# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:17+18
.
.
ফ্লাট থেকে সরাসরি রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেখানকার সব ফর্মালিটিজ পালন করতে করতে রাত সাড়ে সাতটার মতো বেজে গিয়েছিলো।ইফাজ ওর সব ফ্রেন্ডদের বিদায় দিয়ে আমাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসলো।আমার সিটবেল্টটা লাগিয়ে দিয়ে নিজের সিটবেল্ট লাগালো।
.
ইফাজ অনেক দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলো।মনে হচ্ছিলো এই বুঝি গাড়িটা স্লিপ খেয়ে উল্টে যাবে।আমার অবশ্য ভালোই লাগছিলো।আমি ইফাজকে এসিটা অফ করে জানালাটা খুলে দিতে বললাম।উনি আমার কথামতো তাই করলেন।রাস্তায় ওতোটা জ্যাম নেই।দু একটা গাড়ি কিছুক্ষণ পর পর আমাদের ক্রস করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।আমি বামহাতের কনুই জানালার উপর রেখে মুখটা সামান্য বের করে বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া লাগাচ্ছিলাম।হঠাৎ করে আমার চুল খুলে গেলো।আমি ডানহাতটা চুলে রেখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার চুলের ক্লিপটা হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।আমি কিছুই বললাম না।আমি হাতটা ভেতরে এনে জানালার সাথে হেলান দিয়ে ঢাকা শহরের রাতের বেলার ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করছি।উনিও চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছেন।আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।
.
প্রায় বিশমিনিট পর আমরা বাসায় পৌছালাম।উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার সাইডের দরজা খুলে আমাকে নামালেন।এবার উনি এ্যাপার্টমেন্টের একদম সামনে গাড়ি থামিয়েছেন।উনি গাড়ি লক করে আসলেন ততক্ষণে আমি হাটা শুরু করে দিয়েছে।উনি একপ্রকার দৌড়ে এসে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।হঠাৎ এরকম করাতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।ভাবলাম কে না কে ধরেছে।উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেই লিফ্টের ভেতর ঢুকে পরলেন।
.
আমি উনার কোমড়ে রাখা হাতটা একপ্রকার জোড় করে কোমড় থেকে ছাড়িয়ে ওই হাতের আঙ্গুলের মাঝে আমার আঙ্গুল গুজেঁ দিয়ে উনার কাধের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালাম।উনি অন্যহাত দিয়ে আমার সামনের চুলগুলো সড়িয়ে দিলেন।
.
আমি উনাকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– একটা কথা বলি?
– ……
– কি হলো?বলি?
– …….
– উফ্!বললাম কিন্তু?
– ……
– ওকে!পারমিশনের দরকার নেই!
– এটাই তো!অলওয়েজ আমার পারমিশন নিয়ে কেনো কথা বলতে হবে!
– ওকে!আর কখনো চাইবো না।
– গুড!এখন বলো কি কথা!
আমি উনার বামহাত টেনে সামনে এনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– দেখুন,এখন মাত্র আটটা বাজে।
– হুম তো?
আমি মাত্রই বলতে যাবো তখনই লিফ্ট খুলে গেলো।আমি ছোটআম্মুর কাছ থেকে আমাদের ফ্লাটের ডুব্লিকেট চাবিটা নিয়ে ফ্লাটের মেইনডোর খুলে ভেতরে ঢুকলাম।উনি আমার পেছন পেছন ভেতরে ঢুকলেন।আমি উনাকে ড্রইংরুমে বসিয়ে রেখে মাত্রই আমার বেডরুমের দিকে পা বাড়াবো সেই মুহূর্তে উনি আমার হাত ধরে হেচঁকা টান দিয়ে উনার সামনে দাড় করিয়ে বললেন,
– তখন কি যেনো বলছিলে?
.
ওহ্,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললাম,
– দেখুন,মাত্র বাজেঁ আটটা।ট্রেন ছাড়বে সাড়ে এগোরাটায়,রাইট?
– হুম,তো?
– আমাদের হাতে আরো আড়াইঘন্টা টাইম আছে,হুম?
– হুম!
– তারমানে আমি যদি আধাঘন্টার মতো ঘুমিয়ে থাকি তাহলে তো মনে হচ্ছে না আমরা ট্রেন মিস করবো!কারন দুইঘন্টা কিন্তু অনেক সময়।
– পাগল হয়ে গেছো নাকি তুমি?
– প্লিজ! আচ্ছা,আধাঘন্টা না যাস্ট পনেরো মিনিট ঘুমোবো।এখন যদি আমি না ঘুমাই তাহলে নিশ্চিত ট্রেনের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পরবো।
– তো?সমস্যা কি?ঘুমিয়ে গেলে তো আমি আছি!
আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,
– আমি ঘুমিয়ে গেলেই তো আপনি আমাকে ইচ্ছামতো দেখবেন।আজ ট্রেনে আপনি ঘুমাবেন আমি আপনাকে দেখবো!
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বেডরুমে একপ্রকার জোড় করে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন,
– তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো।……….কথাটা বলেই আমাকে ছেড়ে উনি আমার বেডের উপর আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে ফোন বের করে ফোন দেখছেন।আমি উনার কান্ড দেখে বললাম,
– আপনি এখানে কেনো শুয়ে পড়লেন?
– তুমি যাতে ঘুমোতে না পারো তার জন্য।এখন বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি শাড়িটা চেঞ্জ করে রেডি হয়ে নাও।
.
উফ্!কেনো যে বলতে গেলাম!তখন চুপচাপ রুমে ঢুকে রুম লক করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরতাম!
.
আমি আর কথা না বাড়িয়ে আলমারি থেকে উনার হোয়াইট পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচ করে আমি হোয়াইট কালারের লংকামিজ,হোয়াইট কালার চুড়িদার পায়জামা,ওড়না আর টাওয়ালটা বের করে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবো তখনই উনি বলে উঠলেন,
– টাওয়াল নিচ্ছো কেনো?তুমি কি এখন শাওয়ার নিবে?
– হুম।
উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আমাদের হাতে একদম সময় নেই।এটা শাওয়ার নেওয়ার টাইম না।তুমি যাওয়ার পর করো প্লিজ এখন যাস্ট হাতমুখটা ধুয়েই চলে আসো।
– নাহ্!আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে এখনই আমাকে শাওয়ার নিতে হবে!
.
আমার কথা শুনে উনি তড়িঘড়ি করে বেড থেকে উঠে আমাকে আটকানোর জন্য আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজাটা লক করে দিলাম।উনি দরজা নক করছে আর বলছে,
– হিয়া!সিরিয়াসলি একদম টাইম নেই!
আমি ওয়াশরুম থেকেই চিৎকার করে বললাম,
– বেশি সময় লাগবে না।
– অনলি ফাইভ মিনিট!এর ভেতরে যদি বের না হও আমি কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা ভেঙ্গে তোমাকে বের করবো।সে তুমি যেই অবস্থাতেই থাকো না কেনো!পানিশম্যান্ট বাধ্যতামূলক!
.
হঠাৎ উনার এই ধরনের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।উনার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।অসভ্য একটা!
.
উনি অলরেডি এক,দুই গোনা শুরু করে দিয়েছেন।আমি তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে সবকিছু চেঞ্জ করে দরজা খুলতে খুলতে উনার পাচঁ বলা শেষ হয়ে গিয়েছে।পাচঁ এর পর যদি গোনাটা কন্টিনিউ করতেন তাহলে এতক্ষণে ত্রিশ গোনা হয়ে যেতো।দরজা ধাক্কানো অলরেডি দশবার হয়ে গেছে!
.
উনার দরজা ধাক্কানোর শব্দে ভয়ে দরজা খোলার সাহস পাচ্ছি না!বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।কিছু করবেন নাতো?
.
– হিয়া….
হঠাৎ উনার ডাক শুনে ভয়ে আস্তে আস্তে দরজা খুললাম।একটু ফাঁকা করে দেখলাম উনি উল্টো ঘুরে দুইহাত দিয়ে চুল বারবার উপরে উঠাচ্ছেন।ভাব দেখে মনে হচ্ছে অসম্ভব রেগে আছেন!উনার সামনেই বেড ছিলো!
আমি আস্তে করে ওয়াশরুম থেকে পা টিপে টিপে বের হয়ে শাড়ি বেডের উপর রেখে একলাফে বেডের উপর দিয়ে লাফিয়ে বেডের অপজিট সাইডে চলে আসলাম।উনি আমার কান্ড দেখে অবাক হয়ে বললেন,
– হিয়া!এটা কি ঠিক করেছো?আধাঘন্টার মতো তুমি ওয়াশরুমেই কাটিয়ে দিলে!
আমি ভয়ে কান ধরে বললাম,
– সরি!আর কখনোই এতো লেট করবো না।
উনি বেড ঘুরে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি চিৎকার দিয়ে বললাম,
– সরি!প্লিজ!আমি ভয় পাচ্ছি তো!
আমার কথা উনি না শুনে আমার দিকে আসতে লাগলেন।উনি আমার জায়গায় আসতেই আমি বেডের উপর দিয়ে লাফিয়ে উনার অপজিটে চলে আসলাম।
উনি রেগে চোখ বড় বড় করে আঙ্গুলের ইশারায় বললেন,
– হিয়া!এক পা ও নড়বে না।ওখানেই দাড়িয়ে থাকবে।
– পানিশমেন্ট দিবেন নাতো?
– নাহ্!
– সত্যি?
– হুম!
উনার চোখ বড় বড় করে আগানো দেখে আমি ভয়ে এক পা বেডের উপর তুলবো সেই মুহূর্তে উনি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
– বললাম না, না নড়তে!
উনার ধমক শুনে ভয়ে কুকঁড়ে গেলাম!উনি বেড ঘুরে আমার দিকে আসতেই আমি ভয়ে চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করে মাথা নিচু করে দুইহাত দিয়ে কান চেপে ধরলাম।
.
উনি আমার একদম কাছে আছেন আমি টের পাচ্ছি।উফ্!কখন যে কি করে বসেন!হাতপা ভয়ে কাপছেঁ!উনি কিছু করছেন না দেখে আরো বেশি ভয় পাচ্ছি!চোখ খোলার ও সাহস পাচ্ছি না!আমি সাহস নিয়ে একচোখ মিটমিট করে খুলে দেখলাম উনি আমার সামনে নেই!আমি মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকানোর আগেই আমার কানে কেউ ফুঁ দিলো!
ভয়ে আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে বেডরুম থেকে বের হবো সেই মুহূর্তে কেউ আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আমি তো জানতাম ই না আমার বউটা যে এতো ভীতু!
আমি আস্তে করে পেছনে তাকালাম!উনি শয়তানি হাসি ঠোটেঁ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে!
.
উনার এরকম হাসি দেখে আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো!শরীরের ভেতর কেমন কেমন যেনো লাগছে!গা শিঁউরে শিঁউরে উঠছে!নিশ্চয় ভয়ে!
.
উনি ডানহাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বামহাতটা আমার সামনে ধরে হ্যান্ডওয়াচের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– দেখো তো!এগারোটা বাজঁতে আর কতক্ষণ বাকি?
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আটটা চল্লিশ বাজে!আমি উনাকে বললাম,
– জানিনা!
– মাইর দিবো একটা!
– আমি ঘড়ি দেখতে পারি না!
– কিহ্!
– সত্যি….
– এ্যাহ্! আসছে!উনি নাকি ঘড়ি দেখতে পারেন না!এখন আমি একটু রোম্যান্স শুরু করি তখন বলবে,দেখুন আমাদের একদম সময় নেই।এগুলো পরেও করতে পারবেন এখন চলুন!
.
উফ্!উনার কথা শুনে রাগে শরীর পুড়ে যাচ্ছে!বজ্জাত একটা!আন্টি ঠিকই বলে আসলেই বজ্জাত!
.
উনি স্বাভাবিকভাবেই পেছন থেকে আমার গালে চুমো খেয়ে বললেন,
– খুব রোম্যান্স করতে ইচ্ছে করছে।
আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাটা বলেই আমার ঘাড়ে চুমো খেতে যাবেন সেইমুহূর্তে আমি অস্পষ্টস্বরে বললাম,
– এখন সত্যিই টাইম নেই এসব করার!
.
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে উঠলেন।হাসতে হাসতেই বললেন,
– জানতাম,তুমি এই কথাটাই বলবে!
.
আমি একপ্রকার জোড় করে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে টাওয়ালটা নিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমের বাহিরে চলে এলাম।আম্মুর রুমে এসে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে বসে বসে চুল শুকাচ্ছি।
.
উনি আমার রুমেই আছেন।একা একা কি করছেন কে জানে?
.
আমি হেয়ার ড্রায়ারটা রেখে আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমের সামনে যেয়ে রুমের ভেতর একটু উঁকি দিলাম!উনার দিকে চোখ পরতেই চোখ বড় বড় করে ফেললাম!উনি কি যত্ন সহকারে আমার শাড়িটা ভাঁজ করে আলমারিতে রেখে দিলেন!ওয়াশরুমের দরজা লাইট সব অফ করে দিলেন!সবকিছুর প্রতিই উনার কি নিখুঁত কেয়ার!আমি তো শাড়িটা ঠিকঠাক মতো না রেখেই বেরিয়ে পরতাম।
.
উনার সাথে চোখাচোখি হতেই আমি এমন ভাব ধরে রুমে ঢুকলাম মনে হলো রুমে ঢোকার উদ্দেশ্যেই আমি এসেছি।আমাকে দেখে উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
– আবার রুমে ঢুকছো কেনো?রুমে আর কোনো কাজ নেই।সবকিছু গুছিয়ে রেখেছি।এখন চলো।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– মানে?এখনই!
– হুম……বলেই আমার হাত ধরে মেইনডোরের বাহিরে এনে মেইনডোর লক করে চাবিটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,
– যাও,দিয়ে এসো!
আমি হা করে কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে থেকে চাবিটা নিয়ে ছোটআম্মুর কাছে দিয়ে এলাম।
.
আসার সময় সবাইকে বিদায় দিয়ে এলাম।চাচ্চুরা উনাকে মাথায় হাত দিয়ে দোআ করলেন,জড়িয়ে ধরলেন,বোনগুলোর মাথায় উনি হাত দিয়ে আদর করে বিদায় নিলেন।আমিও বোনগুলোকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলাম।
.
লিফ্টের ভেতর ঢুকে উনি আমার ওড়নাটা দিয়ে আমার মাথা ঢেকে দিলেন!আমার সামনের চুলগুলো কানের পিঠে দিয়ে ওড়নাটা সামনের দিকে একটু টেনে দিলেন!তারপর উনার দুইহাত দিয়ে আমার দুইগাল ধরে কপালে একটা চুমো দিয়ে বললেন,
– একদম পারফেক্ট লাগছে!
.
আমি এতক্ষণ অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রোবটের মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে উনার কান্ড দেখছিলাম!
.
.
# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:18
.
.
ইফাজদের ড্রাইভার এসে স্টেশন থেকে গাড়িটা নিয়ে গেলো।আর যাওয়ার সময় ইফাজকে একটা ব্যাগ দিয়ে গেলো।উনার কাপড়চোপড় আরো সব হাবিজাবি মনে হয় ব্যাগটার মধ্যে।ট্রেন স্টেশনে থামতেই ইফাজ আমার হাত শক্ত করে ধরে ট্রেনে উঠে একটা এসি কেবিনে ঢুকলো।কেবিনটা দেখেই আমার রাগ হলো।
আমি চোখ রাঙ্গিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি কেবিন নিয়েছেন?
– দেখতেই তো পাচ্ছো!
– শুধু শুধু কেনো?
– শুধু শুধু মানে?
– কিছু না।
.
প্রচুর রাগ হচ্ছে উনার উপর!আমি অন্যদিকে তাকিয়ে উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম,
– মানুষ মাত্র দুজন!আর উনি পুরো কেবিনটাই কিনে নিয়েছেন!ছয়জনের সিট একসাথে কিনেছেন!টাকা কি গাছ থেকে পড়ে!পাচঁ ছয়টা বাচ্চাকাচ্চা থাকলে নাহয় একটা কথা ছিলো!ফেমিলি আছে তাই কেবিন নেওয়া দরকার!কিছুই তো নেই!শুধু শুধু টাকা নষ্ট!
কথাগুলো বলে নিজের পায়েই নিজে লাথি দিলাম!
উনার কোনো রিয়েকশন ই নেই।আমি যে এতক্ষণ শুনিয়ে শুনিয়ে কথাগুলো বললাম এমন ভাব দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে কিচ্ছু শোনেননি।
.
ইফাজ ব্যাগটা উপরে রেখে আমার হাত টেনে জানালার পাশে বসিয়ে উনি আমার পাশে বসে কানের কাছে আস্তে করে বললেন,
– ভয় পাওয়ার কিছু নেই।এই কেবিনটা আমি আর একটা দাদুটাইপের দাদু একসাথে নিয়েছি!
উনার কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ভয় পাবো কেনো?আপনি তো আছেন!
– তোমার ভয় তো এখানেই!
উনার কথা শুনে আমি উনার একদম কাছে গিয়ে শক্ত করে উনার হাত ধরে বললাম,
– মোটেও না! আপনি কিন্তু আপনার কথার মাধ্যমে আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন!
আমার কথা শুনে উনি পুরো কেবিন কাপিয়ে হাসলেন!
.
হঠাৎ উনার এরকম হাসি শুনে আমি আস্তে করে উনার হাতটা ছেড়ে দিয়ে জানালার দিকে ঘেষে বসলাম।উনি হাসি থামিয়ে আমার একদম কাছে এসে হাতদুটো শক্ত করে ধরে বললেন,
– টিয়াপাখি! আই লাভ ইউ!
হঠাৎ উনার মুখে “আই লাভ ইউ” শুনে অবাক চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার চোখে চোখ রেখেই আমার দুহাতের তালুতে একসাথে চুমো খেলেন!
.
“আই লাভ ইউ” কথাটা উনার মুখে খুব কমই শুনি!উনার কাজের মাধ্যমে,কথা বলার মাধ্যমে, উনার ব্যবহারে, আমার প্রতি কেয়ারিং এইগুলোর মাধ্যমেই উনি বুঝিয়ে দেন উনি আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসেন!
.
কেবিনে হঠাৎ বয়স্ক দুজন বৃদ্ধ বৃদ্ধা ঢুকে পরলেন।উনাদের দিকে চোখ পরতেই ইফাজ আমাকে ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে উনাদের সালাম দিলেন।কিছুক্ষণ পর মাঝারি বয়সের একজন লোক এসে ইফাজের সাথে হ্যান্ডশেক করে বললেন,
– ঠিকঠাক মতো নামিয়ে দিয়েন আর কোনো প্রবলেম হলে আমার নাম্বার তো আপনার কাছে আছেই।একটা কল করে জানিয়ে দিয়েন।
সরি,বেশি কষ্ট দিলাম।
ইফাজ লোকটার কাধে হাত রেখে বললেন,
– কষ্ট কিসের ভাই!উনারা আমার মা বাবার মতোই!
লোকটা কথা বলতে বলতেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ভাবি নাকি?
ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
– হুম!
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
লোকটা চলে গেলো।
মুরুব্বি দুজনের মধ্যে একজন জানালা ঘেষে বসে আছেন আরেকজন সিটে শুয়ে আছে।কিন্তু দুজন দুজনের হাত ধরে আছেন।
.
ইফাজ দাড়িয়ে পাঞ্জাবি ঠিক করছিলো।আমি উনার হাতটা টান দিয়ে আস্তে করে বললাম,
– আপনি উনাদের একবার দাদু বলছেন আবার মা বাবা বলছেন ব্যাপারটা কেমন হাস্যকর শোনাচ্ছে না!
উনি আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন,
– উনাদের দেখে আমার দুইপ্রজন্মই মনে হচ্ছে! ব্যাপার না!
উনার কথা শুনে আমি হেসে বাহিরে তাকালাম।
.
আমার সাথে কোনো ব্যাগ,পানির বোতল,খাবার কিছুই নেই।আমার ফোনটাও আমি ভুলে ফ্লাটে রেখে চলে এসেছি।স্টেশনে এসেই মনে পড়েছে ফোনের কথা।মুরুব্বিদের সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছে।থাক!পরে বলবো!ট্রেন ছাড়তে একটু লেট হবে সেই ফাঁকে ইফাজ ট্রেন থেকে নেমে খাবার আর পানি কিনে নিয়ে আসলো।আমার কোলে খাবারের প্যাকেটগুলো রেখে দাড়িয়ে থেকেই উনি পানির বোতলের মুখ খুলে বোতলের অর্ধেক পানি শেষ করে দিলেন।আরেকটা বোতল আমার হাতে দিয়ে সিটে বসলেন।আমার কোল থেকে খাবারের প্যাকেটগুলো নিয়ে রেখে দিলেন।জানালা একদম লাগানো।আমি জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ বাহিরে তাকিয়ে আছি।উনি আমার কাধে মাথা রেখে বললেন,
– কি ভাবো?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কই,কিছু নাতো!
তারপর আস্তে করে উনার মাথাটা সরিয়ে দিয়ে বললাম,
– সামনে মুরুব্বি বসে আছেন।
– তো?আমি তো যাস্ট মাথাটা রেখেছি।আর উনারা দেখো কি সুন্দর হাত ধরে আছেন!
– উফ্!উনারা মুরুব্বি!বসতেই পারেন!
– তুমি না সত্যিই!দেখি ঠিক হয়ে বসো!
আমাকে উনি সোজা করে বসিয়ে আমার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললেন।আমি আমার একহাত উনার চুলের ভেতর দিয়ে আস্তে আস্তে বুলাতে লাগলাম।উনি আস্তে করে বললেন,
– একটু টেনে দাও!
– কি?
– চুল
– ওহ্!
.
উনার কথা মতো আমি আস্তে আস্তে উনার চুল টেনে দিচ্ছি।উনি চোখ কপালে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আমি টেনে দিতে বলেছি!বুলাতে বলিনি!
যাক বাবা!টেনেই তো দিচ্ছি! আর কত জোরে টানবো?
আমি আস্তে করে বললাম,
– আর কত জোরে টানবো?
– অনেক জোরে!
– পারবো না!আপনি ব্যাথা পাবেন!
– মজা লাগে!প্লিজ আর একটু জোরে জোরে টানো না!
আমি উনার কথা মতো জোরে জোরে টানলাম।উনার চুলগুলো সিল্কি টাইপের বাট উপর দিকে উঠানো।আমি ইচ্ছামতো চুলগুলো টেনে দিলাম।
.
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।আমি বাহিরে তাকিয়ে স্টেশনে থাকা মানুষগুলোর দিকে একপলক তাকিয়ে উনার চুল টানতে টানতে বললাম,
– মহানগর গোধূলী এক্সপ্রেস তো আমার জানামতে সন্ধ্যে ছয়টা সাতটার বা সকালের দিকে ছাড়ে।বাট আজ এতো লেট কেনো?
উনি চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিলেন,
– জানিনা!ট্রেন সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই।মনে হয় এক একদিন এক একসময় ছাড়ে!
– ওহ্!ঘুম পেয়েছে আপনার?
– নাহ্!
– তাহলে চোখ বন্ধ যে?
– এমনি!ভালো লাগছে!কার কাধে মাথা রেখেছি দেখতে হবে তো!
উনার কথা শুনে আমি শব্দহীনভাবে হাসলাম।
.
ইফাজ চোখ খুলে আমার হাত ধরে হাতের আঙ্গুলগুলো টানতে টানতে বললো,
– বউকে নিয়ে ট্রেন জার্নি!এতো আনন্দ! জানতাম না!একটা রোম্যান্টিক রোম্যান্টিক ভাব আসে মনের মধ্যে!
.
উনার কথা শুনে লজ্জায় উনার মাথাটা কাধ থেকে সড়িয়ে দিয়ে হাতটা উনার কাছ থেকে ছাড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আড়চোখে দেখতে পেলাম উনি একটু উঠে পকেট থেকে ফোন বের করলেন।কার নাম্বারে যেনো কল দিচ্ছেন।কেউ ধরলো না দেখে ফোনটা পকেটে রেখে দিলেন।
.
হঠাৎ উনি আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে উনার একদম বুকের কাছে নিয়ে গেলেন।আমি আস্তে করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হচ্ছে কি?ছাড়ুন!
– ঘুম আসলে ঘুমোতে পারো!এই বিছানাটা কিন্তু শুধু আজকের জন্যই! কাল থেকে কিন্তু পাবা না!সো যত পারো ইউজ করো!
– আমার ঘুম আসে নি।এখন ছাড়ুন!প্লিজ!
আমার কথা শুনে উনি দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন!সামনে বসে থাকা দাদুটা মাঝে মাঝে এদিকে তাকিয়ে উনার কান্ড দেখছেন।আরেকজন চোখ বন্ধ করেই শুয়ে আছেন।একবারও খোলেন নি!
আমি উনার পেটে গুতোঁ দিয়ে ইশারায় দাদুটাকে দেখালাম!উনি দেখতে পেলেন দাদুটা কিছুক্ষণ পর পর এদিকে তাকাচ্ছেন।তাকাবেন নাই বা কেনো?বৃদ্ধ হয়েছেন বলে কি কিছু বোঝেন না?উনি আস্তে করে আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের সিটে ঠিকঠাক হয়ে বসলেন।বাম পায়ের হাটুর উপর ডানপায়ের টাখনু রেখে নাড়াতে লাগলেন।এমন ভাব দেখাচ্ছেন মনে হচ্ছে ইনোসেন্ট একটা ছেলে বসে আছেন।আমি ওড়নাটা মাথায় ঠিক করে দিয়ে চুপচাপ নিজের সিটে হেলান দিয়ে বসে বসে রাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে লাগলাম।
.
প্রায় অনেকক্ষণ পর উনি আমার কানে ফিসফিস করে বললেন,
– টিয়াপাখি!দাদুটা কিন্তু ঘুমিয়ে পরেছে!
উনার কথা শুনে আমি সামনের সিটে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি সত্যিই উনি ঘুমিয়ে পরেছেন।আমি ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তো?
– তো মানে?
উনি হাত বাড়ানোর আগেই আমি শক্ত করে উনার হাতদুটো ধরে ফেললাম।আমার এই ছোট ছোট হাত কতক্ষণই বা উনার ওই বিশাল হাতদুটো ধরে রাখতে পারে!আমার হাতের মুঠো থেকে উনার হাত ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথেই ভয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– সরি!ইচ্ছে করে ধরিনি!
– ওকে!আমিও ইচ্ছে করে ধরবো না!
উনি আমার একদম কাছে আসতেই আস্তে করে বললাম,
– প্লিজ!
– বলো তো এখন আমি তোমাকে কি করবো?……..উনি দুষ্টুস্বরে বললেন!
আমি চেহারায় মায়া ফুটিয়ে উনার দিকে তাকালাম!উনি তবুও থামছেন না!আমি একহাত দিয়ে কোনোরকমে উনার একটাহাত ধরে বললাম,
– আমি তখন ইচ্ছা করে ধরি নি!
উনি আমার কোনো কথাই শুনছেন না!আমার এখন কি করা উচিৎ?উনার থেকে যত দূরে যাচ্ছি ভয়টা আরো বেশি পাচ্ছি!
আর কোনোকিছু না ভেবে চোখ বন্ধ করে উনার হাতদুটো দুইদিকে সড়িয়ে শক্ত করে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম!হাত পা কাপঁছে!আরো শক্ত করে ধরলাম উনাকে!চুপচাপ উনার বুকে মাথা রেখে একপ্রকার শুয়েই আছি!উনিও উনার দুইহাত দিয়ে আমাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– এভাবেই কাটাঁ দিয়ে কাটাঁ তুলতে হয়!
আমার হাত পা কাপাঁ একটু একটু কমেছে!উনার কথাটা শুনে আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– মানে!
– গলা কাপঁছে কেনো?
আমি উনার বুকে আবার মাথা রেখে বললাম,
– ভয় পেয়েছি!
উনি আমার মাথায় চুমো খেয়ে বললেন,
– হাজবেন্ড কে ভয় পাওয়া ভালো লক্ষণ না কিন্তু!
– তাহলে ভয় দেখান কেনো?
– আমি তো রোম্যান্স করতে চাচ্ছিলাম!
উনার কথা শুনে আমি লজ্জায় উনার বুকে কিল দিলাম!
তারপর মাথা উঠিয়ে বললাম,
– ওই কথাটা কেনো বললেন?
– কোন কথা?
– এভাবেই কাটাঁ দিয়ে কাটাঁ তুলতে হয় এইটা?
আমার কথা শুনে উনি একহাত দিয়ে পিঠে স্লাইড করছেন অন্যহাত দিয়ে আমার মাথাটা উনার বুকে চেপে ধরে হাসতে হাসতে বললেন,
– তুমি আমার সাথে যতই ফ্রি ভাবে কথা বলো বা হেসে হেসে কথা বলো না কেনো আমি যখন তোমার কাছে আসি তখনই তুমি ভয় পাও!যেই জিনিসটা আমার একদম ভালো লাগে না!তারজন্য নিজেকে একটু দূরে দূরে সরিয়ে রাখি যাতে তুমি একটু সময় পাও।কিন্তু আমার ধারনাটা ভুল।দূরে দূরে থেকে হঠাৎ একটু তোমার কাছে গেলেই তুমি আরো বেশি ভয় পাও!তাই আজ আমি নিজে ভয় দেখিয়ে তোমার ভয়টাকে আহত করলাম।এখনো মারতে পারিনি।বাট একদিন মেরে ফেলবো চিন্তা করো না।সেদিনের পর থেকে তুমি নিজেই আমার কাছে আসবা কিন্তু আমার দিকে তাকাতে পারবে না!
– কি করবেন?
– উহুম!বলা যাবে না!
উনি কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
– সিক্রেট!
.
উফ্!বুকের ভেতরটা এমনিতেই কাপছে!উনার এইসব ভয়ানক কথা শুনে আরো জোরে জোরে কাপঁছে!
উনি আবার বললেন,
– ওই ভয়টা না দেখালে তুমি জীবনেও এতো সুন্দর করে নিজে থেকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে না!
.
আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,
– আপনি সত্যিই খারাপ!
আমার কথা শুনে উনি উনার দুপায়ের পাতা দিয়ে আমার এক পা চেপে ধরে চোখে মুখে দুষ্টুমি ভাব এনে বললেন,
– এখন খারাপ বলছো যখন তোমার জীবনের সবচেয়ে দামি জিনিস ভয়,লজ্জাগুলোকে মেরে ফেলবো তখন কি বলবে,হুম?
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here