#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 56+57
.
.
উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্য উনি আমাকে অনেকক্ষণ বকাবকি করে নিজে থেকেই আবার আদর শুরু করে দিয়ে আমাকে নিয়ে শুঁয়ে পরলেন!
.
.
রাতে আমি ইয়াশকে হোমওয়ার্ক করতে দিয়ে ফোন নিয়ে কিচেনে এসে আম্মুর নাম্বারে ডায়াল করলাম।রিং হচ্ছে।কিছুক্ষণ পর একাই কেটে গেলো কেউ ধরলো না।আমি আবার কল দিলাম।কল রিসিভ করেই ওপাশ থেকে আব্বু বলে উঠলো,
– হ্যালো… কে?
আব্বুর এই “কে” শব্দটা শুনেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো!কে কল করলো সেটা না দেখেই কল রিসিভ করে!আমি কোনোরকমে বললাম,
– আব্বু আমি!
আমার কন্ঠ শুনে আব্বু উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বললো,
– আরে…হিয়া মা যে!এতোদিন পর বাবার কথা মনে পড়লো?
– আব্বু আমার সবসময়ই তোমার কথা মনে পড়ে!
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি!আমি ব্যস্ত মানুষ ফোন করার সুযোগ-ই পাই না!তুই তো আর ব্যস্ত না….
– কেমন আছো?
– হাহ্….আছি ভালো!তুই ভালো আছিস তো?
– হুম!
– পড়াশোনার কি অবস্থা?শোনো…আমি কিন্তু রেজাল্ট…
– আব্বু আমি একবছর ড্রপ দিতে চাচ্ছি!এইবছর কোনো ভার্সিটির ফর্ম তুলবো না!
আমার কথা শুনে আব্বু নির্লিপ্তভাবে বললো,
– তোমার আম্মুর কাছ থেকে তো সব শুনলাম।শুধু শুধু একবছর ড্রপ দেওয়ার কোনো কারন তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না!এই নিয়ে তোমার মা’কে প্রচন্ড বকাবকি করেছি।সেই বোকাগুলো এইমুহূর্তে তোমাকে দিতে চাচ্ছি না।এমনিতেই আমাদের ছেড়ে দূরে থাকো।তাই বলে ভেবো না তুমি নিজের মতো স্বাধীনভাবে চলবে!আমি কিন্তু তোমাকে স্বাধীনভাবে চলতে মানা করছি না!তুমি তোমার মতো চলবে কিন্তু লিমিটেশন রেখে!এই যে একবছর ড্রপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছো যেটা আমার কাছে এইমুহূর্তে মনে হচ্ছে তুমি নিজের লিমিট ক্রস করে ফাউল একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছো!তুমি এখন আমার সামনে থাকলে বলো তো কি করতাম?
– চড় মারতে!
– ইয়েস….ছয়মাসও গেলো না তুমি নিজেকে খুব বড় মনে করছো!আসলে কিন্তু তুমি ওতটাও বড় হও নি!সেটা তুমি আরো একবার প্রমান করে দিলে এই ইয়ার ড্রপ দেওয়ার ডিসিশান নিয়ে!এটা কি আদৌও তোমার ডিসিশান নাকি তোমার শ্বশুরবাড়ির…..
আমি আব্বুকে থামিয়ে বললাম,
– আব্বু ডিসিশান-টা আমার!আমি নিজে নিয়েছি ডিসিশানটা,উনারা যাষ্ট তোমাকে জানিয়েছেন!এখানে উনাদের কোনো দোষ নেই!মা-বাবা আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছেন!এই সিদ্ধান্তটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিলো!এমনকি ইফাজও শুনে রাগ করেছিলো!আমি অনেকভাবে ম্যানেজ করে উনাকে রাজি করিয়েছি!
আব্বু হঠাৎ ধমক দিয়ে বললো,
– ইফাজ মানে?তুমি ইফাজকে নাম ধরে ডাকো নাকি?
– নো…নো…আব্বু তুমি ভুল বুঝছো আমাকে!আমি তো যাস্ট তোমার সামনে নাম ধরে সম্বোধন করলাম তোমার বোঝার সুবিধার্থে!
– গুড…এই কাজটা কোনোদিনও করবে না!
– ওকে!
– আচ্ছা যা হবার হয়েছে!আমিও জানি উনারা যথেষ্ট ভালো মানুষ!তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে আসি….একবছর ড্রপ দিবে মানে এই নয় যে একেবারে পড়াশোনা অফ!আশেপাশে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যায় সেগুলো এনে পড়তে পারো!এতে তোমার ওই অকেজো ব্রেইনে একটু হলেও বুদ্ধি আসবে!সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকবে,মুখস্ত হবে তাড়াতাড়ি!
আমি আব্বুর কথা কেড়ে নিয়ে বললাম,
– তখন রেজাল্টও আপনাআপনি ভালো হবে,তাইনা?
আমার কথা শুনে আব্বু হেসে ফেললো।আমি বললাম,
– আম্মুকে দাও!
– ভালো লাগছে না আমার সাথে বকবক করতে?
– নাহ্!আম্মুকে দাও!
আব্বু হেসে বললো,
– হ্যা…দিচ্ছি!
আমি পা উঠিয়ে ক্যাবিনেটের উপর বসলাম।ফোনের ওপাশ থেকে আম্মু বললো,
– শুনলাম আমার বড় মেয়ে নাকি ফোন করে আমাকে চেয়েছে?
আম্মুর কথা শুনে আমি ঢং করে বললাম,
– কই নাতো!
আম্মু হেসে বললো,
– কেমন আছিস?
– ভালো….তুমি কেমন আছো?কি করছিলে?
– আছি ভালো!তোর আব্বুর সাথে মারামারি করছিলাম এতক্ষণ!
– সিরিয়াসলি?
– হুম…দেখ তোর আব্বু আমার চুল ধরে টানছে!
– সবসময় মজা,তাই না?আব্বু কখনোই এইকাজ করবে না!শোনো না আম্মু…
– হুম বল!
– নাফিসা কেমন আছে?
– ভালো।নাফিসা মনে হয় রুমে পড়ছে।ডাক দিবো?কথা বলবি?
– না..না!থাক!আসলে আম্মু….
– কি?
– আব্বু চিটাগাং আর যাবে না?
– হুম…কয়েকদিনের ছুটিতে এসেছে!আবার যাবে!
আম্মুর কথা শুনে আমি শুধু “ওহ্” বললাম।আসল কথাটা মুখ দিয়ে বের করতেই পারছি না।আম্মু বললো,
– ইফাজকে নিয়ে একদিন আয়।তোর আব্বুও আছে।তোর আব্বুর তো তোর শ্বশুরের সাথে প্রতিদিন দেখা হয়।তোর আব্বু প্রতিদিন বাসায় এসে বলবে “কি ভালো মানুষ,দেখেছো সামিনা?মেয়েটার কপাল আছে বলতে হবে।”
আমি অবাক কন্ঠে বললাম,
– আব্বুর সাথে প্রতিদিন দেখা হয়?
– হুম!তোর শ্বাশুড়ির সাথে কয়েকদিন আগে কথা হলো!এতো ভালো মানুষ হয়?
– তোমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সবাই অনেক ভালো!তোমার জামাইকে তো কঁপাল করে পেয়েছি আমি!মা-বাবার মতোই হয়েছে!আমার কোনো প্রবলেম হলে উনি দুনিয়ার সবার কথা ভুলে আমাকে নিয়ে পড়ে থাকে!হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে সুস্থ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে!
আমি মনে মনে বললাম “উনি অনেক ভালো আম্মু,অনেক ভালো!”
আম্মু বললো,
– ওরকম সবার হাজবেন্ড-ই করে।
– জানি আম্মু!তারপরও আমার বলতে ভালো লাগে!
আমি চোখের পানি মুঁছে আম্মুকে বললাম,
– আম্মু তোমার বয়স কত?
হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করাতে আম্মু ঘাঁবড়ে গেলো।
– এটা আবার কেমন প্রশ্ন?
– এমনি জিজ্ঞেস করেছি।না বলতে চাইলে থাক!
আমি একটু কেঁশে বললাম,
– আম্মু,আমি তোমার পেটে এসেছিলাম কবে?
প্রশ্নটা করেই আমি চোখমুখ বন্ধ করে ফেললাম!ধমক দিবে নাতো?
– অনার্স ফাইনাল ইয়ারে…মনে হয়!
আম্মু হেসে হেসে বললো!
যাক….বোকা দিলো না আম্মু!নরমালি আন্সারটা দিলো!কথাটা ধরতেও পারে নি!এই নিয়ে আর বেশি কথা না বলাই ভালো!মায়ের মন…ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল!আমি আম্মুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম!চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম….আম্মু বিয়ের দুইবছর পর বেবি নিয়েছে!আম্মুর বিয়ে হয়েছে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াকালীন,সেখানে আমার ইন্টারের পর!আম্মু ফার্স্ট কনসিভ করেছিলো অনার্স কমপ্লিট করে সেখানে তার মেয়ে কনসিভ করেছে অনার্সে পা রাখার আগেই!কত্ত তফাৎ!যেখানে আম্মু বিয়ের দু’বছর পর কনসিভ করেছিলো সেখানে আমি?কথাটা একদম আম্মুকে জানানো যাবে না…অসম্ভব!যা দেখা করার আমাকে এই কয়েকদিনেই সবার সাথে দেখা করতে হবে সবার নজরে পড়ার আগেই!
.
উফ্!সব অসহ্য লাগছে!চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে!কাজটা করার আগে একবার উনার পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ছিলো….কেনো একা একা সব করতে গেলাম?প্রেগন্যান্টের কথা জানতে পারলে তো সবাই উনাকে দোষ দিবে!উনি তো তখন একটুও মুখ খুলবেন না!
“এটা আমার দোষ না!হিয়ার নিজের দোষ!” কথাটা কখনোই কাউকে বলবেন না!মুখ বুঁজে সব সহ্য করবেন!
.
রুমে চলে এলাম।ইয়াশের পাশে বসে আন্টিকে কল দিলাম।আন্টি রিসিভ করতেই আমি সালাম দিয়ে বললাম,
– কেমন আছেন,মা?
– আলহামদুলিল্লাহ্!তুমি কেমন আছো?
– জ্বী ভালো!বাবা কেমন আছে?
– তোমার বাবা তো সবসময়-ই ভালো থাকেন।ইয়াশ কি বেশি দুষ্টুমি করছে?
আন্টির কথা শুনে আমি হেসে ইয়াশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
– আমি চায় ও আমার সাথে দুষ্টুমি করুক!কিন্তু আপনার ছেলে আমার কাছে আসলেই ইনোসেন্ট হয়ে যায়! দুষ্টুমি করা তো দূরের কথা বাধ্য ছেলের মতো আমার সব কথা শোনে!দো’আ করবেন ইয়াশের মতো যেনো আপনার বড় ছেলেরও একটা ছেলে হয়!
আমার কথা শুনে আন্টি শব্দ করে হাসলেন!হেসে আমার কথাটা উড়িয়ে দিলেন!কিন্তু আমি আমার দ্বিতীয় মা’য়ের কাছে সত্যি সত্যিই দো’আ চেয়েছি!এইমুহূর্তে সবার দো’আ আমার ভীষন প্রয়োজন!
আমি ভাঙ্গা গলায় আন্টিকে বললাম,
– হাসছেন যে?
আন্টি হাসি থামিয়ে বললেন,
– বিয়ে হতে না হতেই মা হওয়ার চিন্তা মাথায় ঢুকেছে,তাই না?এইসব দো’আ নেওয়ার অনেক টাইম আছে!তোমার আব্বুর কাছে কথা দিয়ে তোমাকে নিয়ে এসেছি,উনি যদি জানতে পারে তুমি এতো তাড়াতাড়ি আমার কাছে নাতি-নাতনির জন্য দো’আ চাচ্ছো!বুঝতে পারছো তো কি হবে?
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
– হুম!তখন এমনি কথা উঠলো তাই একটু দো’আ চেয়ে নিলাম!
– আমরা সবসময় তোমাদের জন্য দো’আ করি!এভাবে চেয়ে চেয়ে দো’আ নিতে হবে না!ইয়াশ কি করে?
আমি ভাবলেশহীনভাবে বললাম,
– হোমওয়ার্ক করে!
– ওহ্….আর ইফাজ?
– উনি একটু বাহিরে গেছেন!
আরো কিছুক্ষণ আন্টির সাথে কথা বলে ফোন কেটে দিলাম!
.
ইয়াশ খাতা এগিয়ে দিয়ে বললো,
– ভাবি শেষ!
আমি খাতা চেক করে ইয়াশকে কয়েকটা অংক করতে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পেটে হাত রেখে কান্না করে দিলাম!কেনো করলাম কাজটা?খুব কি প্রয়োজন ছিলো?এভাবে আর কতদিন?এইমুহূর্তে তোমাদের আমার ভীষন প্রয়োজন আব্বু-আম্মু,মা-বাবা!পারছি না থাকতে!তোমাদের ছেলে বাবা হবে….তোমাদের মেয়ে মা হবে!একটু আসো না আমার কাছে!একটু আমার পেটে মাথা রেখে আদর করে যাও!তোমাদের নাতি-নাতনি আসবে!একটু ওদের জন্য দো’আ করে যাও না,প্লিজ….
আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম!ইয়াশ ওয়াশরুমের দরজায় নক করছে!
– ভাবি,কি হয়েছে?কাঁদছো কেনো?আমি ভয় পাচ্ছি… দরজা খুলো!
আমি দরজা খুলেই ইয়াশকে জড়িয়ে ধরলাম!ইয়াশ ভয়ে কাঁপছে!ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
– ভাবি কান্না করছো কেনো?ভয় পাচ্ছি তো…..
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 57
.
.
ইফাজ গুনগুন করতে করতে রুমে ঢুকলেন!উনাকে দেখতে পেয়ে আমি দ্রুত ইয়াশকে ছেড়ে চোখ মুঁছে উঠে দাড়ালাম!উনি কাছে এসে ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি হয়েছে?কাঁদছো কেনো?
আমি আস্তে করে বললাম,
– কে কাঁদছে?
উনি আমার কাছে এসে আমার চোখের পানি আঙ্গুলে নিয়ে বললেন,
– তাহলে এটা কি?
পাশ থেকে ইয়াশ বলে উঠলো,
– একটু আগে আম্মুর সাথে কথা বলে ওয়াশরুমে যেয়ে কান্না করে দিলো!
– কিহ্?
উনি আমার আরো কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
– আম্মু কিছু বলেছে?
আমি মাথা নেড়ে “না”সূচক উত্তর দিলাম!
উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন,
– আম্মু কিছু বলেছে?
– না!
– তাহলে?
আমি বেড থেকে ফোনটা নিয়ে সকলের রেকর্ড উনাকে শোনালাম!উনি ঠাঁই দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন!আমি উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ফ্লোরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম!ইয়াশ বেডের উপর দাড়িয়ে আছে!হঠাৎ উনি ইয়াশকে কোলে নিয়ে ড্রইংরুমে চলে গেলেন!টিভি অন করে কার্টুনের চ্যানেল দিয়ে ইয়াশকে বসিয়ে রুমে ব্যাক করলেন!কার্টুনের কথাগুলো এইরুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে!উনি রুমে আসার আগেই বারান্দায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম!উনি যে আমার কাজে রেগে গিয়েছেন সেটা উনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে!বারবার বলেছেন এই বিষয়টা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলতে!টেনশন না নিতে!তবুও আমি উনার কথা শুনছি না!
.
উনি দরজা ধাক্কাচ্ছেন!রাগীকন্ঠে বললেন,
– হিয়া!দরজা খুলবে নাকি কাল সকাল পর্যন্ত এখানে দাড়িয়ে থেকে ওয়েট করবো?
উনার কথাটা শোনামাত্রই আমার গলা শুঁকিয়ে গেলো!আমি কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে সাহস নিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম!উনি কোনোকিছু না বলে আমার সামনে আমার ফোনের সিম খুলে ভেঙ্গে ফেলে বললেন,
– তোমার এইসব টেনশন আর নিজের প্রতি কেয়ারলেসের জন্য যদি আমার বেবির কিছু হয়,তোমাকে আমি ছাড়বো না!
উনি আমার দুইবাহু ধরে ঝাঁকিয়ে আবার বললেন,
– আমি যে তোমার সাথে আছি,তারপরও কি তোমার হচ্ছে না?একের পর এক ভুল করছো!বারবার বলছি এতো স্ট্রেস না নিতে,প্রবলেম হবে!রিলেক্স থাকো…সবসময় একটা কথাই ভাবো তোমার বাবুদের বাবা আছে তোমার সাথে!পজেটিভ চিন্তাভাবনা করো অলওয়েজ!সবসময়…..
আমি উনাকে আর কিচ্ছু বলতে দিলাম না!শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম!উনি টাল সামলাতে না পেরে আমাকে নিয়ে সামান্য পিছিয়ে গেলেন!আমি উনার পিঠের শার্ট আঁকড়ে ধরে বললাম,
– উনাদের খুব জানাতে ইচ্ছে করছিলো!কিন্তু এক একজনের কথা শুনে মনের ভেতর যতটুকু সাহস এনেছিলাম সব একনিমিষেই ভয়ে পরিণত হয়েছে!
আমি ইফাজকে ছেড়ে মাথাউঁচু করে উনার সামনে দাড়িয়ে একহাত উনার বুকে রেখে বললাম,
– এইমুহূর্তে আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি আর কখনোই এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবো না!প্রমিজ!
– দেখা যাবে!
উনি আমার হাত ধরে ড্রইংরুমে ইয়াশের পাশে বসিয়ে ডাইনিং-এ চলে গেলেন!কিছুক্ষণ পর প্লেটভর্তি খাবার এনে আমাদের সামনে দাড়ালেন!একবার আমাকে খাঁইয়ে দিচ্ছেন তো একবার ইয়াশকে!ইয়াশ আমার কাধের সাথে হেলান দিয়ে খাচ্ছে আর কার্টুন দেখছে!
.
.
সকালের দিকে কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।বেড থেকে নেমে হেলেদুলে মেইনডোর অব্দি আসলাম!ম্যাজিক আই-এ চোখ রেখে দেখলাম তুলি এসেছে।আমি দরজা খুলে দিতেই তুলি হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমাকে সালাম দিলো!প্রতিত্ত্যুরে আমি সামান্য হেসে সালামের উত্তর নিলাম।বললাম,
– দেখে অনেক খুশী মনে হচ্ছে, কারন কি?
– আপা,আমি কি একটাবার আপনেরে জড়াইয়া ধরতে পারি?
– নিশ্চয়!
আমি হাত বাড়াতেই তুলি আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দিয়ে বললো,
– আমার বিয়া ঠিক হইছে!একমাস পর বিয়া!
আমি উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বললাম,
– বাহ্ এতো ভালো একটা খবর তুমি আমাকে এখন দিচ্ছো?কালরাতেই তো ফোন করে জানানো উচিৎ ছিলো!
তুলি ভাঙ্গা কন্ঠে বললো,
– সরি আপা,ভুল হইয়া গেছে।আসলে আমার কাছে আপনের নাম্বারডা ছিলো না,ভায়ের নাম্বার ছিলো।উনারে একবার ফোন দিতে নিয়াও দেই নাই।ভায়ের সাথে তো আমার সেরকম কোনো খাতির নাই যে খবরটা উনারে দিমু।
তুলির কথায় বোঝা যাচ্ছে সে অনেক লজ্জিত।আমি তুলিকে স্বাভাবিক করতে বললাম,
– ইট’স ওকে।একটু দাড়াও,আমি আসছি।
আমি ফ্রিজ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করে সেটা থেকে একটা মিষ্টি তুলিকে খাঁইয়ে দিলাম।বেচারী আবার লজ্জ্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– এহ্ হে রে…..মিষ্টির কথা তো ভুইলাই গেছিলাম।
– এতো ফর্মালিটিজ আমার সামনে দেখাতে হবে না।আমি এখান থেকে একটা মিষ্টি খেয়ে নিলাম,তুমি ভেবে নাও এটা তোমার দেওয়া মিষ্টি।
তুলি হাসলো,কিছু বললো না।কিন্তু কিছুক্ষণ হা হয়ে কি যেনো দেখছিলো?পরক্ষণেই লজ্জ্বামাখা মুখ নিয়ে কিচেনে চলে গেলো!কাল দুপুরের দিকে ইফাজ কিচেনের যাবতীয় সবকিছু কিনে এনেছেন।
.
আমি পেছন ঘুরতেই উনার সাথে ধাক্কা খেলাম!উনি খালি গাঁয়ে একটা ট্রাওজার পরে দাড়িয়ে আছেন!বুকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা!ভেঁজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের খানিকটা উপরে উঠে আছে!চোখের পাঁপড়ি ভেঁজা!ঠোঁটদুটো সতেজ হয়ে আছে!দাড়িতে পানি লেগে আছে!বামহাতে একটা টাওয়াল!মাশাআল্লাহ্!!!
– মিষ্টি কিসের?
উনি থুতনীতে হাত দিয়ে দাড়ি টানতে টানতে বললেন!আমি চমকে উঠে বললাম,
– হ্যা?
উনি ভ্রুঁ উঠিয়ে চোখের ইশারায় আমার হাতের মিষ্টি দেখিয়ে বললেন,
– এটা কিসের মিষ্টি?
– ওহ্!তুলির বিয়ে ঠিক হয়েছে,এটা তারই মিষ্টি!
আমি মিষ্টির প্যাকেট টেবিলে রেখে উনাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে এলাম।অনেকটা ধমকের সুরে বললাম,
– তুলিকে এভাবে নিজের বডি না দেখালেই কি চলছিলো না?
আমার কথা শুনে উনি ভ্রুঁ কুচঁকে বললেন,
– মানে?
– একদম ঢং করবেন না!এভাবে খালিগায়ে রুমের বাহিরে বেরুনোর মানে কি?তখন তুলি হা হয়ে কিছুক্ষণ আমার পেছনে তাকিয়ে ছিলো,তখন তো আমি খেয়াল-ই করিনি আপনি আমার পেছনে দাড়িয়ে!তারপরই তো লজ্জা পেয়ে কিচেনে চলে গেলো!খুব…না?
উনি আমার কথা শুনে হাসছেন! টাওয়াল ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে উনার সাথে একদম লাগিয়ে নিলেন!দুইহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ট্রাওজার-টা একটু টেনে দাও তো!দেখো…আন্ডারওয়ার বেরিয়ে….
– স্টপ….ছিঃ!তুলিকে এটাও দেখিয়েছেন!!!
আমি উনার মুখ ধরে চেঁচিয়ে উঠলাম!আমার কান্ড দেখে উনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন!আমি উনার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম!
কোমড়ে স্লাইড করতে করতে বললেন,
– আমি কেনো ও’কে এইসব দেখাতে যাবো?আমি ওরকম ছেলে না!আমার এই সবকিছু দেখার অধিকার একমাত্র তোমা….
– উফ্!হয়েছে….বুঝতে পেরেছি!
– বুঝতে পারলে ভালো!এখন একটু চুল মুঁছে দাও তো!
কথাটা বলেই উনি বেডে বসে আমার কোমড় টেনে উনার সামনে দাড় করালেন!আমি টাওয়াল ফ্লোর থেকে উঠাতে যাবো সেইমুহূর্তে উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,
– ওটা না,এটা দিয়ে মুঁছে দাও!
আমার শাড়ির আঁচল ধরে কথাটা বললেন!
আমি উনার হাত থেকে শাড়ির আঁচল ছাড়িয়ে উনার মাথা মুছতে মুছতে বললাম,
– এক-ই তো!
– উহু!মোটেও না!তোমার শাড়ির আঁচলে যেই পারফিউম আছে সেটা ওই টাওয়ালে 1%ও নেই!
কথাটা বলেই উনি আরো কাছে টেনে নিয়ে হাঁটুগেড়ে আমার সামনে বসে শাড়ির উপর দিয়েই পেটে একটা চুঁমু খেলেন!সাথে সাথেই আমি একইঞ্চি পিছিয়ে গেলাম!উনি তিনইঞ্চি কাছে টেনে নিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে কান পেতে বললেন,
– সোনামনিরা,শুনতে পাচ্ছো তোমাদের বাবাই-কে?
– পাগল হয়ে গেলেন নাকি?এখনো তো ও…..
– হয়েছে!আমি জানি…ওরা এতোদিনে যথেষ্ট বড় হয়েছে!
– ওরা,ওরা কেনো করছেন?কয়টা আছে ভিতরে?
– মেইবি তিন-চারটা!
– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্!!!দেখি ছাড়ুন….
উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ইয়াশের কাছে চলে এলাম!ইয়াশ এখনো ওঠে নি!আমি দ্রুত ইয়াশকে ডেকে তুলে ফ্রেশ করিয়ে রেডি করিয়ে দিলাম!ইয়াশকে ডাইনিং-এ পাঠিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং-এ চলে এলাম!তুলি ইয়াশের সামনে নাস্তা রেখে কিচেনে চলে গেলো।আমি তাড়াতাড়ি ইয়াশকে খাঁইয়ে দিলাম।উনাকে ডেকে বললাম,
– খেয়ে যান তাড়াতাড়ি!
উনি উল্টো আমাকে বললেন,
– রুমে নিয়ে আসো!আমার একদম সময় নেই!
ইয়াশকে খাওয়ানো শেষ করে ইয়াশকে ড্রইংরুমে ফোন দিয়ে বসিয়ে রেখে আমি ব্রেকফাস্ট নিয়ে রুমে চলে গেলাম!উনি টাই ঠিক করছিলেন!আমি পানির গ্লাস বেডসাইড টেবিলে রেখে উনার সামনে দাড়ালাম!উনি হাতে জেল ঘষে চুলগুলো পেছনের দিকে ব্রাশ করলেন!খাবার তুলে উনার মুখের সামনে ধরতেই উনি প্লেট-টা আমার হাত থেকে নিয়ে বেডে রেখে আমার চুলের ভেতর দুইহাত ঢুকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করে বসলেন!ছেড়ে দেওয়ার আগে ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে বললেন,
– ওই ব্রেকফাস্ট খাবো বলে রুমে ডেকেছি নাকি?বাট তোমার যদি ওইটাও খাওয়াতে ইচ্ছে করে খাওয়াতে পারো,প্রবলেম নেই!
বলেই উনি আমার হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
– হা করে না থেকে তাড়াতাড়ি শুরু করো লেইট হয়ে যাচ্ছে আমার!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here