা সত্ত্বেও গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো!আন্টি আমাকে একটানে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– মেয়ের কান্ড দেখো!চলে আসবে তো ও!আচ্ছা, তোমার বাবাকে বলে ইফাজকে তাড়াতাড়ি দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি!
– ভাবি!ভাইয়া চলে আসবে!কান্না করো না!
ইয়াশ আমার হাতের আঙ্গুল ঝাঁকিয়ে কথাটা বললো!ইয়াশের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো!আমি সবার অগোচড়ে ইয়াশের হাত শক্ত করে ধরলাম!ইয়াশও আমার হাত শক্ত করে ধরলো!আন্টি আমার কপালে চুঁমু দিয়ে বললেন,
– আমি তোমার বাবাকে বলে সব ব্যবস্থা করছি!আর কান্নাকাটি করা চলবে না।দেখি এখন একটু হাসো।
আমি ঠোঁট প্রসারিত করলাম!
অনিম ভাইয়া আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– নাও,কথা বলো!
আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন!আমি অনিম ভাইয়ার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে রুমে চলে এলাম!উনি বললেন,
– কতবার কল দিলাম!ধরলে না কেনো?
– শুনিনি!
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন!কিছুক্ষণ চুঁপ থেকে বললেন,
– রাগ কমে নি?
– আসবেন কবে?
– কাজ শেষ হলে!
– আমি নির্দিষ্ট টাইম জানতে চেয়েছি!
– ওভাবে বলতে পারবো না!
– …..
– প্লিজ….একটু নরমালি কথা বলো না!কষ্ট হচ্ছে আমার!
আমি বিছানার চাঁদর আঁকড়ে ধরে নিজেকে কান্না থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলাম!উনি বললেন,
– আপনি নাকি আমাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করছেন?
– শাস্তিটা তো আপনি জীবনেও মানবেন না!প্ল্যান করে লাভ কি!
– আমারও তাই মনে হয়!ক্যান্সেল করে নতুন কোনো শাস্তির কথা ভাবো!
– মলি আপু সাজেস্ট করলো একবছর আমাকে টাচ্ করার পারমিশন না দেওয়া!ওটার থেকে এটা বেটার,তাই না?
– একবছর!!!
– হুঁ….কম হয়ে গেলো?
– হুম!আর একটু বাড়াও!
– দশমাস?
উনি হাসলেন!বললেন,
– উহু!আর একটু বাড়াও!
– সাতমাস?
এবার উনি উচ্চস্বরে হেসে বললেন,
– তুমি থাকতে পারবে তো?
– মানে?শাস্তিটা আপনার,আমার না!
– বাহ্ তুমি আমাকে যা খুশি তাই করতে পারবে বাট আমি তোমাকে টাচ্ পর্যন্ত করতে পারবো না?
– হুঁ!
– ওকে,মেনে নিলাম শাস্তি!সিসি ক্যামেরার হদিস্ পেয়েছো?
– হুম!অনিম ভাইয়া!
– মন কি এখনো খারাপ নাকি কথা বলে একটু ভালো লাগছে?
– আপনি দেখে যান!
– আমি জানি ভালো লাগছে এন্ড তোমার আরো কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে!
– হুট্ করে কাটবেন নাতো ফোন?
– হুট্ করে কেনো কাটবো!তোমাকে বলেই কাটবো!
আমি ফ্লোরে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল ঘঁষতে ঘঁষতে বললাম,
– আমি যে প্রেগন্যান্ট এটা অনিম ভাইয়া আর মলি আপুকে কখন বলেছেন?
– আসার সময়!
– উনারা কাউকে বলে দিবেন নাতো?
– আমি জেনেশুনেই ওদেরকে জানিয়েছি!সব ধরনের হেল্প পাবে ওদের কাছ থেকে!আর নাফিসা তো আছেই!
– যতদিন আপনি না আসবেন ততদিনই কি ওরা বসে বসে আমাকে পাহারা দেবে?
– ইয়েস ম্যাডাম!নাফিসা তোমার ওখান থেকেই কলেজ করবে আর মলি ফ্রি একটা মেয়ে!ওর লাইফে অলওয়েজ ফ্রাইডে চলে!
– ইফাজ,প্লিজ কাম!
হঠাৎ আঙ্কেল উনাকে ডাকলেন।আঙ্কেল কি উনার আশেপাশেই আছে?
উনি বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুম,বুঝতে পেরেছি।রাখছি।
আমি কাটলাম না।উনিও কাটলেন না।কয়েক সেকেন্ড পর উনি বললেন,
– প্লিজ…
– হুম,আসসালাম আলাইকুম!
– ওয়ালাইকুম আসসালাম!
আমি সাথে সাথেই কেটে দিলাম!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here